কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণার জেরে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। কয়েক দিন ধরে কমিটির পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল হয়েছে নগরীতে। জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছেন পদবঞ্চিতরা। বর্তমানে মুখোমুখি অবস্থানে পদধারী ও পদবঞ্চিত পক্ষ দুটি। যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি করা হয়। গত ১৫ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ৬ ও ১৩ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটিতে কাজী জোবায়ের আলম জিলানীকে সভাপতি ও এমদাদুল হক ধীমানকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল এবং নাহিদ রানাকে সভাপতি ও ফায়াজ রশিদ প্রিমুকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি দুটি গঠন করা হয়। এই খবর জানাজানি হলে ১৫ মে রাতে পদবঞ্চিতরা বিক্ষুব্ধ হয়ে নেমে পড়েন নগরীর সড়কে। তাদের মুখে মুখে প্রতিবাদী স্লোগান ছিল– ‘অবৈধ পকেট কমিটি মানি না, মানব না।’ এর পর নগরীর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। বিক্ষোভ শেষে নগরীর পূবালী চত্বরের সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এদিকে নবগঠিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে নগরীতে আনন্দ মিছিল বের করে জেলা ও মহানগর ছাত্রদল। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে নগরীতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে গত শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা ফের বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে মহানগর এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তারা।

মহানগর ছাত্রদলের একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, নির্যাতিত ও ত্যাগী কর্মীদের কাঙ্ক্ষিত পদ দেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, দলের ২৭টি ওয়ার্ড এবং কোনো কলেজ শাখা থেকে নেতাকর্মীকে সদস্য রাখা হয়নি। মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন আজমীর হোসেন শরীফ। তাঁকে রাখা হয়েছে ৪ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক পদে। আজমীর বলেন, যারা জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের এই কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়নি। দলে কোনো অবদান ও পরিচিতি নেই এমন কর্মীদের শীর্ষ পদ দেওয়া হয়েছে। বিতর্কিত এই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন চলবে।
মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন মো.

মহসিন। তাঁকে কোনো পদে রাখা হয়নি। পদবঞ্চিত এই নেতা জানান, গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের আমলে যারা আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ছাত্রদলের নবগঠিত মহানগর ও দক্ষিণ জেলা কমিটিতে তাদের ঠাঁই হয়নি। জেলা কমিটির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ জানান, তিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। তাঁকে কমিটিতে রাখা হয়নি।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নবগঠিত মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ রানা। তাঁর ভাষ্য, যারা পদবঞ্চিত দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করছেন, তাদের কেউ কেউ কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে বিদ্রোহ করছেন। জেলা ও মহানগরে ডজনের অধিক ছাত্রনেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে সবাই যোগ্য, সংগ্রামী ও ত্যাগী। কিন্তু সবাইকে তো আর ওই দুটি পদে রাখা সম্ভব নয়। দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দিয়েই মহানগর এবং দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
মহানগর ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটির কাছে দাবি করেছিলাম নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড এবং ১২টি কলেজের নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সম্মেলন করে মহানগরের কমিটি ঘোষণা করার। কিন্তু তা করা হয়নি। এতে বিগত সরকারের সময়ে জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীরা দলে কাঙ্ক্ষিত পদ পেলেন না। আশা করি, কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।’
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুর ভাষ্য, বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা। এটি নিঃসন্দেহে বিএনপির ভেতরে অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট চক্রের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। এ ঘটনা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, বরং দলের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশকারী সুযোগসন্ধানী চক্রের আসল পরিচয় তুলে ধরেছে। তিনি বলেন, এই অপশক্তিকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ত কর ম র য় ছ ত রদল পদবঞ চ ত ব এনপ র কম ট ত কম ট র ক কম ট গঠন ক নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

জামালপুরে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে অসন্তোষ, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

জামালপুর জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ‘পদবঞ্চিত’ নেতা-কর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গেটপাড় এলাকায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।

গতকাল রাতে আতিকুর রহমানকে সভাপতি ও শফিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে জামালপুর জেলা ছাত্রদলের ১০ সদস্যের একটি আংশিক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সই আছে।

গতকাল রাতে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা শহরের গেটপাড় এলাকায় জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়সংলগ্ন প্রধান সড়কে ইট ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের দুই পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৩০ মিনিট পর তাঁরা সড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, জেলা ছাত্রদলের এবারের কমিটিতে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম। তাঁকে নতুন কমিটিতে না রাখায় তাঁর অনুসারীরাই এ বিক্ষোভ করেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মঞ্জুরুল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

নতুন কমিটির সভাপতি আতিকুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন কমিটি এলে দুই-একজন সেখানে পদবঞ্চিত হবেন—এটাই তো স্বাভাবিক। তবে তাঁরাও কষ্ট করেছেন। তাঁরা গেটপাড় এলাকায় ছোটখাটো বিক্ষোভ করেছেন। কিন্তু কমিটির পক্ষে সারা শহরে আনন্দমিছিল হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুমিল্লায় এবার বিএনপির অব্যবহৃত কার্যালয়ে আগুন দিলেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা
  • কুমিল্লায় বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ
  • কুমিল্লায় পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের বিক্ষোভ, বিএনপি কার্যালয়ে আগুন
  • কুমিল্লায় বিএনপি কার্যালয়ে আগুন
  • কুমিল্লায় বিএনপি অফিসে আগুন দিল ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা
  • কুমিল্লায় সময় টিভির সাংবাদিকের ওপর হামলা
  • জামালপুরে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে অসন্তোষ, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ