শুধু নির্বাচনী নয়, ক্ষমতার ভারসাম্য ও বিকেন্দ্রীকরণই মৌলিক সংস্কার: আখতার হোসেন
Published: 6th, May 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘মৌলিক সংস্কার বলতে শুধু নির্বাচনী সংস্কার নয়। ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি ও বিকেন্দ্রীকরণকেই আমরা মৌলিক সংস্কার বলে মনে করি।’
আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে এ কথা বলেন আখতার হোসেন। সংস্কার প্রশ্নে এনসিপির সঙ্গে ‘বর্ধিত আলোচনায়’ বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠক শুরুর আগে আখতার হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ১৫ মের মধ্যে আলোচনা শেষ করার আশা প্রকাশ করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সংস্কারের পথ উন্মুক্ত করতে এই আলোচনা কার্যকরী হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
এনসিপির দেওয়া মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা গ্রহণ করার কথা জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা সেই পথরেখা তৈরি করতে সহায়ক হবে। আশা করছি, এই পথরেখা ধরে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনাও এগিয়ে যাবে।’
এর আগে আখতার হোসেন বলেন, মৌলিক সংস্কার বলতে ক্ষমতাকাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কার, এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতাকাঠামোর অবসান, শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা, রাজনৈতিক ও সরকারি প্রভাবমুক্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাকে বোঝানো হচ্ছে।
বৈঠকের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা তুলে দেন এনসিপির প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুনএনসিপির সঙ্গে আগামীকাল বর্ধিত আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন২০ ঘণ্টা আগেএ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘মৌলিক সংস্কারের মূল ভিত্তিগুলো যদি অর্জন করতে চাই, তাহলে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামোর পরিবর্তন করতে হবে। একই সঙ্গে সাংবিধানিক পদে দলীয়করণের বাইরে নিয়োগ কীভাবে দেওয়া যায়, সেই পথ খুঁজতে হবে। এনসিপির মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবনায় সেই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
এনসিপির সঙ্গে আজকের বৈঠকে জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং আগের বৈঠকে যেসব আলোচনা অসমাপ্ত ছিল, সেসব নিয়ে আলোচনা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
এনসিপির পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ও জাবেদ রাসিন।
আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক আলোচনা শেষ হবে ১৫ মে: আলী রীয়াজ০৪ মে ২০২৫ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে রয়েছেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আখত র হ স ন এনস প র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আরও পর্যালোচনা হচ্ছে
জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে ‘সংবিধান আদেশ’ জারি ও পরবর্তী সময়ে গণভোটের যে সুপারিশ করা হয়েছিল, তা নিয়ে আরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানিয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কমিশনকে আবার মতামত দেবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এরপর কমিশনের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের আবার বৈঠক হবে।
বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা আপাতত মুলতবি রয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসের শুরুতে মুলতবি আলোচনা শুরু হতে পারে। সেখানে বিশেষজ্ঞদের মতামত আবার তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার মধ্যে গত বুধবার বিশেষজ্ঞদের নতুন পরামর্শ প্রস্তাব সামনে আনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরামর্শ প্রস্তাবে বলা হয়, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর আদেশটি নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যেতে পারে।
তবে এই প্রস্তাব নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল দ্বিমত জানায়। সংবিধানের সংশোধন বা সংবিধান আদেশ অন্তর্বর্তী সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ করতে পারবে কি না বা অন্য কোনো উপায়ে এটা করা যায় কি না, এ বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। আরও কয়েকটি দল সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার কথা বলেছে।
তবে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিএনপির এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা জামায়াতের প্রস্তাবের কাছাকাছি। আর এনসিপি জানিয়েছিল, নিজেদের দলে আলোচনা করে পরে তাদের অবস্থান জানাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞরা যে পদ্ধতি সুপারিশ করেছেন, তা কার্যকর হলে কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে। সংবিধান আদেশ জারি ও কার্যকর করার পর গণভোটে যদি জুলাই সনদ পাস না হয়, তাহলে কী হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এর পাশাপাশি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলো যে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনটি পদ্ধতির সমন্বয়ে কোনো উপায় বের করা যায় কি না, সেটাও ভাবা হবে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি নিয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবারও সভা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। জাতীয় সংসদের এলডি হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।
কমিশনের উপস্থাপন করা সনদের বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সম্ভাব্য সুপারিশমালা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনার সারসংক্ষেপ বিশেষজ্ঞদের অবহিত করা হয়। আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত, পরামর্শ এবং উদ্বেগের দিকগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়; যাতে বিশেষজ্ঞরা সামগ্রিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে গতকালের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সভায় অংশ নেন।
জানতে চাইলে মনির হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের মনে হয়েছে, বাস্তবায়ন পদ্ধতির যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। এটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আরও বৈঠক হতে পারে।