নাগরিক সমাজ ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়: অধ্যাপক আলী রীয়াজ
Published: 25th, May 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, “সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য গঠন সম্ভব নয়। সুশীল সমাজের অন্তর্ভুক্তি ও সক্রিয় অংশগ্রহণই সেই উদ্যোগকে অর্থবহ করে তুলতে পারে।”
রবিবার (২৫ মে) রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সুশীল সমাজ সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন, কমিশনের সদস্য ড.
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফার আলোচনায় কিছু বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে ঠিকই, তবে মতভেদও রয়ে গেছে। এ অবস্থায় নাগরিক সমাজের যুক্ত হওয়া সময়ের দাবি। বিপুল রক্তপাত ও ত্যাগের বিনিময়ে যে অবস্থানে আমরা পৌঁছেছি, সেটিকে অবহেলা করা যায় না। জাতীয় ঐকমত্য গঠনের এ সুযোগ বারবার আসবে না।”
তিনি বলেন, “যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতৈক্য হয়নি, তা জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে। একইসঙ্গে জাতীয় সনদ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।”
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মানবাধিকার, নারী অধিকার, জাতিগত বৈচিত্র্য এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঐকমত্য গঠনের আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য এখনই উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বিশেষ করে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তরুণ নারীরা রাজনীতিতে যুক্ত হতে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
তারা বলেন, একটি সমন্বিত জাতীয় সনদ ভবিষ্যতের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পথনির্দেশক হবে। এই সনদে গণতন্ত্র, ন্যায্যতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিফলিত হলে, যে কোনো সরকার তা অনুসরণ করতে বাধ্য থাকবে।
সংলাপে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি আব্দুল মতিন, মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মনীরুজ্জামান, ড. ওয়ারেসুল করিম, ড. মির্জা হাসান, ড. গীতি আরা নাসরিন, ড. সামিনা লুৎফা, সুলতানা রাজিয়া, সাংবাদিক বাসুদেব ধর, ইলিরা দেওয়ান, আশরাফুন নাহার মিষ্টি এবং চৌধুরী সামিউল হক।
ঢাকা/এএএম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ঐকমত য
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চায় সরকার, বিবেচনা করছে বিএনপি
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে চায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার, যা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হিসেবে আলোচিত।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে পাঠানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিলে ৫ আগস্টের আগেই এটি চূড়ান্ত করতে চায় সরকার।
সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জুলাই ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া বিএনপির কাছে পাঠান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চায়। সরকার এই ঘোষণাপত্রে আরও কিছু বিষয় রাখতে চায়, সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত প্রয়োজন।
সরকার প্রণীত খসড়া ঘোষণাপত্রে কিছু শব্দগত মারপ্যাঁচ আছে বলে মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা। তাঁরা সেগুলোর সংশোধনের প্রস্তাব করবেন।বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, পরপর দুই দিন (মঙ্গল ও বুধবার) বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সংস্কার ও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে জানান, এই ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের উল্লেখ নেই। ঘোষণাপত্রে বিএনপি ঐতিহাসিক সব ঘটনার সংযুক্তি চাইতে পারে।
এ ছাড়া সরকার প্রণীত খসড়া ঘোষণাপত্রে কিছু শব্দগত মারপ্যাঁচ আছে বলে মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা। তাঁরা সেগুলোর সংশোধনের প্রস্তাব করবেন।
জানা গেছে, জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের এই ভূখণ্ডের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগের পর যুগ সংগ্রামের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। এর পরের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ২০২৪ সালে কীভাবে ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান, সে প্রসঙ্গও রয়েছে ঘোষণাপত্রের খসড়ায়। এ ছাড়া খসড়ায় জুলাই অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটের অপরাধগুলোর উপযুক্ত বিচার করার অভিপ্রায়ের কথাও রয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩১ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ তৈরির উদ্যোগ নেয়। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের আশ্বাসে ঘোষণাপত্র প্রকাশের অবস্থান থেকে ছাত্ররা সরে আসেন। তখন জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনায় আসে। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি বিএনপি এ বিষয়ে তাদের প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেয়। এরপর প্রায় পাঁচ মাস সরকারের দিক থেকে কোনো উদ্যোগ বা তৎপরতা দেখা যায়নি। পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আন্দোলনের মুখে গত ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভার আগে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘোষণাপত্র তো ঘোষণাপত্র। এটি একটি রাজনৈতিক দলিল, যা আর্কাইভে (সংরক্ষণাগার) থাকতে পারে। তবে গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪, অর্থাৎ জুলাই-আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে সাংবিধানিকভাবে কোনো জায়গায় বা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে রাখা যায় কি না, সেটা আলোচনা করে দেখা হবে।’
দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সভায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপে সংবিধান, জাতীয় নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়। কিছু কিছু বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে স্থায়ী কমিটির সভায় সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের বিষয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে নেতারা মতামত দেন। ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন।
ওই সভায় বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে বিএনপির নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।