Samakal:
2025-07-05@05:18:59 GMT

ঢাকা এক অবরুদ্ধ নগরের নাম

Published: 20th, May 2025 GMT

ঢাকা এক অবরুদ্ধ নগরের নাম

ঢাকা শহরকে নিয়ে বহু কবি-সাহিত্যিকের রয়েছে নানা কল্পনা ও জল্পনা। কারও কারও লেখায় বেশ রোমান্টিক সব গল্পও উঠে এসেছে। কিন্তু গত কয়েক দশকে এই শহরের যে রূপ পরিগ্রহ করেছে, তাতে কল্পনায় বীভৎস চিত্রটাই ধরা পড়ে। গতকাল বাংলা একাডেমি থেকে তেজগাঁও আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টার বেশি!

গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণ বিভিন্ন কারণে রাস্তায় নেমে পড়ছে, বিক্ষোভ করছে। কয়েক দিন ধরে নগর ভবনের সামনে মেয়র পদে নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ করে চলেছে। শাহবাগ মোড়ে ছোট ছোট দল হয়ে সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে কিছু তরুণকে মিছিল করতে দেখা গেছে। আবার কোথাও কোথাও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এসব কিছু মিলিয়েই ঢাকা নগর যেন বিক্ষোভ, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তার শহর।

জীবনানন্দ দাশ পূর্ববঙ্গের রূপ দেখে লিখেছিলেন, ‘তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও– আমি এই বাংলার পারে র’য়ে যাব’। বর্তমানে ঢাকা নিয়ে এমন কবিতা লেখা কোনো কবির পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ ঢাকা এখন যন্ত্রণার নগর হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে যন্ত্রণার কাব্য হয় না।

দু-দুটো সিটি করপোরেশন। রাজউকের মতো নানামুখী প্রতিষ্ঠান। অন্তত কয়েক দশক ধরে আমরা বিকেন্দ্রীকরণসহ উন্নয়নের বহু বুলি শোনে আসছি; কিন্তু ঢাকাবাসীর জীবনে দিন দিন অবনতিই ঘটেছে। আমরা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে ঢাকার ওপরই জোর দিয়েছি। নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিস, আদালত– সবকিছুর কেন্দ্র হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তুলেছি। অন্যদিকে, অন্যান্য শহরের যত চাপ ও তাপ সবই ঢাকার ওপর এসে পড়েছে। এতে আমরা ঢাকাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ধ্বংস করেছি প্রাণ, প্রকৃতি, নদী, নালা।

আনাচে-কানাচে নির্মাণ করেছি বহুতল ভবন। এসব ভবনে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা; কিন্তু ভবনগুলোরই নেই যথাযথ নিরাপত্তাবলয়। এমনকি বহু প্রতিষ্ঠান ও ভবন নিয়মের বালাই না করে গড়ে উঠেছে, তবুও এগুলো দিব্যি টিকে আছে। ফলে কিছুদিন পরপর ভবনে আগুনে পুড়ে মানুষ মারা যায়। এসব কোনোটাই স্রেফ দুর্ঘটনা নয়; পরিকল্পিত বা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড! সরকার আসে, সরকার যায়; কিন্তু ঢাকা নগরীর ইতিবাচক পরিবর্তন আসে না। বরং ক্রমেই জাহান্নামে পরিণত হচ্ছে!

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, ঢাকা শহরের প্রতি আগ্রহ হারাতে পারি, বিরক্তও হতে পারি; কিন্তু এই শহর ছেড়ে যাওয়ার মতো পথ আমরা অবশিষ্ট রাখিনি। বিশেষত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি গ্রামে গিয়ে সম্মানের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহের কোনো ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি। সুতরাং গ্রামগঞ্জও এখন হতাশার জায়গায় পরিণত হয়েছে। দিনমজুরদের পক্ষেও এখন গ্রামগঞ্জে বেঁচে থাকা কঠিন। ফলে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, নিরক্ষর, দিনমজুর, সর্বস্তরের পেশাজীবীদের প্রধান আশ্রয় এখন শহর– বিশেষত ঢাকা। 

এসব অব্যবস্থাপনার কারণে বিপুল মানুষের শ্রম, দক্ষতা ও সময়ের ভয়াবহ অপচয় ঘটছে। এই বার্তাও নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক আগে থেকেই বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণায় জানতে পেরেছি, ঢাকা শহরকে আমরা গলা টিপে হত্যা করছি। এর পরও আমাদের রাষ্ট্রের নীতিপ্রণেতা, বৃহৎ করপোরেশনের কর্তাব্যক্তি, বহুতল ভবনের কর্তারা এই বার্তা গায়ে লাগাননি। কারণ আমরা সফল ও উন্নত জীবনের মাপকাঠি হিসেবে বিচার করেছি স্রেফ টাকাপয়সা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, ফ্ল্যাট ও বহুতল ভবনের স্বত্বাধিকার। এই বোঝাপড়ায় আমরা হারিয়েছি ঢাকা শহরের হাজার বছরের পুরোনো নদনদী, পার্ক, গাছপালা ও বিশুদ্ধ বাতাস।

এতকিছুর পরও আমাদের সুমতি ঘটেনি। এখনও আমরা এই শহর ঘিরে নানামুখী নীতি গ্রহণ করেই চলেছি, যা নগরজীবনকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। এই জীবনে প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে ঢাকার বিকল্প শহর গড়ে তুলতে হবে। একইভাবে গড়ে তুলতে হবে আমাদের গ্রামগুলোকে, যা আমরা জীবন ও জীবিকার জন্য বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারি।

ইফতেখারুল ইসলাম: সাংবাদিক
iftekarulbd@gmail.

com
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কয় ক দ শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি সংসদীয় আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠের জনসভা থেকে এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দলটি। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় জনসভার মঞ্চে রংপুর বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার সবগুলো আসনের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 

বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার সবগুলো আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী রংপুর বিভাগের জামায়াতের প্রার্থীরা হচ্ছেন
রংপুর জেলা
রংপুর-১ অধ্যাপক রায়হান সিরাজী
রংপুর-২ এটি এম আজহারুল ইসলাম
রংপুর-৩ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল
রংপুর-৪ মাওলানা উপাধ্যক্ষ এটি এম আজম খান
রংপুর-৫ গোলাম রাব্বানী
রংপুর-৬ মাওলানা নূরুল আমিন

দিনাজপুর জেলা
দিনাজপুর-১ মতিউর রহমান
দিনাজপুর-২ অধ্যক্ষ আফজাল হোসেন আনাম
দিনাজপুর-৩ অ্যাডভোকেট মনিরুল আলম
দিনাজপুর-৪ আবতাব উদ্দিন মোল্লা
দিনাজপুর-৫ আনোয়ার হোসেন
দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম

নীলফামারী জেলা
নীলফামারী-১ অধ্যাক্ষ মাওলানা আব্দুর সাত্তার
নীলফামারী-২ (ঘোষণা করা হয়নি)
নীলফামারী-৩ ওবাইদুল্লাহ সালাফি
নীলফামারী-৪ মাওলানা হফেজ আব্দুল মুনতাকিম

লালমনিরহাট জেলা
লালমনিরহাট-১ আনোয়ারুল ইসলাম
লালমনিরহাট-২ অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু
লালমনিরহাট-৩ হারুনূর রশিদ

কুড়িগ্রাম জেলা
কুড়িগ্রাম-১ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম
কুড়িগ্রাম-২ অ্যাডভোকেট ইয়াসিন আলী
কুড়িগ্রাম-৩ ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম সালেহী
কুড়িগ্রাম-৪ মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক

গাইবান্ধা জেলা
গাইবান্ধা-১ অধ্যাপক মাজেদুর রহমান
গাইবান্ধা-২ আব্দুল করীম
গাইবান্ধা-৩ অধ্যাক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম
গাইবান্ধা-৪ ডা: আব্দুর রহিম সরকার
গাইবান্ধা-৫ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওরেস

ঠাকুরগাঁও জেলা
ঠাকুরগাঁও-১ দেলোয়ার হোসেন
ঠাকুরগাঁও-২ আব্দুল হাকিম
ঠাকুরগাঁও-৩ মিজানুর রহমান

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সব খুনির বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচনসহ চার দফা দাবিতে রংপুরে এই জনসভার আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর ও জেলা শাখা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সব সংস্কারের কথা বলেছি। সংস্কারগুলো আদায় করে ছাড়ব।’

শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব খুনির বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচনসহ চার দাবিতে জনসভার আয়োজন করে জামায়াতের রংপুর জেলা ও মহানগর শাখা।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকে, আমরা সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। কোনো প্রশাসনিক ক্যু করতে দেওয়া হবে না। ভোটকেন্দ্রে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলতে দেওয়া হবে না, কালো টাকার কোনো খেলা সহ্য করা হবে না।’

জামায়াতে ইসলামী সব সময় মবের ঘোরবিরোধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মব ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয়েছে। তবে মব সমর্থন করার সুযোগ নেই আমাদের। কোনো নাগরিক নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার অধিকার রাখে না। এখন দেশে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এজন্য আগে পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। এই পরিবেশ তৈরির জন্যই সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে। তাই আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন করতে হবে।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এই বাংলাদেশে মদিনার ছায়ার আলো দেখতে চাই। শরিয়াহর কথা শুনলে অনেকের গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায়। কারণ, তারা ঘুষ-দুর্নীতি করতে পারবে না, যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে না।’

‘উত্তরের দুঃখ তিস্তা নদী’ উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে টালবাহানা দেশের মানুষ আর সহ্য করবে না।’

১৭ বছর পর রংপুরে অনুষ্ঠিত জামায়াতের জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এ টি এম আজহারুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের রংপুর মহানগরের আমির এ টি এম আজম খান। জনসভার মঞ্চ থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ