জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল অনিবার্য এক রাজনৈতিক বিস্ফোরণ
Published: 3rd, July 2025 GMT
২০২৪ সালের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে প্রায় দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে। এটি শুধু একটি সরকারের পতনের বার্ষিকী নয়, বরং একটি জাতির গণতান্ত্রিক চেতনার পুনর্জাগরণের স্মরণীয় দিন। এ গণ-অভ্যুত্থান ছিল সময়ের দাবি ও অনিবার্য এক রাজনৈতিক বিস্ফোরণ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বিদ্রোহ থেকে বিনির্মাণের এক বছর: জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, গণতান্ত্রিক সম্ভাবনা ও আমাদের দায়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে ঐতিহাসিক জুলাই মাসের চেতনা ধারণ ও উদ্যাপনের অংশ হিসেবে মাসব্যাপী সেমিনার সিরিজের প্রথম আয়োজন ছিল এটা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘এই দেশের ছাত্র-জনতা ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। অনেকে নিহত ও আহত হয়েছেন। এ আন্দোলনের সময় আমরা জানতাম না ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হবে কি না।’
নিয়াজ আহমদ খান আরও বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের বিষয়টি একাডেমিকভাবে আলোচনা করা জরুরি। এ জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি শুধু একটি সরকারের পতনের বার্ষিকী নয়, বরং একটি জাতির গণতান্ত্রিক চেতনার পুনর্জাগরণের বার্ষিকী। বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগণ বারবার সাহস, ঐক্য ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রমাণ দিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থান—এই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতারই একটি অংশ চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান।
গণ-অভ্যুত্থানকে ‘অনিবার্য রাজনৈতিক বিস্ফোরণ’ অভিহিত করে কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে কর্তৃত্ববাদী শাসন চালিয়েছে। জুলাইয়ের গণজোয়ার ছিল এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ। এ অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক রূপান্তরের উদাহরণ হয়ে থাকবে। যুব নেতৃত্ব ছিল এ আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান। সেমিনার সঞ্চালনা করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র জন ত ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব