আইনি সহায়তা (লিগ্যাল এইড) দানশীলতার কাজ নয়, বরং এটি আইনের শাসনের একটি অপরিহার্য উপাদান বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে বুধবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি আয়োজিত ‘ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে লিগ্যাল এইডের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।

সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি বলেন, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং সাম্যের সাংবিধানিক নীতিতে প্রোথিত বাংলাদেশের একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু যতই মহৎ হোক না কেন, কোনো সাংবিধানিক অঙ্গীকারই অর্থবহ হতে পারে না, যদি তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। আর আইনি সহায়তা দানশীলতার কাজ নয়; বরং এটি আইনের শাসনের একটি অপরিহার্য উপাদান।

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে যে পর্যাপ্ত সম্পদ ছাড়া আইনি সহায়তা সম্ভব নয়। তাই দেশব্যাপী আইনি সহায়তা পরিষেবাগুলোর নিরবচ্ছিন্ন কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত বাজেট বরাদ্দ অপরিহার্য।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনি সহায়তায় বিনিয়োগ কোনো ব্যয় নয়, এটি আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচারের সামাজিক কাঠামোতে বিনিয়োগ।

বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে ঘোষিত নিজের রোডম্যাপের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে দুটি যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটেছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বাধীন স্বায়ত্তশাসিত সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে কার্যকর করা হয়েছে।

এই সংস্থাগুলো এখন যেকোনো নির্বাহী বা আইনসভার হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হয়ে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়োগ এবং অপসারণের একচেটিয়া ক্ষমতা রাখে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগকে বাইরের প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন করার এবং আমাদের আদালতের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য অপরিহার্য স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় গঠন প্রসঙ্গে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘আমরা সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় গঠনের জন্য একটি বিস্তারিত প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি। এই সচিবালয় কোনো বিশেষ সুবিধা নয়, এটি একটি সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা।’

একটি স্বাধীন বিচার বিভাগকে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত হতে হবে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটি যাতে নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভর না করে নিজস্ব প্রশাসনিক, আর্থিক ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা করতে পারে। আমি আশা করি শিগগিরই এর বাস্তবায়ন হবে।’

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে সারা দেশের বিচারপ্রার্থীদের জন্য ৬৪ জেলায় ও ৮ মহানগরীর অধস্তন আদালতে সুপ্রিম কোর্টের আদলে হেল্পলাইন সেবার উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি।

আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো.

আশফাকুল ইসলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমেদ ভূঞা, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক সৈয়দ আজাদ সুবহানী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী জিনাত হক। আর শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক (ফয়সাল)।

অনুষ্ঠানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প র ম ক র ট ল গ য ল এইড অপর হ র য অন ষ ঠ ন বক ত ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে হামলা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৩-২৪ মেয়াদের নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাসী হামলা, ভোট জালিয়াতি, মারধর, হত্যাচেষ্টা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও সাবেক কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে হামলার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শাহবাগ থানায় দায়ের করা এজাহার অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় নীল প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকেরা জানতে পারেন, আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা গোপনে ব্যালটে সিল মারছেন। প্রতিবাদ করতে গেলে কয়েকজন আইনজীবী মারধরের শিকার হন। পরদিন ১৫ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সমিতির অডিটরিয়ামে প্রায় ৪০-৫০ জন আইনজীবী ও শতাধিক পুলিশ সদস্য জোরপূর্বক প্রবেশ করে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী ও ভোটারদের ওপর হামলা চালান।

এ সময় মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, মাহদিন চৌধুরীসহ বহু প্রার্থী ও সদস্য গুরুতর আহত হন। নারী আইনজীবীদেরও মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে। রাইফেলের বাঁট, লাঠি ও বুটের আঘাতে কয়েকজন আইনজীবী রক্তাক্ত জখম হন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আইনজীবী রাসেল আহম্মেদ, ইব্রাহিম খলিল, সালাউদ্দিন রিগানসহ প্রায় তিন শতাধিক আইনজীবীকে লাঠি, রাইফেলের বাঁট ও বুটের আঘাতে আহত করা হয়। এ ছাড়া ভবনের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর, কাচ ভেঙে ফেলা, পুলিশের প্রবেশে সহযোগিতা, সাংবাদিকদের ওপর হামলারও অভিযোগ রয়েছে। আজকের পত্রিকা, জাগো নিউজ, মানবজমিন, এটিএন বাংলা, সময় টিভি, ডিবিসি নিউজ ও বৈশাখী টিভির অন্তত ২৫ জন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।

বাদীর দাবি, তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়। নির্বাচনের দ্বিতীয় দিন ১৬ মার্চও ভয়ভীতি ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। অবশেষে রাতে জাল ব্যালটের মাধ্যমে ১৪ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে হামলা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা
  • আদালত প্রাঙ্গণে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদক বহনে নিষেধাজ্ঞা
  • দুদকের নতুন আইনজীবী শাহদীন মালিক
  • সাদাপাথর লুটে জড়িতদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ হাইকোর্টের
  • রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানোর বিধান প্রশ্নে রুল শুনানিতে ৭ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ
  • সিলেটে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে রাতভর অভিযান 
  • খুলনা আইনজীবী সমিতির ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে: অডিট
  • প্রাণনাশের আশঙ্কায় রাহুল গান্ধী, আদালতে অভিযোগ
  • বিচার কার্যক্রম বিলম্ব করতে চাইলে ‘টুঁটি চেপে’ ধরবেন ট্রাইব্যুনাল
  • সাবেক ফার্স্টলেডি এখন মেঝেতে ঘুমান