Samakal:
2025-11-03@02:05:35 GMT

ঢাকা এক অবরুদ্ধ নগরের নাম

Published: 20th, May 2025 GMT

ঢাকা এক অবরুদ্ধ নগরের নাম

ঢাকা শহরকে নিয়ে বহু কবি-সাহিত্যিকের রয়েছে নানা কল্পনা ও জল্পনা। কারও কারও লেখায় বেশ রোমান্টিক সব গল্পও উঠে এসেছে। কিন্তু গত কয়েক দশকে এই শহরের যে রূপ পরিগ্রহ করেছে, তাতে কল্পনায় বীভৎস চিত্রটাই ধরা পড়ে। গতকাল বাংলা একাডেমি থেকে তেজগাঁও আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টার বেশি!

গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণ বিভিন্ন কারণে রাস্তায় নেমে পড়ছে, বিক্ষোভ করছে। কয়েক দিন ধরে নগর ভবনের সামনে মেয়র পদে নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ করে চলেছে। শাহবাগ মোড়ে ছোট ছোট দল হয়ে সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে কিছু তরুণকে মিছিল করতে দেখা গেছে। আবার কোথাও কোথাও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এসব কিছু মিলিয়েই ঢাকা নগর যেন বিক্ষোভ, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তার শহর।

জীবনানন্দ দাশ পূর্ববঙ্গের রূপ দেখে লিখেছিলেন, ‘তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও– আমি এই বাংলার পারে র’য়ে যাব’। বর্তমানে ঢাকা নিয়ে এমন কবিতা লেখা কোনো কবির পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ ঢাকা এখন যন্ত্রণার নগর হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে যন্ত্রণার কাব্য হয় না।

দু-দুটো সিটি করপোরেশন। রাজউকের মতো নানামুখী প্রতিষ্ঠান। অন্তত কয়েক দশক ধরে আমরা বিকেন্দ্রীকরণসহ উন্নয়নের বহু বুলি শোনে আসছি; কিন্তু ঢাকাবাসীর জীবনে দিন দিন অবনতিই ঘটেছে। আমরা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে ঢাকার ওপরই জোর দিয়েছি। নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিস, আদালত– সবকিছুর কেন্দ্র হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তুলেছি। অন্যদিকে, অন্যান্য শহরের যত চাপ ও তাপ সবই ঢাকার ওপর এসে পড়েছে। এতে আমরা ঢাকাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ধ্বংস করেছি প্রাণ, প্রকৃতি, নদী, নালা।

আনাচে-কানাচে নির্মাণ করেছি বহুতল ভবন। এসব ভবনে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা; কিন্তু ভবনগুলোরই নেই যথাযথ নিরাপত্তাবলয়। এমনকি বহু প্রতিষ্ঠান ও ভবন নিয়মের বালাই না করে গড়ে উঠেছে, তবুও এগুলো দিব্যি টিকে আছে। ফলে কিছুদিন পরপর ভবনে আগুনে পুড়ে মানুষ মারা যায়। এসব কোনোটাই স্রেফ দুর্ঘটনা নয়; পরিকল্পিত বা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড! সরকার আসে, সরকার যায়; কিন্তু ঢাকা নগরীর ইতিবাচক পরিবর্তন আসে না। বরং ক্রমেই জাহান্নামে পরিণত হচ্ছে!

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, ঢাকা শহরের প্রতি আগ্রহ হারাতে পারি, বিরক্তও হতে পারি; কিন্তু এই শহর ছেড়ে যাওয়ার মতো পথ আমরা অবশিষ্ট রাখিনি। বিশেষত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি গ্রামে গিয়ে সম্মানের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহের কোনো ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি। সুতরাং গ্রামগঞ্জও এখন হতাশার জায়গায় পরিণত হয়েছে। দিনমজুরদের পক্ষেও এখন গ্রামগঞ্জে বেঁচে থাকা কঠিন। ফলে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, নিরক্ষর, দিনমজুর, সর্বস্তরের পেশাজীবীদের প্রধান আশ্রয় এখন শহর– বিশেষত ঢাকা। 

এসব অব্যবস্থাপনার কারণে বিপুল মানুষের শ্রম, দক্ষতা ও সময়ের ভয়াবহ অপচয় ঘটছে। এই বার্তাও নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক আগে থেকেই বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণায় জানতে পেরেছি, ঢাকা শহরকে আমরা গলা টিপে হত্যা করছি। এর পরও আমাদের রাষ্ট্রের নীতিপ্রণেতা, বৃহৎ করপোরেশনের কর্তাব্যক্তি, বহুতল ভবনের কর্তারা এই বার্তা গায়ে লাগাননি। কারণ আমরা সফল ও উন্নত জীবনের মাপকাঠি হিসেবে বিচার করেছি স্রেফ টাকাপয়সা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, ফ্ল্যাট ও বহুতল ভবনের স্বত্বাধিকার। এই বোঝাপড়ায় আমরা হারিয়েছি ঢাকা শহরের হাজার বছরের পুরোনো নদনদী, পার্ক, গাছপালা ও বিশুদ্ধ বাতাস।

এতকিছুর পরও আমাদের সুমতি ঘটেনি। এখনও আমরা এই শহর ঘিরে নানামুখী নীতি গ্রহণ করেই চলেছি, যা নগরজীবনকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। এই জীবনে প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে ঢাকার বিকল্প শহর গড়ে তুলতে হবে। একইভাবে গড়ে তুলতে হবে আমাদের গ্রামগুলোকে, যা আমরা জীবন ও জীবিকার জন্য বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারি।

ইফতেখারুল ইসলাম: সাংবাদিক
iftekarulbd@gmail.

com
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কয় ক দ শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

‘বউ পেটানো’ অভিনেতার দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন

সৈয়দা আলিজা সুলতানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খান। তাদের এই সংসার ভেঙে গেছে। আলিজা অভিযোগ করেছিলেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন ফিরোজ। কেবল তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ছবিও প্রকাশ করেছিলেন। এরপর তোপের মুখে পড়েন ফিরোজ খান। নেটিজেনদের অনেকে তাকে ‘বউ পেটানো’ অভিনেতার তকমাও দেন।

প্রথম সংসার ভাঙার প্রায় দুই বছর পর ডা. জয়নবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজ খান। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। মূলত, বিনোদনভিত্তিক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ডা. জয়নবের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। তারপরই শুরু হয় ফিরোজ খানের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জয়নবের অভিযোগের স্ক্রিনশট। 

ডা. জয়নব কথিত এই নোটে বলেন, “আমি আমার সহনসীমার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অবিরাম মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ক্লান্ত। এমন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আছি, যে আমাকে বিশ্বাস করে না। আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এখন ক্লান্ত। প্রতিটি কথোপকথন একটা লড়াইয়ের মতো লাগে, প্রতিটি মতবিরোধ যেন যুদ্ধ। এমন আচরণের শিকার হয়ে আমি ক্লান্ত। আমি যখন তাকে কিছু বলি, সে আমার উপর রাগ ঝাড়ে।”

স্ত্রী জয়নবের সঙ্গে ফিরোজ খান

সুখ স্মৃতিগুলো কষ্টে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এমন মন্তব্য করে জয়নব বলেন, “সত্যি বলতে, আমরা একসঙ্গে যে স্মৃতিগুলো তৈরি করেছিলাম, তা এখন কষ্ট ও আঘাতে ঢাকা পড়ে গেছে। আমি অসংখ্যবার তাকে ক্ষমা করেছি। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো কখনো পুরোপুরি সারেনি। বুঝতে পারছি, আমি এক ধরণের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে বাস করছি, একটা সম্পর্কে আটকে আছি, যা আমার জীবনের শক্তি শুষে নিচ্ছে। আমি জানি, আমি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কোমলতার যোগ্য। সবকিছু ঠিক আছে—আমি আর এই ভান করতে চাই না।”

ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জয়নব বলেন “এমন বিষাক্ত একটা সম্পর্কের জন্য আমি আমার সুখ ত্যাগ করেছি। আমি এখন নিজের জন্য, নিজের মানসিক সুস্থতার জন্য দাঁড়াচ্ছি। বেদনা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, আমি আমার জীবনের এই অধ্যায় (বিবাহিত জীবন) শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ডিভোর্স নিচ্ছি। কারণ আমি জানি, এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর জন্য আমি প্রস্তুত, যেখানে আমাকে মূল্য দেওয়া হবে, সম্মান করা হবে, ভালোবাসা হবে।”

জয়নবের এই ‘ডিভোর্স নোট’ নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন ফিরোজ খান। তবে এর আগে ফিরোজ খানের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে দেখা যায়। তাতে জয়নবের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল’ ও ‘মানসিক চাপের’ অভিযোগ তোলেন। যদিও পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। পাশাপাশি এই অভিনেতা জানান, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল।

ডা. জয়নব

তবে সংসার ভাঙার গুঞ্জনে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি ফিরোজ খান কিংবা তার স্ত্রী ডা. জয়নব। তবে বিনোদনভিত্তিক যে পেজ থেকে জয়নবের ‘ডিভোস নোট’ ছড়ানো হয়েছে, সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাতে জয়নব লেখেন, “এই ধরনের পেজগুলো আনফলো করুন অথবা রিপোর্ট করুন। এই ধরনের পেজ থেকে ভুয়া খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিরক্ত করা হচ্ছে। সত্যি বলছি, আমি জানি না কীভাবে তারা আমার স্টোরিতে পোস্টটি করার অ্যাকসেস পেয়েছে। এই পোস্ট আমি কখনো করিনি।”

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম স্ত্রী সৈয়দ আলিজা সুলতানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় ফিরোজ খানের। এ সংসারে সুলতান খান ও ফাতিমা খান নামে দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে দুই সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আদালতে মামলা লড়ছেন এই প্রাক্তন দম্পতি। ২০২৪ সালে ডা. জয়নবকে বিয়ে করেন ফিরোজ খান।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ