বব মার্লে: সুরের তালে দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে নাচানো এক বিপ্লব
Published: 12th, May 2025 GMT
গানের জগতে এমন কিছু শিল্পী আছেন, যাঁরা কেবল সুরের কারিগর নন, হয়ে উঠেছেন একটি যুগের প্রতীক। তেমনই একজন বব মার্লে। যিনি একজন সুরকার, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী ও গিটারবাদক, প্রযোজক। যাঁর গানের মূলকথা ছিল ‘মনুষ্যত্ব’ বা ‘মানুষ’। মানবতার কথা, সামাজিক ন্যায় আর সুবিচারের কথা বলেছেন আজীবন। বব মার্লের গানে ছিল অবহেলিত আর বঞ্চিত মানুষের অধিকার, বর্ণবাদী প্রথার বিরোধিতা। নিপীড়িত আর খেটে খাওয়া মানুষের জন্য গান গেয়ে সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছিলেন। গানে জনগণের নানা ক্ষোভ ও সমস্যার কথা বলে মন জয় করেছিলেন অসংখ্য তরুণের। তাঁর গানে এমন কিছু ছিল, যা শ্রোতাদের দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দিয়ে সুরের তালে নেচে উঠতে বাধ্য করত। জ্যামাইকান এই শিল্পী বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন গানও হতে পারে প্রতিবাদের ভাষা। অনেকেই মনে করেন, তিনি তৃতীয় বিশ্ব থেকে উঠে আসা প্রথম সুপারস্টার।
‘বাফেলো সোলজার ইন দ্য হার্ট অব আমেরিকা’ গানটি আজও যেমন জনপ্রিয়, তেমনই এর কারিগর বব মার্লে সংগীত ভুবনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
১৯৪৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জ্যামাইকার সেইন্ট অ্যানের নাইন মাইলের এক বস্তিতে জন্মগ্রহণ করেন মার্লে। পারিবারিক নাম রবার্ট নেসটা মার্লে। তাঁর জন্মের সময় দেশটি জুড়ে সব ক্ষেত্রেই অস্থিরতা চলছিল। শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ বিভেদের কারণে সংঘাতও ছিল নিয়মিত ঘটনা। কৃষ্ণাঙ্গ মা ও শ্বেতাঙ্গ বাবার কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি সাদা-কালো দ্বন্দ্বে ভুগতেন। মার্লে সব সময় কৃষ্ণাঙ্গদের পক্ষে, মানবতার পক্ষে গান গাইতেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কালোদের ওপর চলতে থাকা বর্ণবাদী নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি গানের কথা ও সুরের মাধ্যমে। রাজনৈতিক আগ্রাসনের প্রতিবাদও করেছেন মার্লে এই গানের মাধ্যমে। অধিকারবঞ্চিত মানুষের পক্ষ নিয়ে তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করতেন গানের মাধ্যমে।
ফুটবল খুব ভালোবাসতেন মার্লে (১৯৭০ সালে ব্রাজিলে তোলা ছবি).উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অভিনয় নাকি নির্মাণ, কোন পথে হাঁটছেন পলাশ
প্রথমে নির্মাতা, পরে হয়ে গেলেন অভিনেতা। ভিন্নধর্মী অভিনয় দিয়ে এখন জয় করছেন দর্শক হৃদয়। তিনি ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। এ অভিনেতা যখনই নতুন কোনো কাজ নিয়ে হাজির হন, দর্শক তা সাদরে গ্রহণ করেন। চেনা ছকের বাইরে গত ঈদে তাঁকে দেখা গেছে ‘কেন এই সঙ্গতা’ নাটকে। পারিবারিক গল্পের এ নাটকটিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে।
পলাশ বলেন, ‘আমি সব সময় ভালো গল্প ও স্ক্রিপ্টের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি। কাজের ফর্দ ঘাটলে দেখবেন আমার প্রতিটি কাজই আলাদা। ‘কেন এই সঙ্গতা’ আমার কাছে ভিন্নধর্মী গল্প মনে হয়েছে। এটি আসলে অনেক মানুষের গল্প। তা ছাড়া নির্মাতা আশিকুর রহমান পছন্দের একজন নির্মাতা। তাঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আমার সবসময় থাকে। সে কারণেই কাজটি করেছি। কাজটিতে দর্শক সাড়াও মিলছে বেশ।’
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকে কাবিলা চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি এই নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন পলাশ। কাবিলা চরিত্রটি এখনও মানুষের মুখে মুখে। চরিত্রের জনপ্রিয়তার আড়ালে হারাতে বসেছে তাঁর আসল নামটিই। সম্প্রতি ক্লাব ইলেভেনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার শুরু হয়েছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’- সিজন ফাইভ। নাটকটি প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটি নিয়ে প্রতিবারই ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছিল।
এবারে যেহেতু কাজটি ওটিটিতে এসেছে, তাই নতুন দর্শক কাজটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। নতুন যারা দেখছেন, তাদের কাছে এটি বেশি ভালো লাগছে। আবার অনেকেই বলছেন, ‘আগের ওই জিনিসটা মিস করছি’। আড়াই বছর পর শুট করেছি, তাই অনেক কিছুর বদল হয়েছে। প্রত্যেক নিজের জীবনেও তো এই লম্বা সময়ে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কাবিলা জীবনেরও এসেছে। কাবিলা এখন আগের চেয়ে অনেক ম্যাচিউরড, সে ডিসিশন নিতে জানে। যদিও ফাঁপরবাজিটা আছে, তবে এবার সেটা আরও ইনোভেটিভ। তাঁর ঘরবাড়ির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। উন্নত হয়েছে জীবনযাত্রার মান। এরই মধ্যে মাত্র ৮টি পর্ব প্রচার হয়েছে। আরও ১১২টি পর্ব প্রচার বাকি। এই যে আমার জীবনযাপন পরিবর্তন হয়েছে, এর পেছনেও তো গল্প আছে। এটি ধাপে ধাপে দেখানো হবে। জীবনযাপনের পরিবর্তন, মানুষগুলোর হারিয়ে যাওয়ার সবকিছুর উত্তর আমরা নাটকে পাব।’
অভিনয় দিয়ে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেলেও পলাশ ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন পরিচালক হিসেবে। পরিচালনা দিয়েই দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি হুট করে হয়ে গেলেন অভিনেতা! একে একে অভিনয় করেছেন অসংখ্য দর্শকপ্রিয় নাটকে। পরিচালনায়ও দেখিয়েছেন মুনশিয়ানা।
অভিনয়ে জনপ্রিয়তা পেলেও নিজের পরিচালনা থেকে দূরে থাকেননি তিনি। ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফি’, ‘সারপ্রাইজ’, ঘরে ফেরা’ ‘সন্ধ্যা ৭টা’সহ অনেক কাজই আলোচিত হয়েছে।
পলাশ বলেন, ‘অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও নিজের ভেতর আমি একজন নির্মাতা। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালক সত্তাটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। নিজের ভাবনাগুলো পরিচালনার মাধ্যমে মানুষকে দেখাতে চাই। সে লক্ষ্যেই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।’
বর্তমানে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ফাইভ-এর শুটিং নিয়েই ব্যস্ত পলাশ। পাশাপাশি নতুন কয়েকটি কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তাঁর নির্দেশনায় নতুন একটি বিজ্ঞাপন প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে। শিগগিরই ভিন্নধর্মী গল্পের নাটক পরিচালনায় তাঁকে দেখা যাবে।
নির্মাণ-অভিনয়ের বাইরে সামাজিক কাজেও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ‘ডাক বাক্স’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন তিনি। এর মাধ্যমে অসহায় পিছিয়ে পড়া মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই অভিনেতা।
পলাশ বলেন, ‘ডাকবাক্স’ আমার একটি স্বপ্নের ফাউন্ডেশন। সমাজের বিত্তবান মানুষদের এ ফাউন্ডেশনের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এটি যে শুধু মানুষকে সাহায্য করে তা নয়, এটি দিয়ে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। মানুষ যাতে নিজেদের কর্মসাধন করে নিজেরাই এখান থেকে পয়সা রোজগার করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারে। এ কাজটি ডাকবাক্সের মাধ্যমে করতে চাই। আশা করছি, এ মহতী কাজে সবাইকে পাশে পাব।