বগুড়ার সোনাতলার গোসাইবাড়ি এলাকার রাস্তার মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে রাস্তা সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। তাতে দুর্ভোগ বাড়ছে ও দুর্ঘটনা ঘটছে। এদিকে খুঁটিটি সড়ানোর জন্য এলাকাবাসী ধরনা দিলে বিদ্যুৎ বিভাগ ও এলজিইডি বিভাগ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। এক বিভাগ আরেক বিভাগের ওপর এ দায় চাপাচ্ছে।

সোনাতলা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে জোড়গাছা ইউনিয়নের গোসাইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গোসাইবাড়ী কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত ৩০০ মিটার এই রাস্তা সম্প্রতি কার্পেটিং করা হচ্ছে। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার মাঝখানে বিদ্যুৎ খুঁটি রেখেই সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তাটি সংস্কার কাজ করা হলেও খুঁটিটি সরানো হয়নি। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার মাঝখানে খুঁটি রেখে রাস্তা সংস্কার করায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে করে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত প্রায় সাত বছর আগে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি সিমেন্টের বৈদ্যুতিক খুঁটিটি স্থাপন করে। খুঁটিটি স্থাপনের পর থেকে ওই সড়ক দিয়ে সব ধরনের পরিবহণ ও পথচারীদের চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি রাতের অন্ধকারে ঘটছে দুর্ঘটনা। পল্লি বিদ্যুৎ সমিতিতে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে খুঁটিটি স্থানান্তরের আবেদন করেও কোনো ফল হয়নি।

স্থানীয়দের মধ্যে আব্দুল হান্নান বলেন, বৈদ্যুতিক এই খুঁটির কারণে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ খুঁটিটি সরাতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। রাস্তার মাঝখানে খুঁটি রেখেই রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে।

রাস্তার ঠিকাদার সাব্বির আহম্মেদ বলেন, রাস্তার কাজের মধ্যে খুঁটি সরানোর কোনো অর্থ বরাদ্দ ছিল না। এটা বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ তাই বিদ্যুৎ বিভাগকে বলার পরেও খুঁটি না সরানোয় ওই অবস্থায় কাজ করতে হচ্ছে।

সোনাতলা পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম সাইফুল আহম্মদ বলেন, এলজিইডি’র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমাদেরকে কোন কিছু এখনও জানানো হয়নি। জানালে খুঁটিটি অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে। সেক্ষেত্রে খুঁটিটি স্থানান্তরের জন্য আর্থিক বিষয় রয়েছে। যে প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাটি কার্পেটিং হচ্ছে সেই প্রকল্প থেকে খুঁটিটি স্থানান্তরের ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।

সোনাতলা উপজেলা প্রকৌশলী আতিকুর রহমান তালুকদার বলেন, যে প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাটি কার্পেটিং হচ্ছে, সেখানে খুঁটি স্থানান্তরের কোনো অর্থ ধরা হয়নি। খুঁটিটি স্থানান্তর করতে হলে স্থানীয়দের এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নুসরাত ফারিয়া গ্রেপ্তার, শিল্পীদের ‘বিব্রত’ প্রতিবাদ

একটি মেয়ের মুখে ছিল আলোর রেখা। সে পর্দায় কথা বলত, সংলাপে হাসত, কাঁদলে দর্শক ভুলে যেত ওটা অভিনয়। চলচ্চিত্রের আলোকিত জগতের সেই মেয়েটিকে ভক্তরা ‘নুসরাত ফারিয়া’ নামে চেনেন। সম্প্রতি তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উত্তাল। না, কোনো সিনেমায় অভিনয়ের জন্য নয়, গতকাল রবিবার দুপুরে আকাশ ছোঁয়ার ঠিক আগমুহূর্তে তাকে আটকে দেওয়া হয়। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি তিনি। সোমবার আদালতের নির্দেশে এই নায়িকাকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। 

দেশের একদিকে রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রবাহ, অন্যদিকে শৈল্পিক সমাজে এ ঘটনায় অস্বস্তির ঢেউ। শিল্পের মানুষগুলো বিব্রত। তাদের অনেকেই জুলাই আন্দোলনের সময় যেমন সোচ্চার ছিলেন, এবারও তেমনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা কেউ রাজনীতিক নন। তারা শিল্পী। কাজ করেন পর্দায়, কাগজে, কণ্ঠে। এসব তারকা ও কলাকুশলীরা ফারিয়াকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। 

হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ‘বিব্রতকর’ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সোমবার (১৯ মে) বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

সেখানে তিনি লেখেন, “আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে, আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুই দিন পর সেখানেই ফিরে যাবো। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকলো আমাদের জন্য।” 

নির্মাতা আশফাক নিপুণ কথা না ঘুরিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এভাবেই দিনে দিনে প্রকৃত খুনি ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল করতে অন্যদের সফট টার্গেট করা হয়ে আসছিল এবং করা হচ্ছে। এটাকে আর যাই হোক, সংস্কার বলে না সরকার। হত্যাচেষ্টার যে মামলা করা হলো এবং যে হত্যার সময় তিনি দেশেই ছিলেন না, সেই অভিনেতা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে প্রেরণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ইঙ্গিতই দেয়। আমরা জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার চাইছিলাম। কোনো রকম প্রহসন চাই নাই, এখনো চাই না। চিহ্নিত অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়া বা পালাতে দেওয়া এবং ঢালাও গায়েবি মামলাবাজির নাটক বন্ধ করেন।”

আজমেরী হক বাঁধন ফেসবুকে লিখেছেন, “কি এক লজ্জা! ফ্যাসিস্ট সরকার যা করেছে, সেখানে এই মেয়েটির কিছুই করার ছিল না... এটা অগ্রহণযোগ্য।”

অভিনয় কি অপরাধ? প্রশ্ন তুলেছেন খায়রুল বাশার। ছোটপর্দার পরিচিত মুখ খায়রুল বাশার ক্ষোভ নিয়ে বলেন, “সে অভিনেত্রী। রাজনীতি করেন না। তাহলে সিনেমায় একটি চরিত্রে অভিনয়ের দায়ে কেন তাকে হেনস্তা করা হলো? সরকারি আয়োজনে কোনো শিল্পী অংশ নিলে, ভবিষ্যতে যদি অন্য সরকার তাকে দোষারোপ করে তবে শিল্পীরা কোথায় দাঁড়াবে?”

“চলচ্চিত্রে অভিনয় করে কেউ দোসর হয় না” বলেছেন পরিচালক শিহাব শাহীন। সহজ বক্তব্য এই পরিচালকের “নুসরাত ফারিয়াকে আজগুবি মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে।”

তার এই পোস্টে একজন মন্তব্যে লেখেন, ‘তিনি স্বৈরাচারের দোসর।’ জবাবে শিহাব লেখেন, “একটি সিনেমায় অভিনয় করলেই কেউ দোসর হয়ে যায় না।”

 তরুণ র‍্যাপার তাবীব মাহমুদ মনে করিয়ে দেন— “নুসরাত ফারিয়া কোনো সহিংসতা চালাননি, তিনি কোনো মিছিলেও ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক মেয়ের ভেতরেই একেকজন হাসিনা আছেন।’ যেহেতু তিনি শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তাই আবেগে বলেছেন। তিনি বুঝতে পারেননি শিল্পীদের কোনো রাজনীতিতে ঘেঁষতে নেই।’’

তার এমন পোস্টে কেউ হেসেছেন, কেউ প্রশংসা করেছেন।

অভিনেতা-পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবন ক্ষোভ চাপতে পারেননি। তিনি লিখেছেন, “ফারিয়ার জায়গায় আমিও হতে পারতাম। শিল্পীদের ডাকলে তারা যাবে— এটাই তো স্বাভাবিক। এখন কি আমরা সেই ডাককেও ভয় পাবো?’’

ঢাকা/রাহাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ