নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র দূষণ বাড়াবে, আশঙ্কা স্থানীয়দের
Published: 10th, May 2025 GMT
বছর দশেক আগেও কুহেলীয়া নদীতে মাছ ধরে চলত নুর আয়েশার সংসার। স্বামীর সঙ্গে রাতের বেলায়ও নদীতে মাছ ধরতে গেছেন শখ করে। এখন নদীতে আর মাছ মিলছে না। মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্যে কুহেলীয়া নদী ভরাট হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে জীবিকা হারিয়েছেন গ্রামের আড়াই হাজার জেলে।
গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কে জি বিদ্যালয়ে আয়োজিত গণশুনানিতে প্রস্তাবিত ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র, জমি ইজারা, পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা, রাষ্ট্রীয় ঋণ ও বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাতিলের দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিশিষ্টজনেরা। এতে প্রায় চার শতাধিক কৃষক, জেলে, চিংড়ি ও লবণচাষি উপস্থিত ছিলেন। গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) এবং উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)। সহআয়োজক হিসেবে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), জেট-নেট বিডি, প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম (এফইডি), মহেশখালী জন সুরক্ষা মঞ্চ এবং সংশপ্তক।
গণশুনানিতে অভিযোগ শোনেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক খালিদ মিসবাহুজ্জামান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী রাবেয়া সুলতানা, সাংবাদিক মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন, মাতারবাড়ী মডেল কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী ও মাতারবাড়ী ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। এতে বক্তব্য দেন সাংবাদিক এরফান উল্লাহ, মাতারবাড়ী ইউপি সদস্য মেজবাহ উদ্দিন, মহেশখালী জন সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি নুর মোহাম্মদ, নাসরিন সুলতানা প্রমুখ।
গণশুনানিতে রাজঘাট এলাকার বাসিন্দা নুর আয়েশা বলেন, ‘একটা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে জীবন-জীবিকার অনেক ক্ষতি হয়েছে। শুনেছি এখানে আরও একটি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে। আমরা আরও একটি ক্ষতিকর প্রকল্প চাই না। কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। তাই এমন একটি প্রকল্প না হওয়াই উচিত।’
অংশগ্রহণকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রকল্পের প্রাথমিক স্তরে এরই মধ্যে মাতারবাড়ী এলাকায় ২২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এতে বহু পরিবার আদি ভিটেমাটি হারিয়েছেন। এ ছাড়া সুপেয় পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। পরিবেশদূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে মাতারবাড়ী ও আশপাশ এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। এতে হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষ করে মৎস্যজীবী, লবণচাষি, কৃষক ও দিনমজুর শ্রেণির পরিবারগুলো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
স্থানীয়দের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে গণশুনানির অতিথিরা বলেন, এই ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে স্থানীয় জনগণের মতামত ও পরিবেশগত প্রভাবকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সার্বিক দিক বিবেচনার জন্য সরকারের হাতে এখনো যথেষ্ট সময় ও সুযোগ রয়েছে।
গণশুনানি শেষে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোটের (বিডব্লিউজিইডি) সদস্যসচিব হাসান মেহেদী। তিনি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে বছরে ৭০০ মিলিয়ন টন গরম পানি সমুদ্রে নিষ্কাশিত হবে। ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ত রব ড় গণশ ন ন প রকল প পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
নারী ফুটবল দলের প্রতি বৈষম্য বন্ধে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ নয়, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট
নারী ফুটবল দলের প্রতি বৈষম্য বন্ধে ব্যর্থতা বা নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পুরুষ ফুটবল দলের মতো নারী ফুটবল দলের ক্ষেত্রে একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে ব্যর্থতা বা নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রাজিউদ্দিন আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন।
‘এত সাফল্যের পরও নারী ফুটবল দল কেন বঞ্চিত, সমতা কবে আসবে’ শিরোনামে গত ২৬ জুলাই প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে নারী ফুটবল দলের প্রতি বৈষম্য বন্ধে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে পুরুষ দলের মতো তাদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গত অক্টোবরে রিটটি করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমাইয়া বিনতে তানভীর ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী আরিজা মেহেলী খান ওই রিট করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী সুমাইয়া বিনতে তানভীর নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
পরে আইনজীবী সুমাইয়া বিনতে তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ ফুটবল দলের মধ্যে বৈষম্য দেখা যায়। পুরুষ ফুটবলাররা বছরে ৪০ বা ৫০ লাখ টাকা আয় করেন। অন্যদিকে প্রথম শ্রেণির নারী ফুটবলাররা বছরে মাত্র ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা বেতন পান। তাঁদের জন্য আবাসন–সুবিধা নেই। তাঁদের জন্য নিয়মিত লিগ আয়োজন করা হয় না। এ ছাড়া কোনো খেলায় জিতলে পুরুষ ফুটবলারদের পাঁচ লাখ টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া হয়। এই প্রণোদনা নারী ফুটবলারদের ক্ষেত্রে খুবই কম, তা–ও অনিয়মিত।
আরও পড়ুনএত সাফল্যের পরেও নারী ফুটবল দল কেন বঞ্চিত, সমতা কবে আসবে২৬ জুলাই ২০২৫এসব বিষয় সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী উল্লেখ করে আইনজীবী সুমাইয়া বিনতে তানভীর বলেন, সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না এবং ২৯ অনুচ্ছেদে সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতার কথা উল্লেখ রয়েছে। মূলত এসব যুক্তিতে রিটটি করা হলে আদালত ওই রুল দেন। যুব ও ক্রীড়াসচিব, অর্থসচিব, ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের সচিব ও জাতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতিসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।