কক্সবাজারের চকরিয়ায় ইজারা নিয়ে সংরক্ষিত বন উজাড়
Published: 20th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের খুটাখালি বাজার হয়ে ডানে তিন কিলোমিটার পথ পেরোলেই মধুশিয়া গর্জন বন। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খুটাখালি খালের স্বচ্ছ জলের ধারা। দূর থেকে গর্জনগাছের সারি মুগ্ধতা ছড়ালেও কাছে গেলে দেখা যাবে ভিন্ন চিত্র। গাছের গোড়া থেকে সরে গেছে মাটি। যেকোনো সময় ধসে পড়বে এসব গাছ। এতে মধুশিয়া গর্জন বন এখন হুমকির মুখে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, বালু উত্তোলনের কারণে গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছে গর্জন বনটি।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালি ইউনিয়নে পড়েছে খুটাখালি খাল। এটি সংরক্ষিত বনভূমির পাশে অবস্থিত। ইউনিয়নের হরিখোলা গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী লিটন, সাইফুলসহ ৫০ জনের একটি সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন করে। খালে বালু নেই, তাঁরা মূলত ইজারা নিয়ে বনের বালু তোলেন। এভাবে বালু তোলায় বনভূমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
খুটাখালি খালের উত্তরে বন বিভাগের রক্ষিত বন (প্রোটেক্টেড ফরেস্ট), দক্ষিণে সংরক্ষিত বন (রিজার্ভ ফরেস্ট)। প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর চলতি মাসে খালের একটি অংশ নতুন করে ইজারা দিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩–এর ধারা ৪–এর (খ) বিধিতে বলা হয়েছে, বনের সর্বনিম্ন এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।
১২ মে খুটাখালি খালের ইজারা দেওয়া হরিখোলা ও নোয়ারফাঁড়ি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে বালু তোলার জন্য দুটি ড্রেজার রাখা। দীর্ঘদিন ধরে এ খাল থেকে বালু তোলায় দুইপাশে থাকা বনভূমি ভেঙে খালের সঙ্গে মিশে গেছে। এখন উত্তোলন করার মতো বালু খুব বেশি নেই। মোট পাঁচটি অংশে খালটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। আইন অমান্য করে প্রতিটি অংশে ইজারার সীমানার বাইরে গিয়ে রক্ষিত ও সংরক্ষিত বন থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাতির মলের স্তূপ প্রমাণ করে—এ বন হাতির চলাচলেরও পথ।
এ বিষয়ে খুটাখালি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী লিটন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন ইজারা নিয়েছিলাম, তখন বালু তুলেছি। এ কারণে বন বিভাগের মামলাও খেয়েছি। এখন আর বালু তুলি না। ইজারার বাইরে গিয়ে আমি কখনো বালু তুলিনি।’
ফুলছড়ি রাজঘাট, মধুশিয়াসহ এখানকার অনেক বনে গবেষণার কাজ করেছি। বালু উত্তোলনের কারণে ২০২০ সালের দিকে মধুশিয়া বন উজাড় হওয়া দেখেছি। এখানে অনেক শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক কামাল হোসেনবন বিভাগের চিঠিবনভূমি, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আশঙ্কায় খুটাখালি খাল ইজারা না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ১৮ মার্চ বন বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
খুটাখালি খালের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে মধুশিয়া গর্জন বন, পাহাড়সহ বিভিন্ন সময়ে করা বনায়ন বালু উত্তোলনে ধসে পড়েছে জানিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়, ইজারার কাগজে উল্লেখিত পাঁচটি দাগের বাইরে গিয়ে সংরক্ষিত ও রক্ষিত বন থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে সেখানে থাকা হাতি, শজারু, বন্য শূকর, বনবিড়াল, গন্ধগোকুল, হরিণ ও শেয়াল হুমকির মুখে পড়েছে। নির্বিচার বালু উত্তোলনে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বনের সীমানায় ঢুকে গেছে খালটি। এ ছাড়া এই বনাঞ্চল বিপন্ন এশিয়ান বন্য হাতির বিচরণ ক্ষেত্র। ইজারা দেওয়া হলে এখানে বন, বন্য প্রাণী, জীববৈচিত্র্যসহ সামগ্রিক পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এর আগে ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এসব খালের ইজারা স্থগিত করে। এরপর টানা ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছর ইজারা দেওয়া বন্ধ রাখে জেলা প্রশাসন। এসব বিষয়ে কক্সবাজার বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
খুটাখালি খালের নতুন ইজারাগ্রহীতা হামিদুল হক ১৫ মে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ইজারা নিয়েছি। তবে এখনো বুঝে পাইনি।’ তিনি দাবি করেন, আগে কারা কীভাবে বালু উত্তোলন করে বনের ক্ষতি করেছে সেটা তিনি জানেন না। তবে আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই ইজারা দাগের বাইরে তিনি বালু উত্তোলন করবেন না।
খাল ইজারা দেওয়া প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বালুমহাল হিসেবে ঘোষিত প্রতিটি বালুমহাল রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ইজারা দিতে হয়। বালু উত্তোলনের সীমানা কতটুকু হবে তা ইজারার কাগজে তফসিলে দাগসহ সীমানা চিহ্নিত করে চৌহদ্দি দেওয়া থাকে।
ইজারার সীমানা লঙ্ঘনের বিষয়টি জেলা প্রশাসন পর্যবেক্ষণ করে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইজারার শর্ত ভঙ্গ করলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটার সীমানার মধ্যে বালু তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এটা জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগ চিঠি দিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না, জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন বলেন, তাঁরা প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। তবে এ রকম ব্যবস্থা নেওয়ার একটা উদাহরণ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি।
কক্সবাজারের বনাঞ্চলে গবেষণার কাজে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক কামাল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফুলছড়ি রাজঘাট, মধুশিয়াসহ এখানকার অনেক বনে গবেষণার কাজ করেছি। বালু উত্তোলনের কারণে ২০২০ সালের দিকে মধুশিয়া বন উজাড় হওয়া দেখেছি। এখানে অনেক শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত।’ তিনি আরও বলেন, ইজারা হচ্ছে একটা সার্টিফিকেট (সনদ)। এটা দিয়ে তাঁরা আশপাশের পাহাড় ও বন থেকে বালু উত্তোলন করে। এ বালু লবণাক্ত নয়। স্বাদু পানির বালু, তাই দামও বেশি। বালুখেকোরা তাই এখানে খুবই বেপরোয়া।
বন টিকে থাকে মাটির ওপর মন্তব্য করে কামাল হোসেন বলেন, মাটি সরে যাওয়ায় মধুশিয়া বনে গাছপালা হবে না। সামান্য রাজস্বের জন্য এত বড় ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। এ অঞ্চলে বেশ কিছু হাতি আছে, যেগুলো বান্দরবানের লামা থেকে আসে। বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে এসব প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক বন ব ভ গ র ব যবস থ ফর স ট ইজ র র বনভ ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভুয়া অ্যাপ শনাক্তে গুগল পরিষেবা
বহুমাত্রিক কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিনই নতুন কিছু অ্যাপ ডাউনলোডের প্রয়োজন সামনে আসে। অনেকেই হুট করে আগে-পরে কিছু না ভেবে ঝুঁকে পড়েন অ্যাপ ডাউনলোডে। জনপ্রিয় কোনো অ্যাপের নাম দিয়ে প্লে স্টোরে সার্চ করলে দৃশ্যমান হয় অনেক অ্যাপ। সবকটির নাম হয় কাছাকাছি ধরনের। যার মধ্যে অনেক থার্ড পার্টি ফেক অ্যাপ থাকে ছড়ানো। ডিভাইসে ডাউনলোড করার সময়ে ফেক থার্ড পার্টি অ্যাপ বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কিনা, তা যাচাই করা প্রয়োজন। প্রথমে যে অ্যাপ ডাউনলোড করা প্রয়োজন, তার ডেভেলপারের নাম আগে জেনে নিতে হবে। অনেক সময়ে কোনো অ্যাপ সার্চ করার ক্ষেত্রে পরিচিত নামে অনেক অ্যাপ সামনে আসে।
সে ক্ষেত্রে কোনো অ্যাপের নাম ও ডেসক্রিপশন যাচাই করা প্রয়োজন। গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে যে কোনো অ্যাপ ডাউনলোডের আগে তার ডাউনলোড কাউন্ট, রিভিউ ও রেটিং যাচাই করে নেওয়া শ্রেয়।
নির্বাচিত অ্যাপ কবে প্রকাশ পেয়েছে, তা জানা জরুরি। অ্যাপ ডাউনলোডের আগে স্ক্রিনশট দেখে নিতে হবে। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লে অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না। তা ছাড়া যে কোনো অ্যাপ ডিভাইসে কী কী অনুমতি (পারমিশন) চাইছে, তা তাৎক্ষণিক যাচাই করলে ক্ষতিকর অ্যাপ সহজে চিহ্নিত করতে পারবেন। কোনো অ্যাপ নিজের ডিভাইসে অপ্রয়োজনীয় ক্যামেরা, অডিও, লোকেশন, ফোনকল বা অন্য কিছুতে প্রবেশাধিকার চাইলে তা ভুয়া বলে বিবেচিত হবে। কারণ, ওই সব অ্যাপ দিয়েই সাইবার প্রতারণার সুযোগ নেওয়া হয়।
গুগল প্লে প্রোটেক্টের সহায়তায় অ্যাপ ও ডিভাইসকে ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। সে জন্য প্লে স্টোর অ্যাপে প্রোফাইল আইকনে গিয়ে প্লে প্রোটেক্ট ট্যাপ করে সেটিংসে প্লে প্রোটেক্ট দিয়ে স্ক্যান অ্যাপে যাচাই করে নেবেন। ডিভাইসটি ভেরিফাই সার্টিফাইড করতে পারেন। এমন কাজে গুগল প্লে স্টোর অ্যাপ খুলতে হবে। ওপরের ডানদিকে প্রোফাইল আইকনে গিয়ে সেটিংস থেকে ডিভাইসটি প্লে প্রোটেক্ট সার্টিফাইড কিনা, যাচাই করতে হবে। ডাউনলোড করার আগে ওই অ্যাপের বিস্তারিত জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
সার্চে পাওয়া অ্যাপে বানানে ভুল পেলে তা ক্ষতিকর হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়। প্রকৃত অ্যাপে কোনো ভুল থাকে না। তবে ক্ষতিকর অ্যাপের লোগো কিন্তু প্রকৃত অ্যাপের মতো হুবহু ডিজাইন করা হয়। বিভ্রান্ত হওয়ার অবকাশ কিন্তু থেকেই যায়।