Samakal:
2025-09-18@00:38:19 GMT

কন্টাক্ট লেন্সে সাবধানতা

Published: 17th, May 2025 GMT

কন্টাক্ট লেন্সে সাবধানতা

সেই কবে, ১৫০৮ সালে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি তার  ‘চোখের সংহিতায়’ প্রথম ধারণা দেন কন্টাক্ট লেন্সের। কেমন ছিল সেটি? তিনি অনুমান করেছিলেন, জলের ভেতর দিয়ে তাকালে মানুষের দৃষ্টি কিছুটা পরিবর্তন হয়। তাই মাথায় এক বাটি জল পরার পরামর্শ দেন। হাস্যকর শোনালেও ব্যাপারটা অনেকটা তেমনই ছিল। ১৬৩৬ সালে লিওনার্দোর এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে ফরাসি বিজ্ঞানী রেনে দেকার্ত আরেকটি ধারণা প্রস্তাব করেন, তিনি দেখান যে চোখের সঙ্গে একটি জলভরা কাচের নলের সরাসরি সংযোগ ঘটালে দৃষ্টির খানিকটা উন্নতি ঘটে। তাতে অবশ্য চোখের পলক ফেলাটা বাধাগ্রস্ত হয়। তাতে কী? সেটিই ছিল সে যুগের মানুষের কাছে ঢের বেশি। যেহেতু চোখের পৃষ্ঠের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, তাই এখান থেকে কন্টাক্ট লেন্স নামটির উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। 
দেকার্তের এই আইডিয়া ব্যবহার করে এখনকার উজ্জ্বল রঙিন কন্টাক্ট লেন্সের নকশা বানানোর ধারণাটি মানুষের মাথায় আসতে শুরু করে আরও প্রায় দুইশ বছর পর থেকে। ১৯৩৯ সালে প্রথম প্লাস্টি কন্টাক্ট লেন্স তৈরি হলো। তারপর আরও পরিবর্তন বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সর্বশেষ ২০০২ সালে সিলিকন হাইড্রোজেল কন্টাক্ট লেন্স প্রথম বাজারজাত হলো। এখন তো কন্টাক্ট লেন্স তরুণদের ফ্যাশন অনুষঙ্গ হয়ে অনেকটা নিত্য ব্যবহার্য পণ্যে পরিণত হয়ে গেছে।  
সম্প্রতি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কন্টাক্ট লেন্স বিক্রয় অবৈধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হ্যালোয়িনের উৎসবে বিড়াল, জোম্বি, ভ্যাম্পায়ার বা ড্রাকুলা ইত্যাদি চরিত্র অনুযায়ী নিজেকে সাজাতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নানা রঙের কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে অনেকে গুরুতর চোখের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই ওয়েবসাইট কিংবা দোকান থেকে কন্টাক্ট লেন্স বিক্রির ব্যাপারে এ সতর্কতা ও কড়াকড়ি আরোপ।   
চোখের সমস্যা অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক রোগীকে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাও শর্তসাপেক্ষে ও কিছু নিয়মকানুন নিয়মিত অনুসরণের ভিত্তিতে। তবে নিজেকে গ্ল্যামারাস দেখানোর লোভে তরুণ প্রজন্মের অনেকে রঙিন কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করছেন। ব্যতিক্রম নয় আমাদের দেশও। শূন্য পাওয়ারের নানা রঙের এ লেন্সগুলো খুব সহজেই চেহারায় নিয়ে আসে নাটকীয় পরিবর্তন। প্রিয় মডেল, রক বা ফিল্মস্টারদের অনুকরণে পোশাক ও মেকআপের সঙ্গে মানিয়ে লেন্স পরছেন অনেকে এবং নিজের অজান্তে ডেকে নিয়ে আসছে চোখের বিপদ। লেন্স ব্যবহারে তাই বরাবরই সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ লেন্স থেকে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে চোখের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এমনকি জীবাণুর আক্রমণে কর্নিয়ায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে একেবারে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানান তারা।  
সাধারণ কন্টাক্ট লেন্সের ওপরে এক ধরনের রং করে রঙিন কন্টাক্ট লেন্স তৈরি করা হয়ে থাকে। কেমিক্যাল জাতীয় রঙিন ওই পদার্থের জন্য অনেকের চোখে এলার্জি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাছাড়া লেন্স পরিষ্কার করার তরলের মধ্যে যে রাসায়নিক পদার্থ থাকে তা থেকেও চোখে এলার্জি হতে পারে। চোখের কালো মণিতে পানি জমে পরে ঘা হতে পারে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি লেন্স খুলে না রাখা হয় তবে দেখা দিতে পারে ইনফেকশন। তাছাড়া মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া লেন্স এবং ঠিকঠাক মতো যত্ন না নেওয়া লেন্স ব্যবহারেও হতে পারে অসুখ।  
সাধারণ কন্টাক্ট লেন্সগুলো দিনের বেলা চোখে পরা হয় এবং রাতে ঘুমের আগে নির্দিষ্ট কেসের মধ্যে খুলে রাখা হয়। লেন্সের প্রকারভেদে 
১২-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত এ লেন্স পরে থাকা যায়। কয়েকটি বিপত্তির কথা না বললেই 
নয় সেগুলো হলো– লেন্স পরা অবস্থায় চোখে ময়লা গেলে বা আঘাত লাগলে এমনকি খুব বেশি রোদ বা তাপে গেলেও চোখে দেখা দিতে পারে জটিলতা। কৃত্রিমতা এড়িয়ে আমরা কি আমাদের অমূল্য চোখ জোড়াকে দিতে পারি না প্রাকৃতিক শান্তি। একটু সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর কিছুটা বিশ্রাম। টাটকা-সতেজ শাকসবজি ও ছোট মাছ খাবারের মেন্যুতে রাখা। কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনের বিদ্যুৎ চুম্বকীয় আকর্ষণ থেকে সবুজ প্রকৃতির দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে চোখ জোড়াকে একটু প্রশান্তি দিতে পারি না আমরা? u

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ন স ব যবহ র ল ন স পর

এছাড়াও পড়ুন:

কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 

বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না।  মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন  করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও  এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?

ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো।  বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে। 

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা 

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে। 
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত। 

জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই। 

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।  

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের কাজ কি শুধু ভাইভা নেওয়া
  • কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীতে বিদ্বেষ কেন
  • চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন