গুগল সার্চে হঠাৎ ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম মুছে ফেলার উপায় খোঁজার প্রবণতা বাড়ছে কেন
Published: 11th, January 2025 GMT
মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ সম্প্রতি মেটার মাধ্যমগুলোয় তৃতীয় পক্ষের (থার্ড পার্টি) ফ্যাক্টচেকিং ব্যবস্থা বন্ধ ও কনটেন্ট মডারেশন নীতি শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের ফিডে রাজনৈতিক কনটেন্ট সীমিত রাখার আগের সিদ্ধান্তও প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন। এ ঘোষণার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও থ্রেডস অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার উপায় খোঁজার প্রবণতা গুগল সার্চে হঠাৎ বেড়ে গেছে।
সমালোচকেরা মনে করছেন, আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ও রাজনৈতিক চাপ এড়াতেই মেটা এই নীতি পরিবর্তন করেছে। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে মেটার মাধ্যমগুলোয় ঘৃণামূলক বক্তব্য, ভুল তথ্য ও সহিংস কনটেন্ট আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে।
মেটার নীতিগত পরিবর্তন নিয়ে জাকারবার্গের ঘোষণার পরপরই ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গুগল ট্রেন্ডসের তথ্যানুসারে, ‘ফেসবুক স্থায়ীভাবে মুছে ফেলার উপায়’, এই অনুসন্ধান গত দুই দিনে সর্বোচ্চ ১০০ পয়েন্টে পৌঁছেছে। এটি ব্যবহারকারীর আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে বোঝায়। অন্যদিকে ‘ফেসবুক থেকে সব ছবি মুছে ফেলার উপায়’, ‘ফেসবুকের বিকল্প’, ‘ফেসবুক ছাড়ার উপায়’, ‘থ্রেডস অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা’ ও ‘লগইন ছাড়াই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা’—এসব বিষয়েও সার্চ বা তথ্য খোঁজার পরিমাণ পাঁচ হাজার শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত তিন মাসে ফেসবুক মুছে ফেলার বিষয়ে সার্চ স্কোর ৭৫ পয়েন্টে স্থির ছিল। তবে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও মেটার সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তনের ফলে এটি ১০০ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
মেটার কনটেন্ট মডারেশন ও ফ্যাক্টচেকিং ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা ছিল। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ছড়িয়ে পড়া সহিংস বার্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। একইভাবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্যও মেটাকে দায়ী করা হয়। ২০২১ সালে জাকারবার্গ বলেছিলেন, রাজনীতি ও বিতর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করুক, এমনটা ব্যবহারকারীরা চান না। এরপর ফিড থেকে রাজনৈতিক কনটেন্ট কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এখন সেই নীতি থেকে সরে আসছে মেটা। জাকারবার্গের দাবি, নতুন নীতিমালা বাক্স্বাধীনতার পরিবেশ আরও শক্তিশালী করবে। ফ্যাক্টচেকিংয়ের দায়িত্ব আর তৃতীয় পক্ষের ওপর থাকবে না। এর বদলে টুইটারের ‘কমিউনিটি নোটস’-এর মতো ব্যবহারকারীরা নিজেই পোস্টে প্রাসঙ্গিক তথ্য যোগ করতে পারবেন।
এ পরিস্থিতিতে ‘ফেসবুকের বিকল্প’ খোঁজার প্রবণতাও বেড়েছে। ব্লুস্কাই ও মাস্টোডন প্ল্যাটফর্ম দুটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। অবশ্য ইলন মাস্ক টুইটারের মালিকানা নেওয়ার পরের সময় থেকে এগুলোর ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছিল।
মাস্টোডনের প্রধান নির্বাহী ইউজেন রশকো মেটার নীতিগত পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি ‘বিবেকবান যে কারও জন্য চিন্তার বিষয়’। তিনি জানান, থ্রেডস থেকে মাস্টোডনে কনটেন্ট শেয়ার করলে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও নীতি লঙ্ঘনের জন্য তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
সূত্র: টেকক্রাঞ্চ
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্রিল্যান্সিং করে ২২ বছরের তানিয়ার মাসে আয় লাখ টাকা
অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল তানিয়া খলিলের (২২)। বিয়ের বছরখানেক পরই মা হন তিনি। এরই মধ্যে সংসার আর শিশুসন্তান সামলিয়েই তিনি হয়ে ওঠেন ফ্রিল্যান্সার। নিজে ফ্রিল্যান্সিং শিখে অন্যদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এখন তাঁর মাসে আয় প্রায় এক লাখ টাকা।
তানিয়ার বাড়ি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বাজারপাড়া এলাকায়। ২০২১ সালে মাটিরাঙ্গা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী ইব্রাহিম খলিল পেশায় ফ্রিল্যান্সার। সেই সুবাদে তানিয়ারও এ জগতে চলা শুরু। ২০২৩ সালের শুরুতে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খাগড়াছড়ি সদরে চলে আসেন। সেখানেই এখন দুজন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালান।
তানিয়া জানান, বিয়ের পর পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। এর মধ্যেও ঘরে বসে কিছু করতে চাইতেন। এরপর স্বামী ইব্রাহিম খলিল তাঁকে ফ্রিলান্সিং শেখার জন্য উৎসাহ দিতে থাকেন। তিনিও সে সুযোগ হাতছাড়া করেননি।
প্রথম আয় আমাকে অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মনে হয়েছিল, সত্যিই কিছু করার সামর্থ্য আছে আমার।—তানিয়া খলিল, ফ্রিল্যান্সারতানিয়া খলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রথমে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শেখা শুরু করি। রং, লে আউট, টাইপোগ্রাফি—সবই আমার কাছে নতুন ছিল। নিজের আগ্রহ থাকায় দ্রুত শিখে ফেলি। কয়েক মাসের মধ্যেই নিজেকে ফ্রিল্যান্সিং বাজারের জন্য তৈরি করে ফেলতে সক্ষম হয়েছি।’
ফ্রিল্যান্সিং শেখার মধ্যেই ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম কাজ পেয়েছেন তানিয়া। লোগো ডিজাইন করে সে মাসে তিনি ১৩ ডলার আয় করেছিলেন। এর পর থেকে আর থেমে থাকতে হয়নি তাঁকে। সেই স্মৃতি মনে করে তানিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম আয় আমাকে অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মনে হয়েছিল সত্যিই কিছু করার সামর্থ্য আছে আমার।’
তানিয়া বলেন, লোগো ডিজাইনের পর ব্র্যান্ড আইডেনটিটি, বিজনেস কার্ড, লেটারহেড তৈরিসহ নানান ধরনের কাজে দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি। গ্রাহকদের খুশি করতে পারায় দ্রুতই আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম বাড়ে তাঁর। এরপর একের পর এক কাজ আসতে থাকে। আয়ও সমানতালেই বাড়তে থাকে। বর্তমানে তিনি ফাইভারের পাশাপাশি আপ ওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সের কাজ করেন।
সম্প্রতি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা ভবনের দোতলায় প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের বিশাল কক্ষে সারিবদ্ধভাবে ল্যাপটপ নিয়ে বসে রয়েছেন কয়েকজন তরুণী। তানিয়া তাঁদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। একটু শুনতেই বোঝা গেল তানিয়া তরুণীদের গ্রাফিক ডিজাইন কীভাবে করতে হয়, তা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।তানিয়ার জন্য এসব কাজ অবশ্য খুব একটা সহজ ছিল না। সময়মতো কাজ জমা দেওয়া, গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ, সন্তানকে দেখাশোনা—সব মিলিয়ে প্রতিদিনই ছিল চ্যালেঞ্জের। তানিয়া বলেন, ‘পরিবারের সাপোর্ট না থাকলে এটা সম্ভব হতো না। আমার স্বামী এখনো আমার সবচেয়ে বড় সহযোগী।’
খাগড়াছড়ি শহরে নারীদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তানিয়া খলিল। সম্প্রতি তোলা