এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কণ্ঠ নকল করে শেখ হাসিনা সম্পর্কে তৈরি করা একটি ভিডিওকে ট্রাম্পের মন্তব্য দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে, যা মিথ্যা বলে শনাক্ত করেছে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার। এ–সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ফ্যাক্ট–চেক টিম জানায়, সম্প্রতি ‘শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী: ডোনাল্ড ট্রাম্প’ শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটির মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প শেখ হাসিনাকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন।

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি। বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তাঁর কণ্ঠ নকল করে তৈরি করা একটি ভিডিওর মাধ্যমে এ দাবি প্রচার করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিউমর স্ক্যানার ভিডিওটি পর্যালোচনা করে। এতে দেখা যায়, ট্রাম্পের ঠোঁটের নড়াচড়া ও বক্তব্যের মধ্যে অসংগতি রয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার টিমের তদন্তে জানা গেছে, রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ট্রাম্পের একই স্থান ও একই পোশাকে একাধিক বক্তব্যের ভিডিও পাওয়া যায়। তবে প্রচারিত বক্তব্যটি কোথাও পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁর এ ধরনের বক্তব্য লিখিত আকারেও দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।

ভিডিওতে দাবি করা হয়, ট্রাম্প ১৫ মে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাংলাদেশ সফর করলে তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো। তবে এ প্রতিবেদন লেখার সময় আজ পর্যন্ত ট্রাম্পের বাংলাদেশ সফর নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে তথ্য পাওয়া যায়নি।

রিউমর স্ক্যানার যাচাই-বাছাই করে জানিয়েছে, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কণ্ঠ নকল করে তৈরি একটি ভিডিওকে শেখ হাসিনা সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে, যা মিথ্যা।

রিউমর স্ক্যানার জানায়, গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

শুধু এপ্রিল মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্ট–চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উমর স ক য ন র

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ