ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্যে দেড় বছর ধরে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে আসছে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস। স্থলপথে ভারতে রপ্তানির ওপর ভর করেই ব্যবসা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। গত শনিবার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে কিছু পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অজিত কুমার দাস গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রায় পুরোটাই রপ্তানি হয়। আমাদের উৎপাদিত কুকিজ, টোস্ট ও সল্টেড বিস্কুটের বড় বাজার আসাম, ত্রিপুরা ও কলকাতা। এখন আসাম ও ত্রিপুরায় যদি কলকাতা হয়ে ঘুরপথে পণ্য পাঠাতে হয়, তাহলে পরিবহন খরচই বাড়বে এক লাখ টাকা। বাড়তি এ খরচ বহন করা ক্রেতার পক্ষে অসম্ভব। আবার রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।’

অজিত কুমার দাস আরও জানান, ভারতের বিধিনিষেধের আগে ৪২ হাজার কার্টনের খাদ্যপণ্যের একটি চালানের কার্যাদেশ ছিল। এসব খাদ্যপণ্য উৎপাদনও হয়েছে। তবে এখন এসব পণ্যের রপ্তানি আটকে গেছে।

আমাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রায় পুরোটাই রপ্তানি হয়। আমাদের উৎপাদিত কুকিজ, টোস্ট ও সল্টেড বিস্কুটের বড় বাজার আসাম, ত্রিপুরা ও কলকাতা। এখন আসাম ও ত্রিপুরায় যদি কলকাতা হয়ে ঘুরপথে পণ্য পাঠাতে হয়, তাহলে পরিবহন খরচই বাড়বে এক লাখ টাকা। বাড়তি এ খরচ বহন করা ক্রেতার পক্ষে অসম্ভব।বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অজিত কুমার দাস

ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের মতো অনেক ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। অন্য খাতের চেয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য খাতের কোম্পানিগুলোর ঝুঁকির মাত্রা বেশি, যারা সেভেন সিস্টার হিসেবে খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে পণ্য রপ্তানি করে। তার বাইরে তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।

কয়েকজন রপ্তানিকারক জানান, ভারতে কয়েকটি পণ্য রপ্তানির সহজ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা–সক্ষমতা ধরে রাখা যাবে না। এই ধাক্কা বড় প্রতিষ্ঠান সামলাতে পারলেও ছোটরা পারবে না। হাতে থাকা ক্রয়াদেশের পণ্য রপ্তানি না করতে পারলে বড় লোকসান গুনতে হবে। তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্রুত আলোচনা শুরু করে এই সমস্যার সমাধান করার আহ্বান তাঁদের।

এদিকে ভারতের বিধিনিষেধ পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যসচিব মো.

মাহবুবুর রহমান। পররাষ্ট্র ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

অন্য খাতের চেয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য খাতের কোম্পানিগুলোর ঝুঁকির মাত্রা বেশি, যারা সেভেন সিস্টার হিসেবে খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে পণ্য রপ্তানি করে।

ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সহজ পথ হলো স্থলপথ। এই পথে দ্রুত পণ্য পাঠানো যায়। খরচও কম। তবে গত শনিবার দেশটি স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। এ–সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, শুধু ভারতের নভো সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করা যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পণ্য যায় ভারতে। পার্শ্ববর্তী এই দেশটি বাংলাদেশের নবম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট আমদানির ১৪ শতাংশের কিছু বেশি। ভারত থেকে শিল্পের কাঁচামাল বেশি আসে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, ভারতের অষ্টম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর ভারতে ৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, ১৬ কোটি ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের তুলা ও তুলার সুতার ঝুট এবং ৬৫ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়েছে। এসব পণ্যের বড় অংশই স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়।

বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে প্রভাব

গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, আসবাব, সুতার উপজাত, ফল-ফলের স্বাদযুক্ত পানীয় রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এসব পণ্য রপ্তানি করে ১৬৬ প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে অধিকাংশই ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠান।

ফেনীর স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টস গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে সেভেন সিস্টারে পণ্য রপ্তানি করছে। প্রতি মাসে ২৫-৩০ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে তারা। ভারত ছাড়াও লন্ডন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে গড়ে ২ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে।

স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক মো. মঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে ভারতের ৩০-৩৫ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ক্রয়াদেশ রয়েছে। স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভারতীয় ক্রেতারা বিকল্প পথে পণ্য নেবেন কি না, কিংবা ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশ দেবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

আমাদের পণ্য রপ্তানির বড় বাজার ভারত। বিধিনিষেধের কারণে এখন রপ্তানিতে বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।বিক্রমপুর প্লাস্টিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক

পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের বিক্রমপুর প্লাস্টিক চার-পাঁচ বছর ধরে ভারতের সেভেন সিস্টারে গৃহস্থালি প্লাস্টিক পণ্য ও প্লাস্টিকের আসবাব রপ্তানি করে। বর্তমানে তাদের কাছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার ডলারের রপ্তানি ক্রয়াদেশ রয়েছে।

জানতে চাইলে বিক্রমপুর প্লাস্টিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পণ্য রপ্তানির বড় বাজার ভারত। বিধিনিষেধের কারণে এখন রপ্তানিতে বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’

প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের বাংলাদেশের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। গত অর্থবছর গ্রুপটি ভারতে পাঁচ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশ বা ৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য পাঠানো হয়েছে স্থলপথ দিয়ে। বিধিনিষেধের কারণে গত রোববার বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে ১৭ ও সিলেটের শেওলা স্থলবন্দরে ২ ট্রাক পণ্যের চালান আটকে যায় তাদের। এসব ট্রাক ঢাকায় ফিরিয়ে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে গ্রুপটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে ৬০ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এসব পণ্য উৎপাদনের গতি আমরা কমিয়ে দিয়েছি।’

বর্তমানে আমাদের কাছে ভারতের ৩০-৩৫ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ক্রয়াদেশ রয়েছে। স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভারতীয় ক্রেতারা বিকল্প পথে পণ্য নেবেন কি না, কিংবা ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশ দেবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক মো. মঈন উদ্দিনপোশাক রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পড়বে

বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছর ভারতে ৫৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। এই রপ্তানির ৭৬ শতাংশই স্থলবন্দর দিয়ে হয়েছে। বাংলাদেশি ৫৩০টি প্রতিষ্ঠান স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক রপ্তানি করেছে। তার মধ্যে বড় শিল্পগোষ্ঠী ছাড়া ছোট-মাঝারি অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। দেশটিতে শার্ট, প্যান্ট, টি–শার্টের পাশাপাশি শাড়ি-লুঙ্গিও রপ্তানি হয়।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেসার্স জামদানি ট্রেন্ডস নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর স্থলবন্দর দিয়ে তাঁতের লুঙ্গি-শাড়ি রপ্তানি করে ভারতে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার শহীদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে এ সপ্তাহে শাড়ি-লুঙ্গির চালান রপ্তানির কথা ছিল। কিন্তু এখন তা আটকে গেছে।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের নানা জায়গায় তাঁতবস্ত্রের ছোট ছোট কারখানা থেকে লুঙ্গি, শাড়ি তৈরি করিয়ে নেয়। এমন তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ তাঁতপণ্য প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এসব তাঁতবস্ত্র কারখানার শ্রমিকদের সিংহভাগই নারী। ভারতের সিদ্ধান্তে এখন ছোট ছোট তাঁতের কারখানা বিপদে পড়বে। কম দামের কারণে ভারতের বাজারে বেশ ভালো অবস্থান ছিল বাংলাদেশের তাঁতবস্ত্রের।

সার্বিক বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের বিধিনিষেধের বিষয়টি রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানেই গুরুত্ব দিতে হবে। উভয় দেশের মধ্যে দ্রুত খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রক র য় জ ত খ দ য ফ ড প র ড ক টস র আম দ র উৎপ দ ত খ দ যপণ য র প রথম আল ক র বড় ব জ র ব যবস থ স থলপথ কলক ত আমদ ন ব এসপ

এছাড়াও পড়ুন:

শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা

একের পর এক জটিলতায় পড়ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পটি। অর্থ বরাদ্দের সংকট, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বকেয়া নিয়ে বিরোধ, কাজের ধীরগতি—সব মিলিয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

প্রায় ৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ২২টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ মানুষের জন্য আধুনিক পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। এই সময়ে এসে নানা জটিলতায় ‘বিপদে’ পড়েছে ওয়াসা।

‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এরপর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। মেয়াদ বেড়েছে তিন দফা। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।

বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।প্রকল্প পরিচালক, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই নির্বাচনী মৌসুমে প্রকল্প বরাদ্দে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। অর্থ না এলে প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়বে। ২০২৭ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ না হলে এই পরিকল্পনা পিছিয়ে যাবে।

জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরই অর্থ বরাদ্দের অভাবে অনেক কাজ আটকে ছিল। এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পেলে সময়সীমা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা।

প্রকল্পের নথিতে বলা হয়, দৈনিক ১০ কোটি লিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পয়োশোধনাগার, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য শোধনাগার, ২০০ কিলোমিটার পয়োনালা নির্মাণ করা হবে। এতে চট্টগ্রাম নগরের ২২টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রকল্পের আওতায় আসবে। আর উন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার সুফল পাবেন ২০ লাখ মানুষ।

এখনো কাজ বন্ধ, অর্থের টানাপোড়েন

প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড উপঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ না করায় সাতটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।

হালিশহর এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ করছে মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহান এন্টারপ্রাইজ, দেশ কন্ট্রাক্টরস অ্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড, ইনাস এন্টারপ্রাইজ, পোর্ট হারবার ইন্টারন্যাশনাল ও পাওয়ার বাংলা করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তাদের প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার তাইয়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উপঠিকাদাররা দুটি শর্তে কাজ শুরুতে রাজি হয়েছেন—আগামী সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি।

জানতে চাইলে এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক আহাদুজ্জামান বাতেন বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।’

আহাদুজ্জামান জানান, ‘মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় আমরা দুটি শর্ত দিয়েছি—সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিল পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি। এ দুই শর্তে কাজ আবার শুরু করছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 
  • ২৯ দিনে প্রবাসী আয় ২৪৩ কোটি ডলার
  • শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা