সাটুরিয়ায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিক্ষুক যাচাই-বাছাইয়ে অস্বচ্ছতা, বরাদ্দ সঠিকভাবে বিতরণ না করা– প্রভৃতি কারণে প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে। অনেকে ফিরে গেছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে।
ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। পুনর্বাসনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বরাদ্দ আসে ১৫ লাখ টাকা। চলতি বছর পর্যন্ত ব্যয় করা হয় সাড়ে ১৪ লাখ টাকা। তারা ৭০ জন ভিক্ষুকের নামের তালিকা করে পুনর্বাসন করে। কাউকে দেওয়া হয় উন্নত জাতের ছাগল, ভ্যান, সেলাই মেশিন, হুইল চেয়ার, কেউ কেউ পান বাঁশের দ্রব্যসামগ্রী, পান-চায়ের ট্রলি, দোকান ও মালপত্র। এর পরও ভাগ্য ফেরেনি অনেকেরই। এর কারণ হিসেবে বিতরণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির কথা বলছেন প্রকল্পের সুফলভোগী পরিবারের সদস্যরা।
ভিক্ষুক পুনর্বাসনের পর সুফলভোগীরা কেমন আছেন জানতে সরেজমিন অনুসন্ধান করে সমকাল। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রকল্পের বরাদ্দ সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়নি। পুনর্বাসন পরবর্তী করণীয় বিষয়েও উদাসীন ছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি। ছিল সমন্বয়ের অভাব। এরকম নানা কারণে প্রকল্প সফলতার মুখ দেখেনি। তাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন অনেকেরই পূরণ হয়নি।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের উত্তর কাওন্নারা গ্রামের গেদু মিয়া ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। তাঁকে এ প্রকল্পের আওতায় এনে দেওয়া হয় একটি দোকান ঘর ও কিছু মালপত্র। গেদু মিয়ার স্ত্রী বানু বেগম জানান, তাঁর স্বামী অসুস্থ থাকায় দোকানের পুঁজি দিয়ে চিকিৎসা করেন। তিনি এক বছর আগে মারা যান। মারা যাওয়ার পর কেউ তাদের খোঁজখবর নেয়নি। তিনি বলেন, ঘরসহ তাঁর স্বামীকে সব মিলিয়ে হাজার দশেক টাকার মালপত্র দিয়েছিল সমাজসেবা অফিস। মালপত্র দেওয়ার পর তাঁর পরিবার কেমন আছে– তা এ অফিসের কেউ খোঁজ নেয়নি। তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর লাল-সবুজ টিনের দোকানটি পুঁজির অভাবে বন্ধ রয়েছে।
প্রকল্পের আরেক সুফলভোগী ফুকুরহাটি ইউনিয়নের মনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, সমাজসেবা অফিস থেকে ২০ হাজার টাকার মালপত্র দেওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে ছয়-সাত হাজার টাকার মালপত্র দেওয়া হয়। দোকান কিভাবে চলবে, খোঁজ নেয়নি কেউ। টিন-কাঠের ছোট্ট মুদি দোকান দিয়েই দায় সেরেছে সমাজসেবা অফিস।
তিল্লি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ২৩ জন ভিক্ষুককে দেওয়া হয় ছাগল। সুবিধাভোগীরা বলছেন, এসব ছাগল দেশীয় হলেও কাগজ-কলমে দেখানো হয় উন্নত জাতের। কাকে কত টাকা মূল্যের ছাগল দেওয়া হয়েছে, কয়টা ছাগল দেওয়া হয়েছে– উপজেলা সমাজসেবা অফিসে এর কোনো হিসাব নেই। ভিক্ষুক কিনা তা যাচাই-বাছাই না করেই ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা অনুযায়ী তাদের ছাগল দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, যাদের ছাগল দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগ ছাগল বিক্রি করে দিয়েছেন।
একই অভিযোগ বালিয়াটি এলাকার গোপালনগরের ভিক্ষুক আইয়ুব আলীর। তিনি জানান, তাঁর ছোট্ট মুদি দোকানের পাশে রয়েছে একটি বড় মুদি দোকান। এলাকার মানুষ সেই দোকান থেকে নগদ ও বাকিতে মালপত্র নিয়ে থাকেন। সেই দোকানের কারণে তাঁর দোকানে বেচাকেনা নেই। পুঁজি যা দিয়েছিল তা ফুরিয়ে যাওয়ায় ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে গেছেন তিনি।
আইয়ুব বলেন, স্থানীয়ভাবে একটি দোকান চালাতে হলে লক্ষাধিক টাকার দরকার। তিনি শুনেছেন একজন ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার টাকা। বরাদ্দের অর্ধেক টাকা দিয়ে সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তারা মালপত্র কিনে দেন।
ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্প কমিটির সদস্য সাটুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসন যাচাই-বাছাই করার সময় তাদের জানানো হয়নি। এমনকি যাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে, তাদের কত টাকার মালপত্র দেওয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না।
কমিটির আরেক সদস্য তিল্লি ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ধলা জানান, সবকিছুই করেছে সমাজসেবা অফিস। কাকে কয়টা বা কত টাকা মূল্যের ছাগল দিয়েছে, তাও তাঁকে জানানো হয়নি।
ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের সদস্য সচিব ও সাটুরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.

সিরাজউদ্দিন বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসন সঠিকভাবে করা হয়েছে। তবে কাকে কত টাকা দিয়েছেন তা তাঁর জানা নেই। এর কোনো বিল ভাউচার তাঁর কাছে নেই। প্রকল্পের সভাপতি যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবে কাজ করেছেন। প্রকল্পের কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে। তাঁর ধারণা– যেসব ভিক্ষুককে দোকান ও মালপত্র দেওয়া হয়েছে, তারা ৩৫ হাজার টাকা করে পেয়েছেন।
ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের সভাপতি ও সাটুরিয়ার ইউএনও ইকবাল হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের কেউ অভিযোগ বা যোগাযোগ করেনি। খোঁজ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবেন। আরও কোনো ভিক্ষুক থাকলে বরাদ্দ অনুয়ায়ী তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট ক র ম লপত র দ প রকল প র স ন প রকল প কত ট ক বর দ দ সদস য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পে নয়ছয়

সাটুরিয়ায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিক্ষুক যাচাই-বাছাইয়ে অস্বচ্ছতা, বরাদ্দ সঠিকভাবে বিতরণ না করা– প্রভৃতি কারণে প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে। অনেকে ফিরে গেছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে।
ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। পুনর্বাসনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বরাদ্দ আসে ১৫ লাখ টাকা। চলতি বছর পর্যন্ত ব্যয় করা হয় সাড়ে ১৪ লাখ টাকা। তারা ৭০ জন ভিক্ষুকের নামের তালিকা করে পুনর্বাসন করে। কাউকে দেওয়া হয় উন্নত জাতের ছাগল, ভ্যান, সেলাই মেশিন, হুইল চেয়ার, কেউ কেউ পান বাঁশের দ্রব্যসামগ্রী, পান-চায়ের ট্রলি, দোকান ও মালপত্র। এর পরও ভাগ্য ফেরেনি অনেকেরই। এর কারণ হিসেবে বিতরণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির কথা বলছেন প্রকল্পের সুফলভোগী পরিবারের সদস্যরা।
ভিক্ষুক পুনর্বাসনের পর সুফলভোগীরা কেমন আছেন জানতে সরেজমিন অনুসন্ধান করে সমকাল। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রকল্পের বরাদ্দ সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়নি। পুনর্বাসন পরবর্তী করণীয় বিষয়েও উদাসীন ছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি। ছিল সমন্বয়ের অভাব। এরকম নানা কারণে প্রকল্প সফলতার মুখ দেখেনি। তাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন অনেকেরই পূরণ হয়নি।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের উত্তর কাওন্নারা গ্রামের গেদু মিয়া ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। তাঁকে এ প্রকল্পের আওতায় এনে দেওয়া হয় একটি দোকান ঘর ও কিছু মালপত্র। গেদু মিয়ার স্ত্রী বানু বেগম জানান, তাঁর স্বামী অসুস্থ থাকায় দোকানের পুঁজি দিয়ে চিকিৎসা করেন। তিনি এক বছর আগে মারা যান। মারা যাওয়ার পর কেউ তাদের খোঁজখবর নেয়নি। তিনি বলেন, ঘরসহ তাঁর স্বামীকে সব মিলিয়ে হাজার দশেক টাকার মালপত্র দিয়েছিল সমাজসেবা অফিস। মালপত্র দেওয়ার পর তাঁর পরিবার কেমন আছে– তা এ অফিসের কেউ খোঁজ নেয়নি। তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর লাল-সবুজ টিনের দোকানটি পুঁজির অভাবে বন্ধ রয়েছে।
প্রকল্পের আরেক সুফলভোগী ফুকুরহাটি ইউনিয়নের মনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, সমাজসেবা অফিস থেকে ২০ হাজার টাকার মালপত্র দেওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে ছয়-সাত হাজার টাকার মালপত্র দেওয়া হয়। দোকান কিভাবে চলবে, খোঁজ নেয়নি কেউ। টিন-কাঠের ছোট্ট মুদি দোকান দিয়েই দায় সেরেছে সমাজসেবা অফিস।
তিল্লি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ২৩ জন ভিক্ষুককে দেওয়া হয় ছাগল। সুবিধাভোগীরা বলছেন, এসব ছাগল দেশীয় হলেও কাগজ-কলমে দেখানো হয় উন্নত জাতের। কাকে কত টাকা মূল্যের ছাগল দেওয়া হয়েছে, কয়টা ছাগল দেওয়া হয়েছে– উপজেলা সমাজসেবা অফিসে এর কোনো হিসাব নেই। ভিক্ষুক কিনা তা যাচাই-বাছাই না করেই ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা অনুযায়ী তাদের ছাগল দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, যাদের ছাগল দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগ ছাগল বিক্রি করে দিয়েছেন।
একই অভিযোগ বালিয়াটি এলাকার গোপালনগরের ভিক্ষুক আইয়ুব আলীর। তিনি জানান, তাঁর ছোট্ট মুদি দোকানের পাশে রয়েছে একটি বড় মুদি দোকান। এলাকার মানুষ সেই দোকান থেকে নগদ ও বাকিতে মালপত্র নিয়ে থাকেন। সেই দোকানের কারণে তাঁর দোকানে বেচাকেনা নেই। পুঁজি যা দিয়েছিল তা ফুরিয়ে যাওয়ায় ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে গেছেন তিনি।
আইয়ুব বলেন, স্থানীয়ভাবে একটি দোকান চালাতে হলে লক্ষাধিক টাকার দরকার। তিনি শুনেছেন একজন ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার টাকা। বরাদ্দের অর্ধেক টাকা দিয়ে সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তারা মালপত্র কিনে দেন।
ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্প কমিটির সদস্য সাটুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসন যাচাই-বাছাই করার সময় তাদের জানানো হয়নি। এমনকি যাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে, তাদের কত টাকার মালপত্র দেওয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না।
কমিটির আরেক সদস্য তিল্লি ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ধলা জানান, সবকিছুই করেছে সমাজসেবা অফিস। কাকে কয়টা বা কত টাকা মূল্যের ছাগল দিয়েছে, তাও তাঁকে জানানো হয়নি।
ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের সদস্য সচিব ও সাটুরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সিরাজউদ্দিন বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসন সঠিকভাবে করা হয়েছে। তবে কাকে কত টাকা দিয়েছেন তা তাঁর জানা নেই। এর কোনো বিল ভাউচার তাঁর কাছে নেই। প্রকল্পের সভাপতি যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবে কাজ করেছেন। প্রকল্পের কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে। তাঁর ধারণা– যেসব ভিক্ষুককে দোকান ও মালপত্র দেওয়া হয়েছে, তারা ৩৫ হাজার টাকা করে পেয়েছেন।
ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের সভাপতি ও সাটুরিয়ার ইউএনও ইকবাল হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের কেউ অভিযোগ বা যোগাযোগ করেনি। খোঁজ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবেন। আরও কোনো ভিক্ষুক থাকলে বরাদ্দ অনুয়ায়ী তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ