ভারতের আমদানি বিধিনিষেধ: বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কারা
Published: 20th, May 2025 GMT
ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্যে দেড় বছর ধরে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে আসছে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস। স্থলপথে ভারতে রপ্তানির ওপর ভর করেই ব্যবসা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। গত শনিবার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে কিছু পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অজিত কুমার দাস গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রায় পুরোটাই রপ্তানি হয়। আমাদের উৎপাদিত কুকিজ, টোস্ট ও সল্টেড বিস্কুটের বড় বাজার আসাম, ত্রিপুরা ও কলকাতা। এখন আসাম ও ত্রিপুরায় যদি কলকাতা হয়ে ঘুরপথে পণ্য পাঠাতে হয়, তাহলে পরিবহন খরচই বাড়বে এক লাখ টাকা। বাড়তি এ খরচ বহন করা ক্রেতার পক্ষে অসম্ভব। আবার রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।’
অজিত কুমার দাস আরও জানান, ভারতের বিধিনিষেধের আগে ৪২ হাজার কার্টনের খাদ্যপণ্যের একটি চালানের কার্যাদেশ ছিল। এসব খাদ্যপণ্য উৎপাদনও হয়েছে। তবে এখন এসব পণ্যের রপ্তানি আটকে গেছে।
আমাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রায় পুরোটাই রপ্তানি হয়। আমাদের উৎপাদিত কুকিজ, টোস্ট ও সল্টেড বিস্কুটের বড় বাজার আসাম, ত্রিপুরা ও কলকাতা। এখন আসাম ও ত্রিপুরায় যদি কলকাতা হয়ে ঘুরপথে পণ্য পাঠাতে হয়, তাহলে পরিবহন খরচই বাড়বে এক লাখ টাকা। বাড়তি এ খরচ বহন করা ক্রেতার পক্ষে অসম্ভব।বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অজিত কুমার দাসভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের মতো অনেক ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। অন্য খাতের চেয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য খাতের কোম্পানিগুলোর ঝুঁকির মাত্রা বেশি, যারা সেভেন সিস্টার হিসেবে খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে পণ্য রপ্তানি করে। তার বাইরে তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।
কয়েকজন রপ্তানিকারক জানান, ভারতে কয়েকটি পণ্য রপ্তানির সহজ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা–সক্ষমতা ধরে রাখা যাবে না। এই ধাক্কা বড় প্রতিষ্ঠান সামলাতে পারলেও ছোটরা পারবে না। হাতে থাকা ক্রয়াদেশের পণ্য রপ্তানি না করতে পারলে বড় লোকসান গুনতে হবে। তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্রুত আলোচনা শুরু করে এই সমস্যার সমাধান করার আহ্বান তাঁদের।
এদিকে ভারতের বিধিনিষেধ পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যসচিব মো.
ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সহজ পথ হলো স্থলপথ। এই পথে দ্রুত পণ্য পাঠানো যায়। খরচও কম। তবে গত শনিবার দেশটি স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। এ–সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, শুধু ভারতের নভো সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করা যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পণ্য যায় ভারতে। পার্শ্ববর্তী এই দেশটি বাংলাদেশের নবম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট আমদানির ১৪ শতাংশের কিছু বেশি। ভারত থেকে শিল্পের কাঁচামাল বেশি আসে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, ভারতের অষ্টম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর ভারতে ৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, ১৬ কোটি ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের তুলা ও তুলার সুতার ঝুট এবং ৬৫ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়েছে। এসব পণ্যের বড় অংশই স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়।
বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে প্রভাবগত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, আসবাব, সুতার উপজাত, ফল-ফলের স্বাদযুক্ত পানীয় রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এসব পণ্য রপ্তানি করে ১৬৬ প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে অধিকাংশই ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠান।
ফেনীর স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টস গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে সেভেন সিস্টারে পণ্য রপ্তানি করছে। প্রতি মাসে ২৫-৩০ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে তারা। ভারত ছাড়াও লন্ডন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে গড়ে ২ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে।
স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক মো. মঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে ভারতের ৩০-৩৫ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ক্রয়াদেশ রয়েছে। স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভারতীয় ক্রেতারা বিকল্প পথে পণ্য নেবেন কি না, কিংবা ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশ দেবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
আমাদের পণ্য রপ্তানির বড় বাজার ভারত। বিধিনিষেধের কারণে এখন রপ্তানিতে বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।বিক্রমপুর প্লাস্টিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিকপুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের বিক্রমপুর প্লাস্টিক চার-পাঁচ বছর ধরে ভারতের সেভেন সিস্টারে গৃহস্থালি প্লাস্টিক পণ্য ও প্লাস্টিকের আসবাব রপ্তানি করে। বর্তমানে তাদের কাছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার ডলারের রপ্তানি ক্রয়াদেশ রয়েছে।
জানতে চাইলে বিক্রমপুর প্লাস্টিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পণ্য রপ্তানির বড় বাজার ভারত। বিধিনিষেধের কারণে এখন রপ্তানিতে বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের বাংলাদেশের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। গত অর্থবছর গ্রুপটি ভারতে পাঁচ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশ বা ৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য পাঠানো হয়েছে স্থলপথ দিয়ে। বিধিনিষেধের কারণে গত রোববার বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে ১৭ ও সিলেটের শেওলা স্থলবন্দরে ২ ট্রাক পণ্যের চালান আটকে যায় তাদের। এসব ট্রাক ঢাকায় ফিরিয়ে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে গ্রুপটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে ৬০ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এসব পণ্য উৎপাদনের গতি আমরা কমিয়ে দিয়েছি।’
বর্তমানে আমাদের কাছে ভারতের ৩০-৩৫ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ক্রয়াদেশ রয়েছে। স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভারতীয় ক্রেতারা বিকল্প পথে পণ্য নেবেন কি না, কিংবা ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশ দেবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক মো. মঈন উদ্দিনপোশাক রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পড়বেবাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছর ভারতে ৫৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। এই রপ্তানির ৭৬ শতাংশই স্থলবন্দর দিয়ে হয়েছে। বাংলাদেশি ৫৩০টি প্রতিষ্ঠান স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক রপ্তানি করেছে। তার মধ্যে বড় শিল্পগোষ্ঠী ছাড়া ছোট-মাঝারি অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। দেশটিতে শার্ট, প্যান্ট, টি–শার্টের পাশাপাশি শাড়ি-লুঙ্গিও রপ্তানি হয়।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেসার্স জামদানি ট্রেন্ডস নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর স্থলবন্দর দিয়ে তাঁতের লুঙ্গি-শাড়ি রপ্তানি করে ভারতে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার শহীদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে এ সপ্তাহে শাড়ি-লুঙ্গির চালান রপ্তানির কথা ছিল। কিন্তু এখন তা আটকে গেছে।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের নানা জায়গায় তাঁতবস্ত্রের ছোট ছোট কারখানা থেকে লুঙ্গি, শাড়ি তৈরি করিয়ে নেয়। এমন তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ তাঁতপণ্য প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এসব তাঁতবস্ত্র কারখানার শ্রমিকদের সিংহভাগই নারী। ভারতের সিদ্ধান্তে এখন ছোট ছোট তাঁতের কারখানা বিপদে পড়বে। কম দামের কারণে ভারতের বাজারে বেশ ভালো অবস্থান ছিল বাংলাদেশের তাঁতবস্ত্রের।
সার্বিক বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের বিধিনিষেধের বিষয়টি রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানেই গুরুত্ব দিতে হবে। উভয় দেশের মধ্যে দ্রুত খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রক র য় জ ত খ দ য ফ ড প র ড ক টস র আম দ র উৎপ দ ত খ দ যপণ য র প রথম আল ক র বড় ব জ র ব যবস থ স থলপথ কলক ত আমদ ন ব এসপ
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থান ও পরিবহন রাজস্বে প্রভাব পড়বে, বলছেন কর্মকর্তারা
ভারত স্থলপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে সেসব পণ্যে, যা বাংলাদেশ বেশি রপ্তানি করে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের কর্মসংস্থান ও পরিবহন রাজস্বে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন দেশটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতির চেয়ে জাতীয় স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব বিশ্লেষণ করে রোববার এসব কথা বলেন কর্মকর্তারা।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শনিবার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তাতে কয়েকটি দিক রয়েছে- প্রথমত, ভারতের কোনো স্থলবন্দর ব্যবহার করেই দেশটিতে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি করতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, আসবাব, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা ও সুতার উপজাত ইত্যাদি রপ্তানি করা যাবে না। তৃতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়েও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, আসবাব, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা ও সুতার উপজাত ইত্যাদি রপ্তানি করা যাবে না। চতুর্থত, ভারত বাংলাদেশের মাছ, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), ভোজ্যতেল ও ভাঙা পাথর আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। পাশাপাশি ভারতের বন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে না।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (পিসিএএসডব্লিউএ) সদস্য কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ভারত তৃতীয় দেশের ট্রান্সশিপমেন্ট নিষিদ্ধ করার পরেও প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০টি প্রিমিয়াম পোশাক বহনকারী ট্রাক আসত। শনিবারের আদেশের ফলে এই স্থলবন্দর দিয়ে এই ধরনের পরিবহন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। আগে যখন ট্রান্সশিপমেন্ট ছিল- তখন ৬০ থেকে ৮০ ট্রাক পোশাকভর্তি ট্রাক প্রবেশ করত।
তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সীমান্তে লজিস্টিক হাবগুলিতে ট্রাকচালক এবং শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকগুলো প্রায়ই কম দামে আধুনিক ভারতীয় খুচরা চেইনে প্রবেশ করে। এই পণ্যগুলি কার্যকরভাবে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা বাজার দখল করছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ কৌশলগত হতে পারে। সম্ভবত, এটি জাতীয় স্বার্থ এবং সাম্প্রতিকর ভূ-রাজনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কও অন্তর্ভুক্ত। এখানে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতির চেয়ে জাতীয় স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে ভারতের গণমাধ্যমগুলো দেশটির সরকারের সিদ্ধান্তকে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবেই দেখাচ্ছে। এনডিটিভির শনিবারের প্রতিবেদনে সরকারের এক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। সেটার পাল্টা হিসেবেই নতুন বিধিনিষেধ আরোপ।
ভারত গত এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে। এরপর গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্থলপথে ভারত থেকে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল।
ব্যবসায় কেমন প্রভাব পড়বে
বাংলাদেশ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই বেশি। পাশাপাশি ছিলো বিভিন্ন কোম্পানির প্লাস্টিক পণ্য ও আসবাব সামগ্রী।
আবার আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য।
অন্যদিকে গত বছর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে, যা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় পেয়েছিলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছিলো।
এছাড়া সেভেন সিস্টার্স হিসেবে পরিচিত উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতেও বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে। এই রাজ্যগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কোম্পানি নতুন নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছিলেন।
এখন ভারতের নতুন বিধিনিষেধে এর দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। কারণ তৈরি পোশাক স্থল বন্দরের পরিবর্তে সমুদ্র বন্দর দিয়ে পাঠাতে হলে খরচ ও সময় দুটি বেশি লাগবে। সূত্র: বিবিসি ও এনডিটিভি