শনিবার সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়া আবারও তার রাজনৈতিক মঞ্চ, মসনদ, ক্ষমতা আর দায়িত্ব কার তা নতুন করে এঁকে ফেলল। ৮০ বছরের নির্বাচনী ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিরোধীদলীয় লিবারেল পার্টি এমন একটি বিপর্যয় দেখল, যার অভিঘাত শুধু একটি দল বা একজন নেতার নয়—এটা গোটা রক্ষণশীল রাজনীতির এক চরম আত্মসমালোচনার উপলক্ষ হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির চমকপ্রদ বিজয় এটি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই লেবার পার্টি হয়ে উঠেছে আরও আত্মবিশ্বাসী, আরও দায়িত্বশীল।

কিন্তু ফলাফলের আগে চমকপ্রদ জয়-পরাজয় নিয়ে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ছিল অনিশ্চয়তার এক দোলাচল। সন্ধ্যা থেকে ভোটের ফলাফল আসামাত্রই টেলিভিশন পর্দায় চোখ রাখতেই দেখা গেল, কুইন্সল্যান্ডের ডিকসন আসনে ফলাফলের টালমাটাল সূচক হঠাৎ এক লাল রেখায় রঙিন হয়ে উঠেছে।

পিটার ডাটন, যিনি ২৪ বছর ধরে এই আসনের দাপুটে নেতা ছিলেন এবং অনেকের ধারণা ছিল এবারের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী—তিনি হেরে গেছেন। হারিয়েছেন এক নারী প্রার্থী, আলি ফ্রান্স, যিনি লেবার পার্টির হয়ে লড়ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে এটি ছিল এক প্রতীকী মুহূর্ত। পুরুষতান্ত্রিক নেতৃত্ব, রক্ষণশীল ভাবমূর্তি এবং ক্ষমতার যাওয়ার দম্ভ একটিমাত্র জনগণের রায়ে কীভাবে ধুলোয় মিশে যায়, তার এক বাস্তব উদাহরণ যেন এই ফলাফল।

অন্যদিকে দৃঢ় কিন্তু শান্ত কণ্ঠে যখন অ্যান্থনি আলবানিজ জাতির উদ্দেশে তাঁর বিজয় ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন সেখানে ছিল না কোনো জয়জয়কারের চিৎকার, বরং ছিল দায়িত্বের ভারগ্রস্ত এক কণ্ঠস্বর। তিনি বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ দায়িত্ব।’ লেবার পার্টির জন্য এই জয় শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতার নয়, এক অভ্যন্তরীণ আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ারও জয়। ৮৯টি আসনে জয়—যা আগের তুলনায় ১৪টি বেশি—এই ফল শুধু কৌশলের নয়, আদর্শিক অবস্থানেরও বহিঃপ্রকাশ।

এই নির্বাচনের ফলাফলে যেমন রয়েছে পরিসংখ্যানের বিস্ময়, তেমনি রয়েছে সামাজিক পরিবর্তনের স্পষ্ট ছাপ। ভোটাররা যেন বলেই দিয়েছেন—পুরোনো কথার মোড়ক আর বিশ্বাসযোগ্য নয়। মানুষের প্রত্যাশা এখন বদলেছে এবং রাজনীতিকে সেই বদলের প্রতিচ্ছবি হতে হবে।

লিবারেল পার্টির পতনের গল্পটা কিন্তু হঠাৎ ঘটেনি। এটা আসলে ধীরে ধীরে তৈরি হওয়া এক রাজনৈতিক নিঃসঙ্গতার ফল। বহুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছিল, দলটি মূলত করপোরেট শ্রেণির সুবিধাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা উপেক্ষা করে তারা বারবার পাশ কেটে গেছে। অথচ এই পুরো দশকই অস্ট্রেলিয়ার মানুষ গরমে পুড়েছে, বন্যায় ভেসেছে, ঝড়ে ছিন্নভিন্ন হয়েছে। এই জলবায়ু সংকটে যারা চুপ থেকেছে, তারা যে ভোটারদের হৃদয়ে স্থান হারাবে, তা অনুমান করা কঠিন ছিল না।

তবে শুধু জলবায়ুই নয়। এই নির্বাচনের ভেতরে চাপা পড়ে ছিল নারীদের দীর্ঘ ক্ষোভ, অসম সামাজিক ন্যায়বিচার, অভিবাসীদের প্রতি অবহেলা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে নারীদের হয়রানির ঘটনাগুলো লিবারেল পার্টির ভেতরের অবক্ষয় তুলে ধরেছিল। আর একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় যখন দ্রুত বেড়েছে—বাসাভাড়া থেকে শুরু করে সুপারমার্কেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যখন আকাশছোঁয়া, তখন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ নিশ্চুপ থাকেনি।

যদিও লেবার পার্টি-ই ক্ষমতায় ছিল গত তিন বছর; তবু বাস্তবতা না এড়িয়ে এই অভিজ্ঞতাগুলোকে মাথায় রেখেই তাদের প্রচারণা সাজিয়েছিল—স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাসস্থানের মতো মৌলিক বিষয়ে নজর দিয়েছে, যা সরাসরি মানুষ বিশ্বাস করেছে।

এদিকে অভিবাসন ও আদিবাসী অধিকার প্রশ্নে লিবারেল পার্টি প্রায় নির্লিপ্ত থেকে গেছে। ‘ভয়েস টু পার্লামেন্ট’ নামে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার যে প্রস্তাব, লেবার সেখানে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, আর লিবারেল সেখানে ‘না’ বলেছে। সেই না-এর প্রতিধ্বনি এবার ব্যালট বাক্সে ফিরে এসেছে।

এই নির্বাচনের আরেক চমক অবশ্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উত্থান। বিশেষ করে, ‘টিল ইনডিপেনডেন্টস’ নামে পরিচিত একঝাঁক প্রার্থী, যাঁরা মূলধারার দলগুলোর বাইরে থেকে এসে পরিবেশ, নারীর অধিকার ও স্বচ্ছতা নিয়ে সরব হয়েছেন—তাঁদের প্রতি ভোটারদের আস্থা বেড়েছে। তাঁরা দেখিয়েছেন, রাজনীতি মানেই দলবাজি আর ফাঁকা বুলি নয়, বরং জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক দায়িত্বও হতে পারে।

লেবার পার্টির এই জয়ের পেছনে অবশ্যই ব্যক্তিগত এক কৌশলী নেতৃত্বের নাম উঠে আসে—অ্যান্থনি আলবানিজ। তিনি রাজনীতির মঞ্চে চমক সৃষ্টি করেন না, মাইক হাতে গর্জে ওঠেন না। কিন্তু তাঁর বাম মধ্যপন্থা আদর্শ, স্থির ও ধৈর্যশীল মনোভাব অস্ট্রেলিয়ার জনগণের মধ্যে একধরনের আস্থা তৈরি করেছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মেডিকেয়ার আরও সম্প্রসারিত হবে, উচ্চশিক্ষা আরও সহজলভ্য হবে এবং শিশুযত্নসহ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ, বাসযোগ্য ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা হবে।

এই ফলাফল বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে এনেছে। লিবারেল জোট ক্ষমতায় এলে স্কিলড অভিবাসীদের সংখ্যা হ্রাস, ওয়ার্ক ভিসার শর্ত কঠোর হওয়া এবং স্টুডেন্ট ভিসার ফি বৃদ্ধি ও নিয়মে জটিলতা—সবচেয়ে বড় কথা, প্রায় ২৫ শতাংশ অভিবাসী হ্রাস—এই সবকিছুই অভিবাসীদের হতাশ করছিল। লেবার পার্টির নীতিগত অবস্থান অভিবাসীবান্ধব এবং এই সরকার ক্ষমতায় আসার ফলে বিশেষত স্বাস্থ্য, প্রবীণদের যত্ন এবং প্রযুক্তি খাতে দক্ষ অভিবাসীদের নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলেই ধারণা।

তবে জয় মানেই সব সমস্যার সমাধান নয়। আলবানিজের সামনে এখন বিশাল এক দায়িত্ব—সাধারণ জীবনযাত্রার ব্যয় সংকোচন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিশ্বমন্দার সম্ভাব্য ধাক্কা সামাল দেওয়া, গৃহনির্মাণ–সংকট ও জলবায়ু সংকটে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ। মানুষ ভোট দিয়েছে আশায় এবং সেই আশা পূরণ না হলে এই বিজয়ের উল্লাসও খুব তাড়াতাড়ি ফিকে হয়ে যেতে পারে।

আর লিবারেল পার্টির জন্য এখন আত্মসমালোচনার সময়। পুরোনো চাল আর পুরোনো মুখ নিয়ে তারা আগামীর রাজনীতিতে টিকতে পারবে না। নারীর নেতৃত্ব, সামাজিক ন্যায়বিচার ও জলবায়ু এবং অভিবাসনভাবনা নিয়ে যদি নতুন করে দল পুনর্গঠিত না হয়, তবে আগামী কয়েক দশকেও হয়তো ক্ষমতার মুখ দেখা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে।

অস্ট্রেলিয়ার এই নির্বাচনী ফলাফল তাই শুধু একটি সরকার নতুন করে ক্ষমতায় আসা কিংবা আরেকটির উত্থান নয়—এটি এক গভীর মানসিক পরিবর্তনের প্রতিফলন। রাজনীতির যে ভাষা গত শতকের দিকে চেয়ে তৈরি হয়েছে, সেই ভাষা আজ আর গ্রহণযোগ্য নয়। এখন মানুষ চায় সহানুভূতি, বাস্তবতা ও সমতার রাজনীতি। অস্ট্রেলিয়া সেটা করে দেখিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বাকিরা এই বার্তা কতটা শুনতে পায়।

কাউসার খান, প্রথম আলোর সিডনি প্রতিনিধি ও অভিবাসন আইনজীবী

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন ত আলব ন জ ক ষমত য র জন য ফল ফল জলব য

এছাড়াও পড়ুন:

বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল

বর্তমান সংকটের জন্য সরকারকে দায়ী করে, সংকট উত্তরণে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মন যুগিয়ে চলার নীতি বাদ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি দলের শীর্ষনেতারা। তারা বলেছেন, সরকার শুরু থেকে জনগণ বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার কথা না ভেবে, কখনও বিএনপি, কখনও জামায়াত, কখনও এনসিপির চাপে সিদ্ধান্ত বদল করেছে, বর্তমান সংকটের এটাও একটা বড় কারণ।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এবি পার্টি ও আপ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘স্বল্প আস্থার সমাজে সংস্কার ও নির্বাচনী ঐক‍্যের রাজনৈতিক চ‍্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।

প্রধান আলোচক অধ্যাপক মুশতাক হোসেন বলেন, ‘‘সমাজকে পরিবর্তন করতে যে জাতি জীবন দিতে পারে সেই জাতি অনেক শ্রদ্ধার। নতুন বন্দোবস্ত চুক্তি করে হয় না, কারণ কায়েমি স্বার্থবাদীরা নতুন বন্দোবস্ত মেনে নেয় না। তবে নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’’

ইংল্যান্ডের টরি পার্টির বিরুদ্ধে দুর্বল রাজনৈতিক দলগুলোর বিপ্লবের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেখানেও সমঝোতা হয়নি, সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছিল।’’ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অনুসন্ধান চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায় তারা উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষ সব জায়গা দখলের পদ্ধতি জানে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘আস্থার অভাবে ঝগড়া করে এদেশে রাজনৈতিক দলগুলো সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথচ আস্থাশীল হলে সবাই লাভবান হতে পারত। এ দেশের মানুষের সহজে ক্ষমা করে দেয়ার প্রবণতার কারণে আওয়ামী লীগ বেচে গেছে। স্বার্থবাদী দলগুলো 'ভাইভাই রাজনীতি' করে বলেই স্বৈরাচার আর ফ্যাসিস্ট বারবার আসে।’’ 

অপরাধ করলে কোন না কোনভাবে শাস্তির ব্যবস্থা থাকতেই হবে জানিয়ে অধ্যাপক মুশতাক বলেন, ‘‘আস্থাহীনতা কমাতে হলে সামাজিক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে যেন অপরাধ করলে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়। অনিয়ম করলে তাকে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয়ভাবে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘সকল শ্রেণী পেশার মানুষের আস্থা অর্জন কঠিন হলেও নিজেদের মধ্যে আস্থা বজায় রাখতে হবে এবং চোরদের সাথে কখনো আপোষ করা যাবে না। যারা আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল তাদের কোন না কোনভাবে বিচার বা ক্ষমা চাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’’

ঐক্যমত্য বা নতুন সংবিধান এখনি না হলেও লড়াই চালিয়ে গেলে জনতা পাশে থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ জানান। 

সভাপতির বক্তব্যে হাসনাত কাইউম বলেন, ‘‘অনেক মতদ্বৈততা থাকলেও দেশের প্রশ্নে এক হয়ে নতুন রাজনীতির জন্য কাজ করতে হবে। এখনি রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। হাসিনা-ওবায়দুল কাদেররা সাংবিধানিক পদ্ধতি এমনভাবে সাজিয়েছে তার মধ্যেই ফ্যাসিস্ট হওয়ার উপাদান নিহিত আছে। অতীতে জনগণের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারার কারণে সফলতা এসেছে। এবার আন্দোলনের নেতৃত্বকে কিছু বুড়ো মানুষ ভুল পথে পরিচালিত করেছে, এবং টাকাওয়ালাদের কাছে নিয়ে গেছে, ফলে রাষ্ট্রের সংস্কার আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’’ 

পুরোনো পথে নতুন বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন হবে না। তিনটি দলের এই আয়োজন দল ও ব্যক্তি স্বার্থের জন্য নয় বলেও জানান তিনি।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘‘বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ কথায় কথায় সংবিধানের রেফারেন্স দেন, এটা ভালো। তবে তার কাছে প্রশ্ন- ফ‍্যসিস্ট হাসিনা সংবিধানের কোন আর্টিকেলের আলোকে আপনাকে গুম করে বিনা ভাড়ায় বিনা টিকিটে শিলংয়ে নিয়ে গিয়েছিল? আমাদের জানতে ইচ্ছে করে।’’ 

এবি পার্টি শক্তিশালী হলে তার লোকেরা পাবলিক টয়লেট ইজারা নেবে না এমন গ্যারান্টি নাই মন্তব্য করে মঞ্জু বলেন, এই সংস্কৃতি বদলানোর জন্যই নতুন রাজনীতি দরকার। নতুন রাজনীতি দাঁড়াতে না পারার কারণ খোঁজার আহ্বান জানান তিনি। 

অধ্যাপক ইউনূসের সরকার তিন দলের চাপে পড়ে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘জনগণের জন্য যা ভালো সেটা করতে হবে; কোনো দলের স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়।’’ জনগণের কথা না শোনায় উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'আপনাদের কিছুদিন পর জনগণের কাতারে আসতে হবে।'

সরকারের উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন, এক-দুইটা রাজনৈতিক দলের মন যুগিয়ে চললে জুলাই শহীদ এবং আহতদের কাছে আজীবন ভিলেন হিসেবে অভিশাপ পেতে হবে।


আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, হাসিনার হাতে ভেঙ্গে পড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক শক্তিগুলি ক্ষমতা ভোগের উৎসবে মেতেছে। ভোট কেন্দ্র দখলে অভ্যস্ত এবং বিপ্লব বিরোধীরা ক্ষমতায় আসলে জনগন আবারো হতাশ হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।

জনগণকে অন্ধকারে রেখে চেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জনগনের রাষ্ট্র গঠন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি করা উচিৎ বলে মত দেন তিনি। গণভোটে দুইটা ব্যালট রাখার প্রস্তাব আবারো তুলে ধরেন তিনি। সংস্কার প্রশ্নে জনগণকে সাথে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন তিনি। 

শহিদ উদ্দিন স্বপন বলেন, আইনের শাসন না থাকা এবং বৈষম্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা।  জুলাই অভ্যুত্থানের পর সমাজ বিপ্লবের সম্ভাবনা তৈরি হলেও রাজনৈতিক নেতাদের পুরোনো চিন্তাচেতনার কারণে মানুষ আশাহত হয়েছে। যেটুকু অগ্রগতি গত ১৫ মাসে হয়েছে তাকে ভিত্তি ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।

সৈয়দ হাসিব উদ্দিন বলেন, এই মুহুর্তে চরম দুর্বল অবস্থায় আছে বাংলাদেশ, এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এই অবস্থার মোকাবেলায় নির্বাচন জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোকে গরম বক্তব্য না দিয়ে জনগনকে সাথে নিয়ে সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে। 


অধ্যাপক আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, আমাদের দেশের সর্বস্তরে আস্থার প্রচণ্ড সংকট, এটি দূর করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের কাছে পরীক্ষা দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা জীবিত থাকতে আওয়ামী লীগ এদেশে রাজনীতি করবে সেটি হতে পারে না। অহমিকা ছেড়ে সব দলকে ঐক্যের পথে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ডায়নোসর অনেক বড় ছিল কিন্তু আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

আরেফিন মো. হিজবুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করতে শেখ মুজিবের ছবি টানানো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাঠামোগত ফ্যাসিবাদ সংকটকে তরান্বিত করছে। যেসব জায়গায় ফ্যাসিবাদ তৈরি হওয়ার আশংকা আছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে।

দিদার ভুইয়া বলেন, ছেড়া 'স্যান্ডেল থেকে ফাইভস্টার হোটেল কোন বিপ্লবীর চরিত্র হতে পারে না।' রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আস্থাহীনতা বর্তমান সংকটের অন্যতম কারণ। উচ্চকক্ষে পিআর না মেনে বিএনপি নিজেদের ক্ষতি করছে। এমনকি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকা তৈরি হচ্ছে। 

ব্যারিস্টার জোবায়ের বলেন, প্রশাসনে নিজস্ব লোক সেট করতে ব্যস্ত তিন দল অথচ টেকসই রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য রাজনৈতিক ইকো সিস্টেম জরুরি।

সভায় তিন দলের ঐক্যবদ্ধ পথ চলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। 

রাইজিংবিডি/নঈমুদ্দীন নি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
  • ভুল শুধরে জনগণের আস্থা ফেরানোর সুযোগ এই নির্বাচন: আইজিপি
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবকে নিয়ে বাবুলের গণসংযোগ ও ৩১ দফার লিফলেট
  • ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে