কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনা কমিয়ে ভারত ও পাকিস্তানকে সামরিক সংঘাত এড়ানোর বার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। গত সোমবার দুই দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। সেখানে দুই দেশের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছে পরিষদের সদস্যদেশগুলো।

নিরাপত্তা পরিষদের ওই বৈঠক হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে। বৈঠকে পরিষদের স্থায়ী ৫টি ও অস্থায়ী ১০ দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তান নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য। ভারতের আপাতত পরিষদে কোনো সদস্যপদ নেই। তবে সোমবারের বৈঠকের আগে থেকেই আলাদাভাবে পরিষদের সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে নয়াদিল্লি।

গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সদস্যদেশগুলোকে ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জানানো হয়। এ ছাড়া ভারতের ‘আসন্ন হুমকি’ সম্পর্কে জানানো হয়। জবাবে পরিষদের পক্ষ থেকে উত্তেজনা কমানো এবং সামরিক সংঘাত এড়ানোর জন্য সংলাপ ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত সরকার। তবে তা নাকচ করে দিয়েছে ইসলামাবাদ। এরপরও দুই দেশ একে–অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। চলছে দুই দেশের সামরিক মহড়া। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটছে।

এ পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। যেকোনো ধরনের সামরিক সংঘাত এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই এখন সর্বোচ্চ সংযত থাকার এবং সংঘাতের দ্বারপ্রান্ত থেকে পেছনে ফিরে আসার সময়।

‘যেকোনো সময়ে হামলা’

পেহেলগামে হামলার পর থেকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তান ও ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে সোমবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সতর্ক করে বলেছেন, গোপন সূত্র অনুযায়ী, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যেকোনো সময় হামলা চালাতে পারে ভারত। তবে তেমনটি হলে উপযুক্ত জবাব দেবে পাকিস্তান।

পেহেলগামের ঘটনা তদন্তে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন উল্লেখ করে খাজা আসিফ বলেন, এ তদন্তের মাধ্যমে পরিষ্কার হবে, ঘটনাটিতে ভারত নিজে বা কোনো অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী জড়িত কি না? এ থেকে (তদন্ত) নয়াদিল্লির ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে সত্যিটা উঠে আসবে।

কাশ্মীর হামলার পর জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে খাজা আসিফ অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে এ অঞ্চলকে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছেন মোদি নিজেই। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ভারত জড়িত বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ভারত হামলা চালাতে পারে—এমন শঙ্কার মধ্যে গতকাল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, পরিদর্শনের সময় চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত জানানো হয়। বিশেষ করে হুমকির মুখে পাকিস্তানের প্রস্তুতি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করা হয়।

মহড়ার জন্য বিভিন্ন রাজ্যকে নির্দেশ

প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধির পাঠানো খবর অনুাযায়ী, আজ বুধবার থেকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির মহড়া চালানোর নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিবদের কাছে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছে। যুদ্ধ বাধলে নাগরিকদের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কী কী করণীয়, সেসব ওই বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের পর কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রথমবার এ ধরনের মহড়ার নির্দেশ দিল। নির্দেশ কার্যকর করতে হবে প্রধানত সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোকে। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী, ভারতের ২৪৪ জেলায় এ মহড়া চালানো হবে। মহড়া দিতে হবে গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও। এ মহড়ায় মূলত দেখা হবে শত্রুদেশের বিমান হামলার সময় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কি না।

মহড়ার আরও এক উদ্দেশ্য, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় বেসামরিক নাগরিকদের শিক্ষিত করে তোলা। রাজ্যে রাজ্যে গঠিত সিভিল ডিফেন্স এ দায়িত্ব পালন করে। বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সজাগ রাখা এবং শত্রু হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের কত দ্রুত উদ্ধার করা যায়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়াও এ মহড়ার একটি অংশ।

হামলার কথা ‘আগেই জানতেন’ মোদি

পেহেলগামে হামলার তিন দিন আগেই গোয়েন্দারা এ–সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাগড়ে। বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, খাগড়ে বলেছেন, ওই তথ্য পাওয়ার পর কাশ্মীর সফর বাতিল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কাশ্মীরে এ হত্যাকাণ্ডের দায় কেন্দ্রীয় সরকারকে নিতে হবে। কারণ, মানুষকে রক্ষায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেনি তারা।

জলবিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর সময় এগিয়েছে ভারত

পেহেলগাম হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের নেওয়া সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো সিন্ধু পানিচুক্তি বাতিল। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে চুক্তিটি করেছিল দুই দেশ। এর পর থেকে এই প্রথম কোনো পক্ষ থেকে চুক্তিটি স্থগিত করা হলো। নয়াদিল্লির এমন সিদ্ধান্তের পর কঠোর সমালোচনা করেছে ইসলামাবাদ। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।

এরই মধ্যে কাশ্মীর এলাকায় নির্মাণাধীন চারটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার সময় এগিয়ে এনেছে ভারত। চেনাব নদী ঘিরে ওই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হলো পাকাল দুল, কিরু, কওয়ার ও রাতল। এই কেন্দ্রগুলো ২০২৬ সালের জুন থেকে ২০২৮ সালের আগস্টের মধ্যে চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, সময়ের আগেই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চেনাব নদীতে পানির প্রবাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পাকিস্তানের সিন্ধু নদ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। সোমবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত থেকে পানি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় হঠাৎ এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এ প্রবাহ ৯০ শতাংশ কম বলে জানিয়েছেন সিন্ধু নদ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মুহাম্মদ খালিদ ইদ্রিস রানা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন পর স থ ত ব যবস থ স মব র অন য য় র জন য ল র পর সরক র মহড় র র সময় সদস য চলম ন

এছাড়াও পড়ুন:

কদম রসুল সেতুর পশ্চিমাংশের মুখ পরিবর্তনের দাবিতে ১৩ প্রতিষ্ঠানের স্মারকলিপি 

শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়কে সংযুক্ত করতে প্রস্তাবিত কদম রসুর সেতুর পশ্চিমাংশের মুখটি পরিবর্তনের দাবিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে কালীর বাজার ও দিগুবাবুর বাজার এলাকার ১৩ টি ব্যবসায়ী, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বুধবার (৬ আগস্ট) সকালে স্থানীয় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়ার মাধ্যমে এ স্মরকলিপি প্রদান করা হয়।  

স্মারকলিপিতে বলা হয়, শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়কে সংযুক্ত করার প্রয়োজনে এর উপর কদম রসুলসেতু নির্মাণের সংবাদটিতে আমারা আনন্দিত এবং পাশাপাশি উদ্বিগ্ন।

কদম রসুল সেতুটির প্রকল্প নকশায় আমরা দেখতে পাই এর পশ্চিমাংশের মুখটি শহরের অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়ক ফলপট্টি এলাকায় নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে এসে নেমেছে।

এইটি এভাবে বাস্তবায়িত হলে তা আমাদের ও নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য একটি ভয়াবহ দুর্ভোগের কারণ হবে বলে আমরা মনে করি। এমনিতে এক-নং রেল গেট থেকে পুরো সিরাজ উদদ্দৌলা সড়কটিতে সব সময় অস্বাভাবিক ট্র্যফিক জ্যাম থাকে।

এখানে শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বড় স্কুল নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল, পাশে নারায়ণগঞ্জ কলেজ, এর সাথে শহরের দুইটি বৃহত্তর বাজার দিগুবাবু বাজার ও কালীর বাজারে প্রদেশের মুখ।

বড় বিষয় জায়গাটি যেমনি শহরের রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটের সংযোগ সড়ক আবার দেশের বৃহত্তকর রঙ ও সুতার বাজার টানবাজারে প্রবেশেরও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। যার ফলে এখানে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ যানজট লেগে থাকে।

সর্বোপরি এই সড়কেই একটি রেলক্রসিং থাকাতে বিভিন্ন সময় এখানে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এমনি একটি ব্যস্ততম সড়কে কদম রসুল সেতুর মুখ যদি যুক্ত হয় তা হলে সে সেতু থেকে যানবাহন সড়কে নামার ক্ষেত্রে যেমনি সংকটে পড়বে অন্যদিকে এই পুরো এলাকাটিই সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়বে।  

আমরা অতি দ্রুত এই সেতুটির পশ্চিমাংশের মুখটি পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছি। অপরিকল্পিত উন্নয়ন জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি করা ছাড়া কোন সুফল বয়ে আনে না। যেনতেন ভাবে প্রকল্প সম্পন্ন করে নারায়ণগঞ্জের মানুষের দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি না করার জন্য আমরা আপনার যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।  

স্মারকলিপি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে কালীর বাজার কমিটি, নারায়ণগঞ্জ কলেজ, আবদুল্লাহ (র.) মাজার ও মসজিদ, বায়তুস সালাত জামে মসজিদ, শ্রী শ্রী জয় কালী মন্দির, কালীর বাজার বৃহত্তর ঔষধ মার্কেট, শ্রী শ্রী শিব শীতলা তারা মায়ের মন্দির, এন ইসলাম রেলওয়ে মার্কেট, নারায়ণগঞ্জ শপিং কমপ্লেক্স, কদম আলী মস্তান খানকা শরীফ, কালীর বাজার ফ্রেন্ডস মার্কেট, হাজী তারা মিয়া মার্কেট ও কালীর বাজার ইলেক্ট্রিক কল্যাণ সমিতি।

স্মারকলিপি প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন ঔষধ ব্যবসায়ী মো. আকবর হোসেন, ডা. সাইফুল ইসলাম, কালীর বাজার ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম, তানভীর হোসেন, মো. শফিউদ্দিন আহমেদ, হাজী মো. নাজির খান, এলাকাবাসী মো. সুমন চৌধুরী, জুয়েল হোসেন প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ