স্থানীয়ভাবে শিল্পের উন্নয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর ক্লাউড পরিষেবার চাহিদা বাড়ছে। এমন ধারণা থেকেই বাংলাদেশ একাডেমিতে ক্লাউড টেকওয়েভ শিরোনামে কর্মশালার উদ্যোগ নেয় উদ্ভাবনী সেবাদাতা। হুয়াওয়ের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ দল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ক্লাউড প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও বিগ ডেটা বিষয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করে। এতে বক্তব্য দেন হুয়াওয়ের সিনিয়র সল্যুশন আর্কিটেক্ট নিও জিন শেং ক্যাসন, সিনিয়র প্রোডাক্ট ম্যানেজার সান বিং ও ক্লাউড সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার জিয়াং ঝেং।
কর্মশালায় ডেটাবেজ, এআই কনটেইনার ও ল্যান্ডিং জোন, বিগ ডেটা, সিকিউরিটি, পিএএএস বিষয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। ক্লাউড ও এআই খাতের পেশাজীবীর দক্ষতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের আধুনিকায়নের জন্য বিশেষ প্রয়োজন।
হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়ার বোর্ড মেম্বার হ্যাভেন লিন বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত আধুনিকায়নের পথে এগোচ্ছে। অগ্রগতির যাত্রায় ক্লাউড ও এআই প্রযুক্তির ভূমিকা রয়েছে, যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য জরুরি। আমরা দেশের আইসিটি অবকাঠামোকে গুণগত করতে প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পে উদ্ভাবনমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে কাজ করব।
ফ্লোরা টেলিকমের সিডিও শামসুল আলম নিজামী বলেন, ক্লাউড ও এআই প্রযুক্তির সর্বশেষ উদ্ভাবনা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। ফলে আমরা আইসিটি অবকাঠামোতে ক্লাউড ইন্টিগ্রেশনের বিষয়ে ভাবতে পারব। বাংলাদেশে ক্লাউড প্রযুক্তির চাহিদা সময়ের সঙ্গে দ্রুত বেড়ে চলেছে।
ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের ক্লাউড মার্কেটের পরিধি ৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ভবিষ্যতের সব ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এআই ও ক্লাউডভিত্তিক সমাধান যুক্ত করায় প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাবে।
৩০ বছরের আইসিটির অভিজ্ঞতা, সর্বাধুনিক পণ্য
ও পরিষেবা নিয়ে ক্লাউড ২০২৩ গার্টনার ম্যাজিক কোয়াড্রেন্ট ছাড়াও বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থার
স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এশিয়া প্যাসিফিক পাবলিক ক্লাউড মার্কেট গত চার বছরে
২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হাইব্রিড ক্লাউড সেগমেন্টে চাহিদা বেড়েছে।
হাইব্রিড ক্লাউড সেগমেন্টে থাকা হুয়াওয়ে
ক্লাউড স্ট্যাক থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ও হংকংয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রথম ই-গভর্নমেন্ট ক্লাউড বিসিসি ও রবির জন্য প্রথম হাইব্রিড ক্লাউড সচল রয়েছে। বর্তমানে ব্র্যান্ডটি ভবিষ্যতের ক্লাউড আর এআই পরিষেবার সমাধানে কাজ করছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ষ ব
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান