চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের জন্য আধেয় বা কনটেন্ট তৈরিতে যুক্ত হচ্ছে গুগল। ‘হান্ড্রেড জিরো’ নামে নতুন একটি প্রকল্প চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিক খুঁজে বের করে সেগুলোর অর্থায়ন ও সহপ্রযোজনায় অংশ নিতে চায় তারা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

গুগলের মালিকানাধীন অ্যালফাবেট করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে রেইঞ্জ মিডিয়া পার্টনার্স নামের একটি প্রতিভা ব্যবস্থাপনা ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে। রেইঞ্জ ইতিমধ্যে ‘আ কমপ্লিট আননোন’ এবং ‘লংলেগস’-এর মতো চলচ্চিত্রে কাজ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গুগল এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং বাস্তব ও ভার্চ্যুয়াল জগতের সমন্বয়ে নির্মিত ‘স্পেশাল কম্পিউটিং’ প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বিস্তৃত করতে চায়। ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত স্বাধীন ধারার ভৌতিক চলচ্চিত্র ‘কাকু’–এর বিপণনে এই উদ্যোগ থেকে সহায়তা করা হয়েছিল। বিনোদনবিষয়ক প্ল্যাটফর্ম লেটারবক্সডের তথ্যানুসারে, ‘এক শ জিরো’ ছিল চলচ্চিত্রটির অন্যতম প্রযোজক।

২০২৩ সালের অভিনয়শিল্পী ও চিত্রনাট্যকারদের ধর্মঘটের পর যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্পে ব্যয় বেড়েছে। পাশাপাশি বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রে সম্ভাব্য আমদানি শুল্ক আরোপের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে গুগলের এই পদক্ষেপকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

গুগল এরই মধ্যে রেইঞ্জ মিডিয়ার সঙ্গে একটি পৃথক অংশীদারত্বে যুক্ত হয়েছে, যার আওতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণে ১৮ মাসের একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত প্রথম দুটি চলচ্চিত্র ‘সুইটওয়াটার’ এবং ‘লুসিড’ এ বছরই মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ‘এক শ জিরো’ প্রকল্পের তৈরি কনটেন্ট ইউটিউবে প্রচার করা হবে না। সেগুলো বিক্রি করা হবে বড় স্টুডিও ও নেটফ্লিক্সের মতো স্ট্রিমিং সেবাদানকারী প্ল্যাটফর্মে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ‘ইউটিউব অরিজিনালস’ নামে নিজস্ব প্রযোজনায় মৌলিক কনটেন্ট নির্মাণ শুরু করে ইউটিউব। তবে ২০২২ সালে সে প্রকল্প বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীদের তৈরি ভিডিও ও শর্টস নামের স্বল্পদৈর্ঘ্য কনটেন্টে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র প রকল প কনট ন ট

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ ৪ কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি খারাপ

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ চার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো খারাপ অবস্থায় আছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। অন্য তিনটি কারণ হলো কঠোর আর্থিক ও রাজস্ব নীতির প্রভাব, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতে অব্যাহত চাপ। আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে দুই কিস্তির ১৩৭ কোটি মার্কিন ডলার একসঙ্গে পাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামীকাল ২৬ জুন বাংলাদেশের হিসাবে এ অর্থ জমা হবে। গত সোমবার রাতে আইএমএফের বোর্ড সভায় দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফ আরও বলেছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে আগের সরকারের পতন হয়।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আছে, এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। বিনিয়োগ স্থবিরতাও কাটেনি। আইএমএফ অর্থনীতির কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা ঠিকই আছে। জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক, ঢাকা কার্যালয়

তখন সামষ্টিক অর্থনীতি আরও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা উদ্যোগে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়; যা অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জটিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও আইএমএফ কর্মসূচির অধীন তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের পর্যালোচনায় বাংলাদেশের পারফরম্যান্স মোটামুটি সন্তোষজনক ছিল। সরকার প্রয়োজনীয় নীতিগুলো বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সম্প্রতি বিনিময় হার আরও নমনীয় করার পাশাপাশি কর রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আছে, এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। বিনিয়োগ স্থবিরতাও কাটেনি। আইএমএফ অর্থনীতির কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা ঠিকই আছে।

জাহিদ হোসেনের মতে, আইএমএফ মূলত তিন ধরনের সুপারিশ করেছে। কঠোর আর্থিক নীতি অব্যাহত রাখার কথা বলেছে। এ ছাড়া যে বিনিময় হার ব্যবস্থা প্রচলন করা হয়েছে, তা যেন বজায় রাখা হয়। আর রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজেট–ঘাটতি কমাতে হবে।

অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফের মূল্যায়ন

আইএমএফ বলছে, চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হবে।

এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিও আগামী অর্থবছরে কিছুটা সহনীয় হবে। আইএমএফের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি গড়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ হওয়ার কথা বলেছে আইএমএফ।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা ধরনের সামষ্টিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। কঠিন পরিবেশ সত্ত্বেও আইএমএফের কর্মসূচির অধীনে প্রতিশ্রুত খাতগুলোর অগ্রগতি সন্তোষজনক রয়েছে এবং সরকার প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং মূল্যস্ফীতি কমানোর ওপর জোর দেওয়া উচিত।

সম্প্রতি সরকার নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থা চালু করেছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছে, যা ইতিবাচক। কঠোর মুদ্রানীতির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন নীতিমালার সমন্বয়, নমনীয় বিনিময় হার এবং রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস—এই তিনটি মিলেই অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাতে ভারসাম্য স্থাপনে সহায়ক হবে বলে মনে করে আইএমএফ।

সরকারি ভর্তুকি ধাপে ধাপে কমিয়ে একটি টেকসই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলেও মত দিয়েছে আইএমএফ। এ ছাড়া সরকারি অর্থের দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ব্যয়ের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ খাতে সংস্কারের জন্য ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য কৌশল প্রণয়ন জরুরি। পাশাপাশি ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে ব্যাংক খাত পুনর্গঠনের জন্য নতুন আইন দ্রুত কার্যকর করা দরকার।

আইএমএফের মতে, বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে টেকসই কাঠামোগত সংস্কার অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে রপ্তানি বৈচিত্র্য, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করা, সুশাসন জোরদার এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তের গুণগত মান উন্নয়ন।

২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ কর্মসূচি অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন হওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে তখন আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার বাংলাদেশ পেয়েছে। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৩১ কোটি ডলার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাপান ও ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় শুধু ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৭২
  • মধ্যপ্রাচ্যে যেভাবে সংঘাত ছড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল
  • অনলাইন: শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানি
  • গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭৯, আহত ৪০০
  • গাজায় ইসরায়েলের ৭ সেনাসদস্য নিহত
  • রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ ৪ কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি খারাপ