আইনি সহায়তা আইনের শাসনের অপরিহার্য উপাদান: প্রধান বিচারপতি
Published: 15th, May 2025 GMT
আইনি সহায়তা (লিগ্যাল এইড) দানশীলতার কাজ নয়, বরং এটি আইনের শাসনের একটি অপরিহার্য উপাদান বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে বুধবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি আয়োজিত ‘ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে লিগ্যাল এইডের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি বলেন, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং সাম্যের সাংবিধানিক নীতিতে প্রোথিত বাংলাদেশের একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু যতই মহৎ হোক না কেন, কোনো সাংবিধানিক অঙ্গীকারই অর্থবহ হতে পারে না, যদি তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। আর আইনি সহায়তা দানশীলতার কাজ নয়; বরং এটি আইনের শাসনের একটি অপরিহার্য উপাদান।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে যে পর্যাপ্ত সম্পদ ছাড়া আইনি সহায়তা সম্ভব নয়। তাই দেশব্যাপী আইনি সহায়তা পরিষেবাগুলোর নিরবচ্ছিন্ন কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত বাজেট বরাদ্দ অপরিহার্য।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনি সহায়তায় বিনিয়োগ কোনো ব্যয় নয়, এটি আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচারের সামাজিক কাঠামোতে বিনিয়োগ।
বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে ঘোষিত নিজের রোডম্যাপের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে দুটি যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটেছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বাধীন স্বায়ত্তশাসিত সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে কার্যকর করা হয়েছে।
এই সংস্থাগুলো এখন যেকোনো নির্বাহী বা আইনসভার হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হয়ে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়োগ এবং অপসারণের একচেটিয়া ক্ষমতা রাখে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগকে বাইরের প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন করার এবং আমাদের আদালতের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য অপরিহার্য স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় গঠন প্রসঙ্গে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘আমরা সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় গঠনের জন্য একটি বিস্তারিত প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি। এই সচিবালয় কোনো বিশেষ সুবিধা নয়, এটি একটি সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা।’
একটি স্বাধীন বিচার বিভাগকে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত হতে হবে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটি যাতে নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভর না করে নিজস্ব প্রশাসনিক, আর্থিক ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা করতে পারে। আমি আশা করি শিগগিরই এর বাস্তবায়ন হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে সারা দেশের বিচারপ্রার্থীদের জন্য ৬৪ জেলায় ও ৮ মহানগরীর অধস্তন আদালতে সুপ্রিম কোর্টের আদলে হেল্পলাইন সেবার উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি।
আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো.
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী জিনাত হক। আর শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক (ফয়সাল)।
অনুষ্ঠানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র ম ক র ট ল গ য ল এইড অপর হ র য অন ষ ঠ ন বক ত ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
রিয়া মনির মামলায় জামিন পেলেন হিরো আলম
রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় হত্যাচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির করা মামলায় আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান আজ শনিবার এই আদেশ দেন।
বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে হাতিরঝিল থানা থেকে হিরো আলমকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাঁকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় তাঁকে সিএমএম আদালতের ৯তলার এজলাসে নেওয়া হয়।
হিরো আলমের পক্ষের আইনজীবীরা তাঁর জামিন চেয়ে শুনানি করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক ২০০ টাকা মুচলেকায় তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে হিরো আলমের মামলার শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন এই মামলার বাদী রিয়া মনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হিরো আলমের একটা শিক্ষা হওয়া দরকার। আমাকে যেমন বিনা কারণে জেল খাটিয়েছে, তারও জেলে থাকা উচিত।’
এর আগে শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন এলাকা থেকে সাবেক স্ত্রী রিয়া মনির দায়ের করা মামলায় হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামানের আদালত হিরো আলম ও তাঁর সহযোগী আহসান হাবিব সেলিমের বিরুদ্ধে ১২ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই পরোয়ানা অনুসারেই হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২৩ জুন হাতিরঝিল থানায় রিয়া মনি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি হিরো আলম ও বাদী রিয়া মনির মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এরপর হিরো আলম বাদীকে তালাক দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন। গত ২১ জুন বাদীর পরিবারের সঙ্গে মীমাংসার কথা বলে হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় একটি বাসায় ডাকা হয়। ওই সময়ে হিরো আলমসহ ১০ থেকে ১২ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। পরে তাঁরা বাদীর বর্তমান বাসায় বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কাঠের লাঠি দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করেন। এতে বাদীর শরীরে জখম হয়। এ সময় তাঁর গলায় থাকা দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের হার চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুনরিয়া মনির মামলায় হিরো আলম গ্রেপ্তার২ ঘণ্টা আগে