হেফাজতের দুঃখ প্রকাশ, উন্মুক্ত বিতর্কে অংশ নেওয়ার আহ্বান ছয় নারীর
Published: 6th, May 2025 GMT
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে দুই বক্তার ‘আপত্তিকর’ শব্দ চয়নে দুঃখ প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। এ দুঃখ প্রকাশকে সাধুবাদ জানিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতকে আইনি নোটিশ দেওয়া ছয় নারী। এতে ‘ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি’ বন্ধ এবং হেফাজতকে আলোচনার টেবিলে কিংবা উন্মুক্ত বিতর্কে নারীর সঙ্গে আলাপে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর বিবৃতিতে নারী শিক্ষায় কওমি মাদ্রাসা এবং আলেম-ওলামাদের ভূমিকা তুলে ধরে বলা হয়েছে, নারীর ন্যায্য অধিকার রক্ষার সংস্কারে সম্পৃক্ত হতে তারাও আগ্রহী। নারীর প্রতি অবমাননাকর শব্দ চয়ন হেফাজত সমর্থন করে না জানিয়ে তিনি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেওয়া হবে না।
এই হুঁশিয়ারির জবাবে ছয় নারীর বিবৃতিতে বলা হয়, নারীকে প্রকাশ্যে গালি দেওয়ার পর আইনি নোটিশের উত্তরে ক্ষমা চাওয়াকে সাধুবাদ জানাই এবং গ্রহণ করি। তবে হেফাজত ‘নারীকে পণ্য’ বানানোর পশ্চিমা এজেন্ডা না মেনে নেওয়া, ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ি করলে ছাড় না দেওয়া, উগ্র নারীবাদীদের লেলিয়ে দেওয়ার যেসব কথা বলেছে– এমন ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাই। দ্বিমতের কারণে কাউকে ট্যাগ দেওয়া যাবে না।
গত শনিবার চার দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত হেফাজতের মহাসমাবেশ থেকে নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করা হয়। কমিশন বাতিলের দাবি করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এ সংগঠনটি। দু’জন বক্তা কমিশন সদস্যদের ‘বেশ্যা’ ‘হিজড়া’ গালি দিলে আইনি নোটিশ দেন ছয় নারী। তাঁরা হলেন– এনসিপি নেত্রী সৈয়দা নীলিমা দোলা, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ও নীলা আফরোজ এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উম্মে রায়হানা, উম্মে ফারহানা ও ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া।
গালির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে হেফাজতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহাসমাবেশে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দু’জন বক্তা আপত্তিকর শব্দ চয়ন করেছেন, যা আমরা সমর্থন করি না। কেউ এতে আহত হলে তাদের প্রতিও আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
আলেম-ওলামাদের প্রতি বিদ্বেষ-কটাক্ষ থেকেও বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে হেফাজত। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যারা এতকাল আলেম-ওলামাকে বিদ্বেষমূলকভাবে ‘জঙ্গি’, ‘মৌলবাদী’, ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে কটাক্ষ করে এসেছেন, তাদেরও আমরা এ ধরনের আপত্তিকর শব্দ চয়ন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। আর শাপলা চত্বরের গণহত্যায় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শক্তিকে কারা উৎসাহ দিয়েছিল, তা আমরা ভুলে যাইনি।
এতে বলা হয়েছে, নারীর প্রতি ঘৃণার প্রশ্নই আসে না। মতাদর্শিক লড়াইকে ‘নারীর প্রতি ঘৃণা’ হিসেবে দেখানো মূর্খতা। যার যার ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী নারীর ন্যায্য অধিকার রক্ষায় এবং সংস্কারে সম্পৃক্ত হতে হেফাজতও আগ্রহী। কিন্তু আলেম-ওলামা ও অন্যান্য ধর্মীয় বিশেষজ্ঞকে বাদ দিয়ে একদল ‘এনজিওবাজ নারীবাদীকে’ নিয়ে গঠিত কমিশন যে একচেটিয়া প্রতিবেদন দিয়েছে, যেখানে ধর্মপ্রাণ বৃহত্তর নারী সমাজের ধর্মীয় চিন্তা ও বিবেচনা উপেক্ষিত হয়েছে। এই বৈষম্য মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।
আজিজুল হক বলেন, উগ্র ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী কর্তৃক হেফাজতকে ‘নারীবিদ্বেষী’ অপবাদ দেওয়ার অপরাজনীতি অনেক পুরোনো। অথচ কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রী প্রতিবছর বাড়ছে। সরকারি বরাদ্দমুক্ত এসব মাদ্রাসায় সমাজের হাজারো প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মেয়ের থাকা-খাওয়া, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নারী স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধিতে হেফাজতেরও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
ছয় নারীর বিবৃতিতে হেফাজতকে আলোচনার টেবিলে কিংবা উন্মুক্ত বিতর্কে নারীর সঙ্গে আলাপে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা বলেছেন, নারীর সমঅধিকার কোনোভাবেই পশ্চিমা এজেন্ডা নয়। হেফাজতের প্রতি সম্মান রেখেই আমাদের আহ্বান, নারীর সাম্য ও সামাজিক মর্যাদার বিষয় নারীই বুঝবে এবং তারা যেন সে ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে। সব জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করাই আমাদের সবার লক্ষ্য। কাজেই নারীদের ব্যাপারে বারবার প্রশ্ন উত্থাপন করে সামাজিক চাপ সৃষ্টি অনুচিত।
চব্বিশের অভ্যুত্থানকে নারীদের শক্তি বোঝার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পেছনে নারীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে কোনো দ্বিমতে এক টেবিলে বসে কথা বলার পরিস্থিতি বজায় রাখবেন। আশা করি, নতুন বাংলাদেশ সবার হবে।
৪৯ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিকে সমাজে নারীবিদ্বেষ ছড়ানোর মতো অপরাধ বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট ৪৯ জন নাগরিক। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ধর্মীয় নামধারী সংগঠনের এই দাবি শুধু আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্যই নয়, একই সঙ্গে তা জনমনে নারীবিদ্বেষ উস্কে দিচ্ছে। নারী কমিশন বাতিলের দাবির বিষয়ে সরকার ‘নীরব’ ভূমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
বিবৃতিতে সই করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকারকর্মী ও নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.
এদিকে হেফাজতে ইসলামসহ নারী অবমাননা, লাঞ্ছনা, কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নারীমুক্তি কেন্দ্র। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করারও দাবি জানান নেতারা।
এ ছাড়াও নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যের শিকার হিসেবে নারীর ন্যায্য অধিকারপ্রাপ্তির জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা। গতকাল এক বিবৃতিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ত কর ছয় ন র ইসল ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এসেনসিয়াল ড্রাগসকে আনতে সক্রিয় ডিএসই, মন্ত্রণালয়ে চিঠি
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনা অনুযায়ী, সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ (এসওই) বা সরকারি সংস্থা ও কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পিএলসি। এ লক্ষ্যে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা বা চিঠি পাঠিয়ে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানোর কাজ চলছে। ডিএসই আশা করছে, শিগগিরই লাভজনক রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হবে।
এরই ধরাবাহিকতায় সরকারি মালিকানাধীন ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডিসিএল) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ডিএসই। পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দক্ষতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারের চলমান প্রচেষ্টা বাস্তবায়নে এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি এসেনসিয়াল ড্রাগকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে সহায়তা চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।
আরো পড়ুন:
কারণ ছাড়াই বাড়ছে রহিমা ফুডের শেয়ারদর
পিপলস লিজিংয়ের অর্ধবার্ষিকে লোকসান বেড়েছে ১৫.৩৩ শতাংশ
ওই চিঠির অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মকসুদ, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম ও এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আ. সামাদ মৃধা বরাবর পাঠানো হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে নিয়ন্ত্রক বিএসইসি নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে ডিএসই। মূলত সরকারি কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে দফা দফায় চেষ্টা করেও তাদের পুঁজিবাজারে আনা সম্ভব হয়নি। অবশেষে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি গতিশীল করতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে চলতি বছরের ১১ মে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ডিএসইর চিঠি
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম লিখেছেন, দেশের পুঁজিবাজার টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বিষয়টি খুবই প্রয়োজনীয়। এই প্রেক্ষাপটে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানির সম্ভাব্য ইক্যুইটি তালিকাভুক্তি করতে আগ্রহী।
ওষুধ খাতে কোম্পানিটির কৌশলগত ভূমিকা এবং গত দুই দশক ধরে প্রশংসনীয় ব্যবসা বৃদ্ধির রেকর্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি বিদ্যমান নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অধীনে তালিকাভুক্তির জন্য উপযুক্ত অবস্থানে রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, বর্তমান বিধিমালার আওতায় কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই ধরনের কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সময়োপযোগী এবং বিভিন্ন দিক থেকে কার্যকর হবে। এই কোম্পানিটির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। যেমন- কর্পোরেট সুশাসন বৃদ্ধি, বৃহত্তর কর্মক্ষম শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর অংশগ্রহণ সক্ষম করে জনসাধারণের মালিকানা সম্প্রসারণ বৃদ্ধি করবে বলে চিঠিতে জানানো হয়।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এসেনশিয়াল ড্রাগস একটি উচ্চ-কার্যক্ষমতা সম্পন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির তালিকাভুক্তি পুঁজিবাজারের মানদণ্ড বৃদ্ধি এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ফলে আরও সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে এবং দেশের পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী করবে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যকরণে অবদান রাখবে। এটি সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার ও স্বচ্ছতা এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে নেয়া বৃহত্তর উদ্যোগকে শক্তিশালী ও বেগবান করবে।
এসেনশিয়াল ড্রাগসকে সহজ ও কার্যকরভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি করতে ডিএসই সম্পূর্ণ সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে। ডিএসই মনে করে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এই সময়োপযোগী উদ্যোগ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে, যা এসেনশিয়াল ড্রাগসের অংশীজন এবং জাতীয় অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনবে। তাই এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সুবিধাজনক সময়ে আলোচনায় বসতে আগ্রহী ডিএসই। এ বিষয়ে যে কোনো সহযোগিতা ও ব্যাখ্যার জন্য ডিএসই সদা প্রস্তুত রয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা ও এসএমএস দেওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘`পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে ডিএসই এ বিষয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’’
রাষ্ট্রীয় কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে বিএসইসি ও ডিএসইর উদ্যোগ
গত ৭ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বিশেষ করে দেশের যেসব বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে সরাসরি তালিকাভুক্তির (ডাইরেক্ট লিস্টিং) মাধ্যমে দ্রুত পুঁজিবাজারে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে শিল্প উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
পরবর্তীতে গত ২১ জুলাই রেল ভবনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বৈঠক করেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। উভয় পক্ষের এ বৈঠকে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লাভজনক ও ভালো কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির পথকে সুগম করতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
এরই ধরাবাহিকতায় গত ২৪ জুলাই লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ডিএসই।
এরপর গত ২৯ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত বিএসইসি সঙ্গে পুঁজিবাজারের অংশীজনদের তৃতীয় মাসিক সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। সে সময় তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য আমরা কাজ করছি। কিছু সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির তালিকা করে তাদের সঙ্গে বসছি। সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
পরবর্তীতে গত ৩১ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুসরণে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বৈঠকে সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। একই সঙ্গে দেশের যেসব বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে দ্রুত পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার বিষয়েও আলোচনা হয়।
বিএসইসির দেওয়া তথ্য মতে, ইতোমধ্যে লাভজনক ১৫টি কোম্পানির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো হলো- ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), সাইনোভিয়া (সাবেক স্যানোফি) বাংলাদেশ লিমিটেড, নোভার্টিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড, সিনজেন্টা (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস্ কোম্পানি লিমিটেড, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন লিমিটেড ও জীবন বীমা কর্পোরেশন লিমিটেড ইত্যাদি।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে মাত্র ২০টি সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এগুলোর বাজার মূলধন ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলো হলো- এটলাস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিডি সার্ভিস), বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি (বিএসসিসিএল), বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ইস্টার্ন কেবলস, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইবিসি), যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল টিউবস, পদ্মা অয়েল, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রূপালী ব্যাংক, শ্যামপুর সুগার মিলস, তিতাস গ্যাস, উসমানিয়া গ্লাস সিট ফ্যাক্টরি, লিন্ডে বাংলাদেশ ও জিলবাংলা সুগার মিলস।
ঢাকা/এনটি/বকুল