Samakal:
2025-06-23@07:11:02 GMT

ধুলার ওপরই চলছে কার্পেটিং

Published: 8th, May 2025 GMT

ধুলার ওপরই চলছে কার্পেটিং

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতসংলগ্ন সড়কের কাজ চলছে দায়সারা। সড়কের কাজে প্রাইম কোট দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানা হয়নি। ধুলাবালুর ওপর নামমাত্র কার্পেটিং করেই কাজ চলছে বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ। তাদের ভাষ্য, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে কয়েকবার তারা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। অদৃশ্য শক্তিবলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিনরাত এই নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্বদিকে হোসেনপাড়া বাজার ধোলাই মার্কেট পর্যন্ত এই সড়কটির দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটার। এলাকাবাসীর কাছে এটি পরিচিত মেরিন ড্রাইভ সড়ক হিসেবে। সম্প্রতি ‘বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পে’র আওতায় ৯ কোটি ৬১ লাখ টাকায় এই সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন। কবে দরপত্র ও কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, এসব বিষয়ে তথ্য জানতে উপজেলা এলজিইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

১৬ ফুট চওড়া সড়কটিতে ৪০ মিলিমিটার কার্পেটিং করার কথা রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ জায়গায়ই তা মানা হয়নি। কোথাও কোথাও দেওয়া হয়নি প্রাইম কোট পর্যন্ত। পাঞ্জুপাড়া গ্রামের দর্জি মোহাম্মদ নাঈমের ভাষ্য,  ঠিকাদারের লোকজন যে প্রাইম কোট দিয়েছে, তা নামেমাত্র। তার ওপর যে কার্পেটিং করা হয়েছে, এর ফিনিশিংও ভালো হয়নি। তিনি মনে করেন, এই রাস্তা নির্মাণের নামে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। তাদের কোনোই উপকারে আসবে না সড়কটি। বছর পার হতে না হতেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যাবে। 
স্থানীয় লোকজন জানায়, বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষা এই সড়কটি কয়েক দশক ধরে উপকূলবাসীকে সিডর-আইলার মতো বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে রক্ষা করেছে। কুয়াকাটা ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে এটি মেরিন ড্র্রাইভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ব্যস্ততম এই সড়কটি সংস্কারের শুরু থেকেই অনিয়ম চলছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে কয়েক দফায় তারা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের দাবি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি যেন ভালোভাবে সংস্কার করা হয়। 

যেভাবে সংস্কার চলছে, এতে সড়কটি এক বছরও চলাচলযোগ্য থাকবে না। এমন মন্তব্য করেন হোসেনপাড়ার বাসিন্দা মো.

মনির হোসেন। পেশায় ভ্যানচালক এই ব্যক্তির ভাষ্য, ঠিকাদারের লোকজন শুরু থেকেই দিনে-রাতে মিলিয়ে রাস্তার কাজ করছে, সাধারণ মানুষ যাতে (অনিয়ম) দেখতে না পারে। খোয়ার ওপর অনেক বালু আছে। সেই বালুর ওপরে প্রাইম কোট দিয়েছে। অপরিচ্ছন্ন সড়কের ওপর প্রাইম কোট দেওয়ায় তা টিকবে না। তিনি বলেন, যে পরিমাণ প্রাইম কোট দেওয়ার কথা, তার অর্ধেকও দেওয়া হচ্ছে না। এত বছর পরে এমন রাস্তা চায় না এলাকাবাসী।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ বলেন, কুয়াকাটার সর্বব্যস্ত সড়কটি পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কোনো মেরিন ড্রাইভ না থাকায় এই সড়কটিই মেরিন ড্রাইভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সংস্কারকাজের শুরু থেকেই অনিয়ম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষ ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির বলে তারা (ঠিকাদার) দিন-রাতে অনিয়ম করে যাচ্ছেন, কেউ দেখছে না। কুয়াকাটাবাসীর স্বার্থে রাস্তাটির কাজ সুন্দরভাবে শেষ করার দাবি জানান তিনি। 
এ বিষয়ে বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী বা তার প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাদের সহঠিকাদার (সাব-কন্ট্রাক্টর) ফোরকান হোসেনের দাবি, এলজিইডি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুসারে সড়ক পাকাকরণের কাজ হচ্ছে। কোনো অনিয়ম হচ্ছে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার এসব বিষয়ে কথা হয় এলজিইডি কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাদিকুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর দাবি, ওই সড়কের পাকাকরণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তখন কিছু সময়ের জন্য কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। কিছু জায়গার কার্পেটিং তিনি ৪০ মিলিমিটারের কম পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, সেগুলো ঠিক করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের শিডিউল অনুযায়ী কাজ শেষ করতেও বলেছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক ই সড়কট র ওপর ব যবহ সড়ক র ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দপ্তরের অধীন ২৯ কিমি সরু সড়কে চলাচলে ঝুঁকি

নওগাঁ সদর উপজেলার কাঁঠালতলী মোড় থেকে আত্রাই পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার সড়ক এক সময় ছিল নাটোর ও বগুড়ায় যাওয়ার প্রধান মাধ্যমে। আশির দশকের আগে এটি ছিল ইটের সলিং রাস্তা। পরবর্তী সময়ে পাকা করা হলেও আর প্রশস্ত হয়নি। বর্তমানে সড়কের বেশির ভাগ অংশের প্রস্থ মাত্র ১০ থেকে ১২ ফুট। ফলে দুই দিক থেকে আসা গাড়ির মুখোমুখি হলে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণহানিও হয়েছে অনেকে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ৪৫ বছর ধরে যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ নওগাঁ-রাণীনগর-আত্রাই আঞ্চলিক সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। ফলে তিনটি উপজেলার লাখো মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা সড়কটি পরিণত হয়েছে ‘মরণফাঁদে’। সরু সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক এবং যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। সড়কটির দুই অংশ দুই সরকারি দপ্তরের অধীন হওয়ায় প্রশস্তকরণের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির আধুনিকায়ন ও প্রশস্তকরণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলা দেশের প্রান্তিক এ জনপদের মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে সড়কটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। রাণীনগর মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন বলেন, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন তিন উপজেলার লাখো মানুষ যাতায়াত করেন। সরু হওয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ দীর্ঘদিনেও সড়কটি প্রশস্ত করা হয়নি।
বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে এ সড়কে ইঞ্জিনচালিত ভটভটি উল্টে একজন নিহত ও দু’জন আহত হন। ফেব্রুয়ারি মাসে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত যানের সংঘর্ষে প্রাণ হারান দু’জন। একজন আহত হন। গত এপ্রিল মাসে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গত বছরের আগস্টে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে একজন নিহত হন। আহত হন একজন। এর বাইরে ছোট অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
জানা গেছে, সড়কের দু’পাশে গড়ে উঠেছে ঘন জনবসতি। রয়েছে হাটবাজার, ধানের চাতাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন পণ্যবাহী ট্রাক, অটোরিকশা, ভটভটি, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ অসংখ্য ছোট-বড় যানবাহন এ সড়ক ব্যবহার করে। অথচ প্রশস্ত ও ডিভাইডার নেই। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সংস্কারও করা হয়নি।
সড়কটির প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ রয়েছে নওগাঁ সড়ক বিভাগের অধীনে। আর বাকি ১৭ কিলোমিটার রাণীনগর থেকে আত্রাই পর্যন্ত অংশ ‘ছোট যমুনা নদীর বাঁধ’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায়। এ মালিকানা জটিলতা সড়ক প্রশস্তকরণে অন্যতম বাধা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
‘রক্তদহ-লোহচূড়া বিল নিষ্কাশন স্কিম’ প্রকল্পের আওতায় ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ আত্রাই-রাণীনগর অংশে সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানান নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ না থাকায় বাঁধ প্রশস্ত করা যাচ্ছে না। ২৮ কিলোমিটার অংশ পুনর্নির্মাণের জন্য ডিপিপি পাঠানো হয়েছে।
সড়কের কিছু অংশ ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে জানিয়ে নওগাঁ সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নূরে আলম সিদ্দীক বলেন, সড়কটি দ্রুত প্রশস্ত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান বলেন, সড়কটি তিনটি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত ও কৃষিপণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। পথ এতটাই সরু যে, বড় আকারের একটি যানবাহন চলাচল করাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। আধুনিকায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়ক খানাখন্দে বেহাল, ক্ষোভ
  • ঘুষে চলে যায় বরাদ্দের অর্ধেক
  • বান্দরবানে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তা ঢালাই, কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের উদ্বেগ
  • ৬৭ কোটি টাকায় সংস্কার, দুই বছর না যেতেই ধস
  • দুই দপ্তরের অধীন ২৯ কিমি সরু সড়কে চলাচলে ঝুঁকি
  • নড়াইলে ভারী বৃষ্টিতে আঞ্চলিক সড়কে ধস