সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারলে ‘চলে যাবেন’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 8th, May 2025 GMT
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘তাঁদের (আবদুল হামিদকে বিদেশে যেতে সহায়তাকারীদের) কোনো অবস্থায় ছাড় দেওয়া যাবে না। আর যদি শাস্তির আওতায় না আনি, তাহলে আমি সে সময় চলে যাব।’
আজ বৃহস্পতিবার দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
এর আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিবিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে বিকেল সাড়ে চারটায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থী উপদেষ্টার পথরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের পদত্যাগ ও শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।
শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিষয়টি (সাবেক রাষ্ট্রপতি দেশত্যাগ) জানতাম না। এখানে আসার সময় জানতে পারছি। আমি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের সবাইকে শুধু পদত্যাগ নয়, শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের শাস্তির দাবি জানালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে কথা বলেছি। তাঁরা (বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন) কতটুকু এগিয়েছে, গাড়িতে যেতে যেতে হয়তো কিছু জানতে পারব। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দিনাজপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক একরামুল হক বলেন, ‘এতগুলো কোমলমতি শিক্ষার্থীর রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে সরকার। ফ্যাসিবাদ কায়েমকারীরা একে একে নিরাপদে দেশ ছাড়ছে, এটা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে? সংস্কার তাহলে কোথায় হচ্ছে? যে পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের বুকে গুলি চালাল, তারাই তো ফ্যাসিবাদের দোসরদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এত এত নিরাপত্তা অথচ সাবেক একজন রাষ্ট্রপতি নিরাপদে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন সরকার কিছুই জানে না—এটা হতে পারে না। আমরা সাবেক রাষ্ট্রপতিকে দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাই। অন্যথায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কথার অনুযায়ী তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন।’
‘বাংলাদেশের বর্ডার সম্পূর্ণ সিকিউরড’
এর আগে দুপুরে দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ঢেলপীর এলাকায় কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় বাংলাদেশের সীমান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সীমান্তে ভীতির কোনো কারণ নেই। আমাদের বর্ডার সম্পূর্ণ সিকিউরড। এখানে কোনো ধরনের কোনো সমস্যা নেই। কৃষকেরা ভালোভাবে ধান কাটতে পারবেন, কৃষিকাজ করতে পারবেন।’
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কৃষকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যাঁরা কষ্ট করে আমাদের জন্য ফসল ফলান। আগে দেশে সাড়ে সাত কোটি লোক ছিল। কৃষিজমি বেশি ছিল। এখন প্রায় ১৮ কোটি লোক, ফলে কৃষিজমির পরিমাণ কমেছে। এরপরও উন্নত জাতের ধান ও কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম এবং বিজ্ঞানীদের পরিশ্রমের ফলে আমাদের কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। গত বছর আমাদের আমদানি করতে হয়নি। এবারও উৎপাদন ভালো হয়েছে। আমাদের হয়তো আমদানি করতে হবে না।’
নতুনভাবে কৃষিজমি সুরক্ষা আইন করার চিন্তা চলছে উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা কিছুদিনের মধ্যে হয়ে যাবে। ইটভাটা যেন না চলে, সেগুলো নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। আপনারা (সাংবাদিকেরা) সত্য সংবাদ প্রকাশ করলে আমরা উপকৃত হই। অনেক সময় যদি মিথ্যা সংবাদ দেওয়া হয়, এতে প্রতিবেশীরা সুবিধা পেয়ে যায় এবং এটা নিয়ে মিথ্যা রটনা রটায়।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এস আসাদুজ্জামান, দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফজাল হোসেন প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় কৃষকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় তিনি বলেন, ‘যাঁরা ফসল ফলান, তাঁরা দাম পান না। দাম পায় মধ্যস্বত্বভোগীরা। যেটা চাঁদাবাজি করবে, ওইটারে লাথি মারেন। যদি কোনো জায়গায় চাঁদাবাজি হয়, আমাদের তথ্য দেবেন, চাঁদাবাজরে আমরা ছাড়ব না।’
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে উঠান বৈঠকের জন্য প্রচুর টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উঠান বৈঠকের টাকা পকেটে ঢোকাবেন না। পকেটে ঢোকালে কিন্তু আপনারা থাকতে পারবেন না। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে আপনারা মানুষকে সচেতন করবেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ক র ষ ট রপত শ স ত র আওত য় দ শত য গ ক ষকদ র আম দ র এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
যমুনার সামনে এনসিপি, আপ বাংলাদেশ, শিবির, জুলাই ঐক্য, ইনকিলাব মঞ্চ
আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাত দশটা থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। রাত দেড়টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন।
এতে জাতীয় নাগরিক পার্টি, জুলাই ঐক্য, শিবির, আপ বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থী, ইনকিলাব মঞ্চ, ছাত্র পক্ষের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন উপস্থিত হচ্ছেন। ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে মিছিল।
এ দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশ-র্যাব অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করছেন। তারা নানা স্লোগান দিচ্ছেন। তারা 'ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামীলীগ নো মোর', খুনি লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে, ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
কর্মসূচিতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, আপ বাংলাদেশের আলী আহসান জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ, শিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান হাদিসহ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
এ ছাড়া এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তাসনীম জারা, যুগ্ম আহবায়ক মনিরা শারমিন, নুসরাত তাবাসসুম, তাজনূভা জাবীন, সারোয়ার তুষার অংশ নিয়েছেন।
ছাত্রসংগঠনের মধ্যে সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্যসচিব জাহিদ আহসান, জুলাই ঐক্যের এবি জুবায়ের, মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত আছেন।
শিক্ষার্থীদের অবস্থানকে কেন্দ্র করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কর্মসূচিতে এনসিপির যুব উইংয়ের প্রধান তারিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় এখানে অপেক্ষা করবো। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আগে আমরা যমুনার সামনে থেকে যাচ্ছি না।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে ইন্টেরিমকে আর সময় দিতে রাজি নই, লাশ হয়ে ফিরবো না হয় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
কর্মসূচিতে এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, নয় মাস কেটে গেছে দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম নেই। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা পালিয়ে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি- বিচার না করে ছয়শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা দাবি জানিয়েছি, আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে।
এ দিকে বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফরমালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
এ দিকে নাহিদ ইসলাম ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নিষিদ্ধ করার প্রহসন মেনে নেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে। আইসিটি আইনে দল হিসেবে বিচার করার বিধান যুক্ত করতে হবে।