সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা–সংলগ্ন পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) রেখে যাওয়া ৭৩ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়া আটজনকেও স্বজনদের জিম্মায় দেওয়া হয়।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কোস্টগার্ড মংলা পঞ্চিমাঞ্চলের পক্ষ থেকে সংবাদ বিফ্রিংয়ের পর দুপুর ১২টার দিকে ৭৩ জনকে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে গতকাল সোমবার অসুস্থ দুজনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, কোস্টগার্ডের ব্রিফিংয়ের পর সুন্দরবনে রেখে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অসুস্থ দুজনকে তাঁদের স্বজনদের কাছে আগেই হস্তান্তর করা হয়েছিল। বাকি তিন ভারতীয়কে গতকাল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আজ অসুস্থ হয়ে পড়া আটজনকেও তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুনসাতক্ষীরায় সুন্দরবনের চরে রেখে যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই অসুস্থ, ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি৪ ঘণ্টা আগে

এর আগে গত শুক্রবার ভোরে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মান্দারবাড়িয়া চরে কয়েকটি নৌযানে ৭৮ জনকে রেখে যায় বিএসএফ। পরে বন বিভাগের কর্মীরা তাঁদের মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পে নিয়ে রাখেন। এরপর কোস্টগার্ড তাঁদের উদ্ধার করে শ্যামনগর থানায় এনে রাখে। যাচাই করে দেখা যায়, পুশ ইন করা ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশ। অন্য তিনজন ভারতীয় নাগরিক।

কোস্টগার্ড পশ্চিমাঞ্চলের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান জানান, গত ৯ মে ভোরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৫ জন বাংলাদেশি ও তিনজন ভারতীয়কে জোরপূর্বক পুশইন করে। তাঁদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে ভারতের গুজরাট রাজ্যের একটি বস্তিতে বসবাস করে আসছিলেন এবং বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২৬ এপ্রিল গভীর রাতে ভারতীয় প্রশাসন তাঁদের বাসা থেকে আটক করে। পরে ৯ মে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গোপনে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মান্দারাড়ি চরে রেখে যায়। চর থেকে ওই ব্যক্তিরা মান্দারবাড়িয়া বন বিভাগের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। বন বিভাগ বিষয়টি কোস্টগার্ডকে জানালে ১০ মে তাঁদের উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধসামগ্রী সরবরাহ করে।

আরও পড়ুনবিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৮ জনকে কোস্টগার্ডে হস্তান্তর, কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন১১ মে ২০২৫

রেখে যাওয়া ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে আবরার হাসান বলেন, ভারতীয় পুলিশ তাঁদের বস্তিগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। তাঁদেরসহ পরিবারের সদস্যদের অমানবিক নির্যাতন করে। তারপর চোখ বেঁধে একটি সামরিক বিমানে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের আরেকটি সামরিক বিমানে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করে। পরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জাহাজের মাধ্যমে ৯ মে ভোরে সুন্দরবনের একটি জায়গায় রেখে যায়। জাহাজে তাঁদের শারীরিক নির্যাতন, অমানবিক আচরণ করে। এমনকি তাঁদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করেনি। এখন পর্যন্ত তাঁদের স্ত্রী–সন্তানদের সঠিক অবস্থান তাঁরা জানেন না। তিনি বলেন, উদ্ধার ব্যক্তিদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ১১ মে সকালে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

৭৮ জনের মধ্যে ৩ জন ভারতীয় নাগরিক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৭৫ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগুজরাট থেকে উড়োজাহাজ-লঞ্চে করে চোখ বেঁধে আনা হয়েছে, জানালেন ভুক্তভোগীরা১২ মে ২০২৫আরও পড়ুনসুন্দরবনের চরে ৭৮ জনকে রেখে গেছে বিএসএফ, দিনাজপুর সীমান্তে ৯ জনকে হস্তান্তর০৯ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ম ন দ রব ড় য় স বজনদ র ক ছ স ন দরবন র শ য মনগর ব এসএফ ৭৮ জন

এছাড়াও পড়ুন:

সাতক্ষীরায় নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে পরামর্শ সভা

সাতক্ষীরায় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে স্থানীয়দের চাহিদা নিরুপনে নির্বাচনী ইশতেহার-২০২৫ শীর্ষক উপজেলা পর্যায়ে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিডো এর আয়োজনে এবং একশনএইড বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন:

পূজার ছুটির পর গকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অভিষেক

নিবন্ধন পাচ্ছে এনসিপিসহ ২ দল

সিডো সাতক্ষীরার প্রধান নির্বাহী শ্যামল কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. তহিদুজ্জামান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার কাউন্সিলর শফিক-উ-দ্দৌলা সাগর, টিআইবি সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি হেনরী সরদার, একশনএইড প্রতিনিধি সুইট খান, ইয়ূথ সভাপতি  সাকিব হাসান, প্রোগ্রাম অফিসার চন্দ্র শেখর হালদার প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাতক্ষীরা জেলার রাস্তা-ঘাটের অবস্থা অনেক শোচনীয়। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে রাস্তা-ঘাটের সংস্কার খুব জরুরি। সুন্দরবন কেন্দ্রিক টেকসই ইকোটুরিজম প্রতিষ্ঠা, সুন্দরবনের পরিবেশ ও সম্পদ সংরক্ষণ ও পর্যটন বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই ইকোটুরিজম ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা জেলার শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষা সুবিধা দেবে।

তারা বলেন, রেল সংযোজন সাতক্ষীরা জেলা দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে বৈষম্যের শিকার। সাতক্ষীরাকে দেশের রেল নেটওয়ার্কে অন্তভুক্ত করতে হবে, যা জেলা ও দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়া সাতক্ষীরায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ, সীমান্তে মাদক প্রতিরোধে প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারী ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি, স্থলবন্দরকে পূর্নাঙ্গ বন্দরে রুপান্তর, সাতক্ষীরার ভোমরাকে একটি আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে কার্যকর পৌরসভার ব্যবস্থাপনা, সুন্দরবন বাঁচাতে জীবশ্ম জ্বালানীকে পরিবর্তে নবায়ন যোগ্য জ্বালানী সংযোজন, জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল কৃষি ব্যবস্থাপনা, সবুজ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণাগার তৈরি, প্রাণ সায়ের খালের দুই ধার সৌন্দর্যবর্ধন, যুবদের মুক্ত চিন্তা, উন্নয়ন ভাবনা ও নিজস্ব সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য শিক্ষালয় কেন্দ্রিক যুববান্ধব স্পেস তৈরি ও কার্যকর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও বলেন বক্তারা।

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে কেওড়ার মৌসুমে বানরের হৃষ্টপুষ্ট চেহারা
  • সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর, সবাই কয়রার বাসিন্দা
  • সীমান্তের শূন্যরেখায় শেষবারের মতো মৃত বাবার মুখ দেখলেন মেয়ে
  • জীবননগর সীমান্ত থেকে এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
  • চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
  • সুন্দরবনে কুমিরের আক্রমণে জেলে নিহত
  • সুন্দরবনে কুমিরের আক্রমণে জেলের মৃত্যু, ৭ ঘণ্টা পর লাশ উদ্ধার
  • সাতক্ষীরায় নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে পরামর্শ সভা
  • সুন্দরবনে কুমিরের আক্রমণে জেলে নিহত, মরদেহের খোঁজ চলছে
  • সীমান্তবর্তী মানুষের যেকোনো সংকটে বিজিবি পাশে থাকবে: মহাপরিচালক