ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে কীভাবে লাভবান হচ্ছে চীন
Published: 10th, May 2025 GMT
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত চীনের জন্য একটি সম্ভাব্য মূল্যবান গোয়েন্দা তথ্যের উৎস হয়ে উঠেছে। ভারতের সঙ্গে সংঘাতে চীনা যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করছে পাকিস্তান। এর মাধ্যমে চীন সেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে। ভারতের সঙ্গে চীনেরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে।
নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, চীনের সামরিক আধুনিকীকরণ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা এখন সীমান্ত ঘাঁটি, ভারত মহাসাগরে মোতায়েন নৌবহর এবং মহাকাশ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের পদক্ষেপ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষক আলেকজান্ডার নিল বলেছেন, ‘গোয়েন্দা দৃষ্টিকোণ থেকে এটি (ভারত-পাকিস্তান সংঘাত) চীনের জন্য নিজেদের সীমান্ত ঘেঁষে একেবারে অপ্রত্যাশিত এক সুযোগ তৈরি দিয়েছে, যেখানে তাদের একটি সম্ভাব্য প্রধান প্রতিপক্ষ জড়িত।’
দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, চীনের তৈরি জে-১০ নামে একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভারতের অন্তত দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারতের ওই দুই যুদ্ধবিমানের একটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল।
ভারত তাদের কোনো যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার কথা এখনো স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করার কথা নিশ্চিত করেছেন; যদিও ভারতের বিরুদ্ধে সংঘাতে কোন কোন ক্ষেপণাস্ত্র বা কী কী অস্ত্র ব্যবহার করেছেন, সে বিষয়ে কিছু জানাননি।
নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, চীনের সামরিক আধুনিকীকরণ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা এখন সীমান্তঘাঁটি, ভারত মহাসাগরে মোতায়েন নৌবহর এবং মহাকাশ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের পদক্ষেপ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।আকাশযুদ্ধ সব দেশের সামরিক বাহিনীর জন্যই বিরল এক সুযোগ। আকাশযুদ্ধের মাধ্যমে তারা বৈমানিক, যুদ্ধবিমান এবং সক্রিয় যুদ্ধে আকাশ থেকে আকাশে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র কতটা কার্যকর, তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং সেখান থেকে পাওয়া জ্ঞানের আলোকে নিজেদের বিমানবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে পারে।
প্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক পরাশক্তি ও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও চীনকে দীর্ঘদিন ধরেই কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়। দুই দেশের মধ্যে হিমালয় অঞ্চলে ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ১৯৫০–এর দশক থেকে সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে এবং ১৯৬২ সালে চীন ও ভারত একবার সংক্ষিপ্ত সংঘাতে জড়িয়েছিল।
আরও পড়ুনভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য কতটা সক্ষম২৮ এপ্রিল ২০২৫চীন-ভারত সীমান্তে সর্বশেষ অচলাবস্থার সূত্রপাত হয়েছিল ২০২০ সালে। ওই অচলাবস্থা কিছুটা প্রশমিত হয় গত অক্টোবর মাসে, যখন উভয় পক্ষ সীমান্তে টহলসংক্রান্ত এক চুক্তিতে পৌঁছায়।
‘মহাকাশে এবং ক্ষেপণাস্ত্র অনুসরণের ক্ষেত্রে চীন এখন অনেক শক্তিশালী। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তারা সেগুলোর ওপর নজরদারি করতে সক্ষম...’আলেকজান্ডার নিল, হাওয়াই প্যাসিফিক ফোরাম থিঙ্কট্যাংকের সহযোগী গবেষক
প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, উভয় পক্ষই সীমান্তজুড়ে নিজেদের সামরিক স্থাপনা ও সক্ষমতা জোরদার করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও এর বাইরে চীন আকাশ থেকে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের ওপরও অধিক গুরুত্ব দেয়।
লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে চীনের ২৬৭টি স্যাটেলাইট কার্যকর রয়েছে। এর মধ্যে ১১৫টি গোয়েন্দা নজরদারি ও পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। আরও ৮১টি সামরিক ইলেকট্রনিক ও সিগন্যাল তথ্য পর্যবেক্ষণ করে।
আকাশযুদ্ধ সব দেশের সামরিক বাহিনীর জন্যই বিরল এক সুযোগ। আকাশযুদ্ধের মাধ্যমে তারা বৈমানিক, যুদ্ধবিমান এবং সক্রিয় যুদ্ধে আকাশ থেকে আকাশে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র কতটা কার্যকর, তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং সেখান থেকে পাওয়া জ্ঞানের আলোকে নিজেদের বিমানবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে পারে।এটি এমন একটি স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক, যা ভারতসহ আঞ্চলিক সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে অনেকটা পেছনে ফেলে দিয়েছে চীন। এখন সক্ষমতার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরই চীনের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের অবস্থান।
আকাশে উড়ছে ভারতের দুটি রাফাল যুদ্ধবিমানউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়া সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেই সাথে সীমান্ত পথে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৪৭ ব্যাটলিয়ন এ সীমান্তে নজরদারি ও টহল তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে।
বিজিবি ৪৭ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকেই কুষ্টিয়া সীমান্তে অধিকতর সতর্কতা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাদক পাচাররোধ ও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে আছি। পাশাপাশি আমাদের মূল দায়িত্ব সীমান্তের অখণ্ডতা রক্ষা করা। দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে আমরা কোন ছাড় দিচ্ছি না।”
তিনি আরো বলেন, “বিএসএফ এর সাথে আমাদের পেশাগত ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া সীমান্তে প্রতিপক্ষের কোন তৎপরতা নেই।”
তিনি বলেন, “উল্লেখিত সামরিক উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় এখনো পর্যন্ত কোন ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে বিধি মোতাবেক বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সীমান্তে নজরদারী, টহল ও জনবল প্রয়োজন অনুসারে বৃদ্ধি করা হয়েছে।”
এদিকে সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজিবির বাড়তি টহল ও নিরাপত্তা জোরদার করায় সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা স্বস্তিতে রয়েছেন।
ঢাকা/কাঞ্চন/টিপু