গাজায় সীমিত পরিমাণে খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেবে ইসরায়েল
Published: 19th, May 2025 GMT
গাজা উপত্যকা ১০ সপ্তাহ অবরোধ করে রাখার পর সেখানে সীমিত পরিমাণে খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। গাজায় ‘যাতে দুর্ভিক্ষ দেখা না দেয়’ তা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সুপারিশক্রমে এবং হামাসের বিরুদ্ধে তাদের নতুন সামরিক অভিযানে সহায়তার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নতুন করে গাজাজুড়ে বিস্তৃত স্থল অভিযান শুরু করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার এ ঘোষণা এল।
গাজা থেকে অবরোধ তুলে নিতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছিল। অবরোধ চলাকালে গাজায় কোনো খাদ্য, জ্বালানি বা ওষুধ ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল।
ইসরায়েলি অবরোধের পর বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা থেকে গাজার ২১ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছে, বিশেষ করে অপুষ্টিতে ভোগা অস্থিচর্মসার শিশুদের ছবি ও বিবরণ প্রকাশ্যে আসা শুরু হলে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বাহো ইসরায়েলকে গাজায় ‘তাৎক্ষণিক, ব্যাপক ও বাধাহীনভাবে’ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে বলেছেন।
বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা থেকে গাজার ২১ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছে, বিশেষ করে অপুষ্টিতে ভোগা অস্থিচর্মসার শিশুদের ছবি ও বিবরণ প্রকাশ্যে আসা শুরু হলে।ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েল গাজার জনগণের জন্য সীমিত পরিমাণ খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেবে, যাতে দুর্ভিক্ষের মতো কোনো সংকট সৃষ্টি না হয়।
এমন একটি (দুর্ভিক্ষের) পরিস্থিতি তাদের নতুন অভিযান ‘অপারেশন গিডেয়ন চ্যারিয়ট’কে ঝুঁকির মুখে ফেলবে বলেও ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
হামাস যেন গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
কয়েক দিন ধরে গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। গতকাল রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে একটি হাসপাতালসহ কয়েকটি স্থানে হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করেছে, গাজায় জিম্মিদের মুক্ত করা এবং হামাসকে পরাজিত করাই তাদের লক্ষ্য।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ জন নিহত এবং ৩৬১ জন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলের হামলায় এক রাতেই নিহত ৫১১৪ মে ২০২৫আরও পড়ুনগাজায় নিহত ৫৩ হাজার ছাড়াল ১৬ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫