উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর অধিকার অবজ্ঞা করে দেশে বৈষম্যহীন সমাজ গড়া সম্ভব না বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, সংবিধানের প্রতিশ্রুতি হলো শোভন জীবনযাপন নিশ্চিত করা। যা থেকে উর্দুভাষীরা বঞ্চিত।

‘বাংলাদেশ উর্দুভাষী অধিকার আন্দোলন’ এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সংগঠনটির সভাপতি মাজিদ ইকবালের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সংগঠক সুজিত চৌধুরী, ইউএসপিওয়াইআরএম-এর সভাপতি সাদাকাত খান ফাক্‌কু, ব্লাস্টের প্রতিনিধি আহমেদ ইব্রাহিম, রিবের অ্যাডভোকেট রুহি নাজ, এএলআরডির অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ সিরাজী প্রমুখ। সভায় সংগঠনের সভাপতি মাজিদ ইকবাল এবং সাধারণ সম্পাদক মেহনাজ আক্তার সংগঠনটির ঘোষণাপত্র ও দাবিনামা যৌথভাবে তুলে ধরেন।

সভায় আনু মুহাম্মদ বলেন, বাঙালি-বিহারী বিভাজন সৃষ্টি করে লুটপাটের কৌশল তৈরি করে শাসকগোষ্ঠী যার নির্মম শিকার উর্দুভাষীরা। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারও বিহারী জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করেছে। যার চূড়ান্ত পরিণতি আমরা দেখেছি একাত্তর সালে।

উর্দুভাষী অধিকার আন্দোলনের ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সালে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসবাসরত সকল উর্দুভাষী বাংলাদেশিদেরকে বাংলাদেশের নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। সুনাগরিক হিসেবে তারা ভোটাধিকার অধিকার পান। সে ভোটাধিকার তারা স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে প্রয়োগ করেছেন।

দেশের তিন লাখ উর্দুভাষী ঢাকাসহ দেশের ৯টি জেলায় ১১৬টি ক্যাম্পে আধুনিক সকল মৌলিক মানবিক সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও তাদের পুনর্বাসন না করার কারণে তারা ক্যাম্পে এক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ক্যাম্পের পরিধি বাড়লেও এখানে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে ছোট একটা রুমের ভেতর বাস করতে হচ্ছে কয়েক প্রজন্মকে।

এসময় ঘোষণাপত্রের পাশাপাশি আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষীদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে মর্যাদাপূর্ণ পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে, পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত কোনো ক্যাম্প উচ্ছেদ করা যাবে না এবং ক্যাম্পের সকল যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, সরকারি চাকরি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর অভিগম্যতার ব্যবস্থা করতে হবে, নিরাপদ খাবার পানির এবং স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে, ক্যাম্পের জনাকীর্ণ-অস্বাস্থ্যকর এবং নোংরা পরিবেশ থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে, ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষীদের সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে, সরকারিভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থা করে চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করতে হবে, ক্যাম্পে সংলগ্ন সরকারি বিদ্যালয় স্থাপনের করে ক্যাম্প উপযোগী বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব যবস থ বসব সরত জনগ ষ ঠ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে কেউ পরাজিত হননি, সবাই বিজয়ী হয়েছেন: চাকসুর নতুন ভিপি

চাকসুর ভিপি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেছেন, ‘এ নির্বাচনে কেউ পরাজিত হননি। সবাই বিজয়ী হয়েছেন। আমরা এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমরা নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীকে সৃজনশীল চিন্তা প্রকাশ করতে দেখেছি। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় চাকসু সারা দেশে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে ক্যাম্পাসে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মো. ইব্রাহিম হোসেন।

ইব্রাহিম বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের প্রতি। তাঁরা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমরা তাঁদের কাছে গিয়েছি। তাঁদের কথাগুলো জানার চেষ্টা করেছি। তাঁরাও আমাদের অসম্ভব সম্মান করেছেন। ভালোবেসেছেন। যে দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ আমাদের জন্য আমানত। আমরা চাই, যে আমানত তাঁরা আমাদের ওপর দিয়েছেন, তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যেন পালন করতে পারি।’

সবার প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে ইব্রাহিম বলেন, ‘যদি আমাদের ব্যাপারে বা আমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে অবশ্যই আমাদের জানাবেন। আমাদের অবশ্যই বুদ্ধি–পরামর্শ দেবেন। সমালোচনা করবেন।’

এর আগে চাকসুর নবনির্বাচিত জিএস সাঈদ বিন হাবিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হলো ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া।’

চাকসুতে ফিরল শিবির

দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নেতৃত্বে ফিরেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটের’ প্রার্থীরা ভিপি-জিএসসহ ২৪টি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটায় সপ্তম চাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ভিপি (সহসভাপতি) পদে ছাত্রশিবিরের মো. ইব্রাহিম হোসেন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের এমফিলের শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের প্যানেলের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট।

জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ৮ হাজার ৩১ ভোট নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ ভোট।

চাকসুতে ২৬টি পদে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান। তিনি এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট। একই পদে ছাত্রশিবিরের সাজ্জাত হোছেন পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট। এ ছাড়া সহখেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জিতেছেন তামান্না মাহবুব। তিনি বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন।

চাকসু নির্বাচনে শিবিরের সর্বশেষ জয় এসেছিল ১৯৮১ সালে। ওই নির্বাচনে ভিপি হন জসিম উদ্দিন সরকার আর জিএস হন আবদুল গাফফার। দুজনই ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন নেতা। এরপর দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা সেই নেতৃত্বের আসনে ফিরলেন।

দীর্ঘ এক দশক পর

আশির দশক থেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সরকারের আমলে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ হারায় সংগঠনটি।

এরপর প্রায় এক দশকের নীরবতা কাটিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফেরে ছাত্রশিবির। তাদের এই প্রত্যাবর্তনের এক বছর না যেতেই চাকসু নির্বাচনে এমন বিজয় ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এখন পর্যন্ত চাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাতবার— ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১, ১৯৯০ এবং এবার ২০২৫ সালে। ১৯৮১ সালের নির্বাচনে ছাত্রশিবির পেয়েছিল প্রথম জয়। এরপর ১৯৯০ সালের নির্বাচনে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’র কাছে হেরে যায় তারা।

এর পরের দীর্ঘ তিন দশক চাকসু নির্বাচনই হয়নি। বন্ধ ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম। নতুন প্রজন্মের ভোটে নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে চাকসু। প্রথমবার ভোট দেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি; কিন্তু চাকসুতে দিয়েছি—এটাই আমাদের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতার শুরু।

গতকাল পাঁচটি অনুষদ ভবনে ১৫টি ভোটকেন্দ্রে মোট ৭০০টি বুথে শিক্ষার্থীরা ভোট দেন। প্রত্যেক ভোটার একসঙ্গে ৪০টি ভোট দেন—চাকসুর ২৬টি পদ ও ১৪টি হল সংসদের জন্য। ভোটার ছিলেন ২৭ হাজার ৫১৬ জন। শুরুতে নির্বাচন কমিশন জানায়, ভোট পড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। তবে ভোরে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার সময় বলা হয়, ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনে কেউ পরাজিত হননি, সবাই বিজয়ী হয়েছেন: চাকসুর নতুন ভিপি
  • ৪৪ বছর পর চাকসুর নেতৃত্বে ফিরল ছাত্রশিবির
  • ইয়াংওয়ান করপোরেশন পেল ডব্লিউসিডি ভিশনারি অ্যাওয়ার্ডস
  • ইলুমিনাতি স্যাটানিজম বা শয়তানবাদ সম্পর্কে কতটুকু জানেন?