দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ৫০ বছর পর সাড়ে ২২ একর জমি ফিরে পেল সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের শ্রীরামসি গ্রামের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী রেদওয়ানুল হকের পরিবার। ১৯৭৫ সালে ওই জায়গার মালিকানার অধিকার নিয়ে প্রবাসী রেদোয়ানুল হক এ মামলা দায়ের করেন। ২০১০ সালে তিনি মারা যান।
মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞার নেতৃত্বে প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওই জমি তাঁর উত্তরসূরিদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
ওই জমিতে রয়েছে বাড়ি, বড়ন্ডিপতিত ও দিঘি। মামলার বিবরণ ও তাঁর পরিবার সূত্র থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন শ্রীরামসি গ্রামের রেদওয়ানুল হক প্রথম এ বিষয়ে ১ম সাব-জজ আদালত সিলেটে একই গ্রামের আব্দুল মোতালিব খাঁ ও আব্দুল মনির খাঁ গংয়ের বিরুদ্ধে স্বত্ববাটোয়ারা মামলা করেন।
১৯৮৫ সালে এ মামলা সুনামগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯৪ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলার প্রথম ডিক্রি হয়। পরে এ নিয়ে আইনি লড়াই চলে। ২০০৭ সালে তাদের পক্ষে চূড়ান্ত রায় হয়। পরে রায় কার্যকর করতে রেদওয়ানুল হক স্বত্বজারি ও দখলদেহী মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বিবাদী পক্ষ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালত স্থগিতাদেশ দেন।
পরে সুপ্রিম কোর্টে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জারির মামলার রায় কার্যকর করতে যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে আবেদন করলে আদালত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে রেদওয়ানুল হক গংয়ের উত্তরসূরিদের দখল ও জমি বুঝিয়ে দিতে আদেশ দেন।
রেদওয়ানুল হকের ছেলে এমদাদুল হক টিপু জানান, দীর্ঘ ৫০ বছর পর জমি ফিরে পাওয়ায় তাঁর পরিবার খুশি। এটি সত্যের জয়। বাবা সম্পদের নায্যদাবি প্রতিষ্ঠায় এ মামলা দায়ের করেছিলেন। এভাবে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আরও দৃঢ় হবে।
জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা বলেন, আদালতের নির্দেশে ন্যায্য মালিক পক্ষকে তাদের জমির অধিকার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রয়াত রেদওয়ানুল হকের উত্তরসূরিরা জমির মালিকানা বুঝে নিয়েছেন। ৫০ বছর পর হলেও প্রকৃত মালিকের সম্পদের অধিকার ফিরে পাওয়ায় প্রমাণ হয়েছে জোর করে কারও সম্পদ দখলে রাখা যায় না। দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা আরও দৃঢ় হলো এ রায়ের মধ্য দিয়ে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি সংসদীয় আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠের জনসভা থেকে এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দলটি। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় জনসভার মঞ্চে রংপুর বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার সবগুলো আসনের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার সবগুলো আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী রংপুর বিভাগের জামায়াতের প্রার্থীরা হচ্ছেন
রংপুর জেলা
রংপুর-১ অধ্যাপক রায়হান সিরাজী
রংপুর-২ এটি এম আজহারুল ইসলাম
রংপুর-৩ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল
রংপুর-৪ মাওলানা উপাধ্যক্ষ এটি এম আজম খান
রংপুর-৫ গোলাম রাব্বানী
রংপুর-৬ মাওলানা নূরুল আমিন
দিনাজপুর জেলা
দিনাজপুর-১ মতিউর রহমান
দিনাজপুর-২ অধ্যক্ষ আফজাল হোসেন আনাম
দিনাজপুর-৩ অ্যাডভোকেট মনিরুল আলম
দিনাজপুর-৪ আবতাব উদ্দিন মোল্লা
দিনাজপুর-৫ আনোয়ার হোসেন
দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম
নীলফামারী জেলা
নীলফামারী-১ অধ্যাক্ষ মাওলানা আব্দুর সাত্তার
নীলফামারী-২ (ঘোষণা করা হয়নি)
নীলফামারী-৩ ওবাইদুল্লাহ সালাফি
নীলফামারী-৪ মাওলানা হফেজ আব্দুল মুনতাকিম
লালমনিরহাট জেলা
লালমনিরহাট-১ আনোয়ারুল ইসলাম
লালমনিরহাট-২ অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু
লালমনিরহাট-৩ হারুনূর রশিদ
কুড়িগ্রাম জেলা
কুড়িগ্রাম-১ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম
কুড়িগ্রাম-২ অ্যাডভোকেট ইয়াসিন আলী
কুড়িগ্রাম-৩ ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম সালেহী
কুড়িগ্রাম-৪ মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক
গাইবান্ধা জেলা
গাইবান্ধা-১ অধ্যাপক মাজেদুর রহমান
গাইবান্ধা-২ আব্দুল করীম
গাইবান্ধা-৩ অধ্যাক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম
গাইবান্ধা-৪ ডা: আব্দুর রহিম সরকার
গাইবান্ধা-৫ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওরেস
ঠাকুরগাঁও জেলা
ঠাকুরগাঁও-১ দেলোয়ার হোসেন
ঠাকুরগাঁও-২ আব্দুল হাকিম
ঠাকুরগাঁও-৩ মিজানুর রহমান
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সব খুনির বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচনসহ চার দফা দাবিতে রংপুরে এই জনসভার আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর ও জেলা শাখা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সব সংস্কারের কথা বলেছি। সংস্কারগুলো আদায় করে ছাড়ব।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব খুনির বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচনসহ চার দাবিতে জনসভার আয়োজন করে জামায়াতের রংপুর জেলা ও মহানগর শাখা।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকে, আমরা সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। কোনো প্রশাসনিক ক্যু করতে দেওয়া হবে না। ভোটকেন্দ্রে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলতে দেওয়া হবে না, কালো টাকার কোনো খেলা সহ্য করা হবে না।’
জামায়াতে ইসলামী সব সময় মবের ঘোরবিরোধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মব ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয়েছে। তবে মব সমর্থন করার সুযোগ নেই আমাদের। কোনো নাগরিক নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার অধিকার রাখে না। এখন দেশে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এজন্য আগে পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। এই পরিবেশ তৈরির জন্যই সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে। তাই আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন করতে হবে।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এই বাংলাদেশে মদিনার ছায়ার আলো দেখতে চাই। শরিয়াহর কথা শুনলে অনেকের গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায়। কারণ, তারা ঘুষ-দুর্নীতি করতে পারবে না, যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে না।’
‘উত্তরের দুঃখ তিস্তা নদী’ উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে টালবাহানা দেশের মানুষ আর সহ্য করবে না।’
১৭ বছর পর রংপুরে অনুষ্ঠিত জামায়াতের জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এ টি এম আজহারুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের রংপুর মহানগরের আমির এ টি এম আজম খান। জনসভার মঞ্চ থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।