জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় সমবায় সমিতির নামে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাসহ দুজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন একদল গ্রাহক। এর আগে তাঁদের গলায় জুতার মালা পরানো হয়। আজ রোববার এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ওই দুই ব্যক্তি হলেন মোকাদ্দেস আলী (৩৪) ও মিজানুর রহমান। মোকাদ্দেস আলী জামালপুর পৌর শহর শাখা জামায়াতে ইসলামীর আমির। তিনি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের মঈন উদ্দিনের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে জামালপুর শহরের শেখেরভিটা এলাকায় বসবাস করেন। তিনি মাদারগঞ্জের আল আকাবা সমবায় সমিতির ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ান এ ফ্যাশন’–এর ম্যানেজার। আর মিজানুর রহমান ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। তাঁর বাড়ি বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া গ্রামে। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে জামালপুর শহরের শেখেরভিটা এলাকায় বসবাস করেন।

আটক দুজনের বিরুদ্ধে ওই সমিতির গ্রাহক কামরুন্নাহার বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

২৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভবনের মধ্যে ওই দুজনকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁদের দুজনের গলায় জুতার মালা পরানো আছে। কেউ একজন তাঁদের ভিডিও করছিলেন। পাশ থেকে অনেকেই তাঁদের দুজনের কাছে টাকা চাচ্ছিলেন।

পুলিশ ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি বাজারে থাকা আল আকাবা সমবায় সমিতির অফিসের নিচতলায় সমিতির পরিচালিত ওয়ান এ ফ্যাশন নামের একটি দোকানের মালামাল সরানো হচ্ছিল। খবর পেয়ে সমিতির গ্রাহকেরা এ দুজনকে হাতেনাতে আটক করেন। পরে দোকানেই তাঁদের বেঁধে রেখে জুতার মালা পরানো হয়। গতকাল শনিবার রাতে তাঁদের দুজনকে থানায় সোপর্দ করা হয়। তবে এ সময়ের মধ্যে তাঁদের সঙ্গে সেখানে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ওই দুজনকে গতকাল রাতেই সমিতির গ্রাহকেরা থানায় সোপর্দ করেন। সমিতির এক গ্রাহক বাদী হয়ে ওই দুজনসহ আটজনের নাম ও তিন থেকে চারজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করেছেন। তাঁদের দুজনকে আজ আদালতে প্রেরণ করা হবে।

জামায়াতে ইসলামীর জামালপুর জেলা শাখার আমির আবদুস ছাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোকাদ্দেস আলী জামালপুর পৌর শহর শাখার আমির। তিনি ওই সমিতির কিছুই নন। ওই সমিতির পরিচালিত একটি দোকানের ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন। তাঁকে অন্যায়ভাবে আটক করে তাঁর সম্মানহানি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম দ রগঞ জ দ র দ জন প র শহর গ র হক উপজ ল দ জনক

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় তিন শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলি বাহিনী গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ২৬ জায়গায় ‘রক্তাক্ত গণহত্যা’ চালিয়েছে। এতে অন্তত তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

মিডিয়া অফিসের তথ্যানুসারে, গাজায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৩ জন নিহত হয়েছেন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত উদ্যোগ গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে।

এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসিতে একটি তাঁবুতে হামলা চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যা করেছে। পাশাপাশি গাজা শহরের পশ্চিমে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত মুস্তাফা হাফেজ স্কুলে হামলায় নিহত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেকে।

আরো পড়ুন:

গাজায় ‘গণহত্যার অর্থনীতি’ থেকে লাভবান মাইক্রোসফট-অ্যামাজনসহ যত কোম্পানি

ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গত ৪৮ ঘণ্টার অভিযানে আশ্রয়কেন্দ্র, উদ্বাস্তু ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল, বাজার, পরিবারিক ঘরবাড়ি, জরুরি খাদ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

দেইর আল-বালাহ থেকে আলজাজিরার রিপোর্টার তারেক আবু আজযুম জানান, “আমি এমন অনেক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি যারা ত্রাণ নিতে গিয়ে বেঁচে ফিরেছেন। তারা বলছিলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের হঠাৎ কোনো সতর্কতা ছাড়াই গুলিবর্ষণে ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়। এখানে চারদিকে আতঙ্ক, চিৎকার এবং মরদেহ- সবমিলিয়ে একটি বিভীষিকাময় দৃশ্য।”

তিনি আরো জানান, গোলাগুলির ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, চিকিৎসাকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, জিএইচএফ পরিচালিত বিতরণকেন্দ্রগুলোতে মোতায়েন করা বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা ক্ষুধার্ত মানুষদের লক্ষ্য করে বুলেট ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করছেন।

 

এপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দুজন মার্কিন কন্ট্রাক্টর নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন, তারা এই মিশনের অব্যবস্থাপনা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে মর্মাহত হয়ে মুখ খুলেছেন। তাদের দাবি, যেসব নিরাপত্তা কর্মীকে ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের অনেকেই অযোগ্য, যাচাই ছাড়াই আনা হয়েছে আর তারপরও তাদের ভারী অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে এবং দেখে মনে হয়েছে, তারা যা ইচ্ছা তাই করার উন্মুক্ত লাইসেন্স নিয়ে এসেছেন।

মঙ্গলবার অক্সফাম, সেইভ দ্য চিলড্রেন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো ১৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা জিএইচএফ-কে অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। জিএইচএফ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার সুবিধা করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এসব বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ।

এনজিওগুলো বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ‘নিয়মিতভাবে’ খাবারের জন্য ঘুরতে থাকা বেসামরিকদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।

মে মাসের শেষ দিক থেকে গাজায় জিএইচএফের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৪০০০ জন আহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় এ পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৬৪৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ৩৪ হাজার ১০৫ জন আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ