পণ্য বিক্রয়ে নিয়োজিত সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ডিলার নিয়োগ করা হচ্ছে। ডিলার নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে এসব নিয়োগ। নতুন এ নীতিমালা জারি করা হয় গত মার্চ মাসে। এটি জারির সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে গেছে ২০২১ সালের নীতিমালা।

বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ২৭৫ জন ডিলার রয়েছেন। সম্প্রতি টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রাম জেলায় ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে টিসিবি।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতি ওয়ার্ডের জন্য একজন এবং অন্যান্য অঞ্চলের প্রতি ইউনিয়নের জন্য একজন করে ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি হলে এক ইউনিয়নে একাধিক ডিলার নিয়োগ করার সুযোগও রয়েছে।

ডিলারদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৮ বছর। আর্থিক সচ্ছলতা থাকতে হবে তাঁদের। ডিলার হওয়ার আবেদনের জন্য আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ হিসেবে ব্যাংকে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা থাকতে হবে। এ ছাড়া থাকতে হবে দোকান বা বিক্রয়স্থল, যেখানে কমপক্ষে ১০ টন খাদ্যপণ্য মজুত ও সংরক্ষণের সুব্যবস্থা করা যাবে। মৃত্যু ছাড়া ডিলারশিপ হস্তান্তরযোগ্য নয়। তবে কেউ চাইলে ডিলারশিপ সমর্পণ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে কারণ উল্লেখ করে টিসিবির চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে।

আবেদনকারীকে একজন প্রকৃত মুদি ব্যবসায়ী হতে হবে এবং তাঁর ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আদালত থেকে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কালোতালিকাভুক্ত ঠিকাদারেরা ডিলার হতে পারবেন না।

আবেদন ফরমের সঙ্গে ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ট্রেড লাইসেন্সের কপি, ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট, দোকান ভাড়ার দলিল/মালিকানার প্রমাণক, ভ্যাট নিবন্ধন সনদ (যদি থাকে) দাখিল হবে। পাশাপাশি টিসিবির অনুকূলে আবেদন মাশুল বাবদ (ফি) ৫ হাজার টাকা (অফেরতযোগ্য) পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে।

আবেদন করার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ শেষ করবে টিসিবি। পরে সরেজমিনে তদন্তে যাচাই করে মতামতের জন্য পাঠানো হবে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে মতামত আসতে হবে। যিনি ডিলার হিসেবে নিয়োগ পাবেন তাঁর কাছ থেকে জামানত বাবদ ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হবে। এ ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলারকে লাইসেন্স ফি বাবদ দুই বছরের জন্য আরও ১০ হাজার টাকা টিসিবির অনুকূলে পে-অর্ডারের মাধ্যমে (অফেরতযোগ্য) জমা দিতে হবে।

টিসিবির ডিলারশিপ দুই বছর পরপর নবায়নযোগ্য। ডিলারশিপ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কমপক্ষে এক মাস আগে নবায়ন করতে হবে। নবায়ন ফি প্রতি দুই বছরের জন্য ৫ হাজার টাকা। মেয়াদোত্তীর্ণের পর নবায়নের ক্ষেত্রে লাগবে বিলম্ব মাশুল। ছয় মাসের মধ্যে নবায়ন না করলে ডিলারশিপ বাতিল হয়ে যাবে।

টিসিবির জেলা পর্যায়ের ডিলারদের কার্যক্রম তদারক করবেন ডিসিরা। আর উপজেলা পর্যায়ে তদারক করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। টিসিবির আঞ্চলিক কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সহায়তা করবেন। সংস্থাটির আঞ্চলিক কর্মকর্তা প্রতি মাসে একাধিক জেলার কমপক্ষে ১০টি বিক্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। ইউএনওরা মাসে কমপক্ষে দুটি বিক্রয়কেন্দ্রের উপকারভোগীদের তালিকা ও উত্তোলন ইত্যাদি পরীক্ষা করবেন।

ডিলাররা টাকা জমার রসিদ দেখিয়ে নির্ধারিত গুদাম থেকে পণ্যসামগ্রী গ্রহণ করে নিজ দায়িত্বে নিজেদের দোকান বা বিক্রয়কেন্দ্রে সংরক্ষণ করবেন। পরে নির্ধারিত স্থানে ফ্যামিলি কার্ডধারী উপকারভোগীদের কাছে কার্ড দেখে বা বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ রেখে ভর্তুকি মূল্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কমপক ষ র জন য করব ন সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

রামবুটান চাষে তাক লাগানো সাফল্য

একসময় শুধু ক্লাসরুমেই ব্যস্ত থাকতেন। এখন তার পরিচয় একজন সফল উদ্যোক্তা। শখ থেকে শুরু করা রামবুটান চাষে নরসিংদীর শিবপুরের সাধারাচর ইউনিয়নের শিক্ষক মাওলানা আবদুল রশিদের জীবনের মোড় ঘুরে গেছে।

মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বর্তমানে একজন পরিচিত রামবুটান চাষি। রামবুটান থেকে যার বার্ষিক আয় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।

২০১৫ সালে ইউটিউবে ভিডিও দেখে রামবুটান ফল সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে নিজ বাড়ির মাত্র ৬৫ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করেন কয়েকটি রামবুটান গাছ। তখন তিনি ভাবতেও পারেননি এই উদ্যোগ একদিন তাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করে তুলবে এবং অনুপ্রেরণা জোগাবে আশপাশের বহু তরুণকে।

পরিকল্পনা, ধৈর্য, নিয়মিত পরিচর্যা ও পরিশ্রম- এই চারটি মূল স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আবদুল রশিদের রামবুটান বাগান এখন বিস্তৃত হয়েছে ১৭০ শতাংশ জমিতে। চাষ শুরুর প্রায় পাঁচ বছর পর থেকেই গাছে নিয়মিত ফল আসা শুরু হয়। বর্তমানে তার বাগান থেকে উৎপাদিত রামবুটান দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে, যেখানে বাজারদর কেজিপ্রতি এক হাজার থেকে বারোশ’ টাকা পর্যন্ত।

শুধু ফল নয়, তার বাগান থেকেই উৎপাদিত চারা সংগ্রহ করছেন দেশের বিভিন্ন জেলার আগ্রহী কৃষক ও উদ্যোক্তারা। রামবুটানের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। দেখতে অনেকটা লিচুর মতো হলেও এর লোমশ খোসা ও ভিন্ন স্বাদের কারণে এই বিদেশি ফল এখন বাংলাদেশের মাটিতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

মূলত মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় চাষ হওয়া এই ফল এখন বাংলাদেশের কৃষি খাতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।

স্থানীয় যুবকদের মধ্যে ইতোমধ্যে এই বাগান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ও আলামিন জানান, একজন শিক্ষক এত বড় উদ্যোক্তা হয়েছেন সেটা তাদের জন্য গর্বের বিষয়। রামবুটান ফল খেতে খুব সুস্বাদু। এতে অনেক পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। বিশেষ করে এই ধরনের উদ্যোগ কৃষিকে আবারও একটি আকর্ষণীয় ও লাভজনক পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। একজন শিক্ষক, একজন চাষি, একজন উদ্যোক্তা—মাওলানা আবদুল রশিদের এই পরিচয় এখন সমাজে দৃষ্টান্ত।

চাষি আবদুল রশিদ বলেন, “শুধু ফল বিক্রি করেই নয়, চারা বিক্রি করেও আমি ভালো আয় করছি। আমি চাই, দেশের আরও অনেক জায়গায় রামবুটান চাষ ছড়িয়ে পড়ুক। এজন্য আমি নিজ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি আগ্রহী নতুন উদ্যোক্তাদের।”

তিনি আরো বলেন, “শুধু অর্থ উপার্জনের দিক দিয়েই নয়, এই উদ্যোগে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা-পরিশ্রম, চিন্তার ভিন্নতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত একজন সাধারণ মানুষকেও অনন্য করে তুলতে পারে। কৃষি খাতে এমন উদ্ভাবনী চিন্তা ও সফলতার গল্প দেশের প্রতিটি তরুণদের জন্য নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প হোক সেটাই আমার চাওয়া।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, “বাংলাদেশের জলবায়ু রামবুটান চাষের জন্য উপযোগী। যারা আগ্রহী, তাদের আমরা সরকারি পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিতে প্রস্তুত।”

ঢাকা/হৃদয়/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাতারের কাছ থেকে উড়োজাহাজ ‘উপহারের’ প্রস্তাব পাওয়ার ট্রাম্পের দাবি কি সত্য
  • পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হয়নি:
  • আমি ৪০-এর কাছাকাছি বয়সে বলিউডে কাজ শুরু করেছি
  • স্টার নই, আমি একজন অভিনেতা: বোমান ইরানি
  • আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে: মিষ্টি জান্নাত
  • রামবুটান চাষে তাক লাগানো সাফল্য
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলা: মধ্যরাত থেকে নিহত আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি
  • পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতে এবার ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার
  • শান্তি আলোচনার পর ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা রাশিয়ার