জন্মের পরপরই অনেক নবজাতকের শরীরে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়। সন্তান জন্মের পর জন্ডিস হলে মা–বাবা আতঙ্কিত হন। কিন্তু কেন এটা হয়?
গর্ভে থাকাকালীন শিশুর যে রক্তকণিকা থাকে, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সেসব রক্তকণিকা ভেঙে যেতে থাকে। রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ায় শরীরে হলুদ রঙের একটি রঞ্জক পদার্থ (বিলিরুবিন) তৈরি হয়। বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি হলে নবজাতকের চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যায়, একেই বলা হয় জন্ডিস।
স্বাভাবিকভাবে ৯০ শতাংশ নবজাতক সামান্য পরিমাণে জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে, যাকে শারীরবৃত্তীয় বা ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস বলা হয়। আরেকটি হলো মারাত্মক বা প্যাথলজিক্যাল জন্ডিস। মায়ের রক্তের গ্রুপ ও নবজাতকের রক্তের গ্রুপের অমিল থাকলে এ ধরনের জন্ডিস হয়। মায়ের রক্তের গ্রুপ যদি নেগেটিভ বা ‘ও’ গ্রুপের হয় আর নবজাতকের পজিটিভ, ‘এ’ বা ‘বি’ হয়, তাহলে জন্ডিস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এ ছাড়া নবজাতকের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, নবজাতকের লিভারে গঠনগত কোনো ত্রুটি থাকলে প্যাথলজিক্যাল জন্ডিস হতে পারে।
লক্ষণ
জন্ডিস যদি অল্প মাত্রায় হয়ে থাকে, তাহলে শিশুর চোখ ও মুখের ত্বক সামান্য হলুদ হতে পারে। জন্ডিস যত বেশি তীব্র হবে, তত শরীরের নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মাঝারি মাত্রার হলে বুক বা পেট হলুদ দেখায়। বেশি তীব্র হলে পায়ের নিচের দিকে ও হাতের তালু বা পায়ের তালুতে ছড়িয়ে পড়ে।
জন্ডিসের ফলে নবজাতকের পায়ের তালু বা হাতের তালুতে যদি হলুদভাব দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। জন্ডিস হওয়ার কারণে শিশু যদি নিস্তেজ হয়ে যায়, খিঁচুনি হয় বা শিশুকে ফ্যাকাশে দেখায়, তাহলেও জরুরি ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসা কী
শিশুর শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষায় যদি রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ার কোনো অস্বাভাবিক কারণ পাওয়া যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
শারীরবৃত্তীয় বা ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস মৃদু বা মাঝারি মাত্রায় হয়ে থাকলে তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কখনো কখনো শারীরবৃত্তীয় জন্ডিস মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে, তখন দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে ফটোথেরাপি দেওয়া প্রয়োজন।
প্যাথলজিক্যাল জন্ডিসেও দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটে ভর্তি করার পরপরই ফটোথেরাপি শুরু করতে হয়। এ ক্ষেত্রে আগেই রক্ত বদলের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে নবজাতককে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র বা এনআইসিইউতে রেখে জন্ডিসের ব্লু লাইট ডাবল সারফেস ফটোথেরাপি এবং কখনো কখনো রক্তবদলের প্রয়োজন হতে পারে।
অধ্যাপক ডা.
শাহীন আক্তার, নবজাতক ও শিশু–কিশোর রোগবিশেষজ্ঞ, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য ল জন ড স জন ড স র
এছাড়াও পড়ুন:
জোটার মৃত্যুতে স্তব্ধ রোনালদো, শোক জানালেন জামাল ভূঁইয়াও
মাত্র কিছুদিন আগেই জাতীয় দলের হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলেছেন। নেশন্স লিগ জয়ের উল্লাসে মাতিয়েছেন গোটা দেশ। অথচ আজ সেই সতীর্থ ডিয়োগো জোটা আর নেই। এই খবর কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
বৃহস্পতিবার স্পেনের জামোরা প্রদেশে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন লিভারপুল এবং পর্তুগাল জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড ডিয়োগো জোটা। দুর্ঘটনায় তার ভাই আন্দ্রে সিলভাও নিহত হয়েছেন, যিনি পর্তুগালের ক্লাব পেনাফিয়েলের হয়ে খেলতেন।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’র বরাতে জানা গেছে, জামোরা প্রদেশের সানাব্রিয়া অঞ্চলে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ে এবং মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
মাত্র দুই সপ্তাহ আগে দীর্ঘদিনের প্রেমিকা ও তিন সন্তানের জননী রুতে কারদোসোকে বিয়ে করেছিলেন জোটা। পরিবারের সঙ্গে নতুন জীবনের শুরু উদ্যাপন করতে গিয়েই ঘটে গেল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বিয়ের ছবি পোস্ট করেছিলেন জোটা ২৮ জুন, আর স্ত্রী রুতে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন বুধবার। এর পরপরই এলো জোতার মৃত্যুসংবাদ।
জোটার মৃত্যুতে শোকাহত রোনালদো সামাজিক মাধ্যমে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন। নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এর কোনো মানে হয় না। এতদিন একসঙ্গে ছিলাম জাতীয় দলে, এই তো মাত্র তোমার বিয়ে হলো। তোমার স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা। আমি জানি তুমি সবসময় তাদের সঙ্গে থাকবে। শান্তিতে ঘুমাও, ডিয়োগো এবং আন্দ্রে, আমরা সবাই তোমাদের খুব মিস করবো।’
শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও। নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘শান্তিতে থেকো দিয়োগো জোতা (১৯৯৬-২০২৫)। কদিন আগেই সে লিভারপুলের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে, আবার পর্তুগালের হয়ে জিতেছে নেশন্স লিগ। ভাইসহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে সে। খুব দুঃখজনক ঘটনা।’
রোনালদো ও জামালের মতোই স্তব্ধ বিশ্ব ফুটবল। ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা এক প্রতিভাবান ফুটবলারের এমন প্রস্থান বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই শোকের ছায়া নামিয়েছে।