‘অবিশ্বাস্য ইনিংস’—কোহলিকে বিদায়ী বার্তা জোকোভিচের
Published: 13th, May 2025 GMT
দুজনই ক্রীড়া জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। শুধু ক্ষেত্রটা আলদা। বিরাট কোহলি ক্রিকেটার, নোভাক জোকোভিচ টেনিস খেলোয়াড়।
তবে দুজনেরই একে অপরকে নিয়ে তুমুল আগ্রহ আছে, আছে মুগ্ধতাও। কখনো দেখা না হলেও বিরাট কোহলি ও নোভাক জোকোভিচের মধ্যে যে নিয়মিত বার্তা আদান–প্রদান চলে, তা জানিয়েছেন তাঁরা। কোহলি যখন টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দিলেন, তখন সেই প্রসঙ্গটা এল আবার।
কাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে কোহলি জানিয়ে দিয়েছেন, আর সাদা পোশাকে ভারতের হয়ে খেলবেন না। এই সংস্করণে ব্যাট হাতে ১২৩ ম্যাচে ৯২৩০ রান করেছেন, আছে ৩০টি সেঞ্চুরি, ৩১টি ফিফটি। এর বাইরেও টেস্টে কোহলি রেখে গেছেন নিজের ছাপ।
আরও পড়ুনদেখা না হলেও কোহলি–জোকোভিচ ‘বন্ধু’, দুজন দুজনায় মুগ্ধ১৪ জানুয়ারি ২০২৪বয়স ৩৬ পেরোলেও কোহলির সামনে আরও অনেক কীর্তি গড়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি এখনই থামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টেস্ট থেকে অবসরের পর সবার কাছ থেকে অভিবাদনও পাচ্ছেন। এ তালিকায় তাঁর সাধারণ ভক্ত–সমর্থক যেমন আছেন, তেমনি আছেন বড় বড় তারকাও। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন জোকোভিচ।
ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে কোহলির একটি ছবি দিয়ে জোকোভিচ লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য ইনিংস, বিরাট কোহলি।’ কোহলির লম্বা ক্যারিয়ারকেই একটা ইনিংস হিসেবে বুঝিয়েছেন জোকোভিচ।
জোকোভিচের সঙ্গে সম্পর্কের শুরুর গল্পটা জানিয়েছিলেন কোহলি। ২৪তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পর কোহলি অভিনন্দন জানাতে চেয়েছিলেন এই টেনিস কিংবদন্তিকে। কিন্তু ইনবক্সে গিয়ে দেখেন, জোকোভিচ তাঁকে আগেই বার্তা পাঠিয়ে রেখেছেন। এর পর থেকে তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ করেন।
সম্পর্কের কথাটা জানিয়েছিলেন জোকোভিচও। কোহলির অর্জনের প্রতি নিজের সম্মানের কথাও তিনি জানিয়েছেন। নিজের ক্রিকেটীয় দক্ষতা উন্নতি না করে ভারতে গিয়ে লজ্জায় পড়তে চান না বলে মজাও করেছিলেন।
মাঝে মাঝে টেনিস কোর্টকেই ক্রিকেট মাঠ বানিয়ে ফেলেন জোকোভিচ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক হল র
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের কর্মপ্রচেষ্টা ও পরিণতির পথ
সুরা লাইল, পবিত্র কোরআনের ৯২তম সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ২১টি আয়াত রয়েছে। ‘লাইল’ অর্থ রাত্রি, যা সুরার প্রথম আয়াতে উল্লেখিত। এই সুরা মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার বৈচিত্র্য, দানশীলতা ও কৃপণতার পরিণতি, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ বর্ণনা করে। সুরাটি দুই ধরনের মানুষের চিত্র তুলে ধরে: যারা দান করে ও ভালোকে গ্রহণ করে, তাদের জন্য সুখকর পথ সহজ হয়; আর যারা কৃপণতা ও অহংকারে ভালোকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য কঠোর পরিণতি অপেক্ষা করে।
সুরার প্রধান বিষয়
সুরা লাইল রাত, দিন এবং নর-নারীর সৃষ্টির শপথ দিয়ে শুরু হয়, যা মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার বৈচিত্র্যের দিকে ইঙ্গিত করে, ‘শপথ রাত্রির, যখন সে ঢেকে ফেলে! আর শপথ দিনের, যখন সে আলোয় উজ্জ্বল! আর শপথ তাঁর, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টার তো বিভিন্ন গতি।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১-৪)
আরও পড়ুনবিপদের সময় বলতে হবে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫রাতকে জাহেলিয়াতের অন্ধকার এবং দিনকে ইমানের আলোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। নর-নারীর সৃষ্টি সব সৃষ্টির জোড়ার বৈচিত্র্য প্রকাশ করে। এই বৈচিত্র্য মানুষের কাজেও প্রতিফলিত হয়। (মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মা’আরিফুল কোরআন, সুরা লাইল)
দানশীলতা ও সৎকর্মের পথ
সুরায় দানশীল ও সাবধানী মানুষের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে: ‘তাই কেউ দান করলে, সাবধানী হলে, ও যা ভালো তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুখকর পরিণামের পথ সহজ করে দেব।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ৫-৭)
এই ব্যক্তিরা ভালোকে সত্য হিসেবে মেনে নেয়, অহংকার থেকে মুক্ত থাকে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে। তারা জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে থাকবে: ‘তার থেকে দূরে রাখা হবে সেই সাবধানীকে, যে ধনসম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির জন্য, আর কারও প্রতি অনুগ্রহের প্রতিদানের প্রত্যাশায় নয়, কেবল তার মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য। সে তো সন্তুষ্ট হবেই।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১৭-২১)
কৃপণতা ও অহংকারের পরিণতি
বিপরীতে, কৃপণ ও অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি ভয়াবহ: ‘আর কেউ ব্যয়কুণ্ঠ হলে, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, ও যা ভালো তা বর্জন করলে, তার জন্য কঠোর পরিণামের পথ সহজ করে দেব। এবং যখন তার পতন ঘটবে, তখন ধনসম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ৮-১১)
এই ব্যক্তিরা ভালোকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং অহংকারে আল্লাহর পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের জন্য লেলিহান অগ্নি অপেক্ষা করে: ‘আমি তোমাদেরকে লেলিহান অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি। সেখানে সে-ই প্রবেশ করবে, যে নিতান্ত হতভাগ্য, যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১৪-১৬)
আরও পড়ুনসুরা গা’শিয়ার সারকথা০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আল্লাহর পথনির্দেশ
সুরায় আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন যে পথনির্দেশ দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর: ‘আর কাজ তো কেবল পথের নির্দেশ দেওয়া। আর আমিই (মালিক) ইহকাল ও পরকালের।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১২-১৩)
এই আয়াত মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এবং আল্লাহর হিদায়াতের মধ্যে ভারসাম্য তুলে ধরে। মানুষ তার পথ বেছে নেয়, কিন্তু আল্লাহই চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করেন।
সুরার তাৎপর্য
সুরা লাইল রাত ও দিনের শপথ দিয়ে মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার দ্বৈততা তুলে ধরে। রাত জাহেলিয়াতের অন্ধকার এবং দিন ইমানের আলোর প্রতীক। দানশীলতা, সাবধানিতা এবং ভালোকে গ্রহণ করা মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়, যেখানে কৃপণতা ও অহংকার জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। এই সুরা মানুষকে চিন্তাশীল হতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে উৎসাহিত করে। (তাফসির ইবনে কাসির, সুরা লাইলের ব্যাখ্যা)
মুহাম্মদ আসাদ, দ্য মেসেজ অব দ্য কোরআন, সুরা লাইল
আরও পড়ুনসুরা নাজিআতের সারমর্ম০২ মে ২০২৫