মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ সম্প্রতি মেটার মাধ্যমগুলোয় তৃতীয় পক্ষের (থার্ড পার্টি) ফ্যাক্টচেকিং ব্যবস্থা বন্ধ ও কনটেন্ট মডারেশন নীতি শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের ফিডে রাজনৈতিক কনটেন্ট সীমিত রাখার আগের সিদ্ধান্তও প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন। এ ঘোষণার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও থ্রেডস অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার উপায় খোঁজার প্রবণতা গুগল সার্চে হঠাৎ বেড়ে গেছে।

সমালোচকেরা মনে করছেন, আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ও রাজনৈতিক চাপ এড়াতেই মেটা এই নীতি পরিবর্তন করেছে। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে মেটার মাধ্যমগুলোয় ঘৃণামূলক বক্তব্য, ভুল তথ্য ও সহিংস কনটেন্ট আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে।

মেটার নীতিগত পরিবর্তন নিয়ে জাকারবার্গের ঘোষণার পরপরই ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গুগল ট্রেন্ডসের তথ্যানুসারে, ‘ফেসবুক স্থায়ীভাবে মুছে ফেলার উপায়’, এই অনুসন্ধান গত দুই দিনে সর্বোচ্চ ১০০ পয়েন্টে পৌঁছেছে। এটি ব্যবহারকারীর আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে বোঝায়। অন্যদিকে ‘ফেসবুক থেকে সব ছবি মুছে ফেলার উপায়’, ‘ফেসবুকের বিকল্প’, ‘ফেসবুক ছাড়ার উপায়’, ‘থ্রেডস অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা’ ও ‘লগইন ছাড়াই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা’—এসব বিষয়েও সার্চ বা তথ্য খোঁজার পরিমাণ পাঁচ হাজার শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত তিন মাসে ফেসবুক মুছে ফেলার বিষয়ে সার্চ স্কোর ৭৫ পয়েন্টে স্থির ছিল। তবে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও মেটার সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তনের ফলে এটি ১০০ পয়েন্টে পৌঁছেছে।

মেটার কনটেন্ট মডারেশন ও ফ্যাক্টচেকিং ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা ছিল। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ছড়িয়ে পড়া সহিংস বার্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। একইভাবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্যও মেটাকে দায়ী করা হয়। ২০২১ সালে জাকারবার্গ বলেছিলেন, রাজনীতি ও বিতর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করুক, এমনটা ব্যবহারকারীরা চান না। এরপর ফিড থেকে রাজনৈতিক কনটেন্ট কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এখন সেই নীতি থেকে সরে আসছে মেটা। জাকারবার্গের দাবি, নতুন নীতিমালা বাক্‌স্বাধীনতার পরিবেশ আরও শক্তিশালী করবে। ফ্যাক্টচেকিংয়ের দায়িত্ব আর তৃতীয় পক্ষের ওপর থাকবে না। এর বদলে টুইটারের ‘কমিউনিটি নোটস’-এর মতো ব্যবহারকারীরা নিজেই পোস্টে প্রাসঙ্গিক তথ্য যোগ করতে পারবেন।

এ পরিস্থিতিতে ‘ফেসবুকের বিকল্প’ খোঁজার প্রবণতাও বেড়েছে। ব্লুস্কাই ও মাস্টোডন প্ল্যাটফর্ম দুটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। অবশ্য ইলন মাস্ক টুইটারের মালিকানা নেওয়ার পরের সময় থেকে এগুলোর ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছিল।

মাস্টোডনের প্রধান নির্বাহী ইউজেন রশকো মেটার নীতিগত পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি ‘বিবেকবান যে কারও জন্য চিন্তার বিষয়’। তিনি জানান, থ্রেডস থেকে মাস্টোডনে কনটেন্ট শেয়ার করলে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও নীতি লঙ্ঘনের জন্য তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

সূত্র: টেকক্রাঞ্চ

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

তৃতীয় দফা ভোটেও জয়, জোহরান এখন নিউইয়র্ক সিটির আনুষ্ঠানিক মেয়রপ্রার্থী

ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানির বিজয় গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচন বোর্ড। এর ফলে আসছে নভেম্বরের মেয়র নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাঁর মনোনয়ন চূড়ান্ত হলো।

গতকাল প্রকাশিত র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটের (পছন্দের ক্রমানুযায়ী পাঁচজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া) ফলাফলে দেখা গেছে, জোহরান তৃতীয় ধাপে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন। অথচ তুলনামূলকভাবে অপরিচিত নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে ভোটের প্রচার শুরু করেছিলেন তিনি। তৃতীয় ধাপে জয় পেতে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হয়। নিউইয়র্কে ২০২১ সাল থেকে শুরু হয় র‍্যাঙ্কড চয়েস ভিত্তিতে ভোটগ্রহণ।

ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে জোহরান নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের মুখোমুখি হবেন।

২০২১ সালে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিসেবে জয় পান অ্যাডামস। তবে এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও পরে বিচার বিভাগ খারিজ করে দেন। এরপরই দল থেকে সরে দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা একটি নতুন ভিডিওতে জোহরান তাঁর প্রাইমারিতে পাওয়া জয়কে ২০২১ সালে অ্যাডামসের নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

মামদানি বলেন, ‘আমরা সব সময় ভেবেছি, আমাদের বিজয় আসবে র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটের একাধিক ধাপের পর। প্রথম রাউন্ডেই যখন আমরা এত ভোট পেলাম, যা এরিক অ্যাডামস গত নির্বাচনে সাত রাউন্ড মিলিয়েও পাননি—এটা সত্যিই বিস্ময়কর ছিল।’

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৩৩ বছর বয়সী মামদানি একজন মুসলিম, জন্ম উগান্ডায়। তিনি নিজেকে গণতন্ত্রপন্থী সমাজতান্ত্রিক হিসেবে পরিচয় দেন। প্রাইমারিতে মধ্যপন্থী অভিজ্ঞ রাজনীতিক অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়েছেন তিনি।

জোহরান মামদানির জয় ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে। তাঁদের উদ্বেগের কারণ, নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তিনি রিপাবলিকানদের আক্রমণের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন।

জোহরানের জয় ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে। তাঁদের উদ্বেগের কারণ, নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে মামদানি রিপাবলিকানদের আক্রমণের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন।

নতুন ভিডিওতে জোহরান বলেন, তাঁর লক্ষ্য মানুষের সমর্থন রিপাবলিকান দল থেকে আবার ডেমোক্রেটিক দলের দিকে ফিরিয়ে আনা।

উল্লেখ্য, জোহরান নিউইয়র্ক সিটির এমন কয়েকটি এলাকায় জয়ী হয়েছেন যেখানকার বাসিন্দারা গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন।

নির্বাচন বোর্ড থেকে জোহরানের জয় নিশ্চিত করার পর ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যদি মামদানি চূড়ান্ত নির্বাচনে জেতেন ও মেয়র হিসেবে নিউইয়র্ক সিটিতে অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তখন তিনি কীভাবে তা সামলাবেন।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘তাহলে তো তাঁকে আমাদের গ্রেপ্তার করতেই হবে। দেখুন, আমাদের দেশে কমিউনিস্টের কোনো দরকার নেই। যদি কেউ থাকে, তবে আমি দেশের পক্ষ থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে তাঁর ওপর নজর রাখব।’
জোহরান এর আগে বলেছিলেন, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানগুলো লোকজনকে ভীত করে তুলছে এবং যেসব এজেন্ট এসব অভিযান পরিচালনা করছেন, তাঁরা আইন মেনে চলার কোনো আগ্রহই দেখান না।

আমরা সব সময় ভেবেছি, আমাদের বিজয় আসবে র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটের একাধিক ধাপের পর। প্রথম রাউন্ডেই আমাদের এত ভোট পাওয়া সত্যিই বিস্ময়কর ছিল; যা এরিক গত নির্বাচনে সাত রাউন্ড মিলিয়েও পাননি।জোহরান মামদানি, ডেমোক্রেটিক দল থেকে নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী

গত সপ্তাহে প্রাইমারির প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণার পর, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরানকে ফোন করে  প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। চূড়ান্ত গণনায় কুমো ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

দলীয় প্রাইমারিতে হেরে গেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন কুমো। তবে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে এটি নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

অ্যাডামসের পাশাপাশি জোহরান রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাটর্নি জিম ওয়াল্ডেনের মুখোমুখি হবেন।

আরও পড়ুনডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ পর্যায়ে অস্বস্তিকে পরোয়া করছেন না নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি৩০ জুন ২০২৫আরও পড়ুনজোহরান মামদানির নিউইয়র্ক জয় যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী রাজনীতিকে চাঙা করছে২৬ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তৃতীয় দফা ভোটেও জয়, জোহরান এখন নিউইয়র্ক সিটির আনুষ্ঠানিক মেয়রপ্রার্থী
  • হাজারো বন্দীর মধ্যে শুধু পাঁচজনের মাথায় কেন ‘লাল টুপি’
  • অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট কী এবং জীবনে এর কেমন প্রভাব পড়ে, জানেন?
  • হাতিরঝিলে শিশু ধর্ষণচেষ্টায় আসামির ১০ বছর কারাদণ্ড