চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি ছড়া খননকাজে ব্যক্তিমালিকানার কৃষিজমি, বসতভিটার ক্ষতি করার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া কেটে ফেলা হয়েছে শত শত গাছ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের পূর্ব খইয়াছাড়া গ্রামের প্রায় অর্ধশত ভুক্তভোগী। বিষয়টির সমাধান চেয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন এক ব্যক্তি। 
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের একজন আনোয়ারা বেগম। বছরখানেক আগে খইয়াছড়ার ১০-১৫ ফুট দূরে ৩ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করেন। ২৫ বছর ধরে অন্যের বাড়িতে ও ক্ষেতখামারে কাজ করে জমানো টাকায় কেনা বাড়িতে স্বামী ও পাঁচ মেয়ে নিয়ে থাকেন। খননের কারণে তাঁর জমি ও বাড়ির প্রায় অর্ধেক ছড়ায় পড়ে গেছে। এ বিষয়ে তাদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। এমনকি ক্ষতিপূরণ পাবেন– সে আশাও নেই। 
গত বৃহস্পতিবার আনোয়ারা জানান, খেয়ে-না খেয়ে টাকা জমিয়ে ৩ শতক জমি কিনে এক বছর আগে বাড়ি করেন। ছড়ার জায়গা বাদ দিয়েই জমি বুঝে নিয়েছিলেন। এখন ছড়া খননকালে তাঁর ঘরের প্রায় অর্ধেক কাটা পড়েছে। 
এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই এলাকার প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি। তাদের পক্ষে ৪ মে ইউএনও মাহফুজা জেরিন বরাবর লিখিত আবেদন করেন স্থানীয় বাসিন্দা জসীম উদ্দিন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ছড়াটি বিএস দাগ নম্বর ১০৬৮৯ ও অন্যান্য দাগে পড়েছে। আগেও এটি খনন করা হয়েছিল। এবার সীমানা নির্ধারণ ছাড়াই খনন করতে গিয়ে আশপাশের মানুষের কৃষিজমি, বসতভিটা, রাস্তা ও শত শত গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এ জন্য কোনো নোটিশ বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। তিনি ছড়ার সীমানা নির্ধারণ করে খননকাজ করার আবেদন জানান। 
জসীম উদ্দিনের ভাষ্য, স্মল হোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট নামে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তত্ত্বাবধানে খইয়াছড়া নামের ওই ছড়া খনন শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরদার এন্টারপ্রাইজ। সরকারি নকশায় ছড়ার জায়গা ২০ ফুট চওড়া। খননের কার্যাদেশে ৩০ ফুট চওড়া ও ৯ ফুট গভীর করার নির্দেশনা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক্সক্যাভেটর চালক ছড়াটি প্রায় ৭০ ফুট চওড়া করে পাড় তৈরি করছেন। এতে ক্ষতি হচ্ছে মানুষের কৃষিজমি, ছড়ার পাড়ের দরিদ্র মানুষের বসতভিটার।
জসিম উদ্দিন নামে আরেক কৃষকের ১২ শতক জমি আছে ছড়াটির পাড়ে। এখানে ফসল আবাদ করে কোনোভাবে সংসার চালান। ওই জমির প্রায় ৩ শতক আগেই ছড়ায় বিলীন হয়েছে। নতুন খননের সময় আরও প্রায় ৪ শতক জমি কাটা পড়েছে। এ জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। 
বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সরদার এন্টারপ্রাইজের কারও ফোন নম্বর বিএডিসি চট্টগ্রাম জোনের কোনো কর্মকর্তা দিতে পারেননি। মিরসরাইয়ে খাল খননের তত্ত্বাবধানে থাকা বিএডিসি চট্টগ্রামের উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) জাহেদ হাসানের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের পরামর্শ দিয়ে সংযোগ কেটে দেন। 
মিরসরাইয়ের ইউএনও মাহফুজা জেরিন খাল খনন বিষয়ে খইয়াছড়া থেকে অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে খনন কাজ করতে বিএডিসির কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছেন। 
খাল খননের সময় বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে জানান বিএডিসি-চট্টগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী তমাল দাশ। তিনি বলেন, সমস্যা জানতে পারলে ঘটনাস্থলে গিয়ে সমাধানের পর খাল খনন শুরু হয়। প্রয়োজন বিবেচনায় খালগুলো খনন করা হচ্ছে। এটি শেষ হলে উপজেলার দুই লাখ মানুষ সুফল পাবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প র য় অর ধ খ ল খনন ব এড স খনন র খনন ক

এছাড়াও পড়ুন:

মহাস্থানে পাওয়া প্রাচীন শিলালিপি ৯৪ বছর ধরে কলকাতায়, বাংলাদেশে কি ফেরানোর উদ্যোগ নেবে

রাজধানীর বাংলা একাডেমি ভবনের নিচতলায় পশ্চিম পাশে জাতীয় সাহিত্য ও লেখক জাদুঘর। সেখানে দেশের প্রাচীনতম একমাত্র ব্রাহ্মীলিপি খচিত একটি প্রস্তরখণ্ডের ছবি রয়েছে। ছবির নিচে লেখা—‘মহাস্থান (বগুড়া)-তে প্রাপ্ত ব্রাহ্মীলিপি’। স্বাভাবিকভাবেই দেশের প্রাচীনতম লিপিসংবলিত প্রস্তরখণ্ডটি থাকার কথা ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরে অথবা বগুড়ার মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি জায়গার কোথাও সেটি নেই।

তাহলে শিলালিপিটি কোথায় আছে? এ প্রশ্নের উত্তর মিলল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালের অধ্যাপক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে। তিনি জানালেন, শিলালিপিটি রয়েছে কলকাতায় অবস্থিত ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে। এ তথ্যের ভিত্তিতে যোগাযোগ করা হয় ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম কলকাতায়। সেখানকার প্রত্নতত্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে করেন শিলালিপিটি তাঁদের সংগ্রহে রয়েছে।

মহাস্থানগড়ে শিলালিপিটি খুঁজে পাওয়া যায় ১৯৩১ সালে, তখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়নি। ছিল না জাতীয় জাদুঘর বা প্রত্নতত্ব বিভাগ নামে কোনো দপ্তরের অস্তিত্ব। তখন ভারত ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। সেসময় প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণের জন্য অঞ্চলভিত্তিক প্রশাসনিক দপ্তর ছিল কলকাতায়। ফলে শিলালিপিটি নিয়ে যাওয়া হয় ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে।

তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লুট হওয়া বা ঔপনিবেশিক আমলে উৎস দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া প্রত্নসম্পদ বিনিময় বা সেগুলো উৎস দেশে ফেরত আনার চর্চা বাড়ছে। এ অবস্থায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে দেশের প্রাচীনতম এই শিলালিপি। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার উদ্যোগী হলে প্রাচীন এই প্রত্নসম্পদ দেশে ফেরানো সম্ভব কি না?

মহাস্থানগড় থেকে যেভাবে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ‘মহাস্থান’ শীর্ষক একটি প্রকাশনা থেকে জানা যায়, শিলালিপি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর।

ওই প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ১৮৭৯ সালে মহাস্থানগড়ে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু করেন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা ও প্রত্নতাত্ত্বিক আলেকজান্ডার কানিংহাম। এরপর সেসময়ের গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী কে সি নন্দীর তত্ত্বাবধানে ১৯০৭ সালে দ্বিতীয় দফায় খননকাজ চলে। যদিও সেটি প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ ছিল না। পরে ১৯২০ সালের ২২ নভেম্বর মহাস্থান গ্রামের গড়সহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় খননকাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে তৎকালীন সরকার। এর প্রায় আট বছর পর আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রথম তত্ত্বাবধায়ক কে এন দীক্ষিতের নেতৃত্বে ১৯২৮–২৯ সালে আরও একটি খননকাজ পরিচালিত হয়। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময়ে বহু নির্দশন পাওয়া গেলেও ব্রাহ্মীলিপি খচিত ওই শিলা পাওয়া যায়নি।

মহাস্থানগড়ের শিলালিপিটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ ডি আর ভান্ডারকারের ‘মৌর্য ব্রাহ্মী ইনস্ক্রিপশন অব মহাস্থান’ শীর্ষক লেখায়। ‘এপিগ্রাফিয়া ইন্ডিকা অ্যান্ড রেকর্ড অব দ্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডয়া’ বইয়ের ২১ নম্বর খণ্ডে তিনি লিখেছেন, মৌর্য যুগের ব্রাহ্মীলিপিটি ১৯৩১ সালের ৩০ নভেম্বর বগুড়া জেলার মহাস্থান গ্রামে পাওয়া যায়। ওই এলাকার বাসিন্দা বারু ফকির নামের একজন কৃষক কাজ করার সময় গড়ের ভেতর সেটি খুঁজে পান।

মহাস্থানগড়ের শিলালিপিটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়, ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ ডি আর ভান্ডারকারের ‘মৌর্য ব্রাহ্মী ইনস্ক্রিপশন অব মহাস্থান’ শীর্ষক লেখায়। ‘এপিগ্রাফিয়া ইন্ডিকা অ্যান্ড রেকর্ড অব দ্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডয়া’ বইয়ের ২১ নম্বর খণ্ডে তিনি লিখেছেন, মৌর্য যুগের ব্রাহ্মীলিপিটি ১৯৩১ সালের ৩০ নভেম্বর বগুড়া জেলার মহাস্থান গ্রামে পাওয়া যায়। ওই এলাকার বাসিন্দা বারু ফকির নামের একজন কৃষক কাজ করার সময় গড়ের ভেতর সেটি খুঁজে পান।

সে সময় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধায়ক জি সি চন্দ্র এটি অধিদপ্তরের জন্য সংগ্রহ করেন এবং কিছুদিন কলকাতায় তাঁর কার্যালয়ে রাখেন। পরে সংস্থার মহাপরিচালকের আদেশে এটিকে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের প্রত্নতত্ত্ব শাখায় জমা করা হয়।

জাতীয় সাহিত্য ও লেখক জাদুঘরে রাখা শিলালিপির ছবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মহাস্থানে পাওয়া প্রাচীন শিলালিপি ৯৪ বছর ধরে কলকাতায়, বাংলাদেশে কি ফেরানোর উদ্যোগ নেবে