মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে নতুন করে আর কোনো সিন্ডিকেট বা চক্র চান না রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, এ শ্রমবাজার কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য নয়; বরং সব বৈধ এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে হবে। সিন্ডিকেট ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা।

আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ওই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এরপর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন বায়রার সদস্যরা। এ সময় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে কম খরচে কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করার দাবি তোলেন তাঁরা। এর জন্য কর্মী পাঠাতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ইতিমধ্যে সই করা সমঝোতা স্মারক সংশোধনেরও দাবি তোলা হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, সিন্ডিকেটের মূল হোতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক আমিন নূর, পলাতক রুহুল আমিন ওরফে স্বপন ও তাঁদের আওয়ামী সহযোগীরা বর্তমানে প্রভাবশালী কিছু রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরিতে তৎপর। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তারা এ তৎপরতা চালাচ্ছে। এ সরকারের সময়ে কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের তৈরি সিন্ডিকেট পুনর্গঠিত হতে পারে না।

এতে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিতর্কিত অনলাইন সফটওয়্যার বাতিল করার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের কাছে দাবি জানাতে হবে। সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন বায়রার সাবেক জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াজুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট নোমান চৌধুরী, বিএনপির ঢাকা জেলা সভাপতি ও বায়রার সদস্য খন্দকার আবু আশফাক, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও আকবর হোসেন, সাবেক সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মোস্তফা মাহমুদ।

স্মারকলিপিতে তাঁরা অভিযোগ করেছেন, সিন্ডিকেটকে গতবার কর্মীপ্রতি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। গতবার ৫ কোটি টাকা করে চাঁদা নিয়ে এজেন্সিকে সিন্ডিকেটের সদস্য করা হয়েছে। এবার ১৪ কোটি টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

এবার কম খরচে কর্মী পাঠানোর একটি বিকল্প উপায়ও তুলে ধরা হয়েছে স্মারকলিপিতে। এতে বলা হয়, সরকারিভাবে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) আগ্রহী কর্মীদের ডেটাবেজ তৈরি করতে পারে। সেই ডেটাবেজ থেকে রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী সংগ্রহ করবে। সরকার–নির্ধারিত খরচ ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেবে কর্মী। পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করবে বিএমইটি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, মালয়েশিয়া ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নিলেও কোনো দেশের জন্য নির্দিষ্ট এজেন্সিকে বাছাই করে দেওয়া হয় না। ওই সব দেশ থেকে সব এজেন্সি কর্মী পাঠাতে পারে। গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপরিকল্পিতভাবে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া সরকারকে বাছাই করার দায়িত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে সিন্ডিকেটের বীজ বপন করা হয়।

আরও পড়ুন২০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে মালয়েশিয়া চক্র২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

এর আগে একই দাবিতে ৪৫৩টি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের স্বাক্ষরসহ গত ২১ এপ্রিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি জমা দেন বায়রার সদস্যরা।

আরও পড়ুনমালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট চান না বায়রার সদস্যরা, মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি জমা২১ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম রকল প ত সরক র র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘শরিয়াহ ও সরকারি নীতিবিরোধী’: নারী ও ইরানি লেখকদের ১৪০টিসহ ৬৭৯ বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি–সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।

নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চার বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের নানা নিয়মকানুন জারি করেছে তালেবান সরকার। চলতি সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০ প্রদেশে ‘ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অনেকের মতে, এসব নিয়মকানুন আফগানিস্তানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা বা মিডওয়াইফারি কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১৮ বিষয়ে পাঠদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার ৬টিই নারীদের নিয়ে, যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেনস সোসিওলজি’।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া ১৪ জুলাই ২০২৫

তালেবান সরকার বলেছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ভিত্তিতে নারী অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

তালেবানের এসব নিয়মকানুন দেশটির মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তবে আফগানিস্তানের বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, নারী লেখকদের সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ বইগুলোর তালিকায় আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির বইও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চার বছরে তালেবান যা করেছে, তাতে পাঠ্যসূচিতে এমন পরিবর্তনে অবাক হইনি। নারীরা পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের মতামত ও লেখালিখির অধিকারও দমন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

আরও পড়ুনরাশিয়ার পর আর কোন কোন দেশ তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে০৫ জুলাই ২০২৫

গত আগস্টের শেষ দিকে বই নিষিদ্ধের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিয়ুবি। তিনি বলেন, আলেম ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুধু নারী লেখকই নয়, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও রয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, আফগান পাঠ্যসূচিতে ইরানি বিষয়বস্তুর প্রবেশ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনতালেবান শাসনের তিন বছর, কেমন আছে আফগানিস্তান১৫ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ