Samakal:
2025-08-04@16:53:11 GMT

২০ দিনেও মেলেনি ভিজিএফের চাল

Published: 5th, May 2025 GMT

২০ দিনেও মেলেনি ভিজিএফের চাল

ইলিশের বেড়ে ওঠা ও অন্য মাছের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতে সমুদ্রে মাছ শিকারের ওপর ১৫ এপ্রিল শুরু হয়েছে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এর ২০ দিনেও ভিজিএফের চাল আসেনি কক্সবাজারের টেকনাফে। এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার জেলেদের মধ্যে। ‘ভাত দাও না-হলে মাছ ধরতে দাও’ স্লোগান নিয়ে গতকাল সোমবার বিক্ষোভ হয়েছে মেরিন ড্রাইভ ঘাট এলাকায়। এতে শত শত জেলে অংশ নেন। 
সোমবার দুপুরে মেরিন ড্রাইভ ঘাট এলাকায় কথা হয় মুহাম্মদ আমিনের সঙ্গে। উপজেলার মহেশখালীয়াপাড়ার এ বাসিন্দা জেলে হিসেবে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধিত। গত মৌসুমের নিষেধাজ্ঞার সময় তিনি খাদ্য সহায়তা হিসেবে পেয়েছিলেন ৮৬ কেজি চাল। এবার চাল পাননি। ছোটবেলা থেকেই সাগরে মাছ ধরতে শেখেন। যে কারণে অন্য কাজ শেখেননি। তিনি বলেন, ৮ সদস্যের সংসারে দিনে অন্তত ৪ কেজি চাল লাগে। সেই হিসাবে মাসে তাদের প্রয়োজন ১২০ কেজি চাল। তাঁর কাছে মাছ ধরা বন্ধ মানেই আয়-রোজগার বন্ধ। নিষেধাজ্ঞার ২০ দিন হতে চললেও চাল না পাওয়ায় হতাশ তিনি। 
আমিনের ভাষ্য, তিন বেলা কোনোমতে খাওয়ার জন্য চালের সঙ্গে ডাল, শাকসবজি, পেঁয়াজ-তেলের মতো অন্য জিনিসও দরকার। অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি কষ্টে সময় পার করছেন। অন্তত ভিজিএফের বরাদ্দ চাল পেলেও কোনোভাবে এক মাস চলতে পারতেন। আশপাশের জেলে পরিবারের অবস্থা একই। তাই কারও ধার দেওয়ার অবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়েছে। তাঁর কাছে নিষেধাজ্ঞার এই ৫৮ দিনের প্রতিটি দিনই দুশ্চিন্তার।
২০১৫ সাল থেকে সাগরে মাছ আহরণের ওপর বছরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন শুরু হয়। গত বছর পর্যন্ত এর সময়সীমা ছিল ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই। জেলেদের দাবির মুখে এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে ১৫ এপ্রিল শুরু হয়েছে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। যা চলবে ১২ জুন পর্যন্ত। উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ টেকনাফ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলেসংখ্যা ১০ হাজার ৬৮৩। তাদের ১ হাজার ৪০০ নৌযান নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন। শুরুতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সালে সব ধরনের নৌযানকে এ তালিকাভুক্ত করা হয়। 
জেলেদের ভাষ্য, নিবন্ধনের বাইরেও উপজেলায় পাঁচ হাজারের বেশি জেলে আছেন। তাদের জীবন নিষেধাজ্ঞার সময় আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। জীবনের অর্ধেক সময় মাছ শিকারে পার করেও তালিকায় নাম না ওঠায় আফসোস রয়েছে ডেইলপাড়ার বাসিন্দা মো.

বেলাল উদ্দিনের। তিনি বলেন, বাকি জীবনও কাটাতে চান মাছ ধরে। কিন্তু এখনও নিবন্ধিত হতে পারেননি। যে কারণে শিকার নিষিদ্ধের সময় অনেক কষ্টে দিন পার করতে হয়। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেলে মোহাম্মদ হাসানের চার ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছে। এদের দু’জন এসএসসি পরীক্ষার্থী। সাগরে মাছ ধরেই সংসার চালাতে হয় তাঁকে। কোনো সঞ্চয় নেই। এর মধ্যে এবার নিষেধাজ্ঞার সময়ে বরাদ্দ চালও পাননি। বাকি দিনগুলো কীভাবে চলবে, এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। হাসানের ভাষ্য, দ্বীপের মানুষের সংসার চলে মাছ শিকার ও পর্যটন ব্যবসায়। এখন দুটিই বন্ধ। তাই কষ্টে দিন পার করছেন। এসএসসি পরীক্ষার্থী দুই সন্তানের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
কোরবানির ঈদের আগে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেপল্লির অবস্থা খুব খারাপ বলে জানান মুন্ডার ডেইল ঘাটের নৌযান মালিক এজাহার মিয়া। তাঁর আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে জেলেরা খারাপ পথে যেতে পারে। 
টেকনাফের পৌরসভা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার সৈয়দ আলমের সমুদ্রগামী ট্রলার রয়েছে। তাঁর ভাষ্য, সীমান্ত (ওপার) পরিস্থিতির কারণে দুই বছর ধরে আমাদের দুর্দিন যাচ্ছে। তার ওপর কোরবানির ঈদের সামনে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তবু সরকারি নির্দেশ মেনে যাতে কেউ মাছ শিকারে না যায়, জেলেদের অনুরোধ করছেন।
নিষেধাজ্ঞার ২০ দিনেও চাল না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ উপজেলা জাতীয় মৎস্য সমিতির সভাপতি মো. তৈয়ুব। তাঁর ভাষ্য, সরকারের উচিত চালের পাশাপাশি জেলেদের আর্থিক অনুদান দেওয়া।
এদিকে ‘ভাত দাও না-হলে মাছ ধরতে দাও’ স্লোগান নিয়ে সোমবার দুপুরে উপজেলার মেরিন ড্রাইভ ঘাটে বিক্ষোভ করেন শত শত জেলে। এতে তারা সাগরে মাছ ধরার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এবার এক মাস আগে এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। তাই ভিজিএফরের চাল আসতে সময় লাগছে। গত বছর এ উপজেলার নিবন্ধিত জেলেদের জন্য ৯১৮ টন চাল এসেছিল। এবারও একই পরিমাণ চাল আসতে পারে। জেলেদের বিক্ষোভ বিষয়ে তিনি জানান, কিছু মানুষ তাদের উস্কে দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। 
ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মাছ ধরা বন্ধের সময়ে চোরাকারবারিরা যাতে সুযোগ নিতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। জেলেরা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে চাল পান, সে চেষ্টা করছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন বন ধ ত ভ জ এফ র উপজ ল র প র কর ২০ দ ন করছ ন মৎস য র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

আব্দুল কাদের শিবিরের সাথী ছিলেন, দাবি ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতির

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ছাত্রশিবিরের সাথী ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে।

সোমবার (৪ আগস্ট) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে এ দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও আপ বাংলাদেশের মুখ্য সংগঠক রাফে সালমান রিফাত।

ছাত্রশক্তি কীভাবে গঠিত হয়েছিল, শিবির তাদের কীভাবে অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা করেছিল, ২০১৮ সালের দুটি আন্দোলনে শিবিরের ভূমিকা, জুলাই অভ্যুত্থানের শিবিরের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও ওই পোস্টে বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

আরো পড়ুন:

ঐতিহাসিক জুলাইয়ের কারণে আমরা একটি ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী: ঢাবি উপাচার্য

বিসিএসে সার্কুলারে নেই আরবি বিভাগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

তবে রিফাতের পোস্টের কিছুক্ষণ পরই নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট দেন আব্দুল কাদের। তাদের ফেসবুক পোস্টটি দুটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

রাফে সালমান রিফাত লিখেছেন, “২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সভাপতি, সাদিক কায়েম সেক্রেটারি। ছাত্রশক্তি আত্মপ্রকাশের কয়েকদিন আগে আখতার আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে চায়। জিজ্ঞেস করি, কী বিষয়? বলে, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ছাড়া আর কারোর রাজনীতি নাই, নতুন একটা সংগঠন নিয়ে কাজ করতে চায় তারা।”

তিনি বলেন, “তার মাস দুয়েক আগেই ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি কমিটি কার্যত বিলুপ্ত হয়। আসিফের নেতৃত্বে কমিটির সবাই একযোগে পদত্যাগ করে লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ এনে। তারপর পেইজের নাম বদলানো সহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাঁদা ছোড়াছুড়িও করে কেউ কেউ। যাইহোক, আমাদের সাথে দেখা করতে আসে আখতার, নাহিদ, মাহফুজ, আসিফ আর আহনাফ সাঈদ। হাতিরপুলের এক রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যার পর শুরু হয় আলাপ-আলোচনা। আমাদের তরফে ছিলাম আমি আর সাদিক। তখনও সম্ভবত ছাত্রশক্তির নাম ফাইনাল হয়নি।”

তিনি আরো বলেন, “প্রায় ৩ ঘণ্টা সবকিছু নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। প্রথমে আখতার খুব সংক্ষিপ্ত একটা ব্রিফিং দেয়। বুঝলাম যে, দলনেতা আখতার। এরপর আমি প্রশ্ন করা শুরু করি। খুটিয়ে খুটিয়ে প্রশ্ন করেছি নানা বিষয়ে। ফিলোসফি, স্ট্র‍্যাটেজি, ফিউচার প্ল্যান, গোল, ন্যারেটিভ, সাপোর্ট বেইজ ইত্যাদি প্রায় সবকিছু নিয়ে। থট প্রভোকিং সব আলাপ। আমার সামনেই বসা ছিল আখতার। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, আখতার একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিলো না। প্রায় সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছে মাহফুজ। মাঝেমধ্যে দুই একটা বিষয় অ্যাড করেছে নাহিদ। বাকি দুইজন তথা আসিফ এবং আহনাফ ছিল শুধুই নিরব শ্রোতা।”

বিফাত বলেন, “বুঝলাম, নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগের প্রায় পুরোটাই মাহফুজের ব্রেইন চাইল্ড। মাহফুজ এখানে মূল আইডিওলোগ। এই উদ্যোগের থট প্রসেস ডেভেলপ করছে সে। বাকিরা এখনও চিন্তাগতভাবে অনেক পেছনে। বিশেষত আখতার ওখানে পিওর সামনের ফেইস মাত্র। যেহেতু, ডাকসুর কারণে তার একটা পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হয়েছিল। তাই তাকে সামনে রেখেই সেন্ট্রিস্ট রাজনীতির নতুন পথচলা শুরু আরকি। আমাদের কাছ থেকে তারা দোয়া, সমর্থন এবং সার্বিক সহযোগিতা চাইলো। ক্যাম্পাস একটিভিজমের তখনকার যে চিরাচরিত নিয়ম, সেটির অংশ হিসেবেই সম্ভবত।”

“উল্লেখ্য, ছাত্রশিবির সাংগঠনিকভাবে রেজিমেন্টেড একটা ফোর্স। যেকোনো কর্মসূচীতে মুহুর্তের মধ্যে একটা সংগঠিত শক্তিকে অত্যন্ত শৃঙ্খলার সাথে মোবিলাইজ করার ক্যাপাসিটি তৎকালে সবচেয়ে বেশি ছিল শিবিরের। ফলে ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বা যেকোনো ক্রিয়েটিভ কর্মসূচী বাস্তবায়নে মাঠের কর্মী বাহিনি হিসেবে শিবিরের ম্যানপাওয়ার সাপোর্ট এবং আর্থিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা গ্রহণ একটা ওপেন সিক্রেট বিষয় ছিল সবার মধ্যে। আর্থিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা শুধু শিবির একাই করতো তা না, আরও অনেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ছিল যারা পেছনে থেকে সহযোগিতা করতো নিয়মিত,” যুক্ত করেন রিফাত।

রিফাত আরো বলেন, “সেই আঠারোর কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই এই ব্যাপারটা ছাত্র অধিকার পরিষদের অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার ছিল। জিনিসটা সমন্বয় করতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক। যেমন: আঠারো সালের দুইটা আন্দোলনে পেছনের ব্রেইন হিসেবে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছিলো শিবিরের তৎকালীন ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক শামীম রেজায়ীসহ বেশ কয়েকজন। যাইহোক, আমি ওদেরকে সাহস দিলাম। সহযোগিতার আশ্বাস দিলাম। সামনে এগিয়ে যেতে বললাম। কয়েকদিন পর ওদের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। আখতারকে আহবায়ক, নাহিদকে সদস্য সচিব করে কেন্দ্রীয় বডি এবং আসিফকে আহবায়ক ও বাকেরকে সদস্য সচিব করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি প্রস্তুত করা হলো।”

তিনি বলেন, “বিধিবাম হলো আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের পর। মাহফুজ আচানক আখতার, নাহিদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে বসলো। আমি তখনও জানতাম না, ঝামেলা কী নিয়ে। পরে কিছু কিছু জিনিস জেনেছি বিভিন্নজনের কাছ থেকে। এরপরে ক্যাম্পাস এক্টিভিজমে বেশ কিছু চড়াই-উৎরাই গেছে। অক্টোবরেই ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে ক্যাম্পাসে পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তা ঠিক করা নিয়ে ছোটখাটো ঝামেলা গেছে। মানব পতাকা তৈরীর কর্মসূচী ফ্লপের কাহিনি হয়েছে। পরের বছর মার্চে প্রোডাক্টিভ রমাদান অনুষ্ঠানে হামলা কেন্দ্রিক গণ-ইফতার কর্মসূচী, তারপর জুনে নতুন করে আবার কোটা আন্দোলন।”

তিনি আরো বলেন, “জুলাইয়ে সকল সংগঠনকে ছাপিয়ে নতুন ব্যানার তৈরী হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’, যেখানে সামনের ফেইস হিসেবে ছাত্রশক্তি, শিবির (যদিও শিবির তখনো প্রকাশ্য কর্মকাণ্ডে ছিল না), ছাত্র ফেডারেশন, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ডিবেট সার্কিটের পোলাপান, সাধারণ অ্যাক্টিভিস্ট সবাই ছিল। সেখানে কোনো হায়ারার্কি ছিল না। মূখ্য সমন্বয়ক বলে কেউ ছিল না। কোনো একক নেতৃত্বই ছিল না। সবাই ছিল স্রেফ সমন্বয়ক। শিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে একাধিক ব্যক্তি ছিল, কিন্তু সাদিক কায়েম বা ফরহাদের মতো নেতৃস্থানীয় কেউ ছিল না। এমনকি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় আহবায়ক, ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে পর্যন্তও সমন্বয়ক লিস্টে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।”

সাবেক ঢাবি শিবির নেতা বলেন, “যদিও প্রথম সমন্বয়ক তালিকা ঘোষিত হয় ৮ জুলাই। পরে ১৭ জুলাই আখতারকে গ্রেফতার করা হয়। আমার ধারণা, আব্দুল কাদেরকেও তখন শিবির তার নিজের প্রতিনিধি হিসেবেই কাউন্ট করতো ইন্সটিটিউট ফ্যাকাল্টির সাথী এবং জনশক্তি হিসেবে। যদিও সে ক্যাম্পাসে ছাত্রশক্তির অ্যাক্টিভিটিতেই বেশি জড়িত ছিল।”

সাবেক ঢাবি শিবির নেতা আরো বলেন, “ছাত্রশক্তি তার সেই সংক্ষিপ্ত নয় মাসের জার্নিতে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক নানাবিধ অ্যাক্টিভিটিতে শিবিরের সাথে কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও প্রচ্ছন্ন সমন্বয় করে চলেছে। সেই সমন্বয় ও সম্পর্কে জোয়ার-ভাটা থাকলেও কখনও তা শত্রুতায় রূপ নেয় নাই। কাঁদা ছোড়াছুড়ি তো অনেক দূরের বিষয়। আজকে অবশ্য সবাই পলিটিক্স শিখে গেছে। এমন ভাব যেন তখন তারা শিবিরের কাউকে চিনতো না। নিজের সাবেক দায়িত্বশীল/নেতাকেও কামড় মারতে কারো তর সইছে না। ক্ষমতার অন্ধ মোহে নিজের এককালের সেইফগার্ডকেও নোংরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ফ্যাসিবাদকে অট্টহাস্য দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। সুন্দর।”

পাল্টা জবাবে আব্দুল কাদের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আমি যখন সত্য প্রকাশ করলাম, ব্যক্তি-গোষ্ঠীর অপকর্ম, অপরাজনীতি তুলে ধরলাম; তখন আমার যুক্তিকে খণ্ডন না করে ওরা প্রচার করতে লাগলো, আমি ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করি, আমি নাকি ছাত্রলীগ, আমি নাকি ডাকসুর জন্য এমন করি! সত্যকে মোকাবিলা করার সৎ সাহস যাদের নাই, তারাই অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে নিয়ে এসে ঘায়েল করার পায়তারায় লিপ্ত থাকে। গত ৫ বছরের জার্নিতে হাসিনা রেজিমও এইভাবে সত্যকে মোকাবিলা করতো না। তবে যে যা-ই বলেন, সত্য প্রকাশে এক চুলও পিছপা হবো না। সত্য আজ নয় কাল প্রতিষ্ঠা হবেই, সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পিছপা হওয়া যাবে না। যে যা বলার বলুক।”

তিনি বলেন, “হাসিনার আমলে হলে থাকতে পারি নাই, বাহিরে দুর্দশায় জীবন অতিবাহিত করছি, হামলা-মামলার শিকার হইছি, জেল খাটছি, জেলে যাওয়ার কারণে একাডেমিক ইয়ার লস হইছে। এতোকিছুর পরেও একটা দিনের জন্যও লড়াই থেকে পিছু হটি নাই। সকালে মাইর খাইছি, বিকেলে আবার রাজপথে ফিরে আসছি। আর্থিক অনটনও আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কারো কাছে একটাবারের জন্যও হাত পাতি নাই। এখন অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে নানান কথা ছড়ান। আমার আল্লাহ জানে, আমি আমার আর্থিক এবং উদ্দেশ্যের জায়গায় কতটুকু সৎ। যতদিন আমার ভেতরে সত্য থাকবে; ততদিন আমার বাহিরে ভয় নাই এবং ততোদিন-ই সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে...।”

এর আগে, রবিবার (৩ আগস্ট) আব্দুল কাদের এক ফেসবুক পোস্টে ঢাবি ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম ঢাবিতে ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য তদবির করেছেন এমন একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করেন। সেখানে তিনি ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন হামলাকারী নেতাকে শিবির বলে দাবি করেন। 

তবে পরবর্তীতে সাদিক কায়েম তার ফেসবুক প্রোফাইলে পাল্টা পোস্টে আব্দুল কাদেরের দাবি করা ছাত্রলীগ নেতারা কখনো শিবির করতেন না বা ৫ আগস্টের পরে শিবিরের কোন কর্মসূচিতে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন। এনসিপি নেতাদের সঙ্গে হওয়া ব্যক্তিগত আলাপের স্ক্রিনশট আব্দুল কাদের অপব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে নিন্দা জানান তিনি।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ