স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কয়েকটি প্রস্তাব ‘অবাস্তব, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল’
Published: 9th, May 2025 GMT
নাগরিক সংগঠন ‘সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’ মনে করে, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব অবাস্তব। প্রতিবেদনে এমন কিছু কথা বলা হয়েছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তবে প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই, সেগুলো সরকার এখনই বাস্তবায়ন শুরু করতে পারে।
আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে এ কথা বলেন। সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ মূলত চিকিৎসকদের একটি সংগঠন। সংগঠনটি মনে করে, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য গঠন করা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ও বক্ষব্যাধি চিকিৎসক কাজী সাইফউদ্দীন বেননূর বলেন, প্রতিবেদনের কিছু সুপারিশ নিয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করবে না। কিছু সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিছু সুপারিশ হয়তো বাস্তবায়নযোগ্য নয় বা সেগুলো বেশি বিতর্কের কারণ হতে পারে। তাই যেসব সুপারিশ নিয়ে কোনো বিভেদ বা রাজনৈতিক বিতর্কের অবকাশ নেই, সেগুলোর বাস্তবায়ন এখনই শুরু করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এই প্রতিবেদন স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনার পথ খুলে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন: আমাদের পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণ’ শীর্ষক অবস্থানপত্র পাঠ করেন আয়োজক সংগঠনের সদস্যসচিব শামীম হায়দার তালুকদার। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সবচেয়ে দুর্বলতা হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগ নিয়ে যে অংশে আলোচনা হয়েছে ওই অংশে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) কিছু বিচারিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ মনে করে, এটা অবাস্তব প্রস্তাব। বিএমডিসির দায়িত্ব লাইসেন্স দেওয়া, বিচার করা নয়। বিচারের জন্য পৃথক আইনি কাঠামো বা মেডিকেল কোর্ট গড়ে তুলতে হবে।
প্রতিবেদনের হাসপাতালভিত্তিক সেবায় সুশাসনের অংশে বলা হয়েছে, একজন রোগী একটা রোগের জন্য একজন চিকিৎসককেই দেখাবেন। শামীম হায়দার তালুকদার বলেন, এতে রোগীর স্বাধীনতা খর্ব বা নষ্ট হবে, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। বিশ্বের কোনো দেশে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া সুপারিশে প্রস্তাবিত হেলথ সার্ভিসে একটি ত্রুটি হলো তাতে ক্যারিয়ার ট্র্যাক (স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের পেশাগত উৎকর্ষের পরিকল্পনা) সৃষ্টি করা হয়নি। এ বিষয়ে যেসব গবেষণা হয়েছে তা কমিশনের আমলে নেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আয়োজক সংগঠন কমিশনের প্রতিবেদনটিকে ‘পূর্ণভাবে ধারণ করে’। কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তারা সরকারকে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে। এই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের নেতৃত্ব ও সুশাসনসংক্রান্ত অবস্থার একটি হতাশাজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। এই প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকিও আছে বলে আয়োজকেরা মনে করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের সদস্য আহমদ এহসানূর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তবে বক্তারা যেসব সংস্কার প্রস্তাবকে অবাস্তব ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলেছেন, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। আহমদ এহসানূর রহমান বলেন, সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্যকে ‘পাবলিক গুড’ হিসেবে দেখতে চেয়েছে, স্বাস্থ্যকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করেনি। কমিশন প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার, স্বাস্থ্যকে রোগী বা সেবাগ্রহীতার দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘গত ৫০ বছরে স্বাস্থ্যকে জাতীয়ভাবে গুরুত্বের স্থানে রাখা হয়নি, জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা–বিতর্ক হয়নি। আমরা মনে করি, সেটা হওয়া উচিত।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আয়োজক সংগঠনের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ বলেন, সংস্কার প্রস্তাবে চিকিৎসকের কাছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। উদ্যোগটি সঠিক, আদর্শ পরিস্থিতিতে তা–ই হওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কতটা বাস্তবসম্মত, তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বক্ষব্যাধি চিকিৎসক আবদুস সাকুর খান, ইউনিসেফের কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব বায়োএথিকসের মহাসচিব অধ্যাপক শামীমা লস্কর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব র সদস য ক স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)