ইলিশের বেড়ে ওঠা ও অন্য মাছের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতে সমুদ্রে মাছ শিকারের ওপর ১৫ এপ্রিল শুরু হয়েছে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এর ২০ দিনেও ভিজিএফের চাল আসেনি কক্সবাজারের টেকনাফে। এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার জেলেদের মধ্যে। ‘ভাত দাও না-হলে মাছ ধরতে দাও’ স্লোগান নিয়ে গতকাল সোমবার বিক্ষোভ হয়েছে মেরিন ড্রাইভ ঘাট এলাকায়। এতে শত শত জেলে অংশ নেন।
সোমবার দুপুরে মেরিন ড্রাইভ ঘাট এলাকায় কথা হয় মুহাম্মদ আমিনের সঙ্গে। উপজেলার মহেশখালীয়াপাড়ার এ বাসিন্দা জেলে হিসেবে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধিত। গত মৌসুমের নিষেধাজ্ঞার সময় তিনি খাদ্য সহায়তা হিসেবে পেয়েছিলেন ৮৬ কেজি চাল। এবার চাল পাননি। ছোটবেলা থেকেই সাগরে মাছ ধরতে শেখেন। যে কারণে অন্য কাজ শেখেননি। তিনি বলেন, ৮ সদস্যের সংসারে দিনে অন্তত ৪ কেজি চাল লাগে। সেই হিসাবে মাসে তাদের প্রয়োজন ১২০ কেজি চাল। তাঁর কাছে মাছ ধরা বন্ধ মানেই আয়-রোজগার বন্ধ। নিষেধাজ্ঞার ২০ দিন হতে চললেও চাল না পাওয়ায় হতাশ তিনি।
আমিনের ভাষ্য, তিন বেলা কোনোমতে খাওয়ার জন্য চালের সঙ্গে ডাল, শাকসবজি, পেঁয়াজ-তেলের মতো অন্য জিনিসও দরকার। অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি কষ্টে সময় পার করছেন। অন্তত ভিজিএফের বরাদ্দ চাল পেলেও কোনোভাবে এক মাস চলতে পারতেন। আশপাশের জেলে পরিবারের অবস্থা একই। তাই কারও ধার দেওয়ার অবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়েছে। তাঁর কাছে নিষেধাজ্ঞার এই ৫৮ দিনের প্রতিটি দিনই দুশ্চিন্তার।
২০১৫ সাল থেকে সাগরে মাছ আহরণের ওপর বছরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন শুরু হয়। গত বছর পর্যন্ত এর সময়সীমা ছিল ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই। জেলেদের দাবির মুখে এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে ১৫ এপ্রিল শুরু হয়েছে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। যা চলবে ১২ জুন পর্যন্ত। উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ টেকনাফ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলেসংখ্যা ১০ হাজার ৬৮৩। তাদের ১ হাজার ৪০০ নৌযান নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন। শুরুতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সালে সব ধরনের নৌযানকে এ তালিকাভুক্ত করা হয়।
জেলেদের ভাষ্য, নিবন্ধনের বাইরেও উপজেলায় পাঁচ হাজারের বেশি জেলে আছেন। তাদের জীবন নিষেধাজ্ঞার সময় আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। জীবনের অর্ধেক সময় মাছ শিকারে পার করেও তালিকায় নাম না ওঠায় আফসোস রয়েছে ডেইলপাড়ার বাসিন্দা মো.
সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেলে মোহাম্মদ হাসানের চার ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছে। এদের দু’জন এসএসসি পরীক্ষার্থী। সাগরে মাছ ধরেই সংসার চালাতে হয় তাঁকে। কোনো সঞ্চয় নেই। এর মধ্যে এবার নিষেধাজ্ঞার সময়ে বরাদ্দ চালও পাননি। বাকি দিনগুলো কীভাবে চলবে, এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। হাসানের ভাষ্য, দ্বীপের মানুষের সংসার চলে মাছ শিকার ও পর্যটন ব্যবসায়। এখন দুটিই বন্ধ। তাই কষ্টে দিন পার করছেন। এসএসসি পরীক্ষার্থী দুই সন্তানের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
কোরবানির ঈদের আগে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেপল্লির অবস্থা খুব খারাপ বলে জানান মুন্ডার ডেইল ঘাটের নৌযান মালিক এজাহার মিয়া। তাঁর আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে জেলেরা খারাপ পথে যেতে পারে।
টেকনাফের পৌরসভা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার সৈয়দ আলমের সমুদ্রগামী ট্রলার রয়েছে। তাঁর ভাষ্য, সীমান্ত (ওপার) পরিস্থিতির কারণে দুই বছর ধরে আমাদের দুর্দিন যাচ্ছে। তার ওপর কোরবানির ঈদের সামনে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তবু সরকারি নির্দেশ মেনে যাতে কেউ মাছ শিকারে না যায়, জেলেদের অনুরোধ করছেন।
নিষেধাজ্ঞার ২০ দিনেও চাল না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ উপজেলা জাতীয় মৎস্য সমিতির সভাপতি মো. তৈয়ুব। তাঁর ভাষ্য, সরকারের উচিত চালের পাশাপাশি জেলেদের আর্থিক অনুদান দেওয়া।
এদিকে ‘ভাত দাও না-হলে মাছ ধরতে দাও’ স্লোগান নিয়ে সোমবার দুপুরে উপজেলার মেরিন ড্রাইভ ঘাটে বিক্ষোভ করেন শত শত জেলে। এতে তারা সাগরে মাছ ধরার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এবার এক মাস আগে এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। তাই ভিজিএফরের চাল আসতে সময় লাগছে। গত বছর এ উপজেলার নিবন্ধিত জেলেদের জন্য ৯১৮ টন চাল এসেছিল। এবারও একই পরিমাণ চাল আসতে পারে। জেলেদের বিক্ষোভ বিষয়ে তিনি জানান, কিছু মানুষ তাদের উস্কে দিয়ে মাঠে নামিয়েছে।
ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মাছ ধরা বন্ধের সময়ে চোরাকারবারিরা যাতে সুযোগ নিতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। জেলেরা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে চাল পান, সে চেষ্টা করছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন বন ধ ত ভ জ এফ র উপজ ল র প র কর ২০ দ ন করছ ন মৎস য র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে ভাঙচুর ফিলিস্তিনপন্থীদের
ব্রিটেনের ফিলিস্তিনিপন্থী কর্মীরা মধ্য ইংল্যান্ডে বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে ভাঙচুর চালিয়েছে। সেখানে তারা জ্বালানি ও পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত দুটি সামরিক বিমানের উপর লাল রঙ ছিটিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
প্রচারণা গোষ্ঠী প্যালেস্টাইন অ্যাকশন জানিয়েছে, তাদের দুই কর্মী অক্সফোর্ডশায়ারের ব্রিজ নর্টন ঘাঁটিতে প্রবেশ করে ভয়েজার বিমানের ইঞ্জিনে রঙ ছিটিয়ে দেয় এবং বাঁকানো লোহাদণ্ড দিয়ে আরো ক্ষতি করেছে।
গ্রুপটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইসরায়েলি সরকারের প্রকাশ্যে নিন্দা জানানো সত্ত্বেও ব্রিটেন সামরিক পণ্যসম্ভার পাঠাচ্ছে, গাজার উপর গুপ্তচর বিমান উড়িয়েছে এবং মার্কিন/ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানে জ্বালানি সরবরাহ করছে। ব্রিটেন কেবল জড়িত নয়, দেশষটি গাজা গণহত্যা এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধাপরাধের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী।”
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ‘ভাংচুরের’ নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে যে তারা তদন্তের জন্য পুলিশের সাথে কাজ করছে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ব্রিটেনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিনিধিত্ব করে। তারা আমাদের জন্য তাদের জীবন বাজি রেখেছিল এবং তাদের কর্তব্য, নিষ্ঠা ও নিঃস্বার্থ ব্যক্তিগত ত্যাগের প্রদর্শন আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা। যারা আমাদের রক্ষা করে তাদের সমর্থন করা আমাদের দায়িত্ব।”
পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিমান ঘাঁটিতে প্রবেশাধিকার এবং অপরাধমূলক ক্ষতি সাধনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তদন্ত করছে।
প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তারা রানওয়েতে রঙ ছিটিয়েছে এবং সেখানে একটি ফিলিস্তিনি পতাকা রেখে গেছে।
ঢাকা/শাহেদ