বছর দশেক আগেও কুহেলীয়া নদীতে মাছ ধরে চলত নুর আয়েশার সংসার। স্বামীর সঙ্গে রাতের বেলায়ও নদীতে মাছ ধরতে গেছেন শখ করে। এখন নদীতে আর মাছ মিলছে না। মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্যে কুহেলীয়া নদী ভরাট হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে জীবিকা হারিয়েছেন গ্রামের আড়াই হাজার জেলে।

গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কে জি বিদ্যালয়ে আয়োজিত গণশুনানিতে প্রস্তাবিত ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র, জমি ইজারা, পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা, রাষ্ট্রীয় ঋণ ও বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাতিলের দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিশিষ্টজনেরা। এতে প্রায় চার শতাধিক কৃষক, জেলে, চিংড়ি ও লবণচাষি উপস্থিত ছিলেন। গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) এবং উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)। সহআয়োজক হিসেবে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), জেট-নেট বিডি, প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম (এফইডি), মহেশখালী জন সুরক্ষা মঞ্চ এবং সংশপ্তক।

গণশুনানিতে অভিযোগ শোনেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক খালিদ মিসবাহুজ্জামান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী রাবেয়া সুলতানা, সাংবাদিক মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন, মাতারবাড়ী মডেল কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী ও মাতারবাড়ী ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। এতে বক্তব্য দেন সাংবাদিক এরফান উল্লাহ, মাতারবাড়ী ইউপি সদস্য মেজবাহ উদ্দিন, মহেশখালী জন সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি নুর মোহাম্মদ, নাসরিন সুলতানা প্রমুখ।

গণশুনানিতে রাজঘাট এলাকার বাসিন্দা নুর আয়েশা বলেন, ‘একটা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে জীবন-জীবিকার অনেক ক্ষতি হয়েছে। শুনেছি এখানে আরও একটি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে। আমরা আরও একটি ক্ষতিকর প্রকল্প চাই না। কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। তাই এমন একটি প্রকল্প না হওয়াই উচিত।’

অংশগ্রহণকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রকল্পের প্রাথমিক স্তরে এরই মধ্যে মাতারবাড়ী এলাকায় ২২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এতে বহু পরিবার আদি ভিটেমাটি হারিয়েছেন। এ ছাড়া সুপেয় পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। পরিবেশদূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে মাতারবাড়ী ও আশপাশ এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। এতে হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষ করে মৎস্যজীবী, লবণচাষি, কৃষক ও দিনমজুর শ্রেণির পরিবারগুলো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্থানীয়দের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে গণশুনানির অতিথিরা বলেন, এই ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে স্থানীয় জনগণের মতামত ও পরিবেশগত প্রভাবকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সার্বিক দিক বিবেচনার জন্য সরকারের হাতে এখনো যথেষ্ট সময় ও সুযোগ রয়েছে।

গণশুনানি শেষে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোটের (বিডব্লিউজিইডি) সদস্যসচিব হাসান মেহেদী। তিনি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে বছরে ৭০০ মিলিয়ন টন গরম পানি সমুদ্রে নিষ্কাশিত হবে। ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ত রব ড় গণশ ন ন প রকল প পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

টিউলিপের বিচারপ্রক্রিয়া ও অন্তর্বর্তী সরকারের অদূরদর্শিতা

বাংলাদেশের আদালতে গত সোমবার ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের দোষী সাব্যস্ত হওয়াটা যুক্তরাজ্যে একটি বড় খবর ছিল।

বেলা একটায় বিবিসি রেডিও ৪-এর প্রধান সংবাদ বুলেটিনে এটি দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হিসেবে প্রচার করা হয়। অন্য গণমাধ্যমেও বিষয়টি বড় খবর হিসেবে উঠে আসে।

রায়ের ঠিক এক সপ্তাহ আগে আরেকটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল। খবরটি ছিল লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠানো একটি চিঠি নিয়ে।

এ চিঠি টিউলিপ সিদ্দিকের নিয়োগ করা জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ আইনজীবীরা লিখেছিলেন। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, চিঠিটিতে মূলত আইনি ‘ডিউ প্রসেস’ বা ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

ডিউ প্রসেস বলতে কোনো মামলা যে আইনি কাঠামো ও নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয় এবং বিচার হয়, সেই প্রক্রিয়াকে বোঝায়।

এটি মামলার মূল যুক্তি বা প্রমাণের বিষয় নয়; বরং কোন নিয়মে সেই বিচার হচ্ছে, সেটিই এর প্রধান বিষয়।

যথাযথ আইনজীবীর সহায়তা পাওয়া বা না–পাওয়া, এটিও ডিউ প্রসেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আরও পড়ুনটিউলিপ যেভাবে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলেন১৬ জানুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশে অনেক বিশ্লেষক ও মন্তব্যকারী টিউলিপ সিদ্দিক আদৌ ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়া পেয়েছেন কি না, তা নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু এখানে আমি সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি না।

আদালতে কে কী যুক্তি দিয়েছেন বা কোন পক্ষের যুক্তি কতটা শক্ত, সেটিও আমি বিবেচনায় আনছি না। তার বদলে আমি এমন একটি দিকের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, যেটি খুব কম আলোচিত হয়েছে।

সেটি হলো যুক্তরাজ্যের জনপরিসর ও গণমাধ্যমে আলোচিত এ বিষয়কে বাংলাদেশ সরকার যেভাবে সামলেছে, তাকে আসলে গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনার বড় বিপর্যয় বলা যেতে পারে।

এ ছাড়া পুরো ঘটনার সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘমেয়াদি গুরুত্ব কী হতে পারে, সেটিও আমি বিবেচনা করছি।

বাংলাদেশের বাইরে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যসহ বিদেশে থাকা যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকে সম্পদ উদ্ধার করার যে প্রচেষ্টা বাংলাদেশ করছে, এ ঘটনা সেই প্রচেষ্টার ওপর কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, সেটিও আমি বিবেচনা করছি।

সোমবার ব্রিটিশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলো পর্যালোচনা করে স্পষ্টভাবে বোঝা গেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে কোনো শক্ত পাল্টা বর্ণনা বা ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

এর ফলে টিউলিপ সিদ্দিক ও তাঁর জনসংযোগ বা মিডিয়া টিমের জন্য মাঠটা পুরো খালি হয়ে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার আদৌ কোনো পাল্টা বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কি না, সেটিও স্পষ্ট নয়।

দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের আইনজীবীদের চিঠিটিতে মূলত আইনি ‘ডিউ প্রসেস’ বা ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি শুরু
  • সুপ্রিম কোর্টের অন্য রকম ফ্যাশন শোয়ে মডেল হলেন আইনজীবীরা, দেখুন ছবিতে
  • ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রিমান্ডে
  • নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ
  • ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা চেয়ে ফজলুর রহমান বললেন, ‘স্লিপ অব টাং হয়ে যেতে পারে’
  • রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে আমার নামে মামলা হয়েছে: শিশির মনির
  • পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটাই বাতিল হওয়া উচিত: আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া
  • বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম জাতীয় আইন সম্মেলন অনুষ্ঠিত
  • ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে শিশির মনিরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন, তদন্তে ডিবি
  • টিউলিপের বিচারপ্রক্রিয়া ও অন্তর্বর্তী সরকারের অদূরদর্শিতা