Risingbd:
2025-05-14@06:46:16 GMT

আশির দশকের মাধ্যমিক স্কুল

Published: 14th, May 2025 GMT

আশির দশকের মাধ্যমিক স্কুল

একটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আরেকটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব ছিল তিন থেকে ছয় মাইল। পাঁচ ঋতুতে হেঁটে আর বর্ষায়-নৌকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতো। কিছু কিছু স্কুলে হোস্টেল থাকতো। সেখানে ছাত্ররা থাকতো। আর ঐ সময় একটা দারুণ প্রথা প্রচলিত ছিল, সেটা হচ্ছে লজিং থাকা বা জায়গীর থাকা। স্কুলের আশপাশের অবস্থাসম্পন্ন বাড়ি বা যাদের টাকা পয়সা বেশি ছিল তারা এক, দুইজন ছাত্রকে বাড়িতে জায়গা দিতেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অন্যতম একটা দায়িত্ব ছিল, মেধাবি এবং দূরবর্তী ছাত্রদের জন্য স্কুলের কাছাকাছি জায়গীর বাড়ি খুঁজে দেওয়া। তখন এটা একটা ব্যাপার ছিল। অবস্থাসম্পন্ন বাড়িগুলোতে ছাত্ররা থাকতো। এবং পরবর্তীতে পড়াশোনা করে এই ছাত্ররা প্রতিষ্ঠিত হতো। 

এখনকার মতো বিনামূল্যে বই তখন দেওয়া হতো না। বই দুই ধরণের ছিল, টেক্সট বুক—সরকার কর্তৃক ছাপা হতো সেটাই লাইব্রেরিতে যেত। লাইব্রেরি থেকে কিনতে হতো। এর সঙ্গে কিছু সহায়ক বই থাকতো। যেমন, বাংলা, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বই। এই বইগুলোর আবার  অপশন থাকতো। বিশেষত ওই সময় দুইটি কোম্পানী ছিল, গ্লোব এবং পুঁথিঘর। এই দুইটা বই কোম্পানীর বইগুলো বেশি চলতো।

তখন সবার আর্থিক সামর্থ্য বেশি ভালো ছিল না। ফলে সবাই নতুন বই কিনে পড়তে পারতো না। পুরনো বই কিনে পড়ার একটা চল ছিল। নতুন বই কেনার সময় যদি মোটামুটি সব বই কেনা হতো, তাহলে মলাট লাগানোর জন্য লাইব্রেরি থেকে একটা ম্যাগাজিন বিনামূল্যে দেওয়া হতো। বিশেষত সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের যে ম্যাগাজিন ছিল ‘উদয়ন’ , সেটি দিত। তখন বাংলাদেশে কমিউনিজম আনার চেষ্টা করছিল রাশিয়া। তারা বাংলায় ম্যাগাজিন প্রকাশ করতো এবং বিনামূল্যে দিতো। ওই ম্যাগাজিন দিয়ে মলাট লাগানো হতো আবার অনেক সময় ক্যালেন্ডারের পাতা দিয়েও মলাট লাগানো হতো। মলাট লাগিয়ে সেগুলো আবার সুন্দর করার জন্য বালিশের নিচে একদিন বা একরাত রাখা হতো, যাতে মলাটটা ঠিক মতো হয়। 

যাদের আর্থিক অবস্থা একটু খারাপ ছিল তারা এক ক্লাস উপরে যারা পড়তো তাদের কাছ থেকে পুরনো বই কিনতো। রীতিমতো এটা বছরের শুরুতে বিক্রি হতো। অথবা বছরের শেষেই বলে রাখতে আমাকে যেন বইটা দেওয়া হয়। 

বছরের তিনটি পরীক্ষা হতো। একটা ষন্মাষিক পরীক্ষা, আরেকটি হচ্ছে মধ্যবর্তী পরীক্ষা আরেকটা হচ্ছে বার্ষিক পরীক্ষা। এভাবেই তিনটি পরীক্ষা দিয়ে ষষ্ট শ্রেণী থেকে সপ্তম শ্রেণী তারপর অষ্টম শ্রেণীতে পৌঁছাতো। অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। ভালো ছাত্র বাছাই করে সাত জন বা দশ জনের একটা গ্রুপ বৃত্তি পরীক্ষার জন্য মনোনীত হতো। সাধারণত বৃত্তি পরীক্ষাগুলো জেলা সদরে অনুষ্ঠিত হতো। 

ওই সময় সবাই জেলা সদরে গিয়ে বৃত্তি পেতো, কেউ কেউ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেতো আবার কেউ কেউ সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেতো। আবার অনেক সময় একটি স্কুল থেকে দেখা যেত, একজনও বৃত্তি পায়নি। এভাবে ধীরে ধীরে তারা নবম শ্রেণীতে উঠতো, এরপর নতুন দশম শ্রেণীতে উঠতো। নতুন দশম শ্রেণীর শেষে টেস্ট পরীক্ষা হতো। টেস্ট পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হতো তাদেরকে বলা হতো এক্স টেন বা পুরোনো দশম শ্রেণী। 

স্বাভাবিকভাবেই এসএসসি পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসতো। এই সময় যারা টেস্ট পরীক্ষায় পাস করে এস এসসির জন্য মনোনীত হয়েছে তাদেরকে স্কুলের তরফ থেকে বিদায় জানানো হতো। এর আয়োজনের দায়িত্ব থাকতো নবম শ্রেণীর ছাত্রদেরা। তারা আয়োজন করতো। সেখানে বিদায়ী ছাত্রদেরকে বিভিন্ন ধরণের উপহার সামগ্রী দেওয়া হতো। বিশেষত তখন কাগজের মালা তাদের গলায় পরিয়ে দেওয় হতো। বিদায়ী ছাত্ররাও আবার শিক্ষকদেরকে মালা পরিয়ে বিভিন্ন রকম উপহার সামগ্রী দিত। এবং অনুষ্ঠানে কিছু আলোচনা হতো।

সমস্ত স্কুলের ছাত্রদের খাওয়ানোর জন্য বিস্কুট কেনা হতো। টিন ভর্তি বিস্কুট— নাবিস্কো কিংবা হক কোম্পানীর বিস্কুট। সেগুলোকে অ্যাসোর্টেড বিস্কুট বলা হতো। স্কুলের ছাত্র সংখ্যা অনুাযায়ী বড় বড় দুই টিন বিস্কুট এনে ছাত্রদের দুই, তিনটি করে বিস্কুট দেওয়া হতো। যাদেরকে বিদায় দেওয়া হচ্ছে তাদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো, শিক্ষকদের জন্যও খাবার ব্যবস্থা থাকতো। 
অনুষ্ঠানটি বেদনাবিধূর একটা পরিস্থিতি তৈরি করতো। বিদায়ী ছাত্ররা তাদের দীর্ঘ পাঁচ বছরের স্মৃতি বিজড়িত স্কুলকে বিদায় জানানোর সময় স্মৃতি তুলে ধরতো, শিক্ষকরা নানাভাবে আশীর্বাদ করতো। যারা ছোট ক্লাসে পড়ে তাদের জন্য তারা শুভেচ্ছা জানাতো। ছোট ক্লাসের ছাত্ররাও বিদায়ী ছাত্রদের জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে সাফল্য কামনা করতো।

এসএসসি পরীক্ষাগুলো সাধারণত থানা সদরে অনুষ্ঠিত হতো। কেন্দ্রে একটা যাওয়া-আসার একটা ঝামেলা ছিল। অনেকেই পরীক্ষাকেন্দ্রের আশেপাশে থাকার ব্যবস্থা করতো। সেখান থেকে তারা পরীক্ষা দিত। তিৎকালীন সময় সাধারণত দুই বেলা পরীক্ষা হতো। বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র একই দিনে দুই বেলায় অনুষ্ঠিত হতো। ইংরেজি প্রথম পত্র এবং দ্বিতীয় পত্রও একই দিনে হতো। পরীবর্তী বিষয়গুলোর পরীক্ষা অনেক সময় এক বেলায়ও থাকতো আবার দুই বেলায় দুইটা হতো। পরীক্ষা শেষে সায়েন্সর শিক্ষার্থীদের জন্য প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা থাকতো। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাধারণত তিন মাস পরে পরীক্ষা ফল প্রকাশ হতো। এবং সেই সময়ে বোর্ড ছিল চারটি। ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর—এই চারটি বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকা প্রকাশ করা হতো। এ ছাড়া আবার প্রত্যেক বোর্ডের আলাদা মেধা তালিকা প্রকাশ করা হতো। 

এক হাজার নম্বরের মধ্যে কেউ সাতশো পঞ্চার মার্কস পেলে সে স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হতো। আর কোনো বিষয়ে সে যদি আশির ওপরে নাম্বার পেত তাহলে সেটা লেটার হিসাবে গণ্য করা হতো। ছয়শো নম্বর পেলে প্রথম বিভাগ, চারশো পঞ্চাশ বা তার বেশি নম্বর পেলে দ্বিতীয় পেয়ে উত্তীর্ণ হতো। এভাবে তারা তাদের মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করতো। পরবর্তীতে তারা এই ফলাফল নিয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হতো।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব যবস থ ষ ঠ ত হত দ র জন য স ধ রণত অন ষ ঠ বই ক ন পর ক ষ র একট প রথম বছর র সময় স ই সময়

এছাড়াও পড়ুন:

এমবাপ্পে, হলান্ড নাকি লেভা: চলতি দশকে গোলের লড়াইয়ে এগিয়ে কে

গোলের লড়াই বললে একসময় সবার আগে আসত লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম। লম্বা সময় পর্যন্ত দুজন একে অপরের বিপক্ষে লড়েছেন। প্রায় এক দশকের বেশি সময় দুজনের আশপাশে খুব কম খেলোয়াড়ই ঘেঁষতে পেরেছেন, তবে সেসব দিন এখন অতীত।

গত দশকে মেসি-রোনালদোর একচ্ছত্র দাপট ভেঙেছে এই দশকে। দুজনই ইউরোপিয়ান ফুটবলের মঞ্চকেও বিদায় জানিয়েছেন। তাঁদের রেখে যাওয়া মসনদে এখন বসেছেন অন্যরা। তবে চলতি দশকে গোলের লড়াইটি মেসি-রোনালদোর লড়াইয়ের মতো দুজনে আটকে নেই। এই লড়াইয়ে সেরা হওয়ার দৌড়ে আছে একাধিক নাম। দশক শেষ হতে হতে তাই বদলে যেতে পারে সব হিসাব–নিকাশও।

ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাব বলছে, চলতি দশকে অর্থাৎ ২০২০-২১ মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে গোল করায় সবার ওপরে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই ৫ বছরে এমবাপ্পে করেছেন ২৩৭ ম্যাচে ২০৫ গোল। তাঁর ম্যাচপ্রতি গোল ০.৮৬টি।

আরও পড়ুনমাদ্রিদে বসে ব্রাজিল নিয়ে যা বললেন আনচেলত্তি৫ ঘণ্টা আগে

২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জিতে সবাইকে চমকে দেওয়া এমবাপ্পে এই সময়ে পিএসজির হয়ে জিতেছেন তিনটি লিগ, দুটি ফ্রান্স কাপ এবং দুটি ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এরপর রিয়ালে যোগ দিয়ে জিতেছেন একটি উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা আন্তমহাদেশীয় কাপ।

২০২০-২১ মৌসুম থেকে শীর্ষ ৫ লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা

তালিকায় দ্বিতীয় রবার্ট লেভানডফস্কি। পোলিশ এই স্ট্রাইকার এ সময়ে খেলেছেন বায়ার্ন মিউনিখ ও বার্সেলোনায়। দুই ক্লাব মিলিয়ে তিনি ২৩০ ম্যাচে করেছেন ১৯৭ গোল। যেখানে লেভার ম্যাচপ্রতি গোল ০.৮৫টি। গোলগুলো করার পথে বায়ার্ন ও বার্সার হয়ে জিতেছেন ১০টি শিরোপা।

এই দশকে আরেক গোল মেশিন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি তারকা স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ড। গোলের অনেক রেকর্ড এরই মধ্যে ভেঙে দিয়েছেন হলান্ড। এই দশকে এখন পর্যন্ত ২১০ ম্যাচে হলান্ড করেছেন ১৯০ গোল। ম্যাচপ্রতি গোল ০.৯০টি। ম্যাচপ্রতি গোল বিবেচনায় হলান্ডের অবস্থান অবশ্য এমবাপ্পে-লেভাদেরও ওপর। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য দুজন হচ্ছেন হ্যারি কেইন (২৩৮ ম্যাচে ১৭৩ গোল) এবং মোহাম্মদ সালাহ (২৪৭ ম্যাচে ১৫০ গোল)।

আরও পড়ুনহলান্ড নাকি এমবাপ্পে, রোনালদোর গোলের রেকর্ড ভাঙবেন কে২৪ জানুয়ারি ২০২৫

ক্লাব বিচারে এ সময় সবচেয়ে বেশি গোল ম্যানচেস্টার সিটির। ইংলিশ ক্লাবটি ২৯৩ ম্যাচে করেছে ৬৯০ গোল। এ সময়ে সিটি চারটি প্রিমিয়ার লিগ এবং একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। সিটির পরই আছে বায়ার্ন। জার্মান ক্লাবটি ২৪৫ ম্যাচে করেছে ৬৭০ গোল। এ সময়ে বায়ার্ন ঘরোয়া লিগের চারটি শিরোপাও জিতেছে। এ তালিকায় পরের তিনটি নাম হচ্ছে পিএসজি (২৬৫ ম্যাচে ৬২৩ গোল), লিভারপুল (২৮০ ম্যাচে ৬০৯ গোল) এবং রিয়াল মাদ্রিদ (২৮৩ ম্যাচে ৫৯৪ গোল)।

২০২০-২১ মৌসুম থেকে শীর্ষ ৫ লিগে সর্বোচ্চ গোল করা ক্লাব

সম্পর্কিত নিবন্ধ