৫-১০ টাকায় বাঙ্গি বিক্রি করে মন খারাপ চাষির
Published: 12th, May 2025 GMT
চলনবিলের পাঁচ বিঘা জমিতে এবার বাঙ্গি চাষ করেছেন মোবারক হোসেন। গত মৌসুমে যে দামে বিক্রি করেছেন, এবার তাঁকে বিক্রি করতে হচ্ছে চার ভাগের এক ভাগ দামে। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা এলাকার এই বাসিন্দার ভাষ্য, ক্ষুদ্র মৌসুমি বিক্রেতাদের কাছে তাদের প্রতি বাঙ্গি বিক্রি করতে হচ্ছে ২-৩ টাকায়।
একই অবস্থা চলনবিলের চারপাশের জমিতে বাঙ্গি চাষ করা সব কৃষকের। দেশের বৃহত্তম এই বিলের জমিতে বাঙ্গি চাষ করেন নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া; সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও পাবনার চাটমোহরের কয়েক হাজার কৃষক। তাদের অধিকাংশই রসুনের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি চাষ করেন। সব মিলিয়ে এই চাষ হয় ১ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে গুরুদাসপুরেই জমির পরিমাণ প্রায় ৮০০ হেক্টর, তাড়াশে প্রায় ২৫০ হেক্টর।
সিংড়ার বিয়াস এলাকার মো.
এ বছর না আছে বাঙ্গির চাহিদা, না আছে ভালো দাম– এমনই মন্তব্য করেন গুরুদাসপুরের হাঁমমারী এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি তিন বিঘা জমিতে রসুনের চাষ করেছেন। সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি করেন। গত বছর বাঙ্গি বিক্রি করেই রসুন উৎপাদন খরচের ৪৫ শতাংশ এসেছিল। সেবার প্রতি বিঘার বাঙ্গি বিক্রি করে আয় করেন ২৫ হাজার টাকা। এবার দর পতনে হতাশ তিনি।
কৃষকরা জানান, চৈত্র মাসের শেষ থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি পর্যন্ত রসুনের মৌসুম। এর পর জমি থেকে তারা বাঙ্গি তোলা শুরু করেন। গত মৌসুমে বাঙ্গি তোলার মধ্যে রমজান পড়েছিল, তাই মুনাফা হয়েছিল। এবার তুলতে তুলতেই রোজার মাস শেষ। তাই জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।
তাদের ভাষ্য, আগের মৌসুমে চাহিদা বেড়েছিল, ভালো দামও মিলেছিল। তাই বাঙ্গি চাষ করেছিলেন। হঠাৎ এ বছর ক্রেতাশূন্যতায় দর পতন হওয়ায় উৎপাদিত বাঙ্গি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কৃষি শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন খরচ না ওঠায় অনেক জমিতেই নষ্ট হচ্ছে বাঙ্গি।
হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক নির্মিত হওয়ার পর থেকে এসব এলাকার কৃষক জমি থেকেই বাঙ্গি বিক্রি করে আসছেন। গুরুদাসপুরের কাছিকাটা এলাকার দানেশ সরদার বাঙ্গির আড়তদার। তিনি বলেন, মহাসড়কে স্তূপ করে রাখা ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক বাঙ্গি প্রতিদিন ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, বগুড়াসহ বিভিন্ন শহরে চলে যাচ্ছে। গত মৌসুমে রমজান মাসে বাঙ্গি তোলার সময় প্রতিটি বাঙ্গির পাইকারি দাম ছিল প্রকার ভেদে ২০-২৫ থেকে ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত। এ বছর চাহিদা না থাকায় সেই ফাটা বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫ টাকায়।
আর ফাটা নয়, এমন কাঁচা বাঙ্গি সর্বোচ্চ ১০ টাকা দরে কিনছেন বলে জানান ঢাকার পাইকার জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, এবার ফাটা বাঙ্গি কোনো পাইকারই কিনতে চাচ্ছেন না।
প্রায় ৯০ শতাংশ জলীয় অংশে পূর্ণ বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার। এ ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিনের মতো উপাদান। এই ফল গরমের সময় মানুষের শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করে বলে জানান তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা ডা. ইরফান আহম্মেদ। তিনি বলেন, এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বক ভালো রাখে। বাঙ্গি হজমশক্তি বাড়াতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণেও বেশ কাজ করে।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হারুনার রশীদ বলেন, বৃহত্তর চলনবিলের বাঙ্গির চাহিদা ও সুনাম দেশজুড়ে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল ছিল, ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু দাম গত বছরের তুলনায় কম হওয়ায় কৃষক লাভটা কম পাচ্ছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলনব ল চ ষ কর এল ক র রস ন র এ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
এক্সপ্রেসওয়েতে পিকআপ ভ্যানের পেছনে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, চালক নিহত
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে একটি মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিকআপ ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দিয়েছে। এতে মোটরসাইকেলচালক নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন এক আরোহী। আজ শুক্রবার ভোরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কুচিয়ামোড়া উড়াল সেতু এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রাকিব হোসেন (২৪) ঢাকার দয়াগঞ্জ ধোপখোলা এলাকার মো. খলিলের ছেলে। আহত সজল হোসেন (২৪) কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকার আবু সাঈদের ছেলে।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ আজাদ হোসেন আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা থেকে আজ ভোরে দিকে রাকিব ও সজল মোটরসাইকেলে মাওয়ার দিকে যাচ্ছিলেন। কুচিয়ামোড়া উড়াল সেতু এলাকায় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং চলন্ত একটি পিকআপ ভ্যানের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে চালক রাকিব ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যদিকে আহত হন সজল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান।
অতিরিক্ত গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদের জিলানী। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।