১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারে দাম কমেছে ১৯ টাকা
Published: 4th, May 2025 GMT
ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজি সিলিন্ডারে দাম কমেছে ১৯ টাকা। নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৩১ টাকা। চলতি মে মাসে প্রতি কেজিতে দাম কমল ১ টাকা ৫৬ পয়সা। তবে এবার সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির দাম বেড়েছে।
আজ রোববার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ নতুন দাম ঘোষণা করেন। আজ সন্ধ্যা ছয়টা থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানানো হয়।
সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। তবে বাজারে নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি না হওয়ার অভিযোগ আছে। এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালির কাজে।
বিইআরসির নতুন দর অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাট) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১১৯ টাকা ২৪ পয়সা, যা গত মাসে ছিল ১২০ টাকা ৮১ পয়সা। এ হিসাবে বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হয়।
সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৬৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার ৬৫ টাকা ৫৭ পয়সা, যা আগে ছিল ৬৬ টাকা ৪১ পয়সা।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। আমদানিকারক কোম্পানির চালান (ইনভয়েস) মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের দাম হিসাব করে বিইআরসি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এলপ জ র দ ম ব ইআরস নত ন দ ১২ ক জ
এছাড়াও পড়ুন:
পোশাকশিল্পে এখনই রূপান্তরের সময়
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্ত সরবরাহ ব্যবস্থায় নতুন ভারসাম্য তৈরি করেছে। কারণ, এখন বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম (২০ শতাংশ) ও ভারত (২৫ শতাংশ)—তিন দেশই প্রায় সমান বা কাছাকাছি শুল্ক দেবে।
এই সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে চাপ তৈরি করলেও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করতে পারে। সে জন্য বাংলাদেশকে মানসম্পন্ন, টেকসই ও দ্রুত সরবরাহ করতে সক্ষম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এই সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য। এখনই আমাদের পোশাকশিল্পকে উৎপাদন, পণ্য বৈচিত্র্য, দ্রুত সরবরাহের পথে এগোতে হবে। তাহলে এই সুযোগ আমরা নিতে পারব।
এই সুযোগ নিতে হলে বাংলাদেশকে বেশ কিছু বিষয়ে জোর দিতে হবে।
এক. গত এক দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত মূলত টি-শার্ট, হুডি ও প্যান্টের মতো মৌলিক পণ্যের রপ্তানিতে এগিয়ে ছিল। কিন্তু এখন মার্কিন ক্রেতারা ছোট ছোট ক্রয়াদেশ, দ্রুত সরবরাহ ও নতুন চলভিত্তিক পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। সে জন্য বড় ক্রয়াদেশের পাশাপাশি কারখানার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জায়গা ছোট ও দ্রুত উৎপাদন লাইনের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। এক সপ্তাহের মতো সময়ে নানা বৈচিত্র্যময় পোশাক তৈরি করতে পারবে—এমন কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। ক্রয়াদেশের পরিমাণ অনুযায়ী দর–কষাকষি করে দাম ঠিক করতে হবে। অনেকে একটু বেশি দাম দিলেও দ্রুত সরবরাহ চায়।
দুই. চীন ও ভিয়েতনামের মতো পোশাকপণ্যে বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে শুধু দ্রুত সরবরাহ করছে না, তাদের পোশাকের বৈচিত্র্য অনেক বেশি। একই অবস্থা চীনেরও। অন্যদিকে বাংলাদেশ এখনো সুতার কাপড়ের ওপর নির্ভরশীল। পোশাকের বৈচিত্র্য বাড়াতে হলে উৎপাদন খাতে লেজার কাটিং, সিমলেস বন্ডিংয়ের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এখনই বড় বিনিয়োগ সম্ভব না হলে ছোট দল গড়ে তুলতে হবে, যারা বিদ্যমান যন্ত্র দিয়েই সিনথেটিক বা কৃত্রিম পোশাক তৈরি করতে পারবে। শুধু বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দিকে না ঝুঁকে, মধ্যম সারির ব্র্যান্ডগুলোর কাছে বৈচিত্র্যময় পোশাক নিয়ে যেতে হবে।
তিন. সিনথেটিক কাপড়ের দেশীয় উৎসে জোর দেওয়া দরকার। আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম অনেক সময় সহজে ক্রয়াদেশ পায়। তারা নিজেরা যেমন কৃত্রিম কাপড়ের পোশাকের উৎস গড়ে তুলেছে, তেমনি ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে চীন থেকে কম সময়ে ও খরচে এই কাপড় আমদানি করতে পারে।
বাংলাদেশ এখনো কৃত্রিম কাপড়ের জন্য চীন, কোরিয়া ও তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল। এসব দেশ থেকে কাপড় আমদানিতে ১৫ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। এতে সময় ও খরচ বাড়ে। সে জন্য দেশীয় বস্ত্রকলগুলো যেন কৃত্রিম তন্তু দিয়ে কাপড় তৈরি ও রং করার জন্য বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার। যাদের সক্ষমতা কম, তারা তুলার সুতা দিয়ে তৈরি পণ্যে সামান্য কৃত্রিম উপাদান যুক্ত করে নতুন নকশার পোশাক তৈরি করতে পারে।
চার. শুধু কমপ্লায়েন্স নয়, স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করতে হবে। এখন শুধু কর্মসহায়ক পরিবেশ, অর্থাৎ কমপ্লায়েন্সের শর্ত পূরণ করলেই হচ্ছে না। বৈশ্বিক, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা এখন পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, বিদ্যুৎ-পানির সাশ্রয়, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকদের অবস্থা, অর্থাৎ টেকসই উৎপাদনব্যবস্থা দেখতে চায়। ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষও এসব বিষয়ে সোচ্চার।
এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো, প্রতি কেজি কাপড় তৈরিতে কত লিটার পানি লাগে, প্রতি পিস পোশাকে কত ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে, কতজন শ্রমিক দীর্ঘমেয়াদে কাজ ধরে রাখে—এসব তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা দরকার। এসব তথ্য সহজ ও আকর্ষণীয় প্রতিবেদনের মতো করে সাজিয়ে রাখা দরকার, যেন সহজেই বিদেশি ক্রেতাদের দেখানো যায়। অনেক ক্রেতা হয়তো নিজে থেকে এসব জানতে চান না, কিন্তু দেখলে তাঁরা এর প্রশংসা করবেন এবং আস্থাও পাবেন। পোশাকশিল্পে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে হলে এসব বিষয় এখন অপরিহার্য।
পাঁচ. অর্থায়নের সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। অনেক কারখানা বড় পরিসরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। অর্থায়ন, কাঁচামালের দাম ও ক্রয়াদেশের অনিশ্চয়তা তাদের আটকে রাখছে। অথচ এখনই সঠিক জায়গায় বিনিয়োগের সময়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের মতো অর্থায়নের স্কিমগুলো সম্পর্কে জানা দরকার। নতুন ক্রেতাদের কাছ থেকে কিছু অগ্রিম নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আবার অন্য কারখানার সঙ্গে ক্রয়াদেশ ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়। এতে একবারে বড় ক্রয়াদেশ নেওয়া সম্ভব হয়। সঠিক বিনিয়োগ করলে নতুন বাজার ধরা সম্ভব।
সময় এখন এগিয়ে যাওয়ারডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা ২০ শতাংশ শুল্ক প্রথমে বাড়তি চাপ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি সম্ভাবনার নতুন দরজাও খুলে দিয়েছে। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ যেভাবে সস্তা শ্রম আর শুল্ক সুবিধার ওপর নির্ভর করে এসেছিল, সেই যুগ শেষ।
এখন আমাদের লড়তে হবে গুণগতমান, বৈচিত্র্য, উদ্ভাবন, স্বচ্ছতা ও গতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে। বৈশ্বিক ক্রেতারা এখনো বাংলাদেশকে পছন্দ করে। তাদের পছন্দের জায়গা ধরে রাখতে হলে আমাদেরও পরিবর্তিত হতে হবে। পিছিয়ে পড়ার সময় নেই। এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়।
সাইয়েদ তানজিম মোজাহের: পরিচালক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেলস
চট্টগ্রামভিত্তিক দ্বিতীয় প্রজন্মের তৈরি পোশাক উদ্যোক্তা