মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব
Published: 16th, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘোষণার ফলে দলটির পক্ষে প্রচার, সভা-সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি দলটির খবর প্রচার করলেও ব্যক্তি ও গণমাধ্যম দুই থেকে সাত বছর পর্যন্ত শাস্তির আওতায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজ্ঞরা। তাদের মতে, ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের মতপ্রকাশকে কোনোভাবেই রুদ্ধ করা ঠিক না।
আইনজ্ঞদের মতে, অধ্যাদেশের কিছু বিষয় ব্যক্তির মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার পাশাপাশি গণমাধ্যমকে চাপে রাখবে। এ ধরনের চাপ সংবিধান পরিপন্থি। কেউ কেউ বলছেন, ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত। নতুন যে শঙ্কা তৈরি করা হয়েছে, তা আইনগতভাবে প্রশ্নের মুখে পড়লে টিকবে
না। আবার কেউ কেউ বলছেন, আইন বা অধ্যাদেশে যা-ই থাকুক, সরকারের প্রেস উইং থেকে ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নেই বলে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেটিই প্রযোজ্য হবে এবং অনুসরণ করা হবে। কোনো সমস্যা তৈরি হলে তখন বিবৃতিটি দালিলিক তথ্য-প্রমাণ হিসেবে আসবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সমকালকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টরা এসব কথা বলেন।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড.
শাহ্দীন মালিকের মতে, আওয়ামী লীগের অপকর্ম ও অপরাধ সম্পর্কে জানার পর সম্ভবত খুব বেশি নাগরিক তাদের পক্ষে ভোট দেবে না। কিন্তু দলকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অভিযাত্রা সাফল্যমণ্ডিত হবে না। এক নেতার এক ঘণ্টার আলটিমেটামে সরকার যেভাবে আওয়ামী
লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে ত্বরিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাল, সেটি সরকারের এবং আলটিমেটাম প্রদানকারী উভয়ের ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্যতা মলিন করতে যথেষ্ট।
বিশিষ্ট এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘অপকর্ম করেছে আওয়ামী লীগ। মতাপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করে খেসারত দিতে হচ্ছে গণমাধ্যম ও জনগণকে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে এটি মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিয়ে তর্কবিতর্ক বন্ধ করা যাবে না। শুধু গণমাধ্যম নয়, ব্যক্তিরও মতপ্রকাশের সুযোগ রুদ্ধ করা যাবে না। পৃথিবীজুড়ে নিষিদ্ধ বই, নিষিদ্ধ সংগঠন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হয়। ব্যক্তির মতপ্রকাশের বিষয়ে প্রেস উইং থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়টি আইনেও স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন।’
রোবায়েত ফেরদৌস আরও বলেন, ‘ফেসবুকসহ সাইবার জগতে নিষিদ্ধ সংগঠন বা দল কার্যক্রম চালাতে পারবে না– এটি হয় বা হতে পারে। জনমতকে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। ব্যক্তির মত, দ্বিমত ও ভিন্নমতের পরিসর নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যম এবং জনগণ অবশ্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দেবে; তর্কবিতর্ক করবে। একে রুদ্ধ করা যাবে না।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের মতপ্রকাশে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। নতুন যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, সেটি স্পষ্টত সংবিধান পরিপন্থি। সংবিধান গণমাধ্যমের পাশাপাশি সভা-সমাবেশ, সংগঠন করা ও ব্যক্তির মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের যদি কেউ অপরাধ করে থাকে, তাদের বিচার হবে এবং তার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তার আগে দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ব্যক্তি ও গণমাধ্যমে মতপ্রকাশে হস্তক্ষেপ করা সংবিধানসম্মত নয়।’
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, যে প্রক্রিয়ায় দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, তাকে ‘প্রেশার ল’ বলা যেতে পারে। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারই বলেছিল– আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পদক্ষেপ তারা নিচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, শাহবাগে কিছু দল ও সংগঠনের দাবির মুখে সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে বাধ্য হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সর্বজনীন নয়। তাঁর মতে, অধ্যাদেশ দুটি জারির পর আন্তর্জাতিকভাবেও সমালোচনার মুখে পড়েছে। নাগরিকরা কথা বলতে পারলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে। গণমাধ্যম এতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। ফলে জনগণ গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশে কোনো বাধা নেই। বাধা যদি আসেও, তাহলে সেটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে এবং সেটি টিকবে না। প্রেস উইং থেকেও বিবৃতির মাধ্যমে নিষিদ্ধ দলের (আওয়ামী লীগ) প্রচার ও সমর্থন বিষয়ে ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের করণীয় স্পষ্ট করা হয়েছে। তাই আইনের কোনো বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে প্রেস উইংয়ের বিবৃতিটি সহায়ক হবে। তাঁর মতে, অধ্যাদেশে নিষিদ্ধ সত্তা ও সমর্থনকারী সত্তাকে বোঝানো হয়েছে। এটি দল ও এর সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ প রক শ র স আইনজ ব দ ধ কর স গঠন আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় বান্ধবীর ছবি তুলেছিলেন ভাই। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালে ভাইকে বাঁচাতে উল্টো বান্ধবীর নামে মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে তানিয়া হক নামের এক নারীর বিরুদ্ধে।
এছাড়াও চুরির ঘটনার কোনো তদন্ত ছাড়াই মামলা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা জেলা জজকোর্টের সামনে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল।
পাবনা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামানের আদালত ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা সানিমুনকে জামিন দিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল বলেন, “আমার মক্কেল ইফফাত মোকাররমা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতায় পেশায় নিয়োজিত। তিনি একজন সম্মানিত লোক। মামলার বাদীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের কারণে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন এবং একসঙ্গে ঘোরাঘুরির পর যখন রাত্রীযাপন করছিলেন সেই সময়ে বাদীর ভাই ইফফাত মোকাররমার ছবি তুলেছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান এবং ছবিগুলো দেখানোর জন্য অনুরোধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরেরদিন সকালে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে ইফফাত মোকাররমা ঢাকায় চলে যান এবং সেখানে জিডি করেন। কিন্তু এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো ইফফাত মোকাররমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা দায়ের করেন তার বান্ধবী।”
তিনি আরো বলেন, “বাদী তানিয়া হক উল্লেখ করেছেন ২৬ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে যা তিনি তার শরীরে পড়ে তার বান্ধবীর সঙ্গে ঘুড়ে বেড়িয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিনের ঘোরাঘুরির ছবিতে তার শরীরে কোনো স্বর্ণালঙ্কার ছিল না। এছাড়াও ঘটনার দুইদিনের মাথায় যেভাবে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে বোঝা যায় কোনো তদন্ত ছাড়াই থানা কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছেন।”
ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা বলেন, “এই মামলার নূন্যতম প্রমাণ নেই। আমি যে একজন শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্রদের সামনে দাঁড়াবো সেই অবস্থাও তারা আমাকে রাখেনি। আমার সন্তানসহ পুরো পরিবার সামাজিকভাবে হেয় পতিপন্ন হচ্ছে। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এ বিষয়ে মামলার বাদীর তানিয়া হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “উনি (আইনজীবী) উনার মক্কেলের জন্য এসব কথা বলতেই পারেন। উনার মক্কেলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ঘটনার তদন্ত করে এবং আইনানুগভাবেই মামলা দায়ের হয়েছে, যা এখনও তদন্ত চলছে।”
ঢাকা/শাহীন/এস