জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘মৌলিক সংস্কার বলতে শুধু নির্বাচনী সংস্কার নয়। ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি ও বিকেন্দ্রীকরণকেই আমরা মৌলিক সংস্কার বলে মনে করি।’

আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে এ কথা বলেন আখতার হোসেন। সংস্কার প্রশ্নে এনসিপির সঙ্গে ‘বর্ধিত আলোচনায়’ বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠক শুরুর আগে আখতার হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ১৫ মের মধ্যে আলোচনা শেষ করার আশা প্রকাশ করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সংস্কারের পথ উন্মুক্ত করতে এই আলোচনা কার্যকরী হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

এনসিপির দেওয়া মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা গ্রহণ করার কথা জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা সেই পথরেখা তৈরি করতে সহায়ক হবে। আশা করছি, এই পথরেখা ধরে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনাও এগিয়ে যাবে।’

এর আগে আখতার হোসেন বলেন, মৌলিক সংস্কার বলতে ক্ষমতাকাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কার, এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতাকাঠামোর অবসান, শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা, রাজনৈতিক ও সরকারি প্রভাবমুক্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাকে বোঝানো হচ্ছে।

বৈঠকের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা তুলে দেন এনসিপির প্রতিনিধিরা।

আরও পড়ুনএনসিপির সঙ্গে আগামীকাল বর্ধিত আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন২০ ঘণ্টা আগে

এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘মৌলিক সংস্কারের মূল ভিত্তিগুলো যদি অর্জন করতে চাই, তাহলে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামোর পরিবর্তন করতে হবে। একই সঙ্গে সাংবিধানিক পদে দলীয়করণের বাইরে নিয়োগ কীভাবে দেওয়া যায়, সেই পথ খুঁজতে হবে। এনসিপির মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবনায় সেই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

এনসিপির সঙ্গে আজকের বৈঠকে জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং আগের বৈঠকে যেসব আলোচনা অসমাপ্ত ছিল, সেসব নিয়ে আলোচনা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

এনসিপির পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ও জাবেদ রাসিন।

আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক আলোচনা শেষ হবে ১৫ মে: আলী রীয়াজ০৪ মে ২০২৫

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে রয়েছেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

আরও পড়ুনস্থানীয় নয়, আগে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে: এনপিপি০৩ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আখত র হ স ন এনস প র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে দলীয় অবস্থান জানাল এনসিপি

নানা আলোচনার মধ্যে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি বলছে, এই কমিশনের কিছু সুপারিশ বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বান্দ্বিক অবস্থান তৈরি করে সমাজ বনাম রাষ্ট্র এবং ধর্ম বনাম নারীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। যেসব বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোতে সব প্রতিনিধিত্বশীল অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখা দরকার।

একই সঙ্গে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে সমাজের সব অংশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়নি বলে এনসিপি মনে করে।

আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে এনসিপি। দলের পক্ষ থেকে ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এনসিপির অবস্থান’ শিরোনামে বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে মোট ১১টি সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করে। এর মধ্যে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গত ১৯ এপ্রিল তাদের প্রস্তাব পেশ করে। এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আওতাভুক্ত ছয়টি সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ঐকমত্য কমিশনের আওতায় ছিল না। ফলে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পূর্ব আলোচনা বা মতামত দেওয়ার সুযোগ পায়নি। দেখা যাচ্ছে, নারীবিষয়ক এই কমিশনের প্রস্তাবকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন মাত্রার আলোচনা ও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মধ্যে সমাজের সব অংশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়নি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানিয়ে এবং সব নাগরিকের বিশ্বাস ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নীতি প্রণয়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নারীবিষয়ক কমিশনের কিছু সুপারিশ বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বান্দ্বিক অবস্থান তৈরি করে সমাজ বনাম রাষ্ট্র এবং ধর্ম বনাম নারী মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, যেসব বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোতে সব প্রতিনিধিত্বশীল অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন।’

নারীবিষয়ক কমিশনের প্রস্তাবের সমালোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সমাবেশ থেকে নারীদের প্রতি প্রকাশ্যে যে শ্লেষাত্মক ও অমর্যাদাকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এনসিপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে, বিশেষত জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সব শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, বর্ণের নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের ফলে ১৫ বছরের জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদ থেকে জাতির মুক্তি ঘটেছে। এই ইতিহাসকে আমরা ভুলব না। এনসিপি নারীদের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার ও সামাজিক সংগ্রামকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে এবং নারীর মর্যাদা ও অধিকার বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নারীদের সঙ্গে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এনসিপি ঐক্যবদ্ধ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কার বিষয়ে যেসব বিষয় তুলে ধরলেন এনসিপি নেতারা
  • কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার পক্ষে এনসিপি
  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা ১৫ মে’র মধ্যে শেষ করা হ
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এনসিপি
  • নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে দলীয় অবস্থান জানাল এনসিপি
  • এনসিপির সঙ্গে আগামীকাল বর্ধিত আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক আলোচনা শেষ হবে ১৫ মে: আলী রীয়াজ
  • রাজনৈতিক দল নির্বাচন চাইলে ট্রল অনৈতিক: ব্যারিস্টার ফুয়াদ 
  • এনসিপির নেতা আখতার হোসেনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে কী বললেন‌ ওঁরাও নারী