সোনারগাঁ উপজেলা পশু হাসপাতালের কম্পউন্ডার রাজিব চন্দ্র  দাস। যার দায়িত্ব হাসপাতালে ডিউটি করা এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অসুস্থ পশুকে ওষুধ প্রয়োগ করা। এ ছাড়া প্রাথমিক পরামর্শ দিতে পারবেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, উপজেলা পশু হাসপাতালের  কম্পাউন্ডার রাজিব চন্দ্র দাস তার যে দায়িত্ব তা সঠিক ভাবে পালন না করে টাকার বিনিময়ে পশুর চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। হাসপাতালে অফিস চলাকালে কোন ধরণের টাকা নেয়ার নিয়ম না থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন যাবত এ কাজ করে যাচ্ছেন।

যে কেউ পশু নিয়ে হাসপাতালে আসলেই তার কাছে ছুটে যান রাজিব চন্দ্র দাস। কন্টাক্ট করে শুরু করেন পশুর চিকিৎসা। অনেক ক্ষেত্রে ইনজেকশন না লাগলেও তিনি টাকা কামানোর ধান্ধায় পশুকে ইনজেকশন দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজেই সরকারী লগো সম্বলিত প্যাডে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। 

এ কাজ করতে গিয়ে  পাশ্ববর্তী উপজেলা মেঘনা নলচরের নিজামের ২টি গরু ও চালিভাংগার  এলাকার জিতুর ৩টি গরু তার অপচিকিৎসায়  মারা যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে ।

অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভা এলাকার রোকেয়া নামের একজনের ছাগল তার অপচিকিৎসা মারা যায়। তার জন্য তিনি ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, অফিসের বাহিরে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া তো দূরে থাক অফিসের বাহিরে যাওয়ারও তার নিয়ম নেই।

নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তিনি যেখান থেকেই খবর পান সেখানেই চিকিৎসা দিতে ছুটে যান। বিনিময়ে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। এসবের পিছনে তার একমাত্র উদ্দেশ্য টাকা ইনকাম করা। 

এ ধরণের অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা কম্পাউন্ডার রাজিব চন্দ্রকে  শোকজ করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে তৎকালীন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ ইউসুফ হাবিব শোকজ দেওয়ার পরও তিনি কাউকে তোয়াক্কা না করে এখনো বহালে।

অভিযোগে আরো রয়েছে, হাসপাতালে পশুর চিকিৎসা নিতে গিয়ে কম্পাউন্ডার রাজিব চন্দ্র দাসের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উপজেলার জৈনপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহেদ আলী। তার কাছ থেকে চিকিৎসা দিয়ে ৩৫ হাজার টাকার ওষুধ দেন। তার পরও তার পশুর রোগ ভাল হয়নি। পশু দেখা বাবদ সাহেদ আলীর কাছ থেকে ১৫০০ টাকা ভিজিট নেওয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসা দিয়ে লোক বুঝে কারো থেকে ৫শ, কারো থেকে ৩শ, কারো থেকে ১ হাজার, কারো থেকে দেড় হাজার, দুই হাজার পর্যন্ত টাকা ভিজিট নেন কম্পাউন্ডার রাজিব চন্দ্র দাস।

এ ছাড়া প্রতিদিন তার অফিসে ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে হাতিয়ে নেন বিপুল অংকের টাকা। টাকা দিলেই যে কোনো কোম্পানীর ওষুধ লিখেন তিনি। এ ধরণের অনিয়ম দূর্নীতিবাজ কম্পাউন্ডার রাজিব চন্দ্র দাসের বিচার চেয়েছে অনেক ভুক্তভোগী।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাজিব চন্দ্র দাস বলেন, আমি প্যাড ব্যবহার করছি এ কথা সত্য তবে আমি কোথাও ডাক্তার উল্লেখ করিনি। ওষুধের টাকা নিয়েছি কোনো ভিজিট নেইনি। 

সোনারগাঁ উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা.

মোছাম্মদ নইফা বেগম বলেন, কমপাউন্ডার রাজিব চন্দ্র দাস প্রাথমিক পরামর্শ দিতে পারেন। সরকারী প্যাড ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়া সম্পূর্ন বেআইনি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ অপর ধ ব যবস থ চ ক ৎসক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ