Samakal:
2025-09-17@21:11:45 GMT

ঢাকা এক অবরুদ্ধ নগরের নাম

Published: 20th, May 2025 GMT

ঢাকা এক অবরুদ্ধ নগরের নাম

ঢাকা শহরকে নিয়ে বহু কবি-সাহিত্যিকের রয়েছে নানা কল্পনা ও জল্পনা। কারও কারও লেখায় বেশ রোমান্টিক সব গল্পও উঠে এসেছে। কিন্তু গত কয়েক দশকে এই শহরের যে রূপ পরিগ্রহ করেছে, তাতে কল্পনায় বীভৎস চিত্রটাই ধরা পড়ে। গতকাল বাংলা একাডেমি থেকে তেজগাঁও আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টার বেশি!

গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণ বিভিন্ন কারণে রাস্তায় নেমে পড়ছে, বিক্ষোভ করছে। কয়েক দিন ধরে নগর ভবনের সামনে মেয়র পদে নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ করে চলেছে। শাহবাগ মোড়ে ছোট ছোট দল হয়ে সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে কিছু তরুণকে মিছিল করতে দেখা গেছে। আবার কোথাও কোথাও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এসব কিছু মিলিয়েই ঢাকা নগর যেন বিক্ষোভ, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তার শহর।

জীবনানন্দ দাশ পূর্ববঙ্গের রূপ দেখে লিখেছিলেন, ‘তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও– আমি এই বাংলার পারে র’য়ে যাব’। বর্তমানে ঢাকা নিয়ে এমন কবিতা লেখা কোনো কবির পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ ঢাকা এখন যন্ত্রণার নগর হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে যন্ত্রণার কাব্য হয় না।

দু-দুটো সিটি করপোরেশন। রাজউকের মতো নানামুখী প্রতিষ্ঠান। অন্তত কয়েক দশক ধরে আমরা বিকেন্দ্রীকরণসহ উন্নয়নের বহু বুলি শোনে আসছি; কিন্তু ঢাকাবাসীর জীবনে দিন দিন অবনতিই ঘটেছে। আমরা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে ঢাকার ওপরই জোর দিয়েছি। নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিস, আদালত– সবকিছুর কেন্দ্র হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তুলেছি। অন্যদিকে, অন্যান্য শহরের যত চাপ ও তাপ সবই ঢাকার ওপর এসে পড়েছে। এতে আমরা ঢাকাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ধ্বংস করেছি প্রাণ, প্রকৃতি, নদী, নালা।

আনাচে-কানাচে নির্মাণ করেছি বহুতল ভবন। এসব ভবনে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা; কিন্তু ভবনগুলোরই নেই যথাযথ নিরাপত্তাবলয়। এমনকি বহু প্রতিষ্ঠান ও ভবন নিয়মের বালাই না করে গড়ে উঠেছে, তবুও এগুলো দিব্যি টিকে আছে। ফলে কিছুদিন পরপর ভবনে আগুনে পুড়ে মানুষ মারা যায়। এসব কোনোটাই স্রেফ দুর্ঘটনা নয়; পরিকল্পিত বা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড! সরকার আসে, সরকার যায়; কিন্তু ঢাকা নগরীর ইতিবাচক পরিবর্তন আসে না। বরং ক্রমেই জাহান্নামে পরিণত হচ্ছে!

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, ঢাকা শহরের প্রতি আগ্রহ হারাতে পারি, বিরক্তও হতে পারি; কিন্তু এই শহর ছেড়ে যাওয়ার মতো পথ আমরা অবশিষ্ট রাখিনি। বিশেষত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি গ্রামে গিয়ে সম্মানের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহের কোনো ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি। সুতরাং গ্রামগঞ্জও এখন হতাশার জায়গায় পরিণত হয়েছে। দিনমজুরদের পক্ষেও এখন গ্রামগঞ্জে বেঁচে থাকা কঠিন। ফলে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, নিরক্ষর, দিনমজুর, সর্বস্তরের পেশাজীবীদের প্রধান আশ্রয় এখন শহর– বিশেষত ঢাকা। 

এসব অব্যবস্থাপনার কারণে বিপুল মানুষের শ্রম, দক্ষতা ও সময়ের ভয়াবহ অপচয় ঘটছে। এই বার্তাও নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক আগে থেকেই বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণায় জানতে পেরেছি, ঢাকা শহরকে আমরা গলা টিপে হত্যা করছি। এর পরও আমাদের রাষ্ট্রের নীতিপ্রণেতা, বৃহৎ করপোরেশনের কর্তাব্যক্তি, বহুতল ভবনের কর্তারা এই বার্তা গায়ে লাগাননি। কারণ আমরা সফল ও উন্নত জীবনের মাপকাঠি হিসেবে বিচার করেছি স্রেফ টাকাপয়সা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, ফ্ল্যাট ও বহুতল ভবনের স্বত্বাধিকার। এই বোঝাপড়ায় আমরা হারিয়েছি ঢাকা শহরের হাজার বছরের পুরোনো নদনদী, পার্ক, গাছপালা ও বিশুদ্ধ বাতাস।

এতকিছুর পরও আমাদের সুমতি ঘটেনি। এখনও আমরা এই শহর ঘিরে নানামুখী নীতি গ্রহণ করেই চলেছি, যা নগরজীবনকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। এই জীবনে প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে ঢাকার বিকল্প শহর গড়ে তুলতে হবে। একইভাবে গড়ে তুলতে হবে আমাদের গ্রামগুলোকে, যা আমরা জীবন ও জীবিকার জন্য বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারি।

ইফতেখারুল ইসলাম: সাংবাদিক
iftekarulbd@gmail.

com
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কয় ক দ শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।

আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগে

এ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।

আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ