পরিস্থিতি তৈরি করে ভিডিও ধারণ করে চাঁদাবাজি করা হয়, দাবি রাবি শিক্ষকের
Published: 18th, May 2025 GMT
ব্যক্তিগত চেম্বারে নারী শিক্ষার্থীসহ ‘আটকের’ ঘটনা সাজানো বলে দাবি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক, দুই সাংবাদিকসহ চারজন পরিস্থিতি তৈরির পর ভিডিও ধারণ করে তিন লাখ টাকার বেশি চাঁদাবাজি করেছেন। এই টাকা নেওয়ার পর তারা আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেন। পরে সেই টাকা না পেয়ে তারা ভিডিওটি ভাইরাল করে দেয় বলে দাবি করেন তিনি।
রোববার দুপুরে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে হেদায়েত উল্লাহ বলেন, একটি একাডেমিক পড়া বুঝার জন্য ১১ মে বিকেলে ওই ছাত্রী আমার কক্ষে আসেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আমার কক্ষে চারজন প্রবেশ করেন। তারা আমার ছাত্রীর প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। হুমকি দিয়ে একটা পরিস্থিতি তৈরি করে সেখানে ভিডিও ধারণ করা হয়। তখনই ওই চারজন পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। তারা প্রস্তাব দিতে থাকেন, ওই ছাত্রীকে আমার চেম্বারে রেখে যেন আমি টাকা তুলে নিয়ে আসি। ওই চারজন আমাকে ও আমার ছাত্রীকে জিম্মি করে নানা রকম হুমকি দিতে থাকেন। ভিডিও করে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। পরে ওইদিন আমি এক লাখ টাকা দেই তাদের। ওই সময় মানিব্যাগে থাকা আরও আড়াই হাজার টাকা নিয়ে নেন ওই চারজন।
তিনি আরও বলেন, ওই ছাত্রীর মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী আমার চেম্বারে আসেন পড়াশোনা বুঝার জন্য। কিন্তু তারা যদি ওই ছাত্রীর ক্ষতি করে ফেলেন, এই ভয়ে আমি টাকা দিই। তাছাড়া তারা আমার মুঠোফোনও নিয়ে নেন তখন। এক লাখ আড়াই হাজার টাকা নেওয়ার পর আমার সঙ্গে ওই চারজন বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করতে থাকেন। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা ও ফোন দিতে থাকেন। ক্ষুদেবার্তা ও কলরেকর্ড আছে আমার কাছে। পরদিন তারা আরও দুই লাখ টাকা নিয়ে যান। আজ আরও দুই লাখ টাকা নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন তারা। সব তথ্য সংগ্রহ করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান হেদায়েত উল্লাহ।
ওই শিক্ষকের ভাষ্যমতে, এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মো.
গত ১১ মে সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে ফাইনান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. হেদায়েত উল্লাহর চেম্বারে এক নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে আটক করেন অভিযুক্তরা। এই ঘটনার ৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ১৪ মে ফেসবুকে ভাইরাল হয়, যা ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে ঘটনার নিন্দা জানায় এবং দুজনের শাস্তির দাবি করে। এর মধ্যে গত শুক্রবার বিভাগের একাডেমিক কমিটি অধ্যাপক ও ছাত্রী উভয়কে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। একই দিন বিকেলে ওই নারী শিক্ষার্থী মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। এতে ৩ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও হেনস্তার অভিযোগ তুলেন। পরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ায় ১৭ মে নারী শিক্ষার্থী ও দুই সাংবাদিক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন।
ওই নারী শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি একটা টিউটোরিয়াল পরীক্ষার কিছু পড়াশোনা বুঝে নেওয়ার জন্য গত ১১ তারিখ বিকেলে স্যারের কক্ষে যাই। স্যারের কক্ষে প্রবেশ করার কিছু সময় পরেই চারজন স্যারের কক্ষে প্রবেশ করেই আমার গায় হাত তোলে এবং শরীর থেকে ওড়না পড়ে যায়। এতে আমি বিব্রত হয়ে পড়ি এবং টেবিলের আড়ালে লুকিয়ে পড়ি। তবুও তারা আমাকে হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় তাদের হুমকিতে স্যার তাদের জিজ্ঞাসা করে ‘বসো আমরা আলোচনা করি।’ তখন তারা এই ঘটনা আড়াল করতে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। তবে স্যার এত টাকা একসঙ্গে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা হুমকি-ধামকি চালিয়ে যায়। একপর্যায়ে ওই দিন রাতেই স্যার তাদের এক লাখ টাকা এটিএম থেকে তুলে এবং নিজের মানিব্যাগ থেকে আড়াই হাজার টাকা দেন। এর পরদিন সুমন এবং সাকিব এসে আরও দুই লাখ টাকা নেয়। এ ঘটনায় আগামী ১৮ মে তাদের আরও ২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল।’
এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এতগুলো টাকা নেওয়ার পরেও বিকৃতভাবে আমার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সকল ঘটনায় আমি একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছি। তবে সে জায়গা থেকে ফিরে এসে আমি আইনের আশ্রয় নিতে থানায় একটি অভিযোগ করেছি। এ ঘটনায় জড়িত সকলের আমি বিচার চাই।’
অন্যদিকে এ ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন দুই সাংবাদিক। লিখিত বক্তব্যে কালবেলার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘গত ১১ মে সন্ধ্যার দিকে আমরা একজন স্যারের সূত্রে জানতে পারি, হেদায়েত উল্লাহ স্যার তার চেম্বারে এক ছাত্রীসহ অবস্থান করছেন। এতে আমরা প্রক্টর স্যারের অনুমতিক্রমে সেখানে গিয়ে দেখি কক্ষের লাইট বন্ধ। পরে আমরা দরজায় নক করলে কিছুক্ষণ পর স্যার নিজেই দরজা খুলে দেন। কক্ষের ভেতর আমরা স্যারের সঙ্গে কথা বলার সময় দেখি, টেবিলের নিচে ওই নারী শিক্ষার্থীকে লুকিয়ে আছেন।’
সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, ‘পরে স্যার নিজেই ছাত্রীকে টেবিলের নিচ থেকে বের করে আনেন। এ সময় ওই শিক্ষার্থী সংবাদ প্রকাশিত হলে ‘আত্মহত্যা’ করবেন এমন হুমকি দেন। এতে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা প্রক্টর স্যারকে কল করি বিষয়টি জানানোর জন্য। তবে হেদায়েত উল্লাহ স্যারের অনুরোধে আমরা প্রক্টর স্যারকে বিস্তারিত বলিনি। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে ভিডিও বা সংবাদ প্রকাশ করা হয়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি আমরা উপাচার্য স্যারকে জানাই এবং উপাচার্য আমাদের একটি লিখিত অভিযোগ লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলেন।’
চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে একটি অজ্ঞাত সোর্সের মাধ্যমে ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আমরা লক্ষ্য করি, উক্ত শিক্ষক ও ছাত্রী কর্তৃক আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেখানে আমাদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর গুজব ছড়ানো হয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের সঙ্গে ওই শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল কেবলমাত্র একটি অনৈতিক ঘটনার যথাযথ প্রতিবাদ ও প্রশাসনকে অবহিত করা।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আরও দ ই ল খ ট ক হ দ য় ত উল ল হ এক ড ম ক ওই ছ ত র পর স থ ত ই চ রজন এ ঘটন য় আম দ র র জন য র একট ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরায় ৩৫ সাংবাদিক নিয়ে বাস খাদে
সাতক্ষীরার তালায় গতকাল রোববার বিকালে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার মির্জাপুর বাজার সংলগ্ন ইসলামকাঠির মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ওই বাসে ৩৫ জন সাংবাদিক ছিলেন। তারা সুন্দরবন সফর শেষে ঢাকায় ফিরছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৭ মে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সংবাদ কাভার করার জন্য ঢাকা থেকে ৩৫ জন সাংবাদিক সাতক্ষীরা এসেছিলেন। পরে তারা সুন্দরবন সফরে যান। সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তাদের বহনকারী বাসটি তালার ইসলামকাঠির মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। এ সময় বাসে থাকা অনেকে কমবেশি আহত হন। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাস্তার খারাপ অবস্থা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পাটকেলঘাটা থানা পুলিশ ও তালা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান।
পাটকেলঘাটা থানার ওসি মো. মাইন উদ্দীন জানান, দুর্ঘটনায় বাসটি উল্টে গেলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।