খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে রফিকুল-রেহানা দম্পতির
Published: 1st, July 2025 GMT
বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম পৌরসভার গুন্দইল গ্রামের রেহানা-রফিকুল দম্পতির সন্তান নেই। বাস করেন টিনের খুপরি ঘরে। দু’জনই অসুস্থ। চলাফেরা করতে পারেন না। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। অর্ধাহার-অনাহারে কাটে দিন। সহায়তা না পেলে এখন বেঁচে থাকাটাই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাদের।
রফিকুল ইসলাম (৪৫) ও রেহানা খাতুন (৪৫) দম্পতির নিজের বলতে আছে ২ শতক জায়গার ওপর খুপরি ঘর। রফিকুল কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। রেহানা খাতুন আগে থেকেই অসুস্থ। চলাফেরা করতে পারেন না। স্বামীর রোজগারের টাকায় তাদের সংসার ভালোভাবেই চলে যেত। দুই বছর আগে হার্টঅ্যাটাকে রফিকুলের হাত-পা অসাড় হয়ে যায়। এর পর থেকে চেয়েচিন্তে সংসার চলছিল। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় ঘর থেকে বের হতে পারছে না এই দম্পতি। অন্যের দয়ায় কোনো দিন খাবার জোটে আবার কোনো দিন না খেয়ে থাকতে হয়। চিকিৎসা করানোর কথা ভাবতেই পারেন না তারা।
রফিকুল ইসলাম বলেন, যখন ভালো ছিলাম কাজ করে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছি। সংসার চালাতেও সমস্যা হয়নি। দুই বছর হলো বিছানায় পড়ে আছি। কেউ দিলে পেটে ভাত যায়, না দিলে উপোস থাকতে হয়। চিকিৎসা কীভাবে করাব? সরকারি সুবিধা পাই না। প্রতিবেশীরা আর ক’দিন দেখবে? আগামী দিনগুলো কীভাবে যাবে, তা জানি না।
রফিকুল ইসলামের প্রতিবেশী নন্দীগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক সবুজ কুমার সরকার বলেন, রফিকুলের বাড়ির ওপর দিয়ে আমার যাতায়াত। ওই দু’জনের কষ্ট দেখলে খারাপ লাগে। যথাসাধ্য চেষ্টা করি তাদের সাহায্য করতে। তাদের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।
নন্দীগ্রাম পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, তাদের বিষয়ে শুনেছি। পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বর্ণিল আয়োজনে ঢাবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জাসহ বর্ণিল আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল, হোস্টেল ও প্রশাসনিক ভবন থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীদের নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।
সকাল ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সম্মুখের পায়রা চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন এবং কেক কাটা হয়। টিএসসি মিলনায়তনে ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। অনুষ্ঠানে একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবন, টিএসসিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সড়কে আলোকসজ্জা করা হয়।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক, সভ্যতা গঠনের শিকড় ও স্বাধীনতার জাগরণ গাথা।
অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে এটির অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈশিষ্ট্য। এখানে ধনী-গরিব, শহর-গ্রাম, নারী-পুরুষ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ-সংখ্যালঘু– সবাই পেয়েছেন সমান মর্যাদা। এখানে প্রতিটি কণ্ঠের রয়েছে মূল্য, প্রতিটি স্বপ্নের রয়েছে ছুঁয়ে দেখার অধিকার। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মই হয়েছিল বৈষম্য দূরীকরণের তাগিদে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় মাত্র ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৭৭ শিক্ষার্থী নিয়ে। আজ সেই প্রতিষ্ঠান পরিণত হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং শিক্ষক আছেন প্রায় দুই হাজার। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে ২০০টি প্রতিষ্ঠান। এতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নেও আমরা দায়বদ্ধ। যারা গণঅভ্যুত্থানে রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, তারা আমাদের কাঁধে কিছু দায়িত্ব রেখে গেছেন। সেই দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বিশ্বাস ও সহযোগিতার বন্ধন অটুট রাখা।
উপাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা কখনও শুধু একাডেমিক পরিসরে সীমাবদ্ধ ছিল না। ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১ এবং ১৯৯০-এর প্রতিটি আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ইতিহাসে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান আমাদের সংগ্রামের নতুন অধ্যায়। দেশের মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভরসা রেখেছে বলেই প্রতিটি ক্রান্তিকালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকে সাড়া দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত ও উদ্দীপনামূলক দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হয়। এ ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সংগীত পরিবেশিত হয়। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।