উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে এমবিবিএস ডাক্তার কবে যাবেন?
Published: 15th, May 2025 GMT
রংপুর মেডিকেল কলেজে একটা ব্যবস্থা করলেই হার্টের রিং পরানোর জন্য এই বিভাগের রোগীদের ঢাকা যেতে হয় না– এ আক্ষেপ অনেকেরই। গণঅভ্যুত্থানের পর ‘রাষ্ট্র গঠন’, ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’– কত শব্দ শুনছি! জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গঠন ছাড়া তা কতদূর সম্ভব?
চিকিৎসা একটা মৌলিক অধিকার। এর সুষ্ঠু বন্দোবস্ত স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে করা দূরে থাক; জনগণ লড়াই করে যা আদায় করেছিল, তাও কমে আসছে। এমনকি হাসপাতালগুলোকে ক্লিনিক বানানোর প্রস্তাব পর্যন্ত উঠেছিল এক সময়। এই মৌলিক অধিকার কথার মানেটা তাহলে কী? টাকা থাকলে চিকিৎসা পাবে; না থাকলে নাই, এমনটা কী?
দুই.
১৯৯৬ সালে গৃহীত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর উল্লেখযোগ্য সেবা হলো– প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতির স্বাস্থ্য, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি, ইপিআই, সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসা, অসংক্রামক রোগ শনাক্তকরণ ও রেফারেল, কিশোর-কিশোরী ও নববিবাহিত দম্পতির প্রজনন স্বাস্থ্য, কভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যশিক্ষা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও টিকা প্রদানে সহযোগিতা, স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ে স্বাস্থ্যশিক্ষা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও ভায়া স্ক্রিনিং, রেজিস্ট্রেশন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, জরুরি ও জটিল রোগীর রেফারেল, স্বাভাবিক প্রসব (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মএলাকায় খানাভিত্তিক অনলাইন নিবন্ধন ও হেলথ আইডি কার্ড।
এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে মাত্র ১ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পদটির নাম (সিএইচসিপি) কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রভাইডার নন-মেডিকেল পারসন। ক্লিনিকগুলোতে শুধু কয়েক প্রকার ওষুধ রাখা হয়। রোগীরা এসে ওষুধের কথা বললেই ওই ব্যক্তি কয়েকটা ট্যাবলেট বের করে দেন। ক্লিনিকগুলোতে যারা কাজ করছেন তাদের বেতনও কয়েক বছর ধরে বন্ধ। কমিউনিটি ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে প্রধান দুর্বলতা হিসেবে লেখা আছে, সিএইচসিপিরা চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। জনগণের সেবার নামে কী প্রহসন!
কারণ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য যে সাড়ে চার বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডিএমএফ ডিগ্রিধারী উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পদায়িত হন, তাদের নিয়োগ কয়েক বছর ধরে বন্ধ। কথা হচ্ছে, এমবিবিএস ডাক্তারের পদায়ন করলে কি চিকিৎসার মান খারাপ হবে? এমবিবিএসরা আবার ডিএমএফদের ডাক্তারই মনে করেন না। গণঅভ্যুত্থানের পর প্যারা মেডিকেল ডাক্তাররা নিয়োগের দাবিতে ঢাকার রাস্তায় নেমেছিলেন। তাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন এমবিবিএসরা। তারা উপজেলা সদরেই থাকতে চান না; চরাঞ্চলে যাবেন কোন গরজে? একদিকে তারা ডিপ্লোমা উত্তীর্ণদের ডাক্তার হিসেবে নিয়োগে বাধা দেবেন, আরেকদিকে নিজেরাও গ্রামে সেবা দিতে যাবেন না। তাহলে জনগণের সেবাপ্রাপ্তির মীমাংসা কী?
তিন. এক সময় ডাক্তাররা রোগীদের বাড়িতে যেতেন, বাড়ির পরিবেশ দেখতেন; রোগের কারণ ভেদ করতেন; আশপাশের গাছগাছালি থেকে ওষুধ বানিয়ে খাওয়াতেন। এখন রোগীই ডাক্তারের চেম্বারে যান। ডাক্তার আধা মিনিট কথা শুনে হরেক রকম টেস্ট দেন। কয়েক দিন পর সেই টেস্টের রিপোর্ট দেখে ওষুধ লিখে দেন। প্রতিটি হাসপাতালের আশপাশে তাই ক্লিনিকে গিজগিজ করে। এ একটা দৃঢ় শিকলের মতো, যেখানে রোগী চিকিৎসার পেছনে অর্থ ব্যয় করে ফতুর হবে, আর বিত্তশালী শ্রেণি গড়ে উঠবে। এই শিকল ছিঁড়ে কারা চিলমারীর চরের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবেন রোগীর কাছে?
নাহিদ হাসান: লেখক ও সংগঠক
nahidknowledge1@gmail.com
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এনবিআরের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবা, কাজে যোগ না দিলে কঠোর ব্যবস্থা: সরকারের বিবৃতি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে সংস্থাটির আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানিয়ে সরকার বলেছে, কাজে যোগ না দিলে দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হবে। আজ রোববার সরকার এক বিবৃতিতে এমনটা জানিয়েছে।
সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার এনবিআরের আওতাধীন সব কাস্টম হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস বা সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকার আশা প্রকাশ করে বলেছে, অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হচ্ছে, রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সব অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী এনবিআর পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী নজিরবিহীনভাবে ২ মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থবছরের শেষ ২ মাসে আন্দোলনকারীরা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছেন। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থী। সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তাঁরা তা অগ্রাহ্য করেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তাঁরা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা এই কর্মসূচির কারণে গতকাল শনিবার থেকে ঢাকার এনবিআর ভবন থেকে শুরু করে সংস্থাটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর এবং ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ।