অরেঞ্জ পিল থিওরি কী

এই ট্রেন্ডে নারীরা (পুরুষও হতে পারেন) তাঁদের সঙ্গীকে একটি কমলালেবু এনে দিতে বলেন। কখনো কখনো কমলালেবু হাতে ধরিয়ে ছিলে দিতে বলেন। আর এখানেই রয়েছে টুইস্ট। সেই কমলা যদি খোসা ছাড়ানো অবস্থায় আসে, তাহলেই তাঁর সঙ্গীকে ভালোবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলা যায়। আর যদি কমলা খোসাসহ আসে, তাহলে ‘কুছ গড়বড় হ্যায়!’ অনেকে বলছেন, এই ছোট্ট অনুরোধের মাধ্যমে তাঁরা দেখতে চাইছেন সঙ্গী/সঙ্গিনী তাঁদের প্রতি কতটা যত্নবান। কেউ কেউ আবার এই থিওরিকে ভালোবাসার ভাষার সঙ্গে তুলনা করেছেন। যেখানে যত্নের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশটাই মুখ্য। যেমন এই কমলার খোসা ছাড়ানো। একটি ভিডিওতে দেখা গেল, এক তরুণী তাঁর সঙ্গীকে বলছেন, ‘আমার কমলা খেতে ইচ্ছা করছে।’ তখন তাঁরা বেডরুমে বসে ছিলেন। পুরুষ সঙ্গী এটা শোনার পর উঠে গিয়ে তাঁকে একটি কমলা খোসা ছাড়িয়ে এনে দিলেন। আর সেটা দেখেই নারীটি তাঁর সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তুমি পাস।’

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে একমনে টিভি দেখছেন এক তরুণ। এমন সময় তরুণীটি সঙ্গীর কাছে এসে বসে তাঁর হাতে একটি কমলা ধরিয়ে দিয়েছেন। এ সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কমলাটি খেতে ইচ্ছা করছে।’ শুনে ছেলেটি টিভি দেখতে দেখতেই কমলার খোসা ছাড়িয়ে কোয়াগুলো মেয়েটির হাতে দিতে থাকেন। এরপর মেয়েটিকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি পাস করেছ, তবে শতভাগ নম্বর পাওনি।’ কারণ হিসেবে ওই তরুণীর ব্যাখ্যা, কমলার খোসা ছাড়িয়ে দিলেও একবারও তিনি মেয়েটির দিকে তাকাননি। এমনকি খোসা ছাড়ানোর ফাঁকে তাঁদের মধ্যে বিশেষ কোনো কথাও হয়নি। ছেলেটি শুধু তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন, যত্নের ঘাটতি ছিল।

নিছক মজা হিসেবেই শুরু হয়েছিল ট্রেন্ডটি। তবে সম্পর্কের এই ‘অরেঞ্জ পিল থিওরি’ প্রথম দেখায় হাস্যকর মনে হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারা কীভাবে তরুণ-তরুণীর সম্পর্কে এটি এক অদৃশ্য চাপ তৈরি করছে, তা বোঝা যায়। কেউ কেউ এই কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে আনার ছোট্ট ঘটনাকেই করে তুলছেন ভালোবাসার মানদণ্ড।

আরও পড়ুনসহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন১২ মার্চ ২০২৫সম্পর্ক বুঝতে এই থিওরি কতটা ঠিক

মনোরোগবিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এসব ট্রেন্ড অনেক সময় আমাদের স্বাভাবিক সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। যেমন আপনার সঙ্গী হয়তো কমলার খোসা ছাড়াননি, কারণ, তিনি তখন ব্যস্ত ছিলেন বা তিনি বুঝতেই পারেননি আপনি খোসা ছাড়ানো কমলা চাচ্ছেন। তাই এমন পরীক্ষা অনেক সময় ভুল–বোঝাবুঝি বাড়ায়। এ ছাড়া অন্যদের এক মিনিটের টিকটক ভিডিও দেখে তার সঙ্গে নিজের সম্পর্কের তুলনা করাও একধরনের বোকামি। এতে অকারণে মানসিক চাপ বাড়ে। সঙ্গীর প্রতি অস্বস্তি ও সন্দেহ তৈরি হয়। যে কারণে হতে পারে সম্পর্কের অবনতি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীর আহমেদ বলেন, ‘শুধু একটা ঘটনার ওপর ভিত্তি করে কখনোই কোনো সম্পর্ক বা ভালোবাসা মাপা উচিত নয়। স্থান-কাল-পাত্রভেদে একেকজনের সিদ্ধান্ত একেক রকম হয়। কেউ হয়তো কমলার খোসা ছাড়িয়ে আনবেন, আবার কেউ হয়তো শুধু কমলাটাই এনে দিলেন। তাই এসবের ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক যাচাই করতে যাওয়া অযৌক্তিক।’

আরও পড়ুনচারটি প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে ধরে নেবেন আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্ক মজবুত১২ মার্চ ২০২৫যা দেখবেন

ভালোবাসা প্রকাশের ধরাবাঁধা সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। তবে সম্পর্কের মধ্যে যদি ভালোবাসা যাচাই করতেই হয়, তাহলে কয়েকটি জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক তানজীর আহমেদ।

ভালোবাসার ভিত্তি হলো বিশ্বাস। বিশ্বাস ছাড়া যেকোনো সম্পর্কই মূল্যহীন। তাই আপনার সঙ্গী আপনাকে বিশ্বাস করে কি না এবং আপনি আপনার সঙ্গীকে বিশ্বাস করতে পারছেন কি না, দুটিই জানা জরুরি।

আমরা যে জিনিস ভালোবাসি, সব সময় সেই জিনিসের খুব যত্ন করি। মানুষের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। তাই একটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুজনেরই উচিত একে অপরের প্রতি যত্নশীল হওয়া।

আপনার সঙ্গী আপনাকে একজন মানুষ হিসেবে কতটুকু শ্রদ্ধা ও সম্মান করছে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

ভালোবাসার সম্পর্কের শুরুতে সবাই নিজের সবচেয়ে ভালো দিকগুলো দেখানোর চেষ্টা করেন। তাই প্রথম দিকে তিনি আপনার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছেন, সেটা দেখার চেয়েও বেশি জরুরি, তাঁর চারপাশের মানুষের সঙ্গে তিনি কীভাবে কথা বলছেন বা কেমন ব্যবহার করছেন, সেটা খেয়াল করা।

আপনি বা আপনার সঙ্গী যদি মজা করে এ ধরনের ভিডিও বানাতে চান, তাতে কোনো ক্ষতি নেই। তবে তা যেন দুজনের সম্মতির ভিত্তিতে হয় এবং কারও জন্যই অপমানজনক না হয়; বরং সম্পর্ক বোঝার জন্য একে অপরের ভালোবাসার ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। সম্পর্ক গড়তে হলে দরকার পারস্পরের প্রতি সম্মান ও বোঝাপড়া। একটি সম্পর্কের চেয়ে খোসা ছাড়ানো কমলার গুরুত্ব খুব একটা বেশি নয়!

সূত্র: ভেরি ওয়েলমাইন্ড ও টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুনসম্পর্কে এই ১০ আচরণ কখনোই সহ্য করবেন না২৬ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কমল র খ স ই কমল বলছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মান বাঁচাল ‘থান্ডারবোল্টস’

কয়েক বছর ধরেই মার্ভেলের সিনেমার বাজার মন্দা। একটার পর একটা সিনেমা মুক্তি পায় আর ফ্লপ হয়। কেবল বক্স অফিস ব্যর্থতাই নয়, সমালোচকদের মতে, গত কয়েক বছরে মুক্তি পাওয়া মার্ভেল সিনেমাগুলোর কোনোটিই মনে রাখার মতো নয়। অ্যাকশন, গল্পের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তা আর হাস্যরসের যে দারুণ সংমিশ্রণ ছিল, মার্ভেলের সিনেমায় সেটা আর নেই। তবে ২ মে মুক্তি পাওয়া ‘থান্ডারবোল্ডস’ ব্যতিক্রম। মুক্তির পর থেকে সমালোচকদের প্রশংসা আর প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উপস্থিতি প্রযোজককে আশাবাদী করে তুলছে। মুক্তির পর প্রথম তিন দিনে বক্স অফিসে আয়ের নিরিখে বলা হয়, সিনেমাটি হয়তো মার্ভেলের মান বাঁচাবে।

মুক্তির প্রথম দিন সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী ১৬৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। সমালোচকেরাও সিনেমাটির প্রশংসা করেছেন। রটেন টমাটোজে ২৭৩ জন সমালোচকের ৮৮ শতাংশই ইতিবাচক রেটিং দিয়েছেন। মেটাক্রিটিকেও সিনেমাটির স্কোর ৬৮। বিবিসির সমালোচনায় সিনেমাটি সম্পর্কে লেখা হয়েছে, গত কয়েক বছরে মার্ভেল কিছু হিট ছবি দিলেও সেগুলোর মধ্যকার ধারাবাহিক গল্প বলার যে রীতি তারা তৈরি করেছিল, তা আর আগের মতো নেই।

‘থান্ডারবোল্টস’-এর দৃশ্য। ছবি: আইএমডিবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ