কারাগারে বম যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ
Published: 19th, May 2025 GMT
কারাগারে লাল ত্লেং কিম বমের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা বম নারী ও শিশুসহ সম্প্রদায়টির আটক অন্যান্য সদস্যদের মুক্তি এবং চিংমা খেয়াংকে ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
রোববার ‘সম্মিলিত আদিবাসী ছাত্র সমাজ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এর আগে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে বম ছাত্র প্রতিনিধি রিচার্ড বম অভিযোগ করেন, তিন বছর ধরে বম জনগোষ্ঠীকে একপ্রকার নজরবন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের অভিযানের নামে পুরো বম জনগোষ্ঠীকে হয়রানি করা হচ্ছে। তাদের অনেক সদস্যকে বিনা বিচারে বছরের পর বছর কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। আপনারা কিসের স্বার্থ রক্ষা করতে চান সেটা আমার প্রশ্ন?
সংহতি জানিয়ে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।
নুমং মারমা বলেন , পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে সারা বাংলার অগ্রগতি সম্ভব নয়। সুতরাং এই সরকারকে বলতে চাই, অনতিবিলম্বে পাহাড়ের সকল সমস্যার সমাধান করুন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা। সমাবেশে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার সংহতি জানিয়েছে।
২০২৪ সালের ২ ও ৩ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বম সম্প্রদায়ের কিছু নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের বান্দরবান ও চট্টগ্রাম কারাগারে রাখা হয়েছে। গত ১৫ মে চট্টগ্রাম কারাগারে লাল ত্লেং কিম বম (৩০) অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় তিন শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
ইসরায়েলি বাহিনী গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ২৬ জায়গায় ‘রক্তাক্ত গণহত্যা’ চালিয়েছে। এতে অন্তত তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
মিডিয়া অফিসের তথ্যানুসারে, গাজায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৩ জন নিহত হয়েছেন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত উদ্যোগ গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে।
এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসিতে একটি তাঁবুতে হামলা চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যা করেছে। পাশাপাশি গাজা শহরের পশ্চিমে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত মুস্তাফা হাফেজ স্কুলে হামলায় নিহত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেকে।
আরো পড়ুন:
গাজায় ‘গণহত্যার অর্থনীতি’ থেকে লাভবান মাইক্রোসফট-অ্যামাজনসহ যত কোম্পানি
ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গত ৪৮ ঘণ্টার অভিযানে আশ্রয়কেন্দ্র, উদ্বাস্তু ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল, বাজার, পরিবারিক ঘরবাড়ি, জরুরি খাদ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
দেইর আল-বালাহ থেকে আলজাজিরার রিপোর্টার তারেক আবু আজযুম জানান, “আমি এমন অনেক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি যারা ত্রাণ নিতে গিয়ে বেঁচে ফিরেছেন। তারা বলছিলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের হঠাৎ কোনো সতর্কতা ছাড়াই গুলিবর্ষণে ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়। এখানে চারদিকে আতঙ্ক, চিৎকার এবং মরদেহ- সবমিলিয়ে একটি বিভীষিকাময় দৃশ্য।”
তিনি আরো জানান, গোলাগুলির ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, চিকিৎসাকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, জিএইচএফ পরিচালিত বিতরণকেন্দ্রগুলোতে মোতায়েন করা বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা ক্ষুধার্ত মানুষদের লক্ষ্য করে বুলেট ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করছেন।
এপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দুজন মার্কিন কন্ট্রাক্টর নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন, তারা এই মিশনের অব্যবস্থাপনা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে মর্মাহত হয়ে মুখ খুলেছেন। তাদের দাবি, যেসব নিরাপত্তা কর্মীকে ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের অনেকেই অযোগ্য, যাচাই ছাড়াই আনা হয়েছে আর তারপরও তাদের ভারী অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে এবং দেখে মনে হয়েছে, তারা যা ইচ্ছা তাই করার উন্মুক্ত লাইসেন্স নিয়ে এসেছেন।
মঙ্গলবার অক্সফাম, সেইভ দ্য চিলড্রেন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো ১৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা জিএইচএফ-কে অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। জিএইচএফ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার সুবিধা করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এসব বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ।
এনজিওগুলো বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ‘নিয়মিতভাবে’ খাবারের জন্য ঘুরতে থাকা বেসামরিকদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।
মে মাসের শেষ দিক থেকে গাজায় জিএইচএফের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৪০০০ জন আহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় এ পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৬৪৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ৩৪ হাজার ১০৫ জন আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ