চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বহুজাতিক কোম্পানি বাটা শুর চেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। গত জানুয়ারি–মার্চে জুতার দেশীয় কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ৫৪০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। একই সময়ে জুতার বহুজাতিক কোম্পানি বাটা শু ব্যবসা করেছে ৩৫৮ কোটি টাকার। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাটার চেয়ে অ্যাপেক্স ১৮২ কোটি টাকা বা প্রায় ৫১ শতাংশ বেশি ব্যবসা বা আয় করেছে।

বাটার চেয়ে অ্যাপেক্স বেশি ব্যবসা করলেও মুনাফায় শীর্ষে রয়েছে বাটা শু। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাটা মুনাফা করেছে ৩৭ কোটি টাকা। সেখানে অ্যাপেক্সের মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৯৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে অ্যাপেক্সের চেয়ে ৫১ শতাংশ কম ব্যবসা করেও বাটা শু অ্যাপেক্সের চেয়ে ৩৬ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। মূলত দুটি কারণে মুনাফায় অ্যাপেক্সকে টপকে গেছে বাটা। তার মধ্যে অন্যতম অ্যাপেক্সের তুলনায় বাটার পণ্য উৎপাদন খরচ ছিল কম। আবার ব্যাংকঋণের সুদ বাবদ খরচও অ্যাপেক্সের তুলনায় অনেক কম ছিল বাটার।

কোম্পানি দুটির গত জানুয়ারি–মার্চের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে সম্প্রতি কোম্পানি দুটি আলাদাভাবে তাদের এই আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বাটা ও অ্যাপেক্সের ব্যবসা ও মুনাফার এই তারতম্য পাওয়া গেছে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৩৫৮ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয়ের বিপরীতে বাটা শুর পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ হয়েছে ১৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির আয়ের ৫৪ শতাংশ অর্থ পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ হয়েছে। আর জুতা ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে অ্যাপেক্সের ৫৪০ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ ছিল ৪১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির আয়ের ৭৭ শতাংশ অর্থ পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ করতে হয়েছে। এই তুলনায় দেখা যায়, ১০০ টাকা আয় করতে বাটার উৎপাদন খরচ যেখানে ৫৪ টাকা, সেখানে অ্যাপেক্সে ১০০ টাকার আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ ৭৭ টাকা। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণে ভালো ব্যবসা করেও বাটার চেয়ে বেশি মুনাফা করতে পারেনি দেশীয় কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকঋণের সুদ বাবদ বাটার খরচ ছিল প্রায় ছয় কোটি টাকা। একই সময়ে এই খাতে অ্যাপেক্সের খরচ ছিল প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এই সুদ ব্যয়ও মুনাফার ক্ষেত্রে অ্যাপেক্সকে বাটার চেয়ে পিছিয়ে দিয়েছে।

ভালো ব্যবসা করেও মুনাফায় বাটার চেয়ে পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) দিলীপ কাজুরি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাটার তুলনায় আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি। এ কারণে বাটার চেয়ে বেশি ব্যবসা করেও আমরা মুনাফায় পিছিয়ে রয়েছি। বাটা তাদের জুতার বড় অংশ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করে। এমনকি দেশজুড়ে শোরুমগুলোর কর্মীদের বড় অংশও আউটসোর্সিংয়ে করা হয়। সেখানে আমাদের পণ্য তৈরি হয় নিজস্ব কারখানায়। দেশজুড়ে আমাদের আউটলেটগুলোও পরিচালিত হয় নিজস্ব কর্মী দিয়ে। এ কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ বাটার তুলনায় বেশি। আমরা পণ্যের গুণগত মানের সঙ্গে আপস করি না। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মুদ্রার বিনিময় হারসহ নানা কারণে উৎপাদন খরচ যেভাবে বেড়েছে, সেই তুলনায় পণ্যের দাম খুব বেশি বাড়েনি। এ কারণেও আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে।

দেশে জুতার বাজারে বর্তমানে শীর্ষ দুই কোম্পানি অ্যাপেক্স ও বাটা। জুতার বাজারে ব্যবসার ক্ষেত্রে বহুজাতিক বাটাকে অনেক আগেই পেছনে ফেলেছে অ্যাপেক্স; কিন্তু মুনাফায় বাটার চেয়ে পিছিয়ে আছে অ্যাপেক্স। বাটা শু তাদের আর্থিক বছরের হিসাব করে পঞ্জিকা বছরের (জানুয়ারি–ডিসেম্বর) সঙ্গে মিলিয়ে। আর অ্যাপেক্সের আর্থিক বছর হিসাব হয় অর্থবছরের (জুলাই–জুন) সঙ্গে মিলিয়ে। সেই হিসাবে অ্যাপেক্সের সর্বশেষ হিসাব বছর ছিল ২০২৩–২৪ অর্থবছর। ওই বছর কোম্পানিটি ব্যবসা করেছে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকার। তার বিপরীতে হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির কর–পরবর্তী মুনাফা ছিল প্রায় ১৮ কোটি টাকা। আর বাটা শু ২০২৩ সালে সমাপ্ত হিসাব বছরে ব্যবসা করেছে ৯৮৮ কোটি টাকার। তার বিপরীতে বহুজাতিক কোম্পানিটি বছরের শেষে মুনাফা করেছিল ৪০ কোটি টাকা।

কোম্পানি দুটির পুরো বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায়ও দেখা যায়, বাটার চেয়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেও মুনাফায় পিছিয়ে ছিল অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। সেটিরও অন্যতম কারণ উৎপাদন খরচে পিছিয়ে থাকা। ২০২৩–২৪ হিসাব বছরে অ্যাপেক্সের ১০০ টাকা আয় করতে পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ করতে হয়েছে ৭০ টাকা। সেখানে বাটার ১০০ টাকার আয়ের জন্য উৎপাদন খরচ ছিল ৫৪ টাকা।

জানতে চাইলে বাটা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ঈদের কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভালো ব্যবসা করেছে বাটা। এই সময়ে উৎপাদন সক্ষমতা সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছে। আবার দর-কষাকষির মাধ্যমে অনুকূল শর্তে কাঁচামাল সংগ্রহ করেছে। সেই সঙ্গে খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর ফলে প্রথম প্রান্তিকে ভালো মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাটা বাংলাদেশ জানিয়েছে, সাত বছর ধরে চামড়া ও পাদুকা খাতে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে তারা। ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি শুল্ক ও কর বাবদ মোট ২৮১ কোটি টাকার বেশি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র প রথম ত ন ম স অ য প ক স ফ টওয় য র হ স ব বছর র ব পর ত র আর থ ক ১০০ ট ক খরচ ছ ল আম দ র র আয় র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে শুরু হচ্ছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ১৩ নভেম্বর থেকে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন যেসব শিক্ষার্থী

২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ভর্তির জন্য। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি) ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ-লেভেল, ও-লেভেল ও বিদেশি সনদধারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়মে সরাসরি ডিন অফিসে বা ই–মেইলে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
যেসব শিক্ষার্থী গত দুই শিক্ষাবর্ষে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল বা স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছেন, তাঁরা এই শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে পূর্ববর্তী ভর্তি বাতিল করে নতুন শিক্ষাবর্ষে আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী দ্বৈত ভর্তি হলে তাঁর উভয় ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে।

আবেদন ফি ৪০০ টাকা

ভর্তি ফি হিসেবে প্রাথমিক আবেদন ফি ৪০০ টাকা, যার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ২৫০ টাকা এবং কলেজের অংশ ১৫০ টাকা। ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন ফি ৭২০ টাকা জমা দিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে অনলাইনে নিশ্চয়ন করবে। তবে নিশ্চয়ন ছাড়া কোনো আবেদনকারীকে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আবেদন ফি ১৯ অক্টোবরের মধ্য জমা দিতে হবে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা৪ ঘণ্টা আগে

আবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদাভাবে কোর্সভিত্তিক মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। একই মেধা নম্বরপ্রাপ্ত হলে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ (৪০: ৬০ অনুপাতে) এবং প্রয়োজনে মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। এরপরও সমতা থাকলে বয়স কম শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভর্তি কার্যক্রম ধাপে ধাপে প্রথম মেধাতালিকা, দ্বিতীয় মেধাতালিকা, কোটার মেধাতালিকা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে এবারও তৃতীয় রিলিজ স্লিপে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।

বিস্তারিত দেখুন এখানে

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, সুযোগ পাবেন ৪৮ জেলার যুবরা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কালচে হয়ে যাচ্ছে মোগল আমলের লালকেল্লা
  • জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে
  • গবাদিপশু থেকে মানুষের শরীরে ‘তড়কা’ রোগ, প্রতিরোধে যা করবেন
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • কীভাবে নেট রান রেট হিসাব করা হয়, সুপার ফোর উঠতে বাংলাদেশের হিসাব কী
  • সোনালী ও রূপালী মুনাফায়, অগ্রণী ও জনতা লোকসানে