নাগরিক সংগঠন ‘সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’ মনে করে, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব অবাস্তব। প্রতিবেদনে এমন কিছু কথা বলা হয়েছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তবে প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই, সেগুলো সরকার এখনই বাস্তবায়ন শুরু করতে পারে।

আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে এ কথা বলেন। সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ মূলত চিকিৎসকদের একটি সংগঠন। সংগঠনটি মনে করে, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য গঠন করা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ও বক্ষব্যাধি চিকিৎসক কাজী সাইফউদ্দীন বেননূর বলেন, প্রতিবেদনের কিছু সুপারিশ নিয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করবে না। কিছু সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিছু সুপারিশ হয়তো বাস্তবায়নযোগ্য নয় বা সেগুলো বেশি বিতর্কের কারণ হতে পারে। তাই যেসব সুপারিশ নিয়ে কোনো বিভেদ বা রাজনৈতিক বিতর্কের অবকাশ নেই, সেগুলোর বাস্তবায়ন এখনই শুরু করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এই প্রতিবেদন স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনার পথ খুলে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন: আমাদের পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণ’ শীর্ষক অবস্থানপত্র পাঠ করেন আয়োজক সংগঠনের সদস্যসচিব শামীম হায়দার তালুকদার। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সবচেয়ে দুর্বলতা হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগ নিয়ে যে অংশে আলোচনা হয়েছে ওই অংশে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) কিছু বিচারিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ মনে করে, এটা অবাস্তব প্রস্তাব। বিএমডিসির দায়িত্ব লাইসেন্স দেওয়া, বিচার করা নয়। বিচারের জন্য পৃথক আইনি কাঠামো বা মেডিকেল কোর্ট গড়ে তুলতে হবে।

প্রতিবেদনের হাসপাতালভিত্তিক সেবায় সুশাসনের অংশে বলা হয়েছে, একজন রোগী একটা রোগের জন্য একজন চিকিৎসককেই দেখাবেন। শামীম হায়দার তালুকদার বলেন, এতে রোগীর স্বাধীনতা খর্ব বা নষ্ট হবে, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। বিশ্বের কোনো দেশে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া সুপারিশে প্রস্তাবিত হেলথ সার্ভিসে একটি ত্রুটি হলো তাতে ক্যারিয়ার ট্র্যাক (স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের পেশাগত উৎকর্ষের পরিকল্পনা) সৃষ্টি করা হয়নি। এ বিষয়ে যেসব গবেষণা হয়েছে তা কমিশনের আমলে নেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আয়োজক সংগঠন কমিশনের প্রতিবেদনটিকে ‘পূর্ণভাবে ধারণ করে’। কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তারা সরকারকে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে। এই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের নেতৃত্ব ও সুশাসনসংক্রান্ত অবস্থার একটি হতাশাজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। এই প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকিও আছে বলে আয়োজকেরা মনে করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের সদস্য আহমদ এহসানূর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তবে বক্তারা যেসব সংস্কার প্রস্তাবকে অবাস্তব ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলেছেন, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। আহমদ এহসানূর রহমান বলেন, সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্যকে ‘পাবলিক গুড’ হিসেবে দেখতে চেয়েছে, স্বাস্থ্যকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করেনি। কমিশন প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার, স্বাস্থ্যকে রোগী বা সেবাগ্রহীতার দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘গত ৫০ বছরে স্বাস্থ্যকে জাতীয়ভাবে গুরুত্বের স্থানে রাখা হয়নি, জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা–বিতর্ক হয়নি। আমরা মনে করি, সেটা হওয়া উচিত।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আয়োজক সংগঠনের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ বলেন, সংস্কার প্রস্তাবে চিকিৎসকের কাছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। উদ্যোগটি সঠিক, আদর্শ পরিস্থিতিতে তা–ই হওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কতটা বাস্তবসম্মত, তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বক্ষব্যাধি চিকিৎসক আবদুস সাকুর খান, ইউনিসেফের কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব বায়োএথিকসের মহাসচিব অধ্যাপক শামীমা লস্কর।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব র সদস য ক স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার পাচ্ছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু

বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্যখাতে দীর্ঘদিনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন ২০২৫ সালের জন্য পুরস্কৃত করেছে দেশের শীর্ষ কৃষি উদ্যোক্তা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে।

প্রতিষ্ঠানটি গত মঙ্গলবার রাতে এক ঘোষণায় ২৭ দেশের ৩৯ জনকে ‘টপ এগ্রি ফুড পাইওনিয়ার’ হিসেবে মনোনীত করে। সেই তালিকায় রয়েছেন লাল তীর সীডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিশিষ্ট রাজনীতিক আবদুল আউয়াল মিন্টু।

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বীজ, সবজি ও প্রাণিসম্পদ খাতসহ কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় কাজ করছেন মিন্টু। ১৯৯৪ সালে মাত্র ২৫ একর জমির ওপর তিনি ‘লাল তীর সীডস লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ বেসরকারি কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। বর্তমানে এটি জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণে আঞ্চলিকভাবে সপ্তম স্থানে রয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন (আইএসটিএ স্বীকৃত) বীজ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশে একমাত্র। মিন্টুর উদ্যোগে দেশে হাইব্রিড ও উন্নত বীজের ব্যবহার জনপ্রিয় হয় এবং সবজি উৎপাদনে বিপুল সাফল্য আসে।

উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতি, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণার মাধ্যমে দেশের কৃষি উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার গবেষণার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো মহিষের জীবন রহস্য উন্মোচন হয়। পাশাপাশি উন্নত জাতের গরু মোটাতাজাকরণে সীমেন প্রযুক্তির প্রচলনও তারই হাত ধরে শুরু হয়।

পুরস্কার প্রসঙ্গে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমি সবসময় কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে অবদান রাখতে চাই। এই সম্মান আমাকে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।’

ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর ৩৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২১–২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ডেস মইনসে আয়োজিত নরম্যান ই. বোরলাগ আন্তর্জাতিক সংলাপে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাশাল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ব এখন খাদ্য, পুষ্টি ও জলবায়ুভিত্তিক সংকটের সম্মুখীন। এই ৩৯ জন সম্মানিত ব্যক্তি সাহসী পরিবর্তনকারী, যারা বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন।’

এ বছর মনোনীতদের মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানী, কৃষক, নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা ও মানবতাবাদীরা। যারা বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ