কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন—এটিসহ সংবিধান সংস্কারে সাতটি প্রস্তাব তুলে ধরেছে নাগরিক জোট। এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, দেশের বিদ্যমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর অসীম ক্ষমতা দেওয়া আছে। দেশের আইনি কাঠামো, প্রতিষ্ঠানগুলো এমন ছিল যে এখানে স্বৈরাচারের আবির্ভাব সুনিশ্চিত ছিল। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ক্ষমতার ভারসাম্য এনে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো।

গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাব’ তুলে ধরা হয়। তাদের প্রস্তাবের ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। তবে সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে দলগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে যে বক্তব্য দিয়েছিল, এখানেও একই বক্তব্য তুলে ধরে।

রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কারে নাগরিক উদ্যোগ ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ সাহান নাগরিক জোটের সাত প্রস্তাব তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য নাগরিক জোটের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য দুটি পথরেখা তুলে ধরেন লেখক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক জিয়া হাসান।

বিদ্যমান সংবিধানে নির্বাহী বিভাগের কোনো জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। প্রধানমন্ত্রীকে অসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক আলী রীয়াজ সহসভাপতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনগুরুত্বপূর্ণ হলো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো

এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—এ প্রস্তাবের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এটি খুব জনপ্রিয় দাবি। এটি তাঁরও দাবি। কিন্তু এই দাবি শুধু করলেই হবে না। ‘কনভিন্সিং আর্গুমেন্ট’ করতে হবে। পৃথিবীর কোন কোন দেশে এটা আছে, তা দেখতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদে থাকতে পারবেন, এমন বিধান আসলে ভারত, যুক্তরাজ্য কোথাও নেই।

এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এমন বিধান করা হলেও একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ধরুন, দুই মেয়াদের জন্য সালাহউদ্দিন (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) ভাই প্রধানমন্ত্রী হলেন। এরপর তাঁর স্ত্রী দুই মেয়াদে হলেন। এরপর তাঁর সন্তান দুই মেয়াদে হলেন।’

প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না, এটা সমাধান বলে মনে করেন না আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো। ভারতে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন। আর বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করেন। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করার দরকার আছে। কিন্তু ‘কনভিন্সিং আর্গুমেন্ট’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এমন বিধান করা হলেও একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ধরুন, দুই মেয়াদের জন্য সালাহউদ্দিন (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) ভাই প্রধানমন্ত্রী হলেন। এরপর তাঁর স্ত্রী দুই মেয়াদে হলেন। এরপর তাঁর সন্তান দুই মেয়াদে হলেন।’

সংস্কার বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, জাতীয় সংসদ সংবিধান সংশোধন করে। সংবিধান পরিষদ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে। নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে পার্শ্ববর্তী দেশে আট-নয় বছর লেগেছে, এমন উদাহরণ আছে। নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে বহুদিন লাগতে পারে।

এখন এ জন্য কি ১৯৭২ সালের সংবিধানে চলবে? এমন প্রশ্ন রেখে আসিফ নজরুল বলেন, ‘নতুন সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান যে সংসদ থাকবে, যে সংসদটা সংবিধান সংসদ হিসেবে কাজ করবে, তারা ৭২–এর সংবিধানের প্রয়োজনীয় অ্যামেন্ডমেন্টগুলো (সংশোধনী) করে ফেলবে। এটা আপনাদের ইমপ্রুভ করতে হবে যে গণপরিষদ হিসেবে যখন সে নতুন সংবিধান প্রণয়নের কাজ করতে থাকবে—এটা করতে আমার ধারণা দু–তিন বছর লাগতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রীর অসীম ক্ষমতা

একটি রিপাবলিক তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বিদ্যমান সংবিধানে নির্বাহী বিভাগের কোনো জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। প্রধানমন্ত্রীকে অসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ‘একজন শেখ হাসিনা’ তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে সংবিধানে কোনো ধরনের বাধা ছিল না।

১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর প্রসঙ্গ টেনে আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশ যখন সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রবেশ করল, তখন রাষ্ট্রপতির হাতে যে অভাবনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, সেই ক্ষমতার প্রতিটি অংশ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ব্যক্তির আধিপত্য—সবকিছু মিলেই এই ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন তৈরি হয়েছে।

দুই মেয়াদ নয়, কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না—সংস্কার কমিশন এমন প্রস্তাব করেছে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রীর ‘টার্ম লিমিট’ করা হয় না। তাই বাংলাদেশেও এটা করা যাবে না—এই যুক্তি তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করেছে। এর আগে কোথাও এই ব্যবস্থা ছিল?

ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সংবিধান সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাব করেছে, তার একটি হলো রাষ্ট্রের তিন বিভাগের সমন্বয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের জন্য নাম দেবে এই কাউন্সিল। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, অতীতে ব্যক্তিগত পছন্দে নিয়োগ হয়েছে। এনসিসি গঠন করা হলে এ ক্ষেত্রে তিন অঙ্গের প্রতিনিধিরা একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নত ন স ব ধ ন প আইন উপদ ষ ট র য় জ বল ন র ষ ট রপত প রব ন ন প রস ত ব ব যবস থ এরপর ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত

ভারতকে প্রথমে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা। স্পিনাররা ইডেনের ২২ গজকে স্রেফ রণক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছিল। বল সারাদিন ছোবল দিল।

অসমান বাউন্সে প্রতিকূল উইকেট। যেখানে সারাদিন ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল লেগেছিল। কলকাতার নন্দনকাননে ১৫ উইকেটের দিন দেখল সমর্থকরা। যার ১২টিই নিয়েছেন স্পিনাররা।

দিন শেষে হাসিটা ফুটেছে ভারতের মুখে। ভারত ১ উইকেটে ৩৭ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছিল। শনিবার দ্বিতীয় দিনে তাদের ইনিংস আটকে যায় ১৮৯ রানে। এতে ৩০ রানের লিড পায় স্বাগতিকরা।

দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে নেমেই এলোমেলো হয়ে যায় কুলদীপ যাদব ও রাভীন্দ্র জাদেজার বোলিংয়ে। দ্বিতীয় দিন শেষে তাদের স্কোরবোর্ডের চিত্র এরকম, ৯৭/৭। হাতে ৩ উইকেট নিয়ে তাদের লিড কেবল ৬৩ রান।

জাদেজা ৪ ও কুলদীপ পেয়েছেন ২ উইকেট। অক্ষরের শিকার ১টি। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া জসপ্রিম বুমরাহ এখন পর্যন্ত উইকেটশূন্য।

প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ২৯ ও করবিন বোস ১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। আউট হওয়া ৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে কেবল রায়ান রিকেলটন ও উইয়ান মুল্ডার দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেন। দুজনই ১১ রান করে করেন।

এর আগে, দিনের শুরুতে ভারত হোঁচট খায় গিলকে হারিয়ে। ঘাড়ের চোটে মাঠ ছেড়ে গিল উঠে যান ৪ রানে। এরপর যারা এসেছেন কেউ ভরসা হয়ে উঠতে পারেননি। রিশাভ পান্ত ও জাদেজা ২৭ রানের দুটি ইনিংস খেলে। সুন্দরের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। এছাড়া ধ্রুব জুরেল ১৪ ও অক্ষর পাটেল ১৬ রান করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন সাইমন হারমার। ৩ উইকেট পেয়েছেন মার্কো জানসেন। 

ইডেনের ফাটল ধরা ২২ গজে প্রথম দুদিনেই ২৬ উইকেট নেই। সামনে কী অপেক্ষা করছে বোঝাই যাচ্ছে।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • সফল নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক উত্তরণের অর্ধেকপথ পার করা সম্ভব হবে: মান্না
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • কী হবে যদি গণভোটে ‘না’ জয়ী হয়
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট
  • ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রুখতে বামপন্থি সরকার গড়তে হবে: সেলিম