আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হচ্ছে শ্রম আইন: স
Published: 25th, May 2025 GMT
দেশের শ্রম আইন আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সঙ্গে আরো সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান।
রবিবার (২৫ মে) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ‘অ্যাডভান্সিং ডিসেন্ট ওয়ার্কস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রথম পিএসি কমিটির সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, “আইএলওর সহায়তায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শ্রম অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শ্রম আদালতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং প্রশিক্ষণ আয়োজন কাজ করা হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, জাতীয় মজুরি কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালা বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বৃষ্টি মাথায় কাকরাইলে তিন কারাখানার শ্রমিকদের অবস্থান
‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলনের সেই ভয়াবহ রাতে যা ঘটেছিল
তিনি বলেন, “সরকার, শ্রমিক ও মালিক পক্ষের ত্রিপক্ষীয় সংলাপের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) ও অন্যান্য খাতে নারী ও যুব শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বাড়ানোই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। ট্যানারি, গার্হস্থ্য পোশাক উৎপাদন ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সেলাই শিল্পে শিশুশ্রমের মূল কারণ চিহ্নিত করে তা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
“শিশুশ্রম পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের সহায়তা করা হবে। এছাড়া, পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের পেশাগত দুর্ঘটনা, রোগ বা মৃত্যু ক্ষেত্রে আঘাতজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। বিশেষত নারী শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে এই সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে,” যুক্ত করেন সচিব।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, “বাংলাদেশে শ্রম অধিকার ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা সরকার ও অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। আরএমজি খাতের সাফল্য অন্য শিল্পেও পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করছি।”
সভায় আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর, শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, কানাডা ও ডেনমার্ক দূতাবাসের প্রতিনিধি এবং শ্রম অধিদপ্তর ও কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দোষ বিয়ারিং প্যাডের নয়, যারা লাগিয়েছে কিংবা বুঝে নিয়েছে, তাদের: ডিএমটিসিএল এমডি
মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এর মধ্যে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে একজন পথচারী মারা গেছেন। এবার নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করব। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।’
এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে আরেকটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’
ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না? যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’
আরও পড়ুনবৃষ্টির পানি ঢোকে, এসি বিকল হয়, মেট্রোরেল ব্যবস্থায় ৪৫ সমস্যা০২ নভেম্বর ২০২৫এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনো আমরা বুঝে নিইনি।’
ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এ জন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব কটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।
আরও পড়ুনমেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড কী, খুলে পড়ার কারণ কী হতে পারে২৬ অক্টোবর ২০২৫চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল দাবি করে ফারুক আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পর ছয় থেকে সাত বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় তিন বছর।
২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।
নতুন মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’
আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫