Samakal:
2025-09-19@15:10:08 GMT

২০ দিনেও মেলেনি ভিজিএফের চাল

Published: 5th, May 2025 GMT

২০ দিনেও মেলেনি ভিজিএফের চাল

ইলিশের বেড়ে ওঠা ও অন্য মাছের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতে সমুদ্রে মাছ শিকারের ওপর ১৫ এপ্রিল শুরু হয়েছে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এর ২০ দিনেও ভিজিএফের চাল আসেনি কক্সবাজারের টেকনাফে। এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার জেলেদের মধ্যে। ‘ভাত দাও না-হলে মাছ ধরতে দাও’ স্লোগান নিয়ে গতকাল সোমবার বিক্ষোভ হয়েছে মেরিন ড্রাইভ ঘাট এলাকায়। এতে শত শত জেলে অংশ নেন। 
সোমবার দুপুরে মেরিন ড্রাইভ ঘাট এলাকায় কথা হয় মুহাম্মদ আমিনের সঙ্গে। উপজেলার মহেশখালীয়াপাড়ার এ বাসিন্দা জেলে হিসেবে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধিত। গত মৌসুমের নিষেধাজ্ঞার সময় তিনি খাদ্য সহায়তা হিসেবে পেয়েছিলেন ৮৬ কেজি চাল। এবার চাল পাননি। ছোটবেলা থেকেই সাগরে মাছ ধরতে শেখেন। যে কারণে অন্য কাজ শেখেননি। তিনি বলেন, ৮ সদস্যের সংসারে দিনে অন্তত ৪ কেজি চাল লাগে। সেই হিসাবে মাসে তাদের প্রয়োজন ১২০ কেজি চাল। তাঁর কাছে মাছ ধরা বন্ধ মানেই আয়-রোজগার বন্ধ। নিষেধাজ্ঞার ২০ দিন হতে চললেও চাল না পাওয়ায় হতাশ তিনি। 
আমিনের ভাষ্য, তিন বেলা কোনোমতে খাওয়ার জন্য চালের সঙ্গে ডাল, শাকসবজি, পেঁয়াজ-তেলের মতো অন্য জিনিসও দরকার। অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি কষ্টে সময় পার করছেন। অন্তত ভিজিএফের বরাদ্দ চাল পেলেও কোনোভাবে এক মাস চলতে পারতেন। আশপাশের জেলে পরিবারের অবস্থা একই। তাই কারও ধার দেওয়ার অবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়েছে। তাঁর কাছে নিষেধাজ্ঞার এই ৫৮ দিনের প্রতিটি দিনই দুশ্চিন্তার।
২০১৫ সাল থেকে সাগরে মাছ আহরণের ওপর বছরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন শুরু হয়। গত বছর পর্যন্ত এর সময়সীমা ছিল ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই। জেলেদের দাবির মুখে এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে ১৫ এপ্রিল শুরু হয়েছে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। যা চলবে ১২ জুন পর্যন্ত। উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ টেকনাফ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলেসংখ্যা ১০ হাজার ৬৮৩। তাদের ১ হাজার ৪০০ নৌযান নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন। শুরুতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সালে সব ধরনের নৌযানকে এ তালিকাভুক্ত করা হয়। 
জেলেদের ভাষ্য, নিবন্ধনের বাইরেও উপজেলায় পাঁচ হাজারের বেশি জেলে আছেন। তাদের জীবন নিষেধাজ্ঞার সময় আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। জীবনের অর্ধেক সময় মাছ শিকারে পার করেও তালিকায় নাম না ওঠায় আফসোস রয়েছে ডেইলপাড়ার বাসিন্দা মো.

বেলাল উদ্দিনের। তিনি বলেন, বাকি জীবনও কাটাতে চান মাছ ধরে। কিন্তু এখনও নিবন্ধিত হতে পারেননি। যে কারণে শিকার নিষিদ্ধের সময় অনেক কষ্টে দিন পার করতে হয়। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেলে মোহাম্মদ হাসানের চার ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছে। এদের দু’জন এসএসসি পরীক্ষার্থী। সাগরে মাছ ধরেই সংসার চালাতে হয় তাঁকে। কোনো সঞ্চয় নেই। এর মধ্যে এবার নিষেধাজ্ঞার সময়ে বরাদ্দ চালও পাননি। বাকি দিনগুলো কীভাবে চলবে, এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। হাসানের ভাষ্য, দ্বীপের মানুষের সংসার চলে মাছ শিকার ও পর্যটন ব্যবসায়। এখন দুটিই বন্ধ। তাই কষ্টে দিন পার করছেন। এসএসসি পরীক্ষার্থী দুই সন্তানের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
কোরবানির ঈদের আগে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেপল্লির অবস্থা খুব খারাপ বলে জানান মুন্ডার ডেইল ঘাটের নৌযান মালিক এজাহার মিয়া। তাঁর আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে জেলেরা খারাপ পথে যেতে পারে। 
টেকনাফের পৌরসভা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার সৈয়দ আলমের সমুদ্রগামী ট্রলার রয়েছে। তাঁর ভাষ্য, সীমান্ত (ওপার) পরিস্থিতির কারণে দুই বছর ধরে আমাদের দুর্দিন যাচ্ছে। তার ওপর কোরবানির ঈদের সামনে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তবু সরকারি নির্দেশ মেনে যাতে কেউ মাছ শিকারে না যায়, জেলেদের অনুরোধ করছেন।
নিষেধাজ্ঞার ২০ দিনেও চাল না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ উপজেলা জাতীয় মৎস্য সমিতির সভাপতি মো. তৈয়ুব। তাঁর ভাষ্য, সরকারের উচিত চালের পাশাপাশি জেলেদের আর্থিক অনুদান দেওয়া।
এদিকে ‘ভাত দাও না-হলে মাছ ধরতে দাও’ স্লোগান নিয়ে সোমবার দুপুরে উপজেলার মেরিন ড্রাইভ ঘাটে বিক্ষোভ করেন শত শত জেলে। এতে তারা সাগরে মাছ ধরার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এবার এক মাস আগে এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। তাই ভিজিএফরের চাল আসতে সময় লাগছে। গত বছর এ উপজেলার নিবন্ধিত জেলেদের জন্য ৯১৮ টন চাল এসেছিল। এবারও একই পরিমাণ চাল আসতে পারে। জেলেদের বিক্ষোভ বিষয়ে তিনি জানান, কিছু মানুষ তাদের উস্কে দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। 
ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মাছ ধরা বন্ধের সময়ে চোরাকারবারিরা যাতে সুযোগ নিতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। জেলেরা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে চাল পান, সে চেষ্টা করছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন বন ধ ত ভ জ এফ র উপজ ল র প র কর ২০ দ ন করছ ন মৎস য র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের দাবি

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে যাঁদের বেওয়ারিশ হিসেবে রায়েরবাজার কবরস্থানে গণকবর দেওয়া হয়েছে তাঁদের মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে ‘জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মিলে এই সংগঠন গড়ে তুলেছেন।

আজ শুক্রবার দুপুরে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জুলাই শহীদদের গণকবরের পাশে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ দাবি জানান। এ সময় শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তাঁরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের গণকবর জিয়ারত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের গণকবরে থাকা শহীদদের পরিচয় শনাক্তের দাবি জানিয়ে আসছি। প্রতিটি মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করে তাঁদের পরিবারের কাছে মর্যাদার সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। আমাদের সন্তানের রক্তের ওপর গঠিত সরকারই যদি এভাবে শহীদদের অবহেলা করে, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে, সেটি নিয়ে আমরা আশঙ্কায় আছি।’

জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি সাধারণ সম্পাদক রবিউল আওয়াল বলেন, ‘এক বছর ধরে ১১৪টি পরিবার এখনো তাদের স্বজনদের কবর শনাক্ত করতে পারেনি। প্রতিনিয়ত তারা স্বজনদের শেষ চিহ্নটুকু খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সরকার তাদের সহযোগিতা করছে না। উচ্চ আদালত থেকে কবর শনাক্ত করে পরিবারকে বুঝিয়ে দিতে রায় দিলেও সরকার গড়িমসি করছে। আমরা অবিলম্বে এসব মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমরা আর কোনো টালবাহানা দেখতে চাই না।’

মোহাম্মদপুরে আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিখোঁজ হন গাড়িচালক মাহিন মিয়া। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে মাহিন মিয়ার মরদেহ খুঁজে পাননি স্ত্রী জেসমিন আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গত বছরের ১৮ জুলাই আমার স্বামী মোহাম্মদপুরে আন্দোলনে অংশ নেন। কিন্তু তাঁকে আর খুঁজে পাইনি। তাঁর লাশটাও দেখতে পাইনি। পরে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, অনেকগুলো লাশ নাকি রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু এখানে তাঁর কবর কোনটা, সেটি আজও জানতে পারিনি। আমার সন্তানকে তাঁর বাবার কবরটা পর্যন্ত দেখাতে পারিনি।’

যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনে অংশ নিয়ে মারা যান পোশাক ব্যবসায়ী সোহেল রানা। কিন্তু আজও তাঁর মরদেহ খুঁজে পায়নি পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সোহেল রানার মা রাশেদা বেগম বলেন, ‘এক বছর ধরে আমার ছেলের লাশের সন্ধান পাইনি। কবরটা কোথায় দেওয়া হয়েছে, সেটিও জানতে পারিনি। আমাদের আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে?’

সম্পর্কিত নিবন্ধ