হেফাজতের দুঃখ প্রকাশ, উন্মুক্ত বিতর্কে অংশ নেওয়ার আহ্বান ছয় নারীর
Published: 6th, May 2025 GMT
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে দুই বক্তার ‘আপত্তিকর’ শব্দ চয়নে দুঃখ প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। এ দুঃখ প্রকাশকে সাধুবাদ জানিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতকে আইনি নোটিশ দেওয়া ছয় নারী। এতে ‘ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি’ বন্ধ এবং হেফাজতকে আলোচনার টেবিলে কিংবা উন্মুক্ত বিতর্কে নারীর সঙ্গে আলাপে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর বিবৃতিতে নারী শিক্ষায় কওমি মাদ্রাসা এবং আলেম-ওলামাদের ভূমিকা তুলে ধরে বলা হয়েছে, নারীর ন্যায্য অধিকার রক্ষার সংস্কারে সম্পৃক্ত হতে তারাও আগ্রহী। নারীর প্রতি অবমাননাকর শব্দ চয়ন হেফাজত সমর্থন করে না জানিয়ে তিনি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেওয়া হবে না।
এই হুঁশিয়ারির জবাবে ছয় নারীর বিবৃতিতে বলা হয়, নারীকে প্রকাশ্যে গালি দেওয়ার পর আইনি নোটিশের উত্তরে ক্ষমা চাওয়াকে সাধুবাদ জানাই এবং গ্রহণ করি। তবে হেফাজত ‘নারীকে পণ্য’ বানানোর পশ্চিমা এজেন্ডা না মেনে নেওয়া, ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ি করলে ছাড় না দেওয়া, উগ্র নারীবাদীদের লেলিয়ে দেওয়ার যেসব কথা বলেছে– এমন ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাই। দ্বিমতের কারণে কাউকে ট্যাগ দেওয়া যাবে না।
গত শনিবার চার দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত হেফাজতের মহাসমাবেশ থেকে নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করা হয়। কমিশন বাতিলের দাবি করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এ সংগঠনটি। দু’জন বক্তা কমিশন সদস্যদের ‘বেশ্যা’ ‘হিজড়া’ গালি দিলে আইনি নোটিশ দেন ছয় নারী। তাঁরা হলেন– এনসিপি নেত্রী সৈয়দা নীলিমা দোলা, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ও নীলা আফরোজ এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উম্মে রায়হানা, উম্মে ফারহানা ও ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া।
গালির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে হেফাজতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহাসমাবেশে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দু’জন বক্তা আপত্তিকর শব্দ চয়ন করেছেন, যা আমরা সমর্থন করি না। কেউ এতে আহত হলে তাদের প্রতিও আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
আলেম-ওলামাদের প্রতি বিদ্বেষ-কটাক্ষ থেকেও বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে হেফাজত। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যারা এতকাল আলেম-ওলামাকে বিদ্বেষমূলকভাবে ‘জঙ্গি’, ‘মৌলবাদী’, ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে কটাক্ষ করে এসেছেন, তাদেরও আমরা এ ধরনের আপত্তিকর শব্দ চয়ন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। আর শাপলা চত্বরের গণহত্যায় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শক্তিকে কারা উৎসাহ দিয়েছিল, তা আমরা ভুলে যাইনি।
এতে বলা হয়েছে, নারীর প্রতি ঘৃণার প্রশ্নই আসে না। মতাদর্শিক লড়াইকে ‘নারীর প্রতি ঘৃণা’ হিসেবে দেখানো মূর্খতা। যার যার ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী নারীর ন্যায্য অধিকার রক্ষায় এবং সংস্কারে সম্পৃক্ত হতে হেফাজতও আগ্রহী। কিন্তু আলেম-ওলামা ও অন্যান্য ধর্মীয় বিশেষজ্ঞকে বাদ দিয়ে একদল ‘এনজিওবাজ নারীবাদীকে’ নিয়ে গঠিত কমিশন যে একচেটিয়া প্রতিবেদন দিয়েছে, যেখানে ধর্মপ্রাণ বৃহত্তর নারী সমাজের ধর্মীয় চিন্তা ও বিবেচনা উপেক্ষিত হয়েছে। এই বৈষম্য মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।
আজিজুল হক বলেন, উগ্র ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী কর্তৃক হেফাজতকে ‘নারীবিদ্বেষী’ অপবাদ দেওয়ার অপরাজনীতি অনেক পুরোনো। অথচ কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রী প্রতিবছর বাড়ছে। সরকারি বরাদ্দমুক্ত এসব মাদ্রাসায় সমাজের হাজারো প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মেয়ের থাকা-খাওয়া, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নারী স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধিতে হেফাজতেরও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
ছয় নারীর বিবৃতিতে হেফাজতকে আলোচনার টেবিলে কিংবা উন্মুক্ত বিতর্কে নারীর সঙ্গে আলাপে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা বলেছেন, নারীর সমঅধিকার কোনোভাবেই পশ্চিমা এজেন্ডা নয়। হেফাজতের প্রতি সম্মান রেখেই আমাদের আহ্বান, নারীর সাম্য ও সামাজিক মর্যাদার বিষয় নারীই বুঝবে এবং তারা যেন সে ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে। সব জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করাই আমাদের সবার লক্ষ্য। কাজেই নারীদের ব্যাপারে বারবার প্রশ্ন উত্থাপন করে সামাজিক চাপ সৃষ্টি অনুচিত।
চব্বিশের অভ্যুত্থানকে নারীদের শক্তি বোঝার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পেছনে নারীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে কোনো দ্বিমতে এক টেবিলে বসে কথা বলার পরিস্থিতি বজায় রাখবেন। আশা করি, নতুন বাংলাদেশ সবার হবে।
৪৯ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিকে সমাজে নারীবিদ্বেষ ছড়ানোর মতো অপরাধ বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট ৪৯ জন নাগরিক। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ধর্মীয় নামধারী সংগঠনের এই দাবি শুধু আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্যই নয়, একই সঙ্গে তা জনমনে নারীবিদ্বেষ উস্কে দিচ্ছে। নারী কমিশন বাতিলের দাবির বিষয়ে সরকার ‘নীরব’ ভূমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
বিবৃতিতে সই করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকারকর্মী ও নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.
এদিকে হেফাজতে ইসলামসহ নারী অবমাননা, লাঞ্ছনা, কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নারীমুক্তি কেন্দ্র। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করারও দাবি জানান নেতারা।
এ ছাড়াও নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যের শিকার হিসেবে নারীর ন্যায্য অধিকারপ্রাপ্তির জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা। গতকাল এক বিবৃতিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ত কর ছয় ন র ইসল ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।