ইসলামিক চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে
Published: 7th, May 2025 GMT
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো এ দেশে বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এ জন্য অবিলম্বে কমিশন ও তাদের প্রতিবেদন বাতিল করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সব মত ও বিশ্বাসের নারীদের সমন্বয়ে নতুন করে কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনে ইসলামিক চিন্তাবিদদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষদেরও যুক্ত করা যেতে পারে।
আজ বুধবার দুপুরে ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন: বিতর্ক ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ওয়ান ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এই বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, যৌনকর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা নয়, তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। একাত্তরের বীরাঙ্গনাদের পাশাপাশি জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিহত নারীদের তথ্য পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘সরকার কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে জানি না। কারণ, পদে পদে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আবার সরকারও সেসব ষড়যন্ত্রে পা দিচ্ছে। নারী সংস্কার কমিশনও আরেকটি ষড়যন্ত্র। এ জন্য এই কমিশন প্রত্যাখ্যান করছি।’
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে হামিদুর রহমান বলেন, ‘কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন যাচাই না করেই আপনি দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এটি যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তাতে কার্যত রাষ্ট্র ও সরকার জনগণের মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে। আপনারা কি জনগণের সঙ্গে যুদ্ধে নামতে চান?’
সভাপতির বক্তব্যে ওয়ান ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো.
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (চাকরিচ্যুত) মো. হাসিনুর রহমান বলেন, এই কমিশন পরিবারের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবে। এটি বৃদ্ধাশ্রমকে প্রমোট করার কমিশন। এই কমিশনের মাধ্যমে মানুষকে ইসলামী মূল্যবোধের জায়গা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম আবদুল মান্নান বলেন, কমিশনের বেশির ভাগ প্রস্তাব ইসলামের বিরুদ্ধে গেছে। আবার অভিন্ন পারিবারিক আইনসহ অনেক প্রস্তাব অন্য ধর্মগুলোরও বিরুদ্ধে গেছে। কাজেই এই কমিশনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে হবে।
সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভানেত্রী অধ্যাপক শামীমা তাসনীম বলেন, কমিশনের প্রস্তাবগুলো দাম্পত্য কলহের নতুন ইস্যু তৈরি করবে। এটি বাস্তবায়িত হলে পরিবারের মহিলা সদস্যদের কাছে পুরুষ সদস্যদের শত্রু করা হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জুলফিকার হাসান। ওয়ান ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক মুহাম্মাদ আবদুল মান্নানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বুয়েটের অধ্যাপক মো. ফখরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ইকতেদার আহমেদ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহীন আরা আনোয়ারী, সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সেক্রেটারি ফেরদৌস আরা খানম, আইপাস বাংলাদেশের সাবেক সিনিয়র অ্যাডভাইজর ডা. শামিলা নাহার, আইনজীবী সাবিকুন নাহার মুন্নি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর খলিলুর রহমান মাদানী, মাসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব আবদুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম ও সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি নেতা এ্যানির বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ইসলামী আন্দোলন, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি
লক্ষ্মীপুরে চরমোনাই পীরের সমালোচনা করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির দেওয়া বক্তব্যে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। এ্যানির বক্তব্যের জন্য তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল সোমবার রাতে বিবৃতি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখা।
ইসলামী আন্দোলন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন ও সেক্রেটারি জহির উদ্দিনের যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন প্রচার ও দাওয়াহবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান। বিবৃতিতে বলা হয়, একটি জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম সম্পর্কে বিএনপির নেতা এ্যানি যে অশ্লীল, অশালীন ও মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছেন, তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত।
ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলেন, মূলত ৫ আগস্টের পর ইসলামপন্থীদের ঐক্য ও এক বাক্সে ভোটের প্রক্রিয়াকে বিএনপি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। নির্বাচনে বিএনপির জন্য একমাত্র বাধা ‘ইসলামী জোট’। এতে তাদের ভরাডুবি জেনে বিএনপি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও জাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেইমান তো তারা, যারা শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে।
বিবৃতিতে বিএনপিকে স্বৈরাচারের সঙ্গী বলে দাবি করে বলা হয়, তারা ২০১৮ সালের অবৈধ নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে তাদের ছয়জন এমপি পাঠিয়েছে। ২০১৮-এর ডামি নির্বাচনের স্বীকৃতিদানকারী দল হলো বিএনপি। এখন তারা পাগলের মতো আবোলতাবোল বলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছে। নিজেদের দোষ আড়াল করার হীন চেষ্টা করছে। পাবলিক সেন্টিমেন্টকে ভিন্ন দিকে ডাইভার্ট করার পাঁয়তারা করছে বিএনপি।
আরও পড়ুনইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতের কড়া সমালোচনায় বিএনপির এ্যানি১৪ ঘণ্টা আগেবিবৃতিতে এ ছাড়া বিএনপির উদ্দেশে বলা হয়, ‘জাতীয় চাঁদাবাজেরা মিথ্যা ছাড়া কিছু বলতে পারে না। মিথ্যা কথা বলাই এ্যানি চৌধুরীরদের পুঁজি, যা বাংলাদেশের মানুষ এখন বুঝে গেছে। আমরা তার মিথ্যা কথা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই।’
বিবৃতি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসলামী আন্দোলন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘এ্যানির মতো একজন নেতার এ রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য রাজনৈতিক ও সচেতন মহলকে ব্যথিত করেছে। আমরা তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এর আগে গত সোমবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা আউটডোর স্টেডিয়াম মাঠে সদর পূর্ব বিএনপির প্রতিনিধি সম্মেলনে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামীর কড়া সমালোচনা করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। এ সময় তিনি বলেন, চরমোনাই পীর জাতীয় বেইমান ও ভণ্ড। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনে কোনো ভূমিকা ছিল না ইসলামী আন্দোলনের।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি বলেন, বিগত ১৭ বছরের ফ্যাসিস্টবিরোধী কোনো আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হাতপাখা বা চরমোনাই পীরের কোনো ভূমিকা ছিল না; বরং স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের সখ্য ছিল। বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে দলটি। নির্বাচন বিঘ্নিত করতে নানা চক্রান্ত করা হচ্ছে। ইসলামের নামে তারা চক্রান্ত করছে। ষড়যন্ত্র করছে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এসব জাতীয় বেইমানদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করা হবে।
ওই সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীরও সমালোচনা করে এ্যানি বলেন, ‘তারা ’৮৬ ও ’৯৬ সালে বিভিন্নভাবে শুধু আমাদের অসহযোগিতা করে নাই, পুরো জাতিকে অসহযোগিতা করেছে। হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তাদের সঙ্গে থেকে জাতীয় বেইমান হিসেবে, আত্মস্বীকৃত বেইমান হিসেবে তারা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।’