নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও আকার-পরিমাণ হ্রাসের এ সময়ে শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমেই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘বিস্কুট, পাউরুটি, কেকের প্যাকেট ছোট হচ্ছে, কষ্টে শ্রমজীবী মানুষ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখিত রিকশাচালক মোখলেছের মতো কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এসব খাদ্যপণ্য কেবল ক্ষুধা নিবারণের উপকরণ নয়, এটি জীবনধারণের অপরিহার্য সম্বল।

অথচ মূল্যবৃদ্ধির কারণে ‘শ্রিংকফ্লেশন’-এর নীরব কৌশলে রুটি, বিস্কুট, কেকসহ খাদ্যপণ্যের আকার সংকুচিত করা হচ্ছে। এই প্রবণতা কেবল অর্থনৈতিক কূটকৌশল নয়, এটি সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি ঘোরতর অবহেলা।

বিস্কুট, পাউরুটি ও কেকের প্যাকেটে পণ্যের পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাসের পেছনে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, শুল্ক ও মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) চাপ দায়ী। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়ানোর পরিবর্তে পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে লাভের পরিমাণ অক্ষুণ্ন রাখছে, কিন্তু এর মাশুল দিচ্ছে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ ছুঁয়ে গত এপ্রিলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ হয়েছে। তবে এটা নিছক পরিসংখ্যান নয়, এই পরিসংখ্যানের পেছনে রয়েছে কোটি মানুষের পুষ্টিহীনতার বাস্তব কাহিনি।

নিত্যপণ্যে ভ্যাট-শুল্কের বোঝা গরিবের জীবনে অসম চাপ সৃষ্টি করছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান যথার্থই বলেছেন, রাজস্ব আদায়ের নামে দরিদ্রের পিঠে করের বোঝা চাপানো ‘গরিববিরোধী’ নীতি। ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে প্রকাশ, ৯৯ শতাংশ উত্তরদাতা কোনো না কোনো সময় অর্থাভাবে ভারী খাবার বাদ দিয়ে পাউরুটি-বিস্কুটে ক্ষুধা নিবারণ করেছেন। ৬০৫ জন নিম্ন আয়ের মানুষের দাবি, এসব নিত্যপণ্যে কর হ্রাস অত্যাবশ্যক।

এই সংকটের সমাধান রাষ্ট্রীয় নীতির আমূল পরিবর্তনের মধ্যেই নিহিত। প্রথমত, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে সম্ভব হলে ভ্যাট সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করতে হবে। যদি ভ্যাট প্রত্যাহার সম্ভব না হয়, তাহলে সর্বনিম্ন মাত্রায় ভ্যাট রাখা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, ‘শ্রিংকফ্লেশন’ রোধ করার জন্য পণ্যের ওজন ও পরিমাণের মানদণ্ড কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। তৃতীয়ত, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও ভর্তুকি বৃদ্ধি করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বল্প মূল্যে পণ্য সরবরাহে উৎসাহিত করতে হবে।

সরকারের উচিত হবে, বাজেট নীতিকে জনবান্ধব করে গড়ে তোলা। ধনীদের ওপর করের হার বৃদ্ধি ও গরিবদের ওপর করের বোঝা লাঘব করাই ন্যায়সংগত পন্থা। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ে বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে। রাষ্ট্রকে স্বীকার করতে হবে, রুটি-বিস্কুটের আকার সংকুচিত হলে শ্রমজীবী মানুষের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতি আরও সংকটে পড়ে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ দ যপণ য র পর ম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিসি ব্যাংকের ব্যাংকিং কার্যক্রম ৫ দিন বন্ধ

বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংকের সেবা কার্যক্রম ৫ দিন বন্ধ থাকবে। কোর ব্যাংকিং সিস্টেম (সিবিএস) আপগ্রেডেশনের জন‌্য এ সময় ব্যাংকের সব সেবা বন্ধ রাখা হবে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে।

সার্কুলারে বলা হয়, বিদ্যমান কোর ব্যাংকিং সিস্টেম (সিবিএস) আপগ্রেডেশন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন কর‌তে আগামী ৮ জুলাই (মঙ্গলবার) রাত থেকে ১৩ জুলাই (রবিবার) সকাল পর্যন্ত সব ব্যাংকিং (শাখা, উপশাখা, ডেবিট কার্ড, এটিএম, বিএসিপিএস, বিএফটিএন, আরটিজিএস, এনপিএসবি, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, সুইফট ইত্যাদি) কার্যক্রম সাময়িকভাবে বিরত থাকবে।

আরো পড়ুন:

উচ্চ ঝুঁকিতে ৩২ বিমা কোম্পানি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান

মঙ্গলবার ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এটিএম সেবা

ব্যাংকের আবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এই সাময়িক বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ